ইউকে ট্যুরিস্ট ভিসা (UK Tourist VISA) বা যুক্তরাজ্য ভিজিট ভিসা নিয়ে গাইড পাবেন এই পোস্টে। সাথে ট্যুরিস্ট ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া, কি কি ডকুমেন্ট লাগবে এবং সাধারণ প্রশ্ন-উত্তর তো থাকছেই। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া (Australia), ইউকে (UK) বা যুক্তরাজ্য (United Kingdom) ও কানাডা (Canada) ভিজিট ভিসা টোটাল প্রসেস অনলাইনের মাধ্যমেই করা যায়। যেকোনো বাংলাদেশী নাগরিক চাইলে ইউকে ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
কিভাবে ইউকে ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করবেন তা নিয়ে চলুন বিস্তারিত জানা যাক…
আরও: বাংলাদেশ থেকে ভিসা ছাড়া যেসব দেশে ভ্রমণ করা যায়
ইউকে ট্যুরিস্ট ভিসা প্রসেস
যুক্তরাজ্য ভ্রমণের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা (Standard Visitor Visa) প্রয়োজন হয়। এই ভিসা আপনাকে ৬ মাস পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দিবে। তবে কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এটি ২, ৫ বা ১০ বছর মেয়াদী হতে পারে, যেখানে আপনি প্রতি ভ্রমণে সর্বাধিক ৬ মাস থাকতে পারবেন।
ইউকে ট্যুরিস্ট ভিসা আবেদনের জন্য কি যোগ্যতা লাগে?
যেকোনো বাংলাদেশী নাগরিক চাইলে ইউকে ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে, আপনাকে অবশ্যই প্রয়োজনই ডকুমেন্ট সঠিক ভাবে জমা দিতে হবে। সব চেয়ে জরুরী বিষয় হচ্ছে, অনলাইনে ফর্ম পূরণের সময় ভালো করে বুঝে সঠিক তথ্য দিয়ে ফর্ম পূরণ করতে হবে। ভুল তথ্য দিয়ে ফর্ম পূরণ করলে আপনার ভিসা আবেদন বাতিল করা হতে পারে। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিন অথবা ভালো করে বুঝে আবেদন করুন।
- ভ্রমণ শেষে অবশ্যই আপনাকে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করতে হবে।
- ভ্রমণকালীন সময়ে অবশ্যই নিজেকে এবং ডিপেন্ডেন্ট ভিজিটরকে (স্বামী/স্ত্রী এবং ১৮ বছরের কম বয়সী সন্তান) সাপোর্ট দেওয়ার সক্ষমতা থাকতে হবে।
- ইউকে অবস্থান করার এবং সেখান থেকে রিটার্নের যাবতীয় খরচ বহন করার সক্ষমতা থাকতে হবে।
কমপ্লিট ভিসা আবেদন করার ধাপ সমূহ
UK টুরিস্ট ভিসা আবেদন করার সম্পূর্ণ ধাপ সমূহ দেখুন।
- ধাপ ১: ইউকে ভিসা ফর্ম অনলাইনে পূরণ করুন।
- ধাপ ২: জমা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনিও ডকুমেন্টস সংগ্রহ করুন।
- ধাপ ৩: VFS Global এ আপনার বায়োমেট্রিক্স জমা দিন।
- ধাপ ৪: ভিসা অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করুন।
- ধাপ ৫: ভিএফএস গ্লোবাল (VFS Global) ঢাকা থেকে পাসপোর্ট ডেলিভারি পান।
আরও: পাসপোর্ট হয়েছে কিনা চেক করবেন যেভাবে
ইউকে ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট চেকলিস্ট
