সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর ভ্রমণ – নারায়ণগঞ্জ -এ গিয়েছি সে অনেক দিন হয়েছে। তখন আমি ক্লাস ৬/৭ এ পড়ি।
এতদিন পর আজ হঠাৎ করে সেই পূরণ দিনের সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর ভ্রমণ এর কথা মনে পড়ে গেলো। তাই আপনাদের সাথে সেই স্মৃতিটুকু শেয়ার না করে থাকতে পারছিলাম না।
তো চলুন আজকে আপনাদের নিয়ে যাব বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও তে অবস্থিত সেই বিখ্যাত শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে।
আরও: পানাম নগর ভ্রমণ – সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ
একনজরে সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর
ভ্রমণ স্থানের নাম | সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর |
অবস্থান | সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ |
স্থাপিত | ১২ মার্চ, ১৯৭৫ |
প্রতিষ্ঠাতা | জয়নুল আবেদিন |
আয়তন | ১৫০ বিঘা |
গ্যালারীর সংখ্যা | ১০টি |
প্রবেশ ফি | ২০টাকা |
সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর সময়সূচী
শনিবার | ০৯:০০–০৫:০০ |
রবিবার | ০৯:০০–০৫:০০ |
সোমবার | ০৯:০০–০৫:০০ |
মঙ্গলবার | ০৯:০০–০৫:০০ |
বুধবার | সাপ্তাহিক বন্ধ |
বৃহস্পতিবার | সাপ্তাহিক বন্ধ |
শুক্রবার | ০৯:০০–০৫:০০ |
তথ্যসূত্র – গুগল ম্যাপ
আরও পড়ুন: তাজমহল সোনারগাঁও
ভ্রমণের প্রস্তুতি
স্পষ্ট মনে নেই, ভ্রমণের প্রস্তুতিটা কিভাবে শুরু হয়েছিল। তবে যতটা মনে পরছে, আমার মেঝো মামা (সোহাগ) তিনিই প্রথম ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেছিলেন।
ঘুরার যখন কথা উঠল তখন বাসার অনেকেই যেতে রাজি হলেন। মামা নানা-নানু ঢাকা যাত্রাবাড়ী থাকতেন।
রাতে কথা হল, আমার বড় মামা (জসিম), বড় মামানি, তার বড় ছেলে (ফাহিম), ছোট মেয়ে ফাহিজা, আমি আর মাঝো মামা (সোহাগ) যাচ্ছি ঘুরতে।
রাতেই সবাই আলোচনা করে ঠিক করলেন সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর ভ্রমণ -এ যাবেন।
ভ্রমনের দিন
পরের দিন সকালে সবাই নাস্তা করে প্রায় ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ী থাকে প্রাইভেটকারে করে রওনা দিলাম।
সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর ঢাকা থেকে ২৪ কিলোমিটার এর পথ। সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলায় অবস্থিত।
সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর ভ্রমণ
রাস্তায় জ্যাম থাকায় সোনারগাঁও পৌছতে আমাদের প্রায় ২ ঘন্টার উপরে লেগে গেলো। আমরা গাড়ি থেকে নেমে পানি পান করছিলাম।
মামা এই ফাঁকে আমাদের জন্য টিকেট সংগ্রহ করে আনলেন। আমরা সবাই সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘরের ভিতরে প্রবেশ করলাম।
এই প্রথম আমি এখানে এসেছি।
ঢুকার পর প্রথমে কি দেখেছি সেটা এখন মনে করতে পারছি না। তবে যতটুকু মনে পড়ে ভিরতে গিয়ে হাতের বা দিকে একটি পুকুরের ছোট ঘাট পড়ে। সেই পুকুরের সিঁড়িতে বসে, দাড়িয়ে আমরা ছবি তুলেছি।
বাচ্চারা ছবি তুলেছে! তখন তো আমি অনেক ছোট বাচ্চা ছিলাম। এখনও বাচ্চাই!!
