কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত (Kuakata Sea Beach) ভ্রমণ করে আসলাম। করোনা ভাইরাস এর কারনে অনেক দিন ভ্রমণে যেতে পারি নি। বেশ লম্বা একটা বিরতি হয়ে গেলো মাঝখানে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এই প্রথম এসেছি আমি।
‘সাগরকন্যা’ হিসেবে পরিচিত এটিই বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত যেখান থেকে আপনি একসাথে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখতে পাবেন।
প্রথমেই বলে নেই এটা একদিনের একটা বাজেট ট্যুর। তাই যতটা সম্ভব খরচ বাচানোর চেষ্টা থাকবে। কম খরচে কিভাবে বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ করবেন তাই নিয়ে আজকের ভ্রমণ পোস্ট।
এক দিনের ট্যুর, বাজেট কমানো, সব গুলো দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা। এটা ছিল আমাদের কাল্পনিক আর গুগল ঘাটা তথ্য। বাস্তবতা তার ঠিক উল্টো! বাস্তবতা আসলে কল্পনার চেয়েও রোমাঞ্চকর। আমাদের সাথে আসলে কি ঘটেছিল এক দিনের এই ভ্রমণে? তা’ই বলব আপনাদের। ধৈর্য্য ধরে পড়তে থাকুন।
আজকের ভ্রমণে আমার সাথে ছিলেন আমার অফিস সহকর্মীরা। সংখ্যায় আমরা ৬ জন। জাভেদ, অর্ণব, সারফারাজ, ইমরান (মামা), রায়হান আর সাথে আমি আপনাদের ভ্রমণ বন্ধু আরিফ হোসেন (GoArif) তো আছিই। চলুন আজকের ভ্রমণ শুরু করা যাক…
আরও: পটুয়াখালী জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত |
ধরন | দর্শনীয় স্থান |
অবস্থান | মহিপুর, কলাপাড়া, পটুয়াখালী, বরিশাল, বাংলাদেশ |
আয়তন | দৈর্ঘ্য: ১৮ কিলোমিটার, বিস্তৃতি: ৩ কিলোমিটার |
অন্যনাম | সাগরকন্যা |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | ৩৮০ কিলোমিটার (সড়কপথ) |
বরিশাল থেকে দূরত্ব | ১০৮ কিলোমিটার |
পটুয়াখালী সদর থেকে দূরত্ব | ৭০ কিলোমিটার |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
পিকনিক স্পট | আছে |
একনজরে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিলাম। এবার চলুন কুয়াকাটার ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই। এখানে দেয়া তথ্য গুলো উইকিপিডিয়া, সরকারী ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য সোর্স থেকে নেয়া হয়েছে।
কুয়াকাটার ইতিহাস ও সংস্কৃতি
অনলাইন ঘেটে কুয়াকাটার ইতিহাস সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে যতটুকু পেয়েছি তা হল-
কুয়াকাটা নামের উৎপত্তি
কুয়াকাটা নামের উৎপত্তি হয়েছে কুয়াকাটার ‘কুয়া’ শব্দটি এসেছে ‘কুপ’ থেকে। প্রচলিত একটি ধারনা রয়েছে যে, আরাকানরা প্রায় ১৮ শতকের দিকে মুঘল শাসকদের দ্বারা বার্মা থেকে বিতাড়িত হয়ে বহু রাখাইন নৌকাযোগে বঙ্গোপসাগরের তীরের রাঙ্গাবালি দ্বীপে অবতরণ করে এবং বর্তমানের কুয়াকাটা অঞ্চলে বসবাস শুরু করে।