ইউকে ট্যুরিস্ট ভিসা অনলাইনে আবেদনের জন্য আপনার বেশ কিছু তথ্যের প্রয়োজন হবে। ওয়েবসাইটে আবেদন করার পূর্বে আপনাকে যে সব ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে হবে তার লিস্ট নিচে দেয়া হল।
- বৈধ পাসপোর্ট (অন্তত ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে) এবং পুরানো পাসপোর্ট (যদি পূর্বে কোথাও ভ্রমণ করে থাকেন)।
- জন্ম সনদ/জাতীয় পরিচয়পত্র।
- গত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট সহ সলভেন্সি সনদ।
- অন্য কোন এফডিআর, ফিক্সড ডিপোজিট, সম্পত্তি (যদি থাকে)।
- ব্যক্তিগত টিন সার্টিফিকেট।
- পেশা প্রমাণ:
- ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স, টিন এবং ব্যবসা শুরুর তারিখ।
- কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এনওসি + অফিস আইডি + বেতনের ব্যাংক স্টেটমেন্ট (পছন্দসই)/ বেতনের স্লিপ/ বেতনের সনদ প্রয়োজন।
- শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল থেকে এনওসি এবং বৈধ ছাত্র আইডি।
- সরকারি সেবার জন্য জিও লেটার।
- পিতা, মাতা, স্ত্রীর পূর্ণ নাম, জন্ম তারিখ এবং জন্মস্থান।
- আবেদনকারীর সন্তানের পূর্ণ নাম, পাসপোর্ট নম্বর (যদি থাকে) এবং জন্ম তারিখ (তাদের সবাই), জন্মস্থান।
- ব্যবসায়িক ভ্রমণের ক্ষেত্রে, যুক্তরাজ্যের সংস্থা থেকে আমন্ত্রণপত্র প্রদান করতে হবে।
- যুক্তরাজ্যে আপনি যাঁর পরিবারের সদস্যের সাথে দেখা করবেন তার প্রমাণও প্রদান করতে হবে (যদি আপনি পরিবারের সদস্যের সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন), এর মধ্যে রয়েছে:
- তাদের থেকে আমন্ত্রণপত্র।
- তাদের আর্থিক এবং কর্মসংস্থানের পরিস্থিতির প্রমাণ, যেমন ব্যাংক বিবৃতি বা বেতন স্লিপ।
- যুক্তরাজ্যে তাদের অভিবাসন পরিস্থিতির প্রমাণ যা দেখায় তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করছে বা যুক্তরাজ্যে আশ্রয় মানবিক মর্যাদা পেয়েছে, যেমন একটি বৈধ ভিসা বা পাসপোর্টে অভিবাসন সীল বা যুক্তরাজ্যের বৈধ পাসপোর্টের কপি।
- ভাড়ার কাগজপত্র।
- ইউটিলিটি বিল।
- বিবাহ সনদ (যদি স্বামীর সাথে ভ্রমণ করেন)।
- আবেদনকারীর মাসিক আয় এবং ব্যয়।
- বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা এবং কতদিন ধরে আপনি সেই ঠিকানায় বসবাস করছেন।
- ভিসার মেয়াদ (৬ মাস, ২ বছর, ৫ বছর, ১০ বছর পর্যন্ত) অনুযায়ী ভিসা ফি।
- ভিজিটিং কার্ড।
আরও যা লাগবে
- আপনাকে ইংরেজি বা ওয়েলশ নয় এমন কোনো নথির প্রত্যয়িত অনুবাদও প্রদান করতে হবে।
- আপনাকে প্রমাণ প্রদান করতে হবে যে আপনি আপনার ভিসার মেয়াদে নিজেকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারেন।
- সমস্ত কপি নোটারাইজড হতে হবে এবং বাংলায় থাকা নথিগুলি ইংরেজিতে অনুবাদ করে তারপর নোটারাইজড করতে হবে।
আরও: কাতার ভিসা চেক করবেন যেভাবে (সহজ উপায়)
ইউকে ভিজিট ভিসা ফর্ম অনলাইনে পূরণ
