ভ্রমণের দোয়া নিয়ে ইসলাম কি বলছে তা জানব এবং পাশাপাশি ভ্রমণের সময় কি দোয়া পড়বেন তা জানব। কোন দোয়া গুলো ভ্রমণের সময় পড়তে হয়, ভ্রমণে কোন দোয়া পড়লে ছওয়াবের পাশাপাশি বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
আজকের পোস্ট ভ্রমণের দোয়া নিয়ে। চলুন শুরু করা যাক…
আরও: ভ্রমণ নিয়ে ইসলামিক উক্তি
ভ্রমণের দোয়া
আমরা কম বেশি সবাই ভ্রমণ করে থাকি। কেউ কাছে আবার কেউবা দূরে। ভ্রমণের জন্য যে কয়েকটি বাহন রয়েছে তার ভিতরে উল্লেখযোগ্য হলঃ সড়ক পথে- বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, রিক্সা, প্রাভেটকার, সিএনজি, ট্রেন ইত্যাদি।
নৌপথে রয়েছে- লঞ্চ, ইস্টিমার, স্পীড বোর্ড, নৌকা, ট্রলার, জাহাজ ইত্যাদি। আবার বিমান পথে রয়েছে- হেলিকপ্টার, প্লেন, রকেট ইত্যাদি।
আর আমারা যারা ভ্রমণ পিপাসু রয়েছি তাদের তো উপরের বাহন গুলো অবশ্যই ব্যাবহার করতে হয়।
নদী পথে চলাচলের দোয়া
গাড়িতে চড়ার সময় দোয়া হিসেবে আমরা নিচের দোয়াটি জানিঃ
“বিসমিল্লাহি মাজরেহা ওয়া মুরসাহা ইন্না রাব্বি লা গাফুরুর রাহিম।”
কিন্তু গাড়িতে চড়ার দোয়া হিসেবে এই প্রচলিত সচরাচর দোয়াটি জানলেও এটি আসলে জলপথে অথবা নৌপথে (লঞ্চ, ইস্টিমার, স্পীড বোর্ড, নৌকা, ট্রলার, জাহাজ ইত্যাদিতে) চড়ার দোয়া!
এই দোয়ার ইতিহাস হলঃ নুহ (আঃ) এর মহাপ্লাবনের সময় তিনি এই দোয়াটি পড়েছিলেন।
এই দোয়াটি পানি পথের জন্য বিশেষিত। কোন ব্যাক্তি এক্বীনের সাথে উক্ত দোয়া পড়ে কোন জলযানে উঠলে অন্তত পানিতে ডুবে তিনি মারা যাবেন না। আল্লাহ তাকে কুদরতের মাধ্যমে হেফাযত করবেন।
গাড়িতে চড়ার দোয়া
গাড়িতে অথবা যানবাহনে চলাচলের সময় নিচের দোয়াটি পড়বেন।
“সুবহানাল্লাজি সাক্ষারলানা হাজা ওমা কুন্নালাহু মুক্বরিনিন ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুন ক্বালিবুন।”
আরও: শিক্ষামূলক ভ্রমণের উদ্দেশ্য
ভ্রমণ নিয়ে ইসলাম কি বলে
ভ্রমণ আপনার জ্ঞান ও জানার পরিধি বাড়ায়। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের ভ্রমণ করতে আদেশ দিয়ে বলেছেনঃ
আরবি: قُلْ سِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ بَدَأَ الْخَلْقَ ثُمَّ اللَّهُ يُنشِئُ النَّشْأَةَ الْآخِرَةَ إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
বাংলা: “(হে রাসূল) আপনি বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুর্নবার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম” (সুরা আনকাবুত : আয়াত ২০)
আবার আল্লাহ্ ভ্রমণ নিয়ে অন্য আরেক জায়গায় বলেনঃ
আরবি: قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُمْ سُنَنٌ فَسِيرُواْ فِي الأَرْضِ فَانْظُرُواْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذَّبِينَ – هَـذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِينَ
বাংলা: “তোমাদের আগে অতীত হয়েছে অনেক ধরনের জীবনাচরণ। তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাদের পরিণতি কি হয়েছে। এই হলো মানুষের জন্য বর্ণনা। আর যারা ভয় করে তাদের জন্য উপদেশবাণী।” (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৭-১৩৮)
ভ্রমণ নিয়ে শেখ সাদী (রহঃ) বলেছেন, দুনিয়াতে দু’ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানীঃ
- ভাবুক বা চিন্তাশীল ব্যক্তি
- দেশ সফরকারী ব্যক্তি
পৃথিবীতে ভ্রমণ শুরু হয়েছে আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম এর সময় থেকে এবং সেটা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং সেটা কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
ভ্রমণ নিয়ে হাদিস
আলী ইবনে রাবীআহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত –
