পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী (Pakutia Zamindar Bari) – টাঙ্গাইল জেলা থেকে ভ্রমণ করে আসলাম। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলায় লৌহজং নদীর তীরে পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী অবস্থিত।
আজকের ভ্রমণে আপনাকে ঘুরে দেখাবো তিন মহলা বা তিন তরফ যা বর্তমানে পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী নামে পরিচিত টাঙ্গাইলের এই চমৎকার জমিদার বাড়িটি। ভ্রমণে সাথে আছি আমি বাংলাদেশী ট্রাভেল ব্লগার আরিফ হোসেন (GoArif) এবং আমার সাথে আছে জাবেদ, নাদিম ও সুজা।
ও আরেকটি কথা: ঢাকা থেকে ১দিনের ভ্রমনের জন্য এটি সুন্দর একটি দর্শনীয় স্থান। এই জমিদার বাড়ি দেখতে এসে আপনি বালিয়াটি জমিদার বাড়িও দেখে যেতে পারবেন।
চলুন আজকের ভ্রমণ শুরু করা যাক…
আরও: পানাম নগর ভ্রমণ
পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী
ভ্রমণ স্থান | পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী |
অন্য নাম | তিন মহলা বা তিন তরফ |
অবস্থান | নাগরপুর, টাঙ্গাইল |
ধরন | জমিদার বাড়ী |
আয়তন | ১৫ একর (প্রায়) |
বর্তমান অবস্থা | বি.সি.আর.জি ডিগ্রী কলেজ |
নির্মিত | ঊনবিংশ শতাব্দী |
খোলা থাকার সময় | সারা বছর |
টিকিট মূল্য | নেই |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | ৭১.৫ কিলোমিটার |
টাংগাইল থেকে দূরত্ব | ৩৫ কিলোমিটার |
বালিয়াটি থেকে দূরত্ব | ৮ কিলোমিটার |
এবার চলুন পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী সম্পর্কে কিছু ইতিহাস জানা যাক।
ইতিহাস
পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী ইতিহাস সম্পর্কে স্থানীয়দের মাধ্যমে এবং ইন্টারনেট ঘেটে যতটুকু জানতে পারলাম তা হল:
ব্রিটিশ আমল বা ইংরেজ আমলের প্রায় শেষ ভাগে এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু দিকে পশ্চিম বঙ্গ কলকাতা থেকে ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মন্ডল এ দেশে আসেন।
রামকৃষ্ণ সাহা মন্ডল বা ধনাঢ্য ব্যক্তি মন্ডল সাহা প্রায় ১৫ একর এলাকা জুড়ে একই নকশার পর পর তিনটি প্যালেস বা বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ করেন। পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী তখন তিন মহলা বা তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল।
রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডলের দুই ছেলে ছিল। একভাই এর নাম বৃন্দাবন ও আরেক ভাই এর নাম ছিল রাধা গোবিন্দ।
রাধা গোবিন্দের কোন সন্তান ছিল না তারা নিঃসন্তান ছিল। কিন্তু, বৃন্দাবন চন্দ্রের ছিল ৩ ছেলে। তাদের নাম: ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন এবং যোগেন্দ্র মোহন। পাকুটিয়া জমিদারি এভাবে তিনটি তরফে বিভক্ত ছিল।
আরও: লুধুয়া জমিদার বাড়ি
জমিদার বাড়ী ভ্রমণ
পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী ভ্রমণ গাইড এ আপনি পাকুটিয়া যাওয়ার বিস্তারিত গাইড লাইন পাবেন। আমরা প্রথমে ঢাকা পল্টন থেকে বাসে জন প্রতি ২৫ টাকা করে গাবতলি বাস টার্মিনাল যাই। গাবতলি থেকে এস বি লিংক কে জন প্রতি ৮৫ টাকা দিয়ে টিকেট সংগ্রহ করে সাটুরিয়া জিরো পয়েন্টের উদ্দেশ্যে বাসে উঠি।
এস বি লিংক বাসে অবস্থা খুবই নিন্ম মানের। আর ইচ্ছে মত যাত্রী নেয়া তো আছেই। বাসের সিট গুলো এতোই বাজে যে, ২ জন মোটামুটি স্বাস্থ্যবান লোকের একসাথে বসা খুবই কষ্টকর।
যাইহোক কষ্টকরে কোনরকমে সিটে চেপে বসে প্রায় ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট পর সাটুরিয়া জিরো পয়েন্টে এসে নামলাম। জিরো পয়েন্ট থেকে ব্যাটারি চালিত রিক্সা করে ১৫ থকে ২০ মিনিট পর বালিয়াটি জমিদার বাড়ি এসে নামলাম। অটোরিক্সা ভাড়া নিয়েছে জন প্রতি: ১০টাকা করে।