তখন এখানে খাবার পানির সমস্যা ছিল তাই তারা এখানে প্রচুর কুয়ো বা কুপ খনন করেছিল। সেই থাকে এই অঞ্চলের নাম কুয়াকাটা হয়েছে। তবে এটা প্রচলিত ধারণা। আমি উইকিপিডিয়া সহ প্রায় সব জায়গায় এই তথ্যটি পেয়েছি। তবে এটি ১০০% সঠিক তথ্য নয়।
ইতিহাস নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করব না কারন আজকে আমাদের কুয়াকাটা ভ্রমণের গল্প বলবো আপনাদের সাথে। ইতিহাস তো বলা হল এবার কুয়ায়কাটার সংস্কৃতি সম্পর্কে একটু জেনে নেই এরপর আমরা আমাদের মূল ভ্রমণে চলে যাব।
সংস্কৃতি
কুয়াকাটা হচ্ছে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান। অগণিত ভক্তরা এখানে ‘রাস পূর্ণিমা’ এবং ‘মাঘী পূর্ণিমা’ উৎসবে উপস্থিত হন। এই উপলক্ষে তীর্থযাত্রীরা উপসাগরে পবিত্র স্নান করেন এছাড়া ঐতিহ্যবাহী মেলায়ও অংশ নেন তারা।
আদমশুমারি ২০১১ অনুযায়ী কুয়াকাটায় মোট জনসংখ্যা ছিল ৯,০৭৭ জন এবং পরিবার এর সংখ্যা ছিল ২,০৬৫ টি।
চলুন এবার আমরা ভ্রমণে ফিরে যাই…
আরও: ইলিশ খেতে মাওয়া ফেরি ঘাট
ভ্রমণ প্রস্তুতি
অনেকদিন ধরেই কুয়াকাটা ভ্রমণ এর প্ল্যান করছিলাম, কিন্তু যাওয়া হয়ে উঠছিল না। ১৬ই জুন অর্নব আর জাবেদ জানালো কুয়াকাটা ভ্রমণ এর চিন্তা করছে ওরা। ১ দিনের ট্যুর হবে। আমি যাব কিনা? প্রশ্ন করল। যেহেতু আগে থেকেই বরিশাল বিভাগে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। তাই কোন চিন্তা না করেই ওদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম।
আমি সহ অফিস এর ৭ জন মিলে কুয়াকাটা যাব প্ল্যান হল। সে অনুযায়ী জনপ্রতি ১১৯০ টাকা করে ঢাকা টু কুয়াকাটার বাস সাকুরা পরিবহন (নন এসি) এর টিকিট সংগ্রহ করা হল। এ লাইনের সাকুরা পরিবহন ভালো মানের বাস।
পরবর্তীতে মাহমুদ ভাই এর আব্বু অসুস্থ হয়ে হসপিটাল ভর্তি হওয়ার কারনে ১টা টিকিট এর টাকা রিফান্ড করা হল। এখানে উল্লেখ্য যে, সাকুরা পরিবহন বাস ছাড়ার ৬ ঘন্টা আগে সম্পূর্ণ টাকা রিফান্ড করে থাকে।
বাস ছাড়বে মিরপুর টেকনিক্যাল থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১১:১৫ মিনিটে। আমরা নয়াপল্টন থেকে টেকনিক্যাল গিয়ে বাসে উঠব। তাই অফিস থেকে ৯টার ভিতরে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত হল। কারন, বৃহস্পতিবার রাস্তায় জ্যাম থাকে।
ভ্রমণের দিন
১৭ তারিখ ২০২১। আজকে রাত ১১:১৫ মিনিটে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে আমাদের ভ্রমণ শুরু হবে। সবাই অফিসে আসার আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। বৃহস্পতিবার আমাদের অফিসে একটু কাজের চাপ বেশি থাকে। তারপরও সময় একটু আগে পিছে করে আমারা ৪ জন অফিস থেকে বের হয়ে যাই। কিন্তু বস এর সাথে মিটিং থাকায় সারফারাজ ভাই এবং রাইহান ভাই তখনো বের হতে পারেন নি।
আমরা বাসায় গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে প্রস্তুনি নিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বসে আছি। ঘড়িতে তখন রাত ৯:৩৫ মিনিট। তখনো তারা বের হতে পারেন নি!