ইউকে ভিজিট ভিসা ফর্ম অনলাইনে পূরণ করার জন্য আপনাকে “স্ট্যান্ডার্ড ভিজিটর ভিসার জন্য আবেদন করুন” এখানে ভিজিট করতে হবে। মূলত এখানেই আপনাকে কোন অভিজ্ঞ কারো সহযোগিতা নিতে হবে অথবা আপনি বুঝে ধাপ বাই ধাপ ফর্ম পূরণ করতে পারেন অথবা আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন (শর্ত প্রযোজ্য)।
বি:দ্র: ফর্ম পূরণ পারসোন টু পারসোন ভিন্ন হতে পারে।
জমা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
আপনি অনলাইনে আপনার ভিসার আবেদন পূরণ করার পরে, UKVI স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার তথ্যের উপর ভিত্তি করে একটি ডকুমেন্টেনর চেকলিস্ট দিবে। ভিসার ধরন ও পারসোন টু পারসোন ডকুমেন্টস ভিন্ন রকমের হতে পারে। নিচের ইমেজটির মত ৯ টি ক্যাটাগরির ডকুমেন্টস আপলোডের অপসন আসবে। এখানে সবগুল ক্যাটাগরি ম্যান্ডেটরি না সব ডকুমেন্টস সবার দিতেও হয় না।
বাংলাদেশ থেকে UK ভিসার ফি
বাংলাদেশ থেকে ইউনাইটেড কিংডম (UK) ভিসার খরচ নির্ভর করে আপনি কোন ক্যাটাগরির ভিসার জন্য আবেদন করবেন এবং কত দিনের জন্য আবেদন করবেন তার উপর।
সরকারি বাবদ কত ফি দিতে হবে তা নিচে দেয়া হল। তবে মনে রাখবেন যে, যেহেতু এই টাকা আপনাকে UK ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জমা দিতে হবে, তাই আপনাকে টাকা ও পাউন্ডের কনর্ভাসন রেটের উপর ভিত্তি করে ডলারে ইন্টারন্যাশনাল কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে হবে।
ভিসা ধরন | ভিসা ফি পাউন্ডে | ভিসা ফি টাকায় | থাকার সর্বোচ্চ সময় |
---|---|---|---|
স্ট্যান্ডার্ড ভিজিটর ভিসা | £115 | ৳১৭,২৪৫ | ৬ মাস |
২ বছরের দীর্ঘমেয়াদী স্ট্যান্ডার্ড ভিজিটর ভিসা | £432 | ৳৬৪,৭৮৩ | প্রতি ভিজিটে ৬ মাস |
৫ বছরের দীর্ঘমেয়াদী স্ট্যান্ডার্ড ভিজিটর ভিসা | £771 | ৳১১৫,৬২০ | প্রতি ভিজিটে ৬ মাস |
১০ বছরের দীর্ঘমেয়াদী স্ট্যান্ডার্ড ভিজিটর ভিসা | £963 | ৳১৪৪,৪১৩ | প্রতি ভিজিটে ৬ মাস |
ভিসা প্রসেসিং সময়
ইউকে ট্যুরিস্ট ভিসা প্রসেসিং সময় সাধারণত সর্বনিম্ন ১৫ দিন লাগে। তবে আবেদনকারীর জমা দেওয়া সঠিক ডকুমেন্টেশনের উপরও নির্ভর করে সময় কম বেশি লাগতে পারে।
আরও: ভিসা তথ্য
বাংলাদেশে ইউকে ভিসা বায়োমেট্রিক সেন্টার
ভিএফএস ইউনাইটেড কিংডম, ডেল্টা লাইফ টাওয়ার, ঢাকা
৪র্থ তলা, প্লট #৩৭, রোড #৪৫, ৯০ গুলশান উত্তর, বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা।
VFS হেল্পলাইন: (+88) 02 9895 894 (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮:৩০ থেকে দুপুর ২:০০ এবং দুপুর ৩:০০ থেকে বিকাল ৪:০০ পর্যন্ত।
আবেদন জমা দেওয়ার সময়
সময়: রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার, সকাল ৯:০০ থেকে দুপুর ২:০০ পর্যন্ত।
পাসপোর্ট সংগ্রহ এবং অতিরিক্ত নথি জমা: রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার, সকাল ৯:৩০ থেকে দুপুর ৩:৩০।
আরও: বিমানের টিকেট
যুক্তরাজ্য ভিসা নিয়ে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
ইউকে ট্যুরিস্ট ভিসা কি?
