রূপসা জমিদার বাড়ি (Rupsha Jomidar Bari) বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ২৫০ বছর পুরনো বাংলার এক ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি।
আজকের পোস্টে আমরা রূপসা জমিদার বাড়ি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। চলুন শুরু করা যাক…
আরও: লোহাগড় মঠ
রূপসা জমিদার বাড়ি, চাঁদপুর ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | রূপসা জমিদার বাড়ি |
অবস্থান | রূপসা, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম |
ধরন | জমিদার বাড়ি |
নির্মাণকাজের সমাপ্তি | ১৮ শতকের মাঝামাঝি |
বন্ধ | ১৯ শতকের মাঝামাঝি |
স্বত্বাধিকারী | আহম্মদ রাজা চৌধুরী |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | ১২৭ কিলোমিটার (প্রায়) |
চাঁদপুর থেকে দূরত্ব | প্রায় ২১ কিলোমিটার |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব বাংলার অনেক জমিদাররাই পাকিস্তান মিলিটারি বাহিনীকে অর্থ এবং বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছিল কিন্তু রূপসা জমিদাররা পাকিস্তানি মিলিটারিকে সাহায্য না করে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছিল।
ইতিহাস ও অবকাঠামো
আজ থেকে প্রায় ২৫০ বছর পূর্বে বংশাল গ্রামের বর্তমান খাজুরিয়া গ্রামের হিন্দু জমিদারদের জমিদারির পতন হয়েছিল। এরপর ব্রিটিশদের কাছ থেকে এই জমিদারি কিনে নেন রূপসা জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি রূপসা জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত করেন। তবে এখানে উল্লেখ্য যে, এই জমিদার বাড়ির আসল প্রতিষ্ঠাতা কে তা নিয়ে ২টি মত রয়েছে।
কিছু মানুষ মনে করেন, জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আহম্মদ রাজা নামের একজন আবার কেউ কেউ মনে করেন মোহাম্মদ গাজী ছিলেন জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা।
তবে বেশি প্রসিদ্ধ হচ্ছে রূপসা জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন আহম্মদ রাজা। আহম্মদ রাজার ছেলে ছিলেন মোহাম্মদ গাজী। আহম্মেদ রাজা যখন মারা যান তারপর জমিদার বাড়ির জমিদারিত্ব গ্রহণ করেন তার ছেলে মোহাম্মদ গাজী। মোহাম্মদ গাজীর মৃত্যুর পর এই জমিদার বাড়ির জমিদারিত্ব পালন করেন তার ছেলে আহমেদ গাজী।
এই জমিদার বাড়ির কিছু ভালো দিক ছিল যেমন, তারা খাজনার জন্য প্রজাদের উপর কখনো অত্যাচার জুলুম করতেন না। বরং প্রজাদের দুঃখ-দুর্দশার সময় তাদের পাশে থেকে সাহায্য করতেন।
আপনি ভ্রমণে গেলে জমিদার বাড়ির সামনে বিশাল মাঠ দেখতে পাবেন। এই জমিদার বাড়িটি ইট দিয়ে তৈরি করা মোট ৩টি ভবন রয়েছে। ৩টি ভবনের মধ্যে রয়েছে মূল ভবন, আর ১টি আছে মূল ভবনের বা পাশে এবং আরেকটি রয়েছে মূল ভবনের ঠিক পিছনে।
ভ্রমণে গেলে আরও দেখতে পাবেন, ঢেউটিন দিয়ে তৈরি করা ৩টি ঘর। আপনি জমিদার বাড়িতে ঢুকার পথে ডানপাশে দেখতে পাবেন জমিদার বাড়ির মসজিদ এবং জমিদার বাড়ির কবরস্থান। আরও দেখতে পাবেন ঘাটবাঁধানো ১টি বড় পুকুর ও জমিদার বাড়ির প্রবেশদ্বার।
আহমেদ গাজী জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য তাঁর বেশকিছু জমি ওয়াকফ করে গিয়েছিলেন। এছাড়া রূপসা আহমদিয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও রূপসা আহমদিয়া মাদ্রাসা ও মসজিদ সহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে গিয়েছিলেন।
কিভাবে যাবেন
আপনি বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে এই জমিদার বাড়ি ভ্রমণে যেতে পারবেন।
বাস ভ্রমণ
রাজধানী ঢাকা থেকে ভ্রমণে যেতে চাইলে ঢাকার সায়েদাবাদ এবং গুলিস্থান থেকে নিয়মিত বিরতিতে সারাদিন চাঁদপুরের এসি বা নন-এসি বাস ছেড়ে যায়।
ভাড়া: বাসের ভাড়া ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা নিতে পারে।
লঞ্চ ভ্রমণ
আপনি আরামদায়ক ভ্রনের জন্য লঞ্চে যেতে পারেন। ঢাকা থেকে এমভি সোনারতরী, এমভি ঈগল, এমভি তাকওয়া, এমভি বোগদাদীয়া, এমভি মেঘনা রাণী, এমভি আল বোরাক, এমভি রফরফ, এমভি তুতুল সহ বেশকিছু লঞ্চ সদরঘাট এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
ভাড়া এবং সময়: লঞ্চে চাঁদপুর যেতে ১০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা ভাড়া নিতে পারে। আর লঞ্চে যেতে সময় লাগে ৩ ঘন্টা থেকে ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট।
চাঁদপুর জেলা শহর থেকে রূপসা জমিদার বাড়ির দূরত্ব প্রায় ২১ কিলোমিটার। আপনি চাঁদপুর থেকে CNG, অটোরিক্সা কিংবা মোটরসাইকেলে চড়ে সহজেই জমিদার বাড়ি যেতে পারবেন।
আরও: লুধুয়া জমিদার বাড়ি
কোথায় খাবেন
চাঁদপুর ভ্রমণে গিয়ে খাওয়ার জন্য চাঁদপুর শহরে ভালো মানের খাবার হোটেল পাবেন। আপনি যে কোন হোটেল থেকে খেয়ে নিতে পারেন। আর জানেন তো চাঁদপুর ইলিশ মাছের জন্য বিখ্যাত। তাই ভ্রমণে গেলে ইলিশ মাছ খেতে ভুলবেন না।
এছাড়া ফরিদগঞ্জের আউয়ালের মিষ্টি ও ওয়ান মিনিট আইসক্রিম খেয়ে আসতে পারেন।
আরও:
কোথায় থাকবেন
আপনি জমিদার বাড়ি ভ্রমণে গিয়ে ফরিদগঞ্জে থাকার জন্য তেমন হোটেল পাবেন না। যদিও এই স্থান টি একদিনের ভ্রমণের জন্য চমৎকার তারপরও যদি থাকতে চান তাহলে, চাঁদপুর জেলা শহরে এসে থাকতে পারেন।
আপনি সদর হসপিটালের সামনে হোটেল গ্র্যান্ড হিলশা দেখতে পাবেন এটা মোটামোটি ভালো মানের হোটেল বলা চলে। চাইলে এখানে থেকে যেতে পারেন।
আরও: ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর ভ্রমণ
ফেসবুক: Kuhudak