আরও: গোয়ালদি মসজিদ
সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর এর ইতিহাস
এখানে ছোট্ট করে সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর এর ইতিহাস তুলে ধরলাম।
বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার লোক সাংস্কৃতিক, ইতিহাস – ঐতিহ্য তুলে ধরার এবং বিকশিত করার উদ্যোগে ১৯৭৫ সালের ১২ই মার্চ জয়নুল আবেদিন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের এই ঐতিহাসিক পানাম নগরীর একটা পুরাতন বাড়িতে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।
এরপর ১৯৮১ সালে প্রায় ১৫০ বিঘা জমির উপর নতুন ভাবে এই সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নেন। আর, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্সটি প্রায় ১০০ বছরের পুরন সর্দার বাড়িতে স্থানান্তরিত করেন।
সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর, শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর নামেও পরিচিত।
চলুন সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর ভ্রমণ শুরু করা যাক
আমরা প্রবেশ পথে যে পুকুর ঘাটটি পরে সেখান কিছুক্ষন বসে বিশ্রাম নিয়ে সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর ঘুরে দেখার জন্য হাটা শুরু করি।
লোকশিল্প জাদুঘরে কি দেখতে পাবেন
জাদুঘর এর নাম শুনেই অনেকটা বুজে গেছেন নিশ্চয়ই। সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘরে আপনি দেখতে পাবেন, বাংলাদেশের অবহেলিত গ্রাম-বাংলার নিরক্ষর শিল্পীদের হস্তশিল্প, জনজীবনের নিত্য ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী সহ অনেক কিছু।
ওহহ, এখানে কারুপল্লীতে বৈচিত্র্যময় দোচালা, চৌচালা ও উপজাতীয়দের আদলে তৈরি ঘরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অজানা, অচেনা, আর্থিকভাবে অবহেলিত অথচ দক্ষ কারুশিল্পীর তৈরি বাঁশ- বেত, কাঠ খোদাই, মাটি, জামদানি, নকশিকাঁথা, একতারা, পাট, শঙ্খ, মৃৎ শিল্প ও ঝিনুকের সামগ্রী ইত্যাদি কারুপণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে এতে।
আপনি চাইলে সেগুলো কিনতে পারবেন। কিনার সুযোগ রয়েছে এখানে।
এখানের সর্দার বাড়িতে মোট ১০টি গ্যালারী রয়েছে। গ্যালারিগুলোতে আপনি দেখতে পাবেন, কাঠ খোদাই, কারুশিল্প, পটচিত্র ও মুখোশ, আদিবাসী জীবনভিত্তিক নিদর্শন, গ্রামীণ লোকজীবনের পরিবেশ, লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়ামাটির নিদর্শন, তামা-কাসা-পিতলের নিদর্শন, লোহার তৈরি নিদর্শন, লোকজ অলংকারসহ অনেক কিছু।
আমরা অনেক সময় নিয়ে ঘুরে ঘুরে এগুলো দেখলাম। লোকশিল্প জাদুঘরের এইসব দেখে আমার মনে হলঃ পুরো গ্রামের ছোয়া রয়েছে এখানে।
এখানে যে আসবে, সে মনের অজান্তেই ফিরে যাবে তার সেই পুরোন স্মৃতিতে। তার গ্রামের সেই ছোট্ট পাড়া গায়ে।
আরও: চিড়িয়াখানা ভ্রমণ – মিরপুর, ঢাকা
সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর কে বিদায়
সারাদিন ঘুরে ঘুরে পুরো সোনারগাঁও জাদুঘর দেখলাম আমরা। শুধু দুপুরের দিকে ঘুরা বন্ধ করে আমরা দুপুরের খাবর খেয়ে নিয়েছিলাম।
প্রায় বিকেল ৪টার দিকে আমরা জাদুঘরকে বিদায় জানিয়ে যাত্রাবাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
আরও: মায়াদ্বীপ ভ্রমণ – নুনেরটেক, সোনারগাঁ
উপসংহার
কথা একটাই, কোন ভ্রমণই আমার শেষ হয়ে শেষ হয় না। বারংবার আমার সেই স্থানে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে। কারন, আমি যে প্রকৃতি ভালবাসি। প্রকৃতিও আমায় ভালবাসে।
সময় পেলে অবশ্যই আমি সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘরে আবার ভ্রমণে আসব। আজ আপাতত বিদায়…।
ফেসবুক: Kuhudak