অবশেষে ঘড়িতে যখন রাত ৯:৫৫ মিনিট তখন তারা বের হলেন। কিন্তু সমস্যা হল রাস্তায় কোন খালি সিএনজি নেই। অর্নব চলে গেলো মোটরসাইকেল করে। যাতে আমাদের দেরি হলেও বাস কন্টাক্টর কে বলে একটু সময় বাড়াতে পারে।
রাত ১০:১০ মিনিট। আমরা সি এন জি পেলাম। সিএনজিতে উঠেই ড্রাইভার মামা কে বললাম যে করেই হোক আমাদের কে ১১:১৫ এর বাস ধরাতে হবে। উনি সেভাবেই সি এন জি চালাচ্ছিলেন। তবে আজকের বৃহস্পতিবার টা একটু অন্য রকমই মনে হল। রাস্তায় তেমন একটা জ্যাম নেই। ২টা সিগন্যাল পেয়েছি। তাও বেশি সময় লাগে নি।
সাকুরা বাস কাউন্টারে আমরা রাত প্রায় ১১ টার দিকেই পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমরা বাস কাউন্টারে গিয়ে কিছু হালকা নাস্তা করে নিলাম।
রাত ১১:১৫ মিনিট। আমাদের বাস তখনো কাউন্টারে আসে নি! আমরা কাউন্টারে বসে গল্প করছিলাম। আমাদের অফিস কলিগ আল-আমিন রাব্বি ভাই এসেছেন আমাদের সি-অফ করতে। ওনার বাসা মিরপুরেই।
কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে বাস যাত্রা
অবশেষে অপেক্ষার পহর শেষ হলো রাত ১২:১০ মিনিটে! আলহামদুলিল্লাহ্, কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে আমাদের বাস যাত্রা শুরু হল। যেহেতু করোনার ভাইরাসে আক্রান্ত পুরো বিশ্ব তাই বাসে ২ সিট এ ১ জন করে বসতে হল।
ইতিমধ্যে আমরা জানতে পারলাম যে, বাস কুয়াকাটা গিয়ে পৌঁছোতে দুপুর ২ টা বাজবে! এই কথা শুনে আমরা অবাক! কারন, আমরা ধারণা করেছিলাম বাস সকাল ৮টায় কুয়াকাটা পৌঁছোবে।
বাস ছোট ছোট জ্যাম ঠেলে এগিয়ে চলছে। বাহিরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের সবার মন খারাপ। এক দিনের ট্যুর। যদি দুপুর ২ টার সময় কুয়াকাটা গিয়ে পৌঁছাই তাহলে বিকাল ৪টার দিকে আমাদের কে বরিশাল লঞ্চ এর জন্য কুয়াকাটা থেকে রওনা দিতে হবে!
সব মিলিয়ে সময় পাবো মাত্র ২ ঘন্টা!! এতো লম্বা জার্নি করে মাত্র ২ ঘন্টায় কি দেখবো আমরা। তার উপর বৃষ্টি হচ্ছে। সব মিলিয়ে মনটা খারাপই হয়ে গেলো।
এতোক্ষণে বাস সাঁ সাঁ করে ছুটে চলল… সাকুরা বাস এর সার্ভিস ভালোই মনে হলো। রাস্তায় জ্যাম থাকায় ১ ঘন্টা সময় লেট হয়েছে আমাদের।
সারাদিন অফিস করে সবাই ক্লান্ত। এদিকে রাতে কারও খাওয়া হয় নি। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। আমি আর রাইহান ভাই ছবি তুলছিলাম। এক পর্যায়ে আমাদেরও ঘুম চলে আসে। আমরা হারিয়ে যাই গভীর এক ঘুমে।
আরও: মায়াদ্বীপ ভ্রমণ
দৌলতদিয়া ফেরিঘাট
বাসের ঝাঁকুনি খেয়ে যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন আমরা দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এর লম্বা সিরিয়ালে। বাস একটু এগিয়ে গিয়ে আবার থেমে যায়, আবার একটু এগিয়ে যায়। এভাবেই চলছিল।
বাসে বসেই দেখি রাস্তার এক পাশে ছোট ছোট ভ্রাম্যমাণ দোকান। পেটে প্রচন্ড খুদা। কারোরই রাতে খাওয়া হয়নি। আমরা বাস থেকে নামলাম। বাহিরে বেশ ঠান্ডা বতাস। এখানে অনেক গুলো ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে। কেউ সিদ্ধ ডিম বিক্রি করতে তো কেউ কলা, রুটি, চিপস জাতীয় খাবার বিক্রি করছে আবার কেউবা তেলে ভাঁজা ডিম পরোটা বিক্রি করছে।
