ঈদের ভ্রমণ কেমন হওয়া উচিত? ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব, আর ছুটির আমেজ। দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা এই উৎসব আমাদের জীবনে এক বিশেষ অনুভূতি নিয়ে আসে। ঈদের ছুটিতে অনেকেই বাড়ি ফেরেন, আবার কেউ কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশ-বিদেশে ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন। তবে ঈদের সময় ভ্রমণ করতে গেলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন যাতে আপনার ভ্রমণ যাত্রা আরামদায়ক ও উপভোগ্য হয়।
আরও: সমুদ্র ভ্রমণ নিয়ে ১৫ টি টিপস
ফেসবুক: কুহুডাক
আরও: সমুদ্র ভ্রমণ নিয়ে ১৫ টি টিপস
ভ্রমণের পরিকল্পনা করা জরুরি
ঈদের সময় যেকোনো জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র বা শহরে ভিড় বেড়ে যায়। ফলে সঠিক পরিকল্পনা না থাকলে দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে। তাই ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিকল্পনায় রাখা দরকার।১. গন্তব্য নির্বাচন করুন
ঈদের সময় কোথায় যাবেন, সেটি সবার আগে ঠিক করতে হবে।- দেশের ভেতরে ভ্রমণ: কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, বান্দরবান, রাঙামাটি, সিলেট, সুন্দরবন, কুয়াকাটা ইত্যাদি স্থানগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে। তবে এসব স্থানে প্রচুর ভিড় হয়, তাই অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত কিন্তু সুন্দর স্থান নির্বাচন করা বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে।
- বিদেশ ভ্রমণ: অনেকেই ঈদের ছুটিতে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, দুবাই বা মালদ্বীপ ঘুরতে যান। বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভিসা, টিকেট ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা আগে থেকেই সম্পন্ন করা জরুরি।
২. আগেভাগে বুকিং করুন
ঈদের সময় ভ্রমণের চাপ বেশি থাকে, তাই অগ্রিম বুকিং করা খুবই জরুরি।- বাস, ট্রেন, বা বিমানের টিকিট আগে থেকে কেটে নিন।
- হোটেল বা রিসোর্ট বুকিং করে রাখুন, যাতে শেষ মুহূর্তে সমস্যায় না পড়তে হয়।
- জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে হোটেল সংকট দেখা দিতে পারে, তাই বিকল্প হোটেলের খোঁজ রাখুন।
৩. ব্যাগ গোছানোর সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিন
ভ্রমণে আরামদায়ক পোশাক পরুন এবং আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক নিন। এছাড়া কিছু অতিরিক্ত জিনিসপত্র সাথে রাখা ভালো। যেমন-- পরিচয়পত্র ও জরুরি কাগজপত্র
- মোবাইল চার্জার ও পাওয়ার ব্যাংক
- ওষুধ ও ফার্স্ট এইড কিট
- সানগ্লাস, ছাতা ও সানস্ক্রিন
- হালকা শুকনো খাবার ও পানির বোতল
নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা
ভ্রমণের সময় নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করা উচিত নয়। বিশেষ করে ঈদের সময় ভিড়ের কারণে কিছু বাড়তি ঝুঁকি থাকতে পারে।১. যাতায়াতের নিরাপত্তা
- পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য পরিবহন ব্যবহার করুন।
- ট্রেনে বা বাসে চুরি এড়াতে ব্যাগ সাবধানে রাখুন।
- গাড়িতে থাকলে রাস্তার নিরাপত্তা বিধি মেনে চলুন।
২. স্বাস্থ্য সচেতনতা
ঈদের সময় অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া এবং অনিয়মের কারণে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই কিছু বিষয় খেয়াল রাখা দরকার।- ঈদের খাবার খাওয়ার পর ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন।
