বাংলাদেশের সমাজে প্রচলিত ১০১টি কুসংস্কার যার বেশ কিছু এখনো সমাজে প্রচলিত রয়েছে। শিক্ষা এবং প্রযুক্তির প্রসার সত্ত্বেও অনেক মানুষ এখনও বিভিন্ন কুসংস্কারকে বিশ্বাস করে চলেছেন। এই পোস্টে আমরা এমন ১০১টি প্রচলিত কুসংস্কার তুলে ধরব, যা আমাদের সমাজের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিফলিত হয়।
কুসংস্কার কী?
কুসংস্কার হলো এমন বিশ্বাস বা ধারণা যা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বা প্রমাণ ছাড়াই সমাজে প্রচলিত। এটি সাধারণত প্রথাগত রীতিনীতি, ধর্মীয় বিশ্বাস বা ভ্রান্ত ধারণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।
আরও: গরুর গাড়ি
কেন কুসংস্কার গড়ে ওঠে?
মানুষের অজানা বিষয়ে ভয়, অনিশ্চয়তা এবং নিয়ন্ত্রণের অভাব কুসংস্কারের মূল কারণ। এটি অনেক সময় ঐতিহ্য বা সংস্কৃতির অংশ হিসেবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয়। কুসংস্কার কখনো সামাজিক বাধা সৃষ্টি করে, আবার কখনো নিরাপত্তাহীনতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দেয়।
কুসংস্কারের প্রভাব ও গুরুত্ব
কুসংস্কার সাধারণত মানুষের ভ্রান্ত বিশ্বাস এবং সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে থাকা ভুল ধারণার ফসল। এগুলো মানুষের মানসিকতায় এবং আচরণে প্রভাব ফেলে। কিছু কুসংস্কার হাস্যকর হলেও কিছু ভয়ানক হতে পারে এবং আপনার জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশের সমাজে প্রচলিত ১০১টি কুসংস্কার
নীচে সমাজে প্রচলিত ১০১টি কুসংস্কারের তালিকা দেওয়া হলো, যা বিভিন্ন লোকজ বিশ্বাস ও ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি:
- মঙ্গলবার বা শনিবার চুল কাটা অমঙ্গল।
- বাইরে বের হওয়ার আগে হাঁচি দিলে যাত্রা অশুভ হয়।
- কাক ডাকলে বিপদ আসবে।
- পেঁচা ডাকলে খারাপ খবর আসবে।
- পাতিলের মধ্যে খানা খেলে মেয়ে সন্তান জন্ম নিবে।
- খানার সময় যদি কারো ঢেকুর আসে বা মাথার তালুতে উঠে যায়, তখন একজন আরেকজনকে বলে, তোমাকে যেন কেউ স্মরণ করছে বা বলা হয় তোমাকে গালি দিচ্ছে।
- রাতে বাঁশি বাজালে দারিদ্র্য আসে।
- চোখের পাতা কাঁপলে বিপদ আসছে।
- রাতে নখ কাটা নিষেধ।
- গর্ভবতী নারীর সূর্যগ্রহণ দেখা সন্তান বিকলাঙ্গ করে।
- বিয়ের দিন বৃষ্টি হওয়া শুভ।
- পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পূর্বে ডিম খাওয়া যাবে না। তাহলে পরীক্ষায় ডিম (গোল্লা) পাবে।
- নতুন স্ত্রীকে দুলা ভাই কোলে করে ঘরে আনতে হবে।
- দোকানের প্রথম কাস্টমার লক্ষি, তাই ফেরত দিতে নাই।
- বাড়িতে ঘুঘু ডাকলে রোগ আসে।
- লম্বা সময় হাঁচি দিলে কেউ আপনাকে মনে করছে।
- বিয়ের পর নতুন দম্পতির সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাওয়া অশুভ।
- বিড়াল মারলে আড়াই কেজি লবণ দিতে হবে।