আমরা প্রথমে ডিম পরোটা খেলাম। এরপর সিদ্ধ ডিম, কলা ইত্যাদি খেলাম। ইতিমধ্যে আমাদের বাস অনেকটা এগিয়ে গেছে। আমরা হেঁটে বাসের কাছে চলে আসলাম। প্রায় ১:৩০ মিনিট পর আমাদের বাস দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এর ফেরিতে উঠল।
এদিকে বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা বাস থেকে নেমে ফেরির ২য় তলায় উঠলাম। এখানে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা ইলিশ মাছ ভাঁজা আর ডাল নিলাম খাওয়ার জন্য। এখানে খবারের মান খুব একটা ভালো না। ঠ্যাকায় পরে খাওয়া অনেকটা। কারন আমাদের বাস কোথাও বিরতি দেয় নি।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার দর্শনীয় স্থান
খাবারের বিল আসলো প্রায় ১৮০০ টাকার মত! একেতো খাবারের মান ভালো না তার উপর ৬ জন এর এই খাবারের বিল এতো টাকা। মনে মনে একটা কড়া কথা বলে দিলাম “এটা কি প্রজেক্ট হিলসা নাকি যে তোরা এতো দাম নিস খাবারের” ।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ফেরি পার হতে সময় লাগে ২০ মিনিট এর মত। খাবার শেষে আমরা ফেরির ৩য় তলায় চলে আসলাম। বাহিরে ভালো বৃষ্টি হচ্ছে। উপরে আসতে গিয়ে আমরা অনেকটা ভিজে গেলাম। উপরে অনেক বাতাস।
আমরা এখানে কিছু ছবি তুললাম। সকালের পরিবেশ টা ভালো লাগছিল। ইতিমধ্যে ফেরি ঘাট এর একেবারে কাছে চলে আসছে। আমরা দ্রুত বাসে চলে আসলাম। বাসে আসতে গিয়ে খেয়ালই করিনি যে আমার গায়ের টি-শার্ট ময়লা পানি দিয়ে ভিজে নোংরা হয়ে গিয়েছে! অগুন্ত বাসে বসে ট-শার্ট চেঞ্জ করে নিলাম।
আরও: মেঘনা নদী ভ্রমণ
বরিশাল
ফেরি পার হয়ে আমরা ট্যুর প্ল্যান চেঞ্জ করতে চেয়েছিলাম। যেহেতু কুয়াকাটা পৌঁছোতে অনেক সময় লেগে যাবে তাহলে আমরা বরিশাল পর্যন্ত যাব। তারপর ঐখান থেকেই ঢাকা ফিরে যাব। কিন্তু পরে আবার সবার সম্মতিতে কুয়াকাটা ট্যুর প্ল্যান ঠিক রাখা হল।
আমাদের বাস যখন বরিশাল শহর এর ভিতর দিয়ে কুয়াকাটার দিকে এগিয়ে চলছে ঘড়িতে তখন সকাল প্রায় ৯:৩০ মিনিট। রাইহান ভাই আমার পাশে এসে বসলেন। ওনার চোখে মুখে ঘুম। রাতে সরফরাজ ভাই আর জাবেদ পাশাপাশি সিটে বসলেও এখন ঐ সিটে ইমরান মামা ঘুমুচ্ছেন। জাবেদ সামনের সিটে ঘুমোচ্ছে।
লেবুখালী ফেরিঘাট
লেবুখালী ফেরিঘাট এসে আমাদের ২য় বিরতি হল। এটা ঠিক বিরতি বলা যায় না। ফেরির জন্য অপেক্ষা বলা যায়। লেবুখালি ব্রিজ নির্মাণাধীন থাকায় এখনো সব পরিবহন এর একমাত্র ভরসা ফেরি। দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে লেবুখালী ফেরিঘাট অনেকটাই ছোট এবং সময়ও লাগে কম। কিন্তু ফেরির অপেক্ষা মোটেও কম নয়।
নির্মাণাধীন লেবুখালী ব্রিজ এর পাশেই রয়েছে শেখ হাসিনা সেনানিবাস। এটি একটি পরিকল্পনাধীন সেনানিবাস। প্রায় ১৫৩২ একর জুড়ে বিস্তৃত এই সেনানিবাস।
আরও: পানাম নগর
সাগরকন্যা কুয়াকাটা ভ্রমণ
ইতিমধ্যে আমরা লেবুখালী ফেরি পার হয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা হয়ে সাগরকন্যা কুয়াকাটা ভ্রমণ শুরু করেছি। কিছুটা পথ আঁকাবাঁকা হলেও পরবর্তীতে সোজা রাস্তাই দেখতে পেলাম আমরা।