- রাস্তার খাবার খাওয়ার সময় সতর্ক থাকুন।
- দীর্ঘ ভ্রমণের সময় বিশ্রামের সুযোগ নিন।
পরিবার ও শিশুদের নিয়ে ভ্রমণ
পরিবার বা শিশুদের নিয়ে ভ্রমণে গেলে কিছু বাড়তি প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়।- শিশুদের আরামদায়ক পোশাক পরান।
- তাদের পছন্দের খাবার ও খেলনা সাথে রাখুন।
- ভ্রমণের সময় তাদের প্রতি বাড়তি নজর দিন।
ঈদের আমেজ ধরে রাখুন
ঈদ মানেই পারিবারিক আনন্দ ও সম্প্রীতির উৎসব। ভ্রমণের সময় ঈদের আমেজ যেন ফিকে না হয়, সেজন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে পারেন।- স্থানীয় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করুন।
- পরিবারের সবার জন্য উপহার কেনার পরিকল্পনা করতে পারেন।
- ভ্রমণের স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি তুলুন ও ভিডিও তৈরি করুন।
পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ করুন
- প্লাস্টিকের ব্যবহার কমান।
- প্রকৃতির সৌন্দর্য নষ্ট করবেন না।
- স্থানীয়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করুন।
ঈদে মোটরসাইকেল ভ্রমণ
ঈদের ছুটিতে অনেকেই পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে দূরযাত্রার জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করে থাকেন। শহরের ভিড় এড়িয়ে সহজেই গ্রামের পথে পৌঁছানোর জন্য এটি কার্যকর বাহন হলেও ঈদের সময়ে সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকগুণ বেশি থাকে। বিশেষ করে দীর্ঘ ভ্রমণে অসতর্কতা, দ্রুতগতিতে চালানো, ওভারটেকিং এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যায়। তাই ঈদে মোটরসাইকেল ভ্রমণের আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা ও টিপস মেনে চলা জরুরি।মোটরসাইকেল ভ্রমণের সতর্কতা ও টিপস
- সঠিক গতি বজায় রাখুন: বেশি গতিতে চালানো সবসময় বিপজ্জনক, বিশেষ করে ঈদের সময়ে ব্যস্ত সড়কে। নিরাপদ গতি বজায় রেখে চালান।
- হেলমেট ও প্রটেকশন গিয়ার পরুন: চালক ও সহযাত্রী উভয়ের জন্য মানসম্পন্ন হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। প্রয়োজনীয় প্রটেকশন গিয়ার (গ্লাভস, জ্যাকেট, বুট) পরিধান করুন।
- সড়কের নিয়ম মেনে চলুন: ট্রাফিক আইন মেনে চলুন, হঠাৎ ওভারটেক করা থেকে বিরত থাকুন এবং বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনের গতিবিধি লক্ষ্য করুন।
- রাতে ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন: রাতে ভ্রমণের সময় দৃশ্যমানতা কম থাকে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। প্রয়োজনে পর্যাপ্ত আলো ও রিফ্লেক্টিভ পোশাক ব্যবহার করুন।
- চালানোর আগে বাইকের অবস্থান পরীক্ষা করুন: ব্রেক, টায়ার, হেডলাইট, ইন্ডিকেটর ও তেলের পরিমাণ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন যে বাইক সম্পূর্ণ সচল ও নিরাপদ।
- দীর্ঘ ভ্রমণে বিরতি নিন: অনেকক্ষণ টানা চালালে ক্লান্তি আসতে পারে, যা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। প্রতি ৫০-১০০ কিমি পর বিশ্রাম নিন।
- আবহাওয়া ও রাস্তার পরিস্থিতি বুঝে চালান: বৃষ্টির দিনে রাস্তা পিচ্ছিল থাকে, তাই ধীরগতিতে ও সতর্কতার সঙ্গে বাইক চালান।
- একসঙ্গে একাধিক আরোহী এড়িয়ে চলুন: বাইকের আসনে নির্ধারিত দুজনের বেশি ওঠানো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
- গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন: ড্রাইভিং লাইসেন্স, বাইকের কাগজপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখুন।
ফেসবুক: কুহুডাক