মহেরা জমিদার বাড়ির ইতিহাস

  • আপনার আশেপাশে বা আপনার জেলার বিখ্যাত ও দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে লিখুন। লক্ষ্য করুন, আপনার আশেপাশে কি কি স্থান বা স্থাপনা রয়েছে যার সম্পর্কে মানুষ তেমন জানেনা। সেটি হতে পারে একটি মসজিদ, মন্দির, জমিদারবাড়ি, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, পার্ক, লেক, নদী, সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, ঝর্ণা, ব্রিজ, সেতু, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, জাদুঘর কিংবা সুন্দর কোনো স্থান। আপনার কাছে থাকা মোবাইল দিয়ে ছবি তুলুন এবং সে স্থান সম্পর্কে একটি বর্ণনা দিয়ে কমিউনিটিতে আপনার জেলায় পোস্ট করুন।

Aiat24

সদস্য
মার্চ 23, 2025
1
2
6
ব্রিটিশ শাসন নেই, কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে জমিদারদের প্রতাপ। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে শুধু রয়ে গেছে তাদের স্মৃতিবিজড়িত কীর্তি। তেমনি একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য শৈলী টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ‘মহেড়া জমিদার বাড়ি’। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলেও যুগের পর যুগ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন সভ্যতার এই অনন্য নিদর্শন। রাজধানীর নিকটবর্তী টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ মাইল পূর্ব-দক্ষিণ দিকে এবং মির্জাপুর উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে প্রায় আট একর সুবিশাল জায়গা এই মহেড়া জমিদার বাড়ির বিস্তৃতি। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে উত্তরে ও মির্জাপুর সদর থেকে পশ্চিমে উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের মহেড়া গ্রামের প্রাণকেন্দ্রে এটি অবস্থিত। জানা গেছে, ১৮৯০ দশকের পূর্বে স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তৎকালে কালীচরণ সাহা ও আনন্দ সাহা নামে দুই সহোদর কলকাতা থেকে লবণ ও ডালের ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ-কড়ি আয় করে মহেড়া গ্রামে এসে বসতি গড়েন। এরপর তারা এই সুবিশাল বাড়িটি নির্মাণ করে জমিদারি প্রথা শুরু করেন। সেই সময় তারা গ্রামের গরিব মানুষদের কাছে নিজেদের টাকা দাদন খাটাতে থাকেন। একপর্যায়ে যদি কেউ দাদনের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হতো তাহলে তাদের শাস্তি দেয়া হতো। এমনকি পাওনাদারদের কাছ থেকে তাদের সম্পদ ও জমিজামা নিলামে নিয়ে নিতো তারা। পরবর্তীতে, উনিশ শতকের দিকে ব্রিটিশ শাসনামলে জমিদারি প্রথা শুরু হলে কালীচরণ ও আনন্দ সাহার পুত্ররা করোটিয়ার চব্বিশ পরগনার জমিদারদের কাছ থেকে একটি অংশ প্রচুর অর্থ দিয়ে ক্রয় করেন। এরপর থেকে তাদের জমিদারি প্রতাপ ও শোষণ শুরু হয় এ অঞ্চলে। যদিও দুই ভাই কালীচরণ ও আনন্দ সাহার উত্তরাধিকারী রাজেন্দ্র রায় চৌধুরী জমিদারি পরিচালনাকালে এলাকায় গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, বিদ্যালয় স্থাপন ও পানির ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ করেন। ব্রিটিশ শাসনের শেষের দিকে জমিদারি প্রথা বাতিল হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় জমিদারদের অধিকাংশই ভারতে পাড়ি জমান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী জমিদার বাড়িতে হামলা করে এবং কুলবধূসহ পাঁচ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বাকিদের মধ্যে যারা বেঁচে ছিল তারা লৌহজং নদী দিয়ে নৌপথে দেশত্যাগ করেন। এরপর এখানে যখন মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছিল। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এই জমিদার বাড়িকে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭২ সালে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মান্নান এটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয়। মহেড়া জমিদার বাড়ির প্রবেশ পথের সম্মুখে রয়েছে সুবিশাল এক দীঘি যার নাম ‘বিশাখা সাগর’। দিঘীর দক্ষিণ পাশেই রয়েছে বিশাল আম্রকানন ও প্রধান তিনটি ভবনের পাশাপাশি অবস্থিত নায়েবের ঘর, কাছারি ঘর, গোমস্তাদের ঘর। এছাড়াও আছে কারুকার্জখচিত দুটি সুরম্য প্রবেশদ্বার, শোভাবর্ধনের জন্য দেশি-বিদেশি বাহারি রঙের আর নানান জাতের ফুলের গাছ। মহেড়া জমিদার বাড়ির মূল আকর্ষণ চৌধুরী লজ, মহারাজা লজ, আনন্দ লজ ও কালীচরণ লজ। চুনাপাথর, সুরকি আর ইটের সমন্বয়ে নির্মিত এই ভবনগুলো যে কারো নজর কাড়ে। বিগত বছরগুলোতে এই জমিদার বাড়ি দেশের অন্যতম সেরা প্রাচীন দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত পাওয়ায় পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বেশকিছু সংস্কার কাজ করা হয়। এর মধ্যে ভবনগুলোর রঙ পরিবর্তন করে নতুন রুপ দেয়া, মিনিপার্ক ও চিড়িয়াখানা স্থাপন, পিকনিক স্পট হিসেবে রাত যাপনের ব্যবস্থাসহ সিনেমার শুটিং স্পট হিসেবেও এটি বিবেচিত হয়। ঢাকা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার দূরত্বে ৮০ টাকা প্রবেশ মূল্যে যে কেউ চাইলে এসে ঘুরে যেতে পারেন দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এই মহেড়া জমিদার বাড়ি।
 
