বাংলাদেশ থেকে ভিসা ছাড়া যেসব দেশে ভ্রমণ করা যায় তার লিস্ট দেয়া হল। এখানে ভিসা ছাড়া বলতে অন-এরাইভাল ভিসা বা ই-ভিসার কথা বলা হয়েছে। তবে বলে রাখা ভালো যে, বাংলাদেশ থেকে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করা যায় এমন দেশের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
বিশ্বের শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিন দিন এগ্রসর হচ্ছে। বিশ্বের শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকায় এগিয়ে গেলেই যে, ভিসা ছাড়া অন্য দেশে যাওয়া যাবে এমনি কিন্তু নয়। আবার উল্টো ভাবে বলা যায় যে, বাংলাদেশের পাসপোর্ট শক্তিশালী হলে ই-ভিসার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে এটাও সত্য।
আজকের পোস্টে আমরা বাংলাদেশ থেকে ভিসা ছাড়া বা অন-এরাইভাল ভিসা অথবা ই-ভিসায় বিশ্বের কয়টি দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন তা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। চলুন শুরু করা যাক…
আরও: কাতার ভিসা চেক করবেন যেভাবে (সহজ উপায়)
অন-এরাইভাল ভিসা বা ই-ভিসা কি
অন-এরাইভাল ভিসা এবং ই-ভিসা ভ্রমণকারীদের জন্য দুই ধরনের ভিসা সুবিধা রয়েছে, যা সহজ এবং দ্রুততর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রদান করা হয়। এই ভিসাগুলির মাধ্যমে ভ্রমণকারীরা স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট দেশে প্রবেশ করতে পারেন। নিচে এই ভিসা দুটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
অন-এরাইভাল ভিসা (Visa on Arrival)
অন-এরাইভাল ভিসা (Visa on Arrival) হচ্ছে এটি একটি ভিসা, যা নির্দিষ্ট দেশে পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে বা প্রবেশ পয়েন্টে সরাসরি প্রদান করা হয়। সাধারণত বিমানবন্দরে বা প্রবেশ পয়েন্টে একটি কাউন্টার থাকে, যেখানে আবেদনকারীরা তাদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট (যেমন, পাসপোর্ট, ফটো, ভিসা ফি) জমা দিয়ে ভিসা সংগ্রহ করেন। এটি খুবই সুবিধাজনক, কারণ পূর্বে ভিসার জন্য আপনাকে দূতাবাসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
আরও: পাসপোর্ট হয়েছে কিনা চেক করবেন যেভাবে
ই-ভিসা (Electronic Visa বা e-Visa)
ই-ভিসা (Electronic Visa বা e-Visa) হচ্ছে এটি একটি ইলেকট্রনিক ভিসা, যা অনলাইনে আবেদন করে সংগ্রহ করা যায়। ভ্রমণকারীরা নির্দিষ্ট দেশের ই-ভিসা ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইন আবেদন ফর্ম পূরণ করেন, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করেন এবং ফি পরিশোধ করেন। আবেদন প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হলে, ভিসার অনুমোদন ইমেলে প্রদান করা হয়।
এটি অত্যন্ত দ্রুত এবং সুবিধাজনক, কারণ আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অনলাইনে সম্পন্ন করা যায়। দূতাবাসে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।
উভয় প্রকারের ভিসার সুবিধা হলো, তারা ভ্রমণকারীদের জন্য দ্রুত এবং সহজ ভিসা প্রক্রিয়া প্রদান করে। তবে, ভিসার প্রয়োজনীয়তা এবং শর্তাবলী দেশের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই যেকোনো ভিসার জন্য আবেদন করার আগে সংশ্লিষ্ট দেশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা দূতাবাস থেকে সঠিক তথ্য জেনে নেওয়া উচিৎ।
আরও: এয়ার টিকিট
বাংলাদেশ থেকে ভিসা ছাড়া যেসব দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন
বাংলাদেশ থেকে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করা যায় এমন দেশের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পান, যেমন: ভিসা-ফ্রি এন্ট্রি, ভিসা অন অ্যারাইভাল, এবং ই-ভিসা সুবিধা। নিচে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা ছাড়া ভ্রমণযোগ্য কিছু দেশের তালিকা এবং সেগুলির ভ্রমণ সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরা হলো:
ভিসা-ফ্রি দেশসমূহ
বাংলাদেশ থেকে ভিসা-ফ্রি দেশসমূহের লিস্ট নিচে দেয়া হল-
ভূটান
দক্ষিণ এশিয়ার এই ছোট্ট দেশটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। পাহাড়, বন এবং ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য দেখতে পর্যটকরা এখানে ভ্রমণ করে থাকেন। দক্ষিণ এশিয়ার এই ছোট্ট দেশটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। পাহাড়, বন এবং ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য দেখতে পর্যটকরা এখানে ভ্রমণ করে থাকেন। বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য এই দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশাধিকার রয়েছে। প্রবেশের পর ১৪ দিন থাকতে পারবেন।
মালদ্বীপ
পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর দ্বীপপুঞ্জ, মালদ্বীপ তার সাদা বালির সৈকত এবং বিলাসবহুল রিসর্টগুলির জন্য পরিচিত। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই দেশ বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশ হিসেবে স্বীকৃত। এই দেশে পাবলিক দ্বীপ এবং প্রাইভেট দ্বীপ মিলে ১২০০+ ছোট বড় দ্বীপ রয়েছে!
