দেশের যে ১০টি স্থানে পর্যটকরা বেশি ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির জন্য বিশ্বের পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। দেশের প্রতিটি প্রান্তে এমন কিছু স্থান রয়েছে, যা পর্যটকদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। এই লেখায় দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০টি পর্যটনকেন্দ্র সম্পর্কে তুলে ধরা হলো।
আরও: বাংলাদেশের সেরা ৫টি রহস্যময় জায়গা
১. কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হিসেবে পরিচিত কক্সবাজার বাংলাদেশের পর্যটনের প্রধান আকর্ষণ। এই ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত শুধু দেশীয় নয়, বিদেশি পর্যটকদের কাছেও সমান জনপ্রিয়। কক্সবাজারে যেতে সারা বছর ভিড় লেগে থাকে। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য, সাগরের নীল জলরাশি এবং সমুদ্রতীরবর্তী খাবারের দোকানগুলো এখানে পর্যটকদের মুগ্ধ করে। কাছাকাছি হিমছড়ি এবং ইনানী বিচও পর্যটকদের জন্য বিশেষ ভ্রমণ স্থান।
আরও: কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থান
২. সেন্ট মার্টিন দ্বীপ
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানকার স্বচ্ছ নীল জলরাশি, প্রবালদ্বীপের অনন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং স্থানীয় খাবারের স্বাদ পর্যটকদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করে। রাতে তারাভরা আকাশের নিচে সমুদ্রতীরে সময় কাটানো এখানে ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ।
আরও: সেন্টমার্টিন ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
৩. সুন্দরবন
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন তার বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণী এবং চিরসবুজ পরিবেশের জন্য বিখ্যাত। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, কুমির এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণ। নৌকাভ্রমণ করে বনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এটি শুধু প্রকৃতি প্রেমীদের নয়, বন্যপ্রাণী গবেষকদের কাছেও একটি জনপ্রিয় স্থান।
৪. সাজেক ভ্যালি
পাহাড় এবং মেঘের মিলনস্থল সাজেক ভ্যালি বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। সাজেক ভ্যালির মেঘের মধ্যে হাঁটার অনুভূতি এবং পাহাড়ের নির্জনতা পর্যটকদের হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। এখানকার স্থানীয় আদিবাসী সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নেওয়া এখানে ভ্রমণের বাড়তি আনন্দ যোগ করে।
আরও: দর্শনীয় স্থান বলতে কি বোঝায়
৫. বান্দরবানের নীলগিরি ও নীলাচল
বান্দরবানকে বলা হয় বাংলাদেশের “পাহাড়ের রানী”। এই জেলার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র নীলগিরি ও নীলাচল। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে মন জুড়িয়ে যায়। বর্ষাকালে মেঘের রাজ্য এবং শীতকালে পাহাড়ের শীতল পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
৬. সিলেটের চা-বাগান ও জাফলং
সবুজ চা-বাগানের শহর সিলেট প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য স্বর্গ। এখানকার পাহাড়ি পরিবেশ এবং দিগন্তজোড়া চা গাছের শোভা মুগ্ধ করার মতো। এছাড়া জাফলংয়ের পাথর উত্তোলনের দৃশ্য এবং ডাউকি নদীর স্বচ্ছ জলরাশি সিলেট ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ।
৭. রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেক
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই লেক তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নৌভ্রমণের জন্য বিখ্যাত। পাহাড় ঘেরা লেকটি স্থানীয় আদিবাসী গ্রামগুলোর সঙ্গে পর্যটকদের পরিচয় করিয়ে দেয়। এখানকার ঝুলন্ত সেতু এবং লেকের তীরে আদিবাসী খাবারের স্বাদ পর্যটকদের মন জয় করে।
আরও: বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ কোনটি
৮. পানাম নগর, নারায়ণগঞ্জ
বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিত পানাম নগর। ১৫শ শতাব্দীতে নির্মিত এই নগরী বাংলার প্রাচীন সভ্যতার স্মৃতি বহন করে। ধ্বংসাবশেষ এবং প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী ইতিহাসপ্রেমী এবং ফটোগ্রাফি পছন্দ করা পর্যটকদের জন্য আদর্শ স্থান।
৯. মহাস্থানগড়, বগুড়া
মহাস্থানগড় বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক স্থান। এটি প্রায় ২,৫০০ বছরের পুরোনো। বৌদ্ধ, হিন্দু এবং মুসলিম সভ্যতার নিদর্শন মহাস্থানগড়ের প্রতিটি কোণে রয়েছে। ইতিহাসপ্রেমী এবং প্রত্নতাত্ত্বিকদের জন্য এটি একটি আবশ্যিক গন্তব্য স্থান।
আরও: শীতে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের সেরা ১০টি স্থান
১০. কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
“সাগরকন্যা” হিসেবে পরিচিত কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর সমুদ্র সৈকত। এখানে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা সম্ভব। এখানকার সমুদ্রতীরবর্তী পরিবেশ এবং স্থানীয় খাবারের স্বাদ পর্যটকদের এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়।
বাংলাদেশ তার বৈচিত্র্যময় পর্যটনকেন্দ্রের জন্য গর্বিত। এসব স্থান আমাদের দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক। পর্যটকদের এসব স্থান ঘুরে দেখা শুধু আনন্দের নয়, বরং দেশের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানারও একটি চমৎকার সুযোগ। তাই, বিদেশ ভ্রমণের আগে নিজ দেশের এই অনন্য স্থানগুলো ঘুরে দেখা উচিত সবার।
ফেসবুক: কুহুডাক