  • লাভ
  • লাইক
Reactions: Kuhudak and Arif
ব্রিটিশ শাসন নেই, কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে জমিদারদের প্রতাপ। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে শুধু রয়ে গেছে তাদের স্মৃতিবিজড়িত কীর্তি। তেমনি একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য শৈলী টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ‘মহেড়া জমিদার বাড়ি’। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলেও যুগের পর যুগ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন সভ্যতার এই অনন্য নিদর্শন। রাজধানীর নিকটবর্তী টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ মাইল পূর্ব-দক্ষিণ দিকে এবং মির্জাপুর উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে প্রায় আট একর সুবিশাল জায়গা এই মহেড়া জমিদার বাড়ির বিস্তৃতি। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে উত্তরে ও মির্জাপুর সদর থেকে পশ্চিমে উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের মহেড়া গ্রামের প্রাণকেন্দ্রে এটি অবস্থিত। জানা গেছে, ১৮৯০ দশকের পূর্বে স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তৎকালে কালীচরণ সাহা ও আনন্দ সাহা নামে দুই সহোদর কলকাতা থেকে লবণ ও ডালের ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ-কড়ি আয় করে মহেড়া গ্রামে এসে বসতি গড়েন। এরপর তারা এই সুবিশাল বাড়িটি নির্মাণ করে জমিদারি প্রথা শুরু করেন। সেই সময় তারা গ্রামের গরিব মানুষদের কাছে নিজেদের টাকা দাদন খাটাতে থাকেন। একপর্যায়ে যদি কেউ দাদনের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হতো তাহলে তাদের শাস্তি দেয়া হতো। এমনকি পাওনাদারদের কাছ থেকে তাদের সম্পদ ও জমিজামা নিলামে নিয়ে নিতো তারা। পরবর্তীতে, উনিশ শতকের দিকে ব্রিটিশ শাসনামলে জমিদারি প্রথা শুরু হলে কালীচরণ ও আনন্দ সাহার পুত্ররা করোটিয়ার চব্বিশ পরগনার জমিদারদের কাছ থেকে একটি অংশ প্রচুর অর্থ দিয়ে ক্রয় করেন। এরপর থেকে তাদের জমিদারি প্রতাপ ও শোষণ শুরু হয় এ অঞ্চলে। যদিও দুই ভাই কালীচরণ ও আনন্দ সাহার উত্তরাধিকারী রাজেন্দ্র রায় চৌধুরী জমিদারি পরিচালনাকালে এলাকায় গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, বিদ্যালয় স্থাপন ও পানির ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ করেন। ব্রিটিশ শাসনের শেষের দিকে জমিদারি প্রথা বাতিল হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় জমিদারদের