- বাচ্চাদের দাঁত পড়লে ইঁদুরের গর্তে দাঁত ফেললে সুন্দর দাত উঠে।
- গর্ভবতী নারীর সামনে কাটা কিছু খাওয়া নিষেধ।
- তেজপাতা পোড়ালে নজর কেটে যায়।
- কাউকে দেখে বলা- আপনার কথা হচ্ছিল আপনার হায়াত আছে।
- ঔষধ খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ বললে’ রোগ বেড়ে যাবে।
- ঘরে ঝুলন্ত জাল রাখা দারিদ্র্যের সংকেত।
- জোড়া কলা খেলে জোড়া সন্তান জন্ম নিবে।
- কোন বিশেষ পাখি দেখলে বা ডাকলে আত্মীয় আসবে মনে করা।
- নতুন বাড়ি নির্মাণে নির্দিষ্ট দিন-ক্ষণ শুভ।
- বাঁ হাত চুলকালে বিপদ আসবে আর ডান হাত চুলকালে টাকা আসবে।
- ভাই-বোন মিলে মুরগী জবেহ করা যাবে না।
- ঘর থেকে বের হয়ে পিছন দিকে ফিরে তাকানো বা ডাকা অশুভ।
- মাঝরাতে কুকুর কান্না শোনায় অমঙ্গল।
- বৃষ্টির সময় রোদ দেখা দিলে শিয়ালের বিয়ে হয়। ব্যাঙ ডাকলে বৃষ্টি হবে।
- ছোট বাচ্চাদের দাঁত পড়লে ইঁদুরের গর্তে দাঁত ফেলতে বলা হয়, দাঁত ফেলার সময় বলতে শিখানো হয়, “ইঁদুর ভাই, ইঁদুর ভাই, তোর চিকন দাঁত টা দে, আমার মোটা দাঁত টা নে”।
- রাতে আয়না দেখা আত্মার ক্ষতি করে।
- রাতে বাঁশ কাটা যাবে না।
- নতুন বাড়িতে নারকেল বা পান পাতা রাখা শুভ।
- বিধবা নারীকে সাদা কাপড় পরিধান করতে হয়।
- ভাঙ্গা আয়না দিয়ে চেহারা দেখা যাবে না। তাতে চেহরা নষ্ট হয়ে যাবে।
- গাছের নিচে রাতে ঘুমানো অশুভ।
- সন্ধ্যায় সময় ঘুমালে রোগ হয়।
- নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে মিষ্টি মুখ করা শুভ।
- নখ খাওয়া ভবিষ্যতের কষ্টের সংকেত।
- আশ্বিন মাসে নারী বিধবা হলে আর কোন দিন বিবাহ হবে না।
- গেঞ্জি ও গামছা ছিঁড়ে গেলে সেলাই করতে নাই।
- খালি ঘরে সন্ধ্যার সময় বাতি দিতে হয়। না হলে ঘরে বিপদ আসে।
- মহিলার পেটে বাচ্চা থাকলে কিছু কাটা-কাটি বা জবেহ করা যাবে না।
- শিশুর প্রথম জন্মদিনে পায়ে মধু দিলে মিষ্টি ভাষী হয়।
- বাচ্চাদের শরিরে লোহা বা তাবিজ থাকতে হবে।
- ঝাড়ু দিয়ে কাউকে স্পর্শ করলে অপমান হয়।
- হাত থেকে গ্লাস পড়লে কিছু খারাপ ঘটবে।
- সিঁড়ি বা দরজায় বসা অমঙ্গল।
- কুকুরের কান্নায় মৃত্যুর আশঙ্কা।
- শিশু জন্মানোর পর প্রথম ৭ দিন বাইরে রাখা নিষেধ।
- গর্ভবতী নারীর কাছে ধারালো বস্তু রাখা শুভ।
- সন্ধ্যার সময় মাটিতে পানি ঢালা নিষেধ।
- পান খাওয়ার পর তেতো খাওয়া অশুভ।
- মাথায় টুপি পরে খাওয়ানো অমঙ্গল।
- রাতে পেঁয়াজ কাটলে বাড়িতে অশান্তি।
- ঝাড়ু দিয়ে কাউকে মারলে জীবনে দুর্ভাগ্য আসে।
- হোঁচট খেলে মনে করা ভাগ্যে দুর্ভোগ আছে।
- মাছের মাথা খেলে বুদ্ধি বাড়ে।
- কান চুলকালে কারও মনে পড়ছে।
- তিন রাস্তার মোড়ে বসতে নাই।
- প্রথম সন্তান ছেলে হলে পরিবার ধনী হবে।
- ঘরের কোণে মাকড়সার জাল থাকলে অর্থ আসে।
- কাউকে ধর্মের ভাই-বোন, বাবা-মা ডাকলে আপন হয়ে যায়, পর্দা লাগে না।