মালদ্বীপে ভ্রমণের জন্য ৩০ দিনের ভিসা পাওয়া যায়। ভ্রমণের সময় হোটেল বুকিং এবং ফ্লাইটের রিটার্ন টিকেট থাকা বাধ্যতামূলক।
আরও: মালদ্বীপ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানুন এখানে: মালদ্বীপ ভ্রমণ গাইড
শ্রীলঙ্কা
ঐতিহাসিক মন্দির, সুন্দর সৈকত এবং চা বাগান দেখতে পর্যটকদের জন্য একটি আদর্শ স্থান হচ্ছে শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কা ভ্রমণের জন্য ৩০ দিনের ভিসা পাওয়া যায়।
ভিসা অন অ্যারাইভাল (Visa on Arrival) দেশসমূহ
বাংলাদেশ থেকে ভিসা অন অ্যারাইভাল (Visa on Arrival) দেশসমূহের লিস্ট দেয়া হল-
নেপাল
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত নেপাল দেশটি মাউন্ট এভারেস্ট এবং অন্যান্য পর্বতের জন্য পরিচিত। এছাড়াও, এখানে অনেক ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় স্থান রয়েছে। নেপাল ভ্রমণের জন্য ৯০ দিনের জন্য ভিসা পাওয়া যায়।
কম্বোডিয়া
অ্যাংকোর ওয়াট এবং অন্যান্য প্রাচীন মন্দির কম্বোডিয়ার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এছাড়াও, দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও দর্শনীয়। বাংলাদেশ থেকে কম্বোডিয়া ভ্রমণের জন্য ৩০ দিনের ভিসা পাওয়া যায়।
লাওস
প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতে চাইলে লাওস একটি চমৎকার গন্তব্য। এখানে অনেক সুন্দর জলপ্রপাত এবং গুহা রয়েছে। বাংলাদেশীদের জন্য লাওস ভ্রমণের ৩০ দিনের ভিসা পাওয়া যায়। লাও ভাষা এই দেশের সরকারি ভাষা।
ই-ভিসা (E-Visa) দেশসমূহ
চলুন এবার বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে ই-ভিসা (E-Visa) যাওয়া যায় সে সব দেশে সম্পর্কে জানি-
ভারত
বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত তার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, ঐতিহাসিক স্থান এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশি নাগরিকরা অনলাইনে ই-ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন এবং সাধারণত ৬০ দিনের জন্য প্রবেশাধিকার পেয়ে থাকেন।
মালয়েশিয়া
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি তার আধুনিক শহর কুয়ালালামপুর, বিচ্ছিন্ন দ্বীপপুঞ্জ এবং প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের জন্য পরিচিত। বাংলাদেশি নাগরিকগন ই-ভিসার মাধ্যমে ৩০ দিনের জন্য প্রবেশাধিকার পায়ে থাকেন।
সিঙ্গাপুর
আধুনিক স্থাপত্য, কৃত্রিম দ্বীপ এবং গার্ডেনস বাই দ্য বে’র মতো পর্যটন স্থানগুলির জন্য সিঙ্গাপুর বিশ্বজুড়ে পরিচিত। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ই-ভিসার মাধ্যমে ৩০ দিনের জন্য প্রবেশাধিকার পেয়ে থাকেন।
বাংলাদেশ থেকে ভিসা ছাড়া যাওয়া দেশের লিস্ট
বর্তমানে, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য বেশ কিছু দেশে ভিসা ফ্রি বা ভিসা অন অ্যারাইভাল সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। তবে এ সংখ্যা পরিবর্তন হতে পারে, তাই আপডেট থাকা জরুরি। এখানে ভিসা ফ্রি, ভিসা অন অ্যারাইভাল, এবং ই-ভিসা সুবিধাসহ মোট ৪৭টি দেশের একটি বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হলো:
ভিসা-ফ্রি দেশসমূহ
- ভূটান
- ডোমিনিকা
- ইন্দোনেশিয়া
- মালদ্বীপ
- মাইক্রোনেশিয়া
- সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইনস
