ইমিগ্রেশন (Immigration) বা অভিবাসন হল এক দেশ থেকে অন্য দেশে বসবাসের উদ্দেশ্যে মানুষের স্থানান্তর প্রক্রিয়া। এটি মূলত স্থায়ীভাবে কোনো দেশে বসবাস বা কাজের অনুমতি অর্জনের সাথে যুক্ত। ইমিগ্রেশন শুধুমাত্র দেশের বাসিন্দা হওয়ার প্রক্রিয়া নয় বরং বৈধ উপায়ে অন্য দেশে যাওয়ার জন্য বিশেষ অনুমতির একটি প্রক্রিয়া, যা ইমিগ্রেশন ভিসার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
কুহুডাকের আজকের পোস্টে আমরা ইমিগ্রেশন কি এবং ইমিগ্রেশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। চলুন শুরু করা যাক…
আরও: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা
ইমিগ্রেশনের কাজ কি?
ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার মূল কাজ হলো ভ্রমণকারী বা প্রবাসীদের একটি নতুন দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া। দেশগুলোর ইমিগ্রেশন বিভাগ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ, বাসিন্দা অনুমোদন, বিদেশিদের সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং তাদের বৈধ কাগজপত্র পরীক্ষা করার দায়িত্বে থাকে। ইমিগ্রেশন শুধুমাত্র পর্যটকদের জন্য নয় বরং এটি শিক্ষার্থী, কাজের সন্ধানে আগত ব্যক্তি এবং স্থায়ীভাবে বাস করতে চাওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
কেন মানুষ ইমিগ্রেশন করে?
ইমিগ্রেশনের পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে কর্মসংস্থান, উচ্চ শিক্ষা, উন্নত জীবনযাত্রার মান অর্জন, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং পারিবারিক পুনর্মিলনের মতো কারণগুলো উল্লেখযোগ্য। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে ইমিগ্রেশনের প্রবণতা বেশি দেখা যায়, কারণ এই দেশগুলোতে সুযোগের পরিধি তুলনামূলকভাবে বেশি।
আরও: বিমানে ভ্রমণের নিয়ম
ইমিগ্রেশন ভিসা কি?
ইমিগ্রেশন ভিসা এমন একটি কাগজপত্র যা ব্যক্তি বিশেষকে স্থায়ীভাবে অন্য দেশে বসবাসের অনুমতি দেয়। যারা বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান, তাদের জন্য এই ভিসা প্রয়োজন। ইমিগ্রেশন ভিসার জন্য নির্দিষ্ট দেশের ইমিগ্রেশন বিভাগ বা দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করতে হয় এবং আবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ এবং নথিপত্র যাচাই শেষে ইমিগ্রেশন ভিসা প্রদান করা হয়।
ইমিগ্রেশন অফিসারের কাজ
ইমিগ্রেশন অফিসাররা বিদেশগামী যাত্রীদের পাসপোর্ট, ভিসা এবং অন্যান্য নথিপত্র যাচাই করেন এবং অনুমোদন দেন। তাদের কাজের মধ্যে আছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখা, অবৈধ বসবাস বা কাজ প্রতিরোধ করা এবং দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে যাত্রীদের তথ্য সঠিকভাবে সংগ্রহ করা।
ইমিগ্রেশন ভিসা প্রসেসিং
ইমিগ্রেশন ভিসা বা অভিবাসন ভিসা প্রসেসিং একটি জটিল প্রক্রিয়া যেখানে আবেদনকারীর ব্যাকগ্রাউন্ড, শিক্ষা, কর্মদক্ষতা, আর্থিক সামর্থ্য এবং আইনি রেকর্ড পরীক্ষা করা হয়। ইমিগ্রেশন বিভাগ আবেদনকারীকে একটি নির্দিষ্ট তালিকার আওতায় পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে তাকে ভিসা দেওয়া হবে কি না।
নন-ইমিগ্রেশন ভিসা কী?
নন-ইমিগ্রেশন ভিসা তাদের জন্য যারা অস্থায়ীভাবে কোনো দেশে প্রবেশের অনুমতি চান, যেমন পর্যটক, শিক্ষার্থী বা ব্যবসায়িক ভ্রমণকারীরা। এই ধরনের ভিসা দিয়ে কোনো ব্যক্তি স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারেন না; নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তাকে দেশে ফিরে যেতে হয়।
আরও: বিমানবন্দরে লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা ও টিপস
ইমিগ্রেশন কার্ড
ইমিগ্রেশন কার্ড একটি ছোট নথি, যা যাত্রীরা অন্য দেশে প্রবেশ করার সময় পূরণ করেন। এতে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম, ঠিকানা, পাসপোর্ট নম্বর এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্য উল্লেখ করতে হয়। সাধারণত ইমিগ্রেশন বিভাগ বিদেশি নাগরিকদের আগমন এবং প্রস্থান সহজ করার জন্য এই কার্ড ব্যবহার করে থাকে।
বাংলাদেশে ইমিগ্রেশন পুলিশ
বাংলাদেশে ইমিগ্রেশন পুলিশ দেশের নিরাপত্তা এবং বৈধতার বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্ব পালন করে। তারা যাত্রীদের সঠিক নথিপত্র পরীক্ষা এবং সংগ্রহ করে থাকে এবং অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের শনাক্তকরণের কাজও করে।
আরও: বিমানবালা কি
ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় সাধারণ প্রশ্নোত্তর
অনেকের মনে ইমিগ্রেশন নিয়ে বেশ কিছু সাধারণ প্রশ্ন জাগে। নিচে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেয়া হলো।
ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া কত সময় লাগে?
ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার সময়কাল দেশের উপর নির্ভর করে। উন্নত দেশগুলোতে এই সময় বেশ দীর্ঘ হয় কারণ তারা প্রত্যেক আবেদনকারীর তথ্য নির্ভুলভাবে যাচাই করে।
ইমিগ্রেশন ভিসার জন্য কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন?
ইমিগ্রেশন ভিসার জন্য সাধারণত পাসপোর্ট, ফটো, শিক্ষাগত সনদ, কর্মদক্ষতা এবং আর্থিক অবস্থার প্রমাণপত্র প্রয়োজন হয়।
ইমিগ্রেশন অফিসার কিভাবে বিদেশিদের যাচাই করেন?
ইমিগ্রেশন অফিসাররা প্রতিটি ব্যক্তির নথিপত্র যাচাই করেন এবং তাদের জাতীয় নিরাপত্তার রেকর্ডের সাথে তুলনা করেন।
ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় ভুল হলে কী হবে?
ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় কোনো ভুল বা অসংগতি থাকলে ইমিগ্রেশন অফিসার তা সংশোধন করতে পারবেন না। এর জন্য আবেদনকারীকে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র প্রদান করে পুনরায় আবেদন করতে হয়।
ফেসবুক: কুহুডাক