- একবার মাথায় টাক খেলে দ্বিতীয় বার টাক দিতে হবে, নতুবা সিং উঠবে।
- রাতে খোলা চুল রাখা অমঙ্গল।
- অন্তঃসত্ত্বা নারীর সামনে তর্ক করা নিষেধ।
- খানা একবার নেওয়া যাবে না, দুই-তিন বার নিতে হবে।
- পালকি বা গাড়ি থেকে নামার সময় পিছন ফিরে নামা অমঙ্গল।
- নতুন জামাই বাজার না করা পর্যন্ত একই খানা খাওয়াতে হবে।
- ঘরের উত্তর কোণে ধন সম্পদ থাকে।
- পাতিলের মধ্যে খানা খেলে মেয়ে সন্তান হয়, পেট বড় হয়।
- দাঁড়ী-পাল্লা পায়ে লাগলে বা হাত থেকে নিচে পড়ে গেলে চুমা করতে হয়, দোকানের টাকার বাক্স সকালে চুমা করতে হয়। গাড়ি/রিক্সা সালাম করে চালান শুরু করতে হয়।
- শুকরের নাম মুখে নিলে ৪০দিন মুখ নাপাক থাকে।
- নতুন ব্যবসা শুরুতে লাল রঙের ব্যবহার শুভ।
- অন্ধকারে বাঁশি বাজানো প্রেতাত্মাকে ডাকে।
- ফসলের জমিতে মাটির পাতিল সাদা-কালো রং করে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
- বিনা ওযুতে বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানীর নাম নিলে আড়াইটা পশম পড়ে যায়।
- মোমবাতি হঠাৎ নিভে গেলে অমঙ্গল সংকেত।
- মহিলারা হাতে বালা বা চুড়ি না পড়লে স্বামীর অমঙ্গল হয়।
- স্ত্রী নাকে নাকফুল না থাকলে স্বামী বাঁচে না।
- দা, কাচি বা ছুরি ডিঙ্গিয়ে গেলে হাত-পা কেটে যাবে। ছোট বাচ্চা ডিঙ্গিয়ে গেলে লম্বা হয় না।
- গলায় কাটা বিঁধলে বিড়ালের পা ধরে মাফ চাইতে হয়।
- বিয়ের পরে কন্যার প্রথম রান্নায় মিষ্টি খাবার শুভ।
- পায়ে মেহেদী ব্যবহার করা উচিত না।
- আকিকার গোস্ত বাবা-মা খেতে পারবে না।
- বিয়ের পর মুরব্বিদের দাড়িয়ে সালাম করতে হয়, পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে হয়।
- মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা সমান।
- ১৩ সংখ্যা অশুভ আর ৭ শুভ।
- বদ নজর থেকে হেফাজতের জন্য শিশুর কপালে টিপ দিতে হয়।
- কেউ হঠাৎ ভয় পেলে বুকে থুথু দিতে হয়।
- গর্ভবতী মহিলা সর্বদা লোহা, ম্যাচের কাঠি, রসুন সাথে রাখবে, নতুবা অমংগল হয়।
- আযান শুনলে মেয়েরা মাথায় কাপড় দিবে, অন্য সময় না দিলেও চলে।
- দুধ ও আনারস একসাথে খেলে বিষ হয়ে যায়।
- গাছের ফল চুরি হলে গাছে আর ফল ধরে না।
- মাথায় অথবা গালে হাত দিয়ে বসে থাকলে অমঙ্গল হয়।
- কুকুরের কামড়ে মানুষের পেটে কুকুরের বাচ্চা হয়।
- বাছুরের গলায় জুতার টুকরা ঝুলালে কারো কু দৃষ্টি থেকে বাচা জায়।
- হঠাৎ বাম চোখ কাঁপিলে দুঃখ আসে।
এগুলো সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কুসংস্কার, যা সময়ের সাথে মানুষের বিশ্বাস ও সংস্কৃতিতে জায়গা করে নিয়েছে। যদিও এগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, অনেক ক্ষেত্রে এগুলো সামাজিক রীতিনীতির অংশ হিসেবে দেখা হয়।
ফেসবুক: কুহুডাক