আরবি: وَعَنْ عَلِيِّ بنِ رَبِيعَةَ، قَالَ: شَهِدتُّ عَلِيَّ بنَ أَبِي طَالِبٍ رضي الله عنه، أُتِيَ بِدَابَّةٍ لِيَرْكَبَهَا، فَلَمَّا وَضَعَ رِجْلَهُ فِي الرِّكَابِ، قَالَ: بِسْمِ اللهِ، فَلَمَّا اسْتَوَى عَلَى ظَهْرِهَا، قَالَ: الحَمْدُ ِللهِ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنينَ، وَإنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ، ثُمَّ قَالَ: اَلحمْدُ للهِ، ثَلاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ قَالَ: اَللهُ أكْبَرُ، ثَلاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ قَالَ: سُبْحَانَكَ إنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ، ثُمَّ ضَحِكَ، فَقِيلَ: يَا أَمِيرَ المُؤمِنِينَ، مِنْ أيِّ شَيْءٍ ضَحِكْتَ ؟ قَالَ: رَأيتُ النبيَّ ﷺ فَعَلَ كَمَا فَعَلْتُ ثُمَّ ضَحِكَ، فقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، مِنْ أيِّ شَيْءٍ ضَحِكْتَ ؟ قَالَ: « إنَّ رَبَّكَ تَعَالَى يَعْجَبُ مِنْ عَبدِهِ إِذَا قَالَ: اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي، يَعْلَمُ أنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ غَيْرِي ». رواه أَبُو داود والترمذي، وَقَالَ:«حديث حسن»، وفي بعض النسخ:«حسن صحيح». وهذا لفظ أَبي داود
বাংলা: আলী ইবনে রাবীআহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আলী ইবনে আবু ত্বালেব রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট হাজির ছিলাম। যখন তাঁর নিকট আরোহন করার উদ্দেশ্যে বাহন আনা হল এবং যখন তিনি বাহনের পাদানে স্বীয় পা রাখলেন তখন বিসমিল্লাহ’ বললেন।
অতঃপর যখন তার পিঠে স্থির হয়ে সোজাভাবে বসলেন তখন বললেন, আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী সাখ্খারা লানা হা-যা অমা কুন্না লাহু মুক্বরিনীন। অইন্না ইলা রাবিবনা লামুনক্বালিবূন।’
অতঃপর তিনবার আলহামদুলিল্লাহ’ পড়লেন। অতঃপর তিনবার আল্লাহু আকবার’ পড়লেন। অতঃপর পড়লেন, সুবহানাকা ইন্নী যালামতু নাফ্সী ফাগফিরলী, ইন্নাহু লা য়্যাগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আন্ত্।’ অতঃপর তিনি হাসলেন।
তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি হাসলেন কেন? তিনি বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম, তিনি তাই করলেন, যা আমি করলাম।
অতঃপর তিনি হাসলেন। আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি হাসলেন কেন? তিনি বললেন, তোমার মহান প্রতিপালক তাঁর সেই বান্দার প্রতি আশ্চর্যান্বিত হন, যখন সে বলে, ইগফিরলী যুনূবী’ (অর্থাৎ আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও।)
সে জানে যে, আমি (আল্লাহ) ছাড়া পাপরাশি আর কেউ মাফ করতে পারে না। (আবু দাউদ ২৬০২ এবং তিরমিযি ৩৪৪৬)
আরও: বিশ্ব পরিচিতি
ভ্রমণের দোয়া
ভ্রমণ নিয়ে ইসলাম কি বলে তা তো জানা হল। এবার চলুন ভ্রমণের দোয়া জানা যাক।
গাড়িতে আরোহনের সময়
গাড়িতে আরোহনের সময়, বিমানে ভ্রমণের সুন্নাত হলঃ
- গাড়িতে উঠার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে পা রাখা। (তিরমিজি শরীফ)
- গাড়িতে ওঠার পর ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা। (তিরমিজি শরীফ)
তারপর এই দোয়াটি পড়া: বাংলা উচ্চারণ: সুবহানাল্লাজি সাখখারা লানা হা-জা ওয়ামা কুননা লাহু মুক্বরিনীন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনক্বালিবুন। (সুরা যুখরূফ: আয়াত ১৩-১৪)
দোয়ার অর্থ: মহান পবিত্র তিনি, যিনি আমাদের জন্য এটাকে (যানবাহনকে) অধীন-নিয়ন্ত্রিত বানিয়ে দিয়েছেন, নতুবা আমরাতো এটাকে বশ করতে সক্ষম ছিলাম না। একদিন আমাদেরকে আমাদের প্রভুর নিকট অবশ্যই ফিরে যেতে হবে।
- দোয়া পড়ার পর তিনবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এবং তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলা। (তিরমিজি শরীফ)
- গাড়িতে আরোহনের পর সর্বশেষ এ দোয়া পাঠ করা- ‘সুবহানাকা ইন্নিজালামতু নাফসি জুলমান কাছীরান ফাগফিরলি ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা।’ (তিরমিজি শরীফ)
দোয়ার আমল: প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি সাওয়ারিতে বসার সময় এই দোয়া পাঠ করতেন। এ দোয়া পশু ও যান্ত্রিক যানবাহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
এতে বুজা যায় যে, ঘোড়া, উট ইত্যাদি প্রানির গায়ে চড়ার সময়ও উপরের দোয়া প্রযোজ্য হবে। বিমানে ভ্রমণের দোয়া, যাতায়াতের দোয়া একই। আশাকরি বুজতে পেরেছেন।
ফেসবুক: Kuhudak