এখান থেকে ৪ জন এর জন্য ১৫০ দিয়ে পাকুটিয়া জমিদার বাড়ীর জন্য সিএনজি ভাড়া করলাম। এখানে উল্লেখ্য যে, আমরা এতক্ষণ মানিকগঞ্জ জেলায় ছিলাম। পাকুটিয়া টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত যা এখান থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে।
আরও: টাঙ্গাইল জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
পাকুটিয়া জমিদার বাড়ীর বর্তমান অবস্থা
আমরা চলে এসেছি টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলায় লৌহজং নদীর তীরে অবস্থিত পাকুটিয়া জমিদার বাড়ীতে। ১৯৬৭ সাল থেকে এই জমিদার বাড়িটি বি.সি.আর.জি ডিগ্রী কলেজ এর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
লাঞ্চ বিরতি
নাগরপুর উপজেলায় এসে আমরা লাঞ্চ করার জন্য হোটেলে আসলাম। এদিকে খুব বেশি খাবারের হোটেল নেই। তবে ২,৩ টা যা আছে আপনি এখানে ভালো মানের খাবার পাবেন। দামও খুব বেশি না।
আমরা খাবারের জন্য ইলিশ মাছ নিলাম। সাথে ভর্তা, ডাল তো আছেই। খাওয়া শেষে দই খেলাম। দইও ভালো ছিল। আপনি এখানে হাতে বানানো বড় রসগোল্লা পাবেন। চাইলে রসগোল্লা চেখে দেখতে পারেন।
খাওয়া শেষে আমরা জমিদার বাড়ি ভ্রমণে বের হই।
জমিদার বাড়ী কারুকার্য
পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী কারুকার্য অসাধারণ। একই সারিতে এবং একই নকশার পর পর তিনটি প্যালেস রয়েছে এখানে। পাশে রয়েছে বিশাল বি.সি.আর.জি ডিগ্রী কলেজ মাঠ।
সব মিলিয়ে স্থানটি বেশ সুন্দর। এখানে আপনার সময় দারুণ কাটবে। তিনটি প্যালেস প্রতিটি বাড়ীর মাঝ বরাবর মুকুট হিসাবে লতা ও ফুলের অলংকরণে কারুকার্য মন্ডিত দুই সুন্দরী নারী পূর্ণাঙ্গ মূর্তি রয়েছে।
৩টি প্যালেস এর প্রতিটিই লতাপাতা দিয়ে ঘেরা। অনেকটা জঙ্গল টাইপ হয়ে রয়েছে। কয়েক জায়গায় ভাঙ্গা রয়েছে। জানালার গ্রিল গুলোতে মরিচা ধরেছে।
কার্নিশের উপর বিভিন্ন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য সুন্দর সুন্দর ছোট আকৃতির নারী মূর্তি। অট্টালিকা গুলো পাশ্চাত্য শিল্প সংস্কৃতির এক অনন্য সৃষ্টি আপনাকে মুগ্ধ করবে।
আমরা সব গুলো প্যালেস এর চারো পাশ ঘুরে দেখেছি। প্রতিটি প্যালেস এর পিছনে রয়েছে বেশ বড় ও গভীর কুয়া।
আরও: বালিয়াটি জমিদার বাড়ি (ভ্রমণ গাইড)
কিভাবে যাবেন
পাকুটিয়া ভ্রমণের জন্য আপনি আমার ভ্রমণ গাইড দেখতে পারেন। যেখানে ভ্রমণের বিস্তারিত বলা আছে। সবশেষে আমি বলব যে, পাকুটিয়া ডে ট্যুর এর জন্য চমৎকার একটি স্থান। আপনি চাইলে যে কোন দিন এই দর্শনীয় স্থান থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
আরও: পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী (ভ্রমণ গাইড)
পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী ভ্রমণ টিপস
পাকুটিয়া ভ্রমণের কিছু টিপস দেয়া হল:
- যে কোন ঋতুতেই আপনি পাকুটিয়া ভ্রমণে যেতে পারেন।
- সন্ধার পর এখানে ভ্রমণ না করাই ভালো।
- পাকুটিয়া জমিদার বাড়ীর প্রত্যেকটি ভবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ তাই নির্দেশনা অমান্য করে কোন ভবনের উপরে উঠবেন না।
- প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করবেন না।
- ভিতরে প্রস্রাব বা পায়খানা করার মতো জঘন্য কাজ করবেন না।
- বৃষ্টির সময় সঙ্গে ছাতা রাখুন অথবা রেইনকোট রাখুন।
- ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের নিচে বসবেন না।
- ক্যামেরা, মানিব্যাগ যাবতীয় জিনিস নিজের সঙ্গে রাখুন।
আমাদের আজকের ভ্রমণ শেষ। ঘড়িতে এখন বিকেল ৫ বেজে ২ মিনিট। আমাদের ঢাকা যাওয়ার সময় হয়েছে। আমরা চলে যাচ্ছি কিন্তু আপনি এখানে ভ্রমণ করতে ভুলবেন না কিন্তু।
আপনার ভ্রমণ হোক নিরাপদ এবং আনন্দময়য়। আল্লাহ হাফেজ।
ফেসবুক: Kuhudak
এক কথায় অসাধারণ…
ধন্যবাদ 🙂