ইউকে ট্যুরিস্ট ভিসা (Standard Visitor Visa) হলো একটি অস্থায়ী ভিসা যা দিয়ে আপনি ছুটিতে, পরিবার বা বন্ধুদের দেখতে, ব্যবসায়িক কাজের জন্য বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করতে পারবেন।
যুক্তরাজ্যের ভিজিট ভিসা কি বাংলাদেশীদের জন্য উন্মুক্ত?
হ্যাঁ, যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য UK ভিজিট ভিসা উন্মুক্ত। আবেদন করার জন্য, আবেদনকারীদের অবশ্যই অনলাইনে ইউকে ভিসার আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে এবং বায়োমেট্রিক্স জমা দেওয়ার জন্য ভিএফএস গ্লোবাল ঢাকা-তে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।
আমি কিভাবে বাংলাদেশ থেকে UK ভিসা পেতে পারি?
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যের ভিসা পেতে, আপনাকে অবশ্যই অনলাইনে আপনার আবেদন জমা দিতে হবে এবং ঢাকার ভিএফএস গ্লোবাল (VFS Global) সেন্টারে বায়োমেট্রিক্স দিতে হবে।
UK ভিসা পেতে কত সময় লাগে?
আপনি যে ধরনের ভিসার জন্য আবেদন করছেন তার উপর নির্ভর করে বাংলাদেশ থেকে ইউকে ভিসার প্রক্রিয়াকরণের সময় কম বেশি হতে পারে। সাধারণত, স্ট্যান্ডার্ড ভিজিটর ভিসা ২ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নেয়। তবে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ভিসা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ট্যুরিস্ট ভিসা কতদিনের জন্য দেওয়া হয়?
ট্যুরিস্ট ভিসা সাধারণত ৬ মাসের জন্য দেওয়া হয়। তবে, বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ২, ৫, বা ১০ বছরের জন্যও দেওয়া হতে পারে, যদিও এই ক্ষেত্রে প্রতি বার যুক্তরাজ্যে থাকাকালীন সর্বোচ্চ ৬ মাস থাকার অনুমতি থাকবে।
ইউকে ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য কি কি যোগ্যতা প্রয়োজন?
১। বৈধ পাসপোর্ট
২। ভিসার ফি পরিশোধের প্রমাণ
৩। আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনার প্রমাণ
৪। ইউকে তে থাকার সময় আর্থিক সহায়তার প্রমাণ
৫। ইউকে তে থাকার পর দেশ ত্যাগ করার প্রমাণ
ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য কিভাবে আবেদন করতে হয়?
আপনি ইউকে সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে অনলাইন আবেদন করতে পারেন। আবেদন প্রক্রিয়ার সময় আপনাকে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করতে হবে এবং নির্দিষ্ট নথিপত্র জমা দিতে হবে।
ভিসা প্রাপ্তির পর ভ্রমণ পরিকল্পনা পরিবর্তন করা যাবে কি?
হ্যাঁ, তবে আপনি ভিসার শর্তাবলী লঙ্ঘন করতে পারবেন না। আপনার নতুন ভ্রমণ পরিকল্পনা যুক্তরাজ্যে থাকার সময়কাল ছাড়িয়ে গেলে নতুন ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান হলে কি করবেন?
ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান হলে আপনি পুনরায় আবেদন করতে হবে। পুনরায় আবেদন করার সময় পূর্বের প্রত্যাখ্যানের কারণগুলো বিবেচনা করা উচিত।
ভিসা আবেদন করার পর ভিসা না হলে আমি কি ভিসা ফি ফেরত পাবো?
না! ভিসা আবেদন করার পর ভিসা না হলে আপনি ভিসা ফি ফেরত পাবেন না। ভিসা ফি সম্পূর্ণ অফেরতযোগ্য।
ফেসবুক: কুহুডাক