ভিসা অন অ্যারাইভাল দেশসমূহ
- ক্যাপ ভার্দে
- কমোরোস
- গিনি বিসাউ
- ইরান
- লাওস
- মাদাগাস্কার
- মালাউই
- মালদ্বীপ
- মাউরিতানিয়া
- মোজাম্বিক
- নেপাল
- পালাউ
- রুয়ান্ডা
- সামোয়া
- সেশেলস
- সোমালিয়া
- তিমুর লেস্টে
- তোগো
- তুভালু
- উগান্ডা
- জিম্বাবুয়ে
ই-ভিসা দেশসমূহ
- অ্যাঙ্গোলা
- অ্যাজারবাইজান
- বাহরাইন
- ক্যাম্বোডিয়া
- কোটা দিভোয়ার
- গ্যাবন
- জর্জিয়া
- ভারত
- কেনিয়া
- কিরগিজস্তান
- লেসোথো
- মালয়েশিয়া
- মায়ানমার
- নরফোক দ্বীপপুঞ্জ
- কাতার
- সাও টোমে এবং প্রিন্সিপে
- সিঙ্গাপুর
- শ্রীলঙ্কা
- তাজিকিস্তান
- জাম্বিয়া
৬ (ভিসা-ফ্রি) + ২১ (ভিসা অন অ্যারাইভাল) + ২০ (ই-ভিসা) = মোট ৪৭টি দেশ।
ভিসা ছাড়া ভ্রমণের জন্য কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন
- আপনার একটি বৈধ পাসপোর্ট।
- রিসেন্ট ছবি (সাধারণত ৩ মাসের বেশি পুরানো নয় এমন)। ছবির সাইজ নির্ভর করবে যেই দেশে যাচ্ছেন সেখানকার রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী।
- ভিসা আবেদনপত্র (Visa Application Form) [যদি থাকে]
- প্রয়োজনীয় ফি দিতে ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড কিংবা ক্যাশ।
- ফ্লাইট টিকিট এবং হোটেল রিজার্ভেশনের কপি।
বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা ছাড়া ভ্রমণের সুযোগ ক্রমাগত বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক পর্যটনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। বর্তমান সময়ে ৪৭টি দেশে বাংলাদেশি নাগরিকরা ভিসা ছাড়া বা ভিসা অন অ্যারাইভাল সুবিধার মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পারেন। এই দেশগুলোর মধ্যে অনেকেই ভিসা-ফ্রি, ভিসা অন অ্যারাইভাল এবং ই-ভিসা সুবিধা প্রদান করে, যা ভ্রমণকারীদের জন্য আরও সহজ এবং সুবিধাজনক।
ভিসা-ফ্রি ভ্রমণ
ভূটান, ডোমিনিকা, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মাইক্রোনেশিয়া, এবং সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইনসের মতো দেশগুলো ভিসা-ফ্রি ভ্রমণের সুযোগ দেয়। এসব দেশে ভ্রমণের সময় আপনি তাদের অনন্য সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং আতিথেয়তা উপভোগ করতে পারবেন।
ভিসা অন অ্যারাইভাল
কম্বোডিয়া, নেপাল, লাওস, ইরান, মাদাগাস্কার, মালাউই, এবং অন্যান্য দেশগুলোতে আপনি ভিসা অন অ্যারাইভাল সুবিধা পেতে পারেন। এই সুবিধার মাধ্যমে আপনি আগমনের পরপরই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভ্রমণের অনুমতি পাবেন।
ই-ভিসা
ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, কিরগিজস্তান, এবং অন্যান্য দেশগুলো ই-ভিসা সুবিধা প্রদান করে। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অনলাইনে সম্পন্ন হয়, যা ভ্রমণকারীদের জন্য আরও বেশি সুবিধাজনক এবং সময় সাশ্রয়ী।
বি:দ্র: ভিসা ছাড়া ভ্রমণের এই সুবিধাগুলি বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অর্জনের পথকে আরও সহজ করে তুলেছে। যেকোনো ভ্রমণের আগে সংশ্লিষ্ট দেশের বর্তমান ভিসা নীতি এবং প্রয়োজনীয় শর্তাদি যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভ্রমণের পূর্বে অবশ্যই সেই দেশের ভিসা নীতির কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা আগে যাচাই করে নিবেন।
আপনার ভ্রমণ হউক নিরাপদ ও আনন্দময়।
ফেসবুক: কুহুডাক