অধিকাংশই ভারতে পাড়ি জমান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী জমিদার বাড়িতে হামলা করে এবং কুলবধূসহ পাঁচ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বাকিদের মধ্যে যারা বেঁচে ছিল তারা লৌহজং নদী দিয়ে নৌপথে দেশত্যাগ করেন। এরপর এখানে যখন মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছিল। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এই জমিদার বাড়িকে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭২ সালে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মান্নান এটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয়। মহেড়া জমিদার বাড়ির প্রবেশ পথের সম্মুখে রয়েছে সুবিশাল এক দীঘি যার নাম ‘বিশাখা সাগর’। দিঘীর দক্ষিণ পাশেই রয়েছে বিশাল আম্রকানন ও প্রধান তিনটি ভবনের পাশাপাশি অবস্থিত নায়েবের ঘর, কাছারি ঘর, গোমস্তাদের ঘর। এছাড়াও আছে কারুকার্জখচিত দুটি সুরম্য প্রবেশদ্বার, শোভাবর্ধনের জন্য দেশি-বিদেশি বাহারি রঙের আর নানান জাতের ফুলের গাছ। মহেড়া জমিদার বাড়ির মূল আকর্ষণ চৌধুরী লজ, মহারাজা লজ, আনন্দ লজ ও কালীচরণ লজ। চুনাপাথর, সুরকি আর ইটের সমন্বয়ে নির্মিত এই ভবনগুলো যে কারো নজর কাড়ে। বিগত বছরগুলোতে এই জমিদার বাড়ি দেশের অন্যতম সেরা প্রাচীন দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত পাওয়ায় পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বেশকিছু সংস্কার কাজ করা হয়। এর মধ্যে ভবনগুলোর রঙ পরিবর্তন করে নতুন রুপ দেয়া, মিনিপার্ক ও চিড়িয়াখানা স্থাপন, পিকনিক স্পট হিসেবে রাত যাপনের ব্যবস্থাসহ সিনেমার শুটিং স্পট হিসেবেও এটি বিবেচিত হয়। ঢাকা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার দূরত্বে ৮০ টাকা প্রবেশ মূল্যে যে কেউ চাইলে এসে ঘুরে যেতে পারেন দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এই মহেড়া জমিদার বাড়ি।
মহেড়া জমিদার বাড়ি যাওয়ার অনেক ইচ্ছে ছিল। কয়েকবার প্ল্যান করেও যাওয়া হয়ে উঠেনি। দেখি, ইদের পর যেতে পারি কিনা।

তথ্যের জন্য ধন্যবাদ।
 

কমিউনিটি ফিড

ডুবাই কামলা ভিসা হচ্চে
আমি হবো ভ্রমণ পাখি!
কুহুডাক ভ্রমণ কমিউনিটি

বাংলাদেশের সেরা ভ্রমণ স্থান কোনটি?

  • কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

    ভোট: 2 50.0%
  • সুন্দরবন

    ভোট: 0 0.0%
  • সেন্ট মার্টিন দ্বীপ

    ভোট: 1 25.0%
  • সাজেক ভ্যালি

    ভোট: 1 25.0%
  • পানাম নগর

    ভোট: 0 0.0%
  • জাফলং

    ভোট: 0 0.0%