মাউন্ট এভারেস্ট কি? মাউন্ট এভারেস্ট (Mount Everest) বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এটি হিমালয় পর্বতমালার মহালাংগুর হিমালয়ে অবস্থিত এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার (২৯,০৩১.৭ ফুট)। মাউন্ট এভারেস্টের স্থানীয় নাম নেপালে ‘সাগরমাথা’ এবং তিব্বতে ‘চোমোলুংমা’, যার অর্থ “বিশ্বের মা।” এটি শুধু একটি পর্বত নয়, বরং বিশ্বজুড়ে পর্বতারোহীদের জন্য একটি স্বপ্নের স্থান।
আরও: আল্পস পর্বতমালা কি
অবস্থান
মাউন্ট এভারেস্ট নেপাল এবং তিব্বতের সীমান্তে অবস্থিত। নেপালের খুম্বু অঞ্চল এবং তিব্বতের শিগাতসে অঞ্চলের মধ্যে এই পর্বত বিস্তৃত। পর্বতের বেস ক্যাম্প থেকে শুরু করে শীর্ষে পৌঁছানোর পথে বিভিন্ন ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়েছে।
ইতিহাস
মাউন্ট এভারেস্টের নামকরণ করা হয় ব্রিটিশ সার্ভেয়ার জেনারেল স্যার জর্জ এভারেস্টের নামে। ১৯৫৩ সালের ২৯ মে, স্যার এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে প্রথম এই পর্বতের শীর্ষে পৌঁছান। এটি ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা ছিল।
আরও: ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও উপজাতির মধ্যে পার্থক্য
অভিযানের তথ্য
মাউন্ট এভারেস্টে উঠার পথগুলোকে সাধারণত দুটি প্রধান রুটে ভাগ করা হয়:
- দক্ষিণ-পূর্ব রিজ রুট (নেপাল থেকে)
- উত্তর রিজ রুট (তিব্বত থেকে)
দক্ষিণ-পূর্ব রিজ রুট সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং তুলনামূলকভাবে সহজ। তবে, প্রতিটি রুটেই কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন:
- উচ্চ উচ্চতার কারণে অক্সিজেনের ঘাটতি।
- হিমবাহ, বরফধস এবং চরম আবহাওয়ার ঝুঁকি।
- খুম্বু আইসফল, যা অভিযাত্রীদের জন্য অন্যতম বিপজ্জনক স্থান।
কীভাবে পৌঁছাবেন
নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডু থেকে লুকলা পর্যন্ত বিমান ভ্রমণ মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানের প্রথম ধাপ। লুকলা থেকে ট্রেকিং শুরু করে খুম্বু অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম অতিক্রম করে এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে পৌঁছানো যায়।
আরও: বিশ্বের বিখ্যাত ক্লক টাওয়ার
ভ্রমণের সময়
মাউন্ট এভারেস্টে ওঠার জন্য দুটি প্রধান মৌসুম হলো:
- বসন্ত (এপ্রিল-মে): এই সময় আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকে।
- শরৎ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর): ঠাণ্ডা কম এবং পরিবেশ স্পষ্ট থাকে।
প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা
মাউন্ট এভারেস্টে ভ্রমণের জন্য শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে:
- উচ্চতায় অভিযোজনের জন্য সময় নেওয়া (Acclimatization)।
- প্রশিক্ষিত গাইড ও শেরপার সহায়তা নেওয়া।
- যথাযথ পোশাক এবং সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা।
মাউন্ট এভারেস্টের চ্যালেঞ্জ
মাউন্ট এভারেস্টে অভিযানের মূল চ্যালেঞ্জগুলো হলো:
- উচ্চতাজনিত অসুস্থতা (AMS)।
- হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা।
- তীব্র বাতাস এবং তুষারঝড়।
পরিবেশগত প্রভাব
মাউন্ট এভারেস্টে পর্যটন ও অভিযান পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বর্জ্য ও প্লাস্টিক দূষণ পর্বতের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই অভিযাত্রীদের উচিত তাদের বর্জ্য সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসা এবং পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখা।
আরও: ওমরাহ কাকে বলে
আকর্ষণীয় তথ্য
- মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা প্রতিবছর সামান্য পরিবর্তিত হয়।
- এখন পর্যন্ত হাজার হাজার অভিযাত্রী পর্বতটির শীর্ষে উঠেছেন।
- শেরপারা অভিযানের পেছনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মাউন্ট এভারেস্ট শুধু একটি প্রাকৃতিক বিস্ময় নয়, বরং এটি মানুষের স্বপ্ন, শক্তি এবং সাহসিকতার প্রতীক। আপনি যদি এভারেস্টে ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন, তবে সতর্কতা এবং সচেতনতা নিয়ে ভ্রমণে যেতে পারেন।
ফেসবুক: কুহুডাক