ইমরান মামা সব সময়ই রসিক মানুষ। সবাইকে আনন্দে রাখতে পছন্দ করেন। অ্যাপেল কোম্পানির প্রোডাক্ট পছন্দ এবং ব্যাবহার করায় আমাকে উনি অ্যাপেল বয় বলে ডাকেন। বাসের অনেক যাত্রী ইতিমধ্যে নেমে গেছে। ইমরান মামা গান ধরলেন। তার সাথে সারফারাজ ভাই, আমি, জাবেদ তাল মিলালাম। চুপচাপ থাকা পরিবেশটা হঠাৎ অন্যরকম হয়ে উঠল।
দুই পাশের ফাঁকা মাঠের বুক চিরে সোজা রাস্তা চলে গেছে কুয়াকাটার দিকে। সে রাস্তা দিয়ে আমাদের বাস সাঁ সাঁ করে এগিয়ে চলছে। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। ইমরান মামার পর এবার সরফারাজ ভাই গান ধরলেন… “ছেড়ে গেলে সোনার গৌর আর তো পাবো না” তার সাথে সুর মিলিয়ে আমরাও গাইলাম। সে সুর মিশে গেলো বৃষ্টির সাথে…
অবশেষে দীর্ঘ ১৩ ঘন্টা বাস ভ্রমণ শেষে প্রায় দুপুর ২ টার সময় আমরা কুয়াকাটা চৌরাস্তা এসে পৌছালাম! বাহিরে তখনও বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা বাস থেকে নামলাম।
দীর্ঘ জার্নির কারনে আমাদের সবার অবস্থাই খারাপ। আমরা ক্লান্ত। কিন্তু আমরা সাগরকন্যা কুয়াকাটায় এটা ভাবতেই শরীর এবং মনে কেমন যেন শক্তি পাচ্ছিলাম। কখন যাব সমুদ্র পাড়ে! কখন ঝাপিয়ে পড়ব সমুদ্রের পানিতে!! ভাবতেই ভালো লাগছিল। সমুদ্র দেখার তর সইছিলনা আমাদের।
বাস থেকে নেমে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে প্রথমে খাবার হোটেলে ঢুকলাম। সবার পেটেই খুদা। চোখে ঘুম। হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসলাম।
খুব দ্রুতই খাওয়ার পর্ব শেষ করলাম। খাওয়া শেষে অর্নব, রাইহান আর জাবেদ গেছে হোটেল খুঁজতে। ব্যাগ নিয়ে তো আর সমুদ্র পাড়ে ঘুরা যাবে না। খুব কাছেই হোটেল পেলাম আমরা ভাড়াও খুব বেশি না। হোটেল বুক করা হল ৪ ঘন্টার জন্য। যদিও আমরা থাকব ২ ঘন্টার মত।
হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করলাম। ব্যাগ রেখে বেড়িয়ে পরলাম সাগরকন্যা দেখার জন্য।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এর অপরূপ দৃশ্য
এখন আর বৃষ্টি হচ্ছে না। আকাশ অনেটা পরিষ্কার। আমরা হেঁটে সোজা সমুদ্র পাড়ের দিকে চলে আসলাম। বেশ কয়েকজন টুরিস্ট পুলিশ কে দেখলাম টুরিস্টদের সাথে কি নিয়ে যেনো কথা বলছে। আমরা ঐ দিকে ভ্রূক্ষেপ করলাম না।
পাড়ের এই দিকটা বেশ উচু। আমরা ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ মাইকে একজন বলে উঠলেন “করোনার কারনে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত কে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তাই সবাই সমুদ্র পাড় থেকে চলে যান!”
আমাদের দিকে একজন টুরিস্ট পুলিশ এগিয়ে এসে ভদ্র ভাষায় বললেন আপ্নারা এখান থেকে চলে যান। এখানে লকডাউন চলছে। যেহেতু লকডাউন, কি আর করা আমরা পাড় থেকে চলে আসলাম। কিন্তু বার বার পিছন ফিরে তাকাচ্ছিলাম সাগরকন্যার দিকে। কি অপরূপ তার দৃশ্য। চোখের পাতা পরছিল না।
পরে অবশ্য আমরা হেঁটে অনেকটা দূরে এসে আবার সমুদ্র পাড়ে গেলাম। এখানে বেশ কিছু টুরিস্ট রয়েছে। পাড়ে ছোট ছোট দোকান রয়েছে। কয়েটা ডাব বিক্রেতার দেখা পেলাম।
আরও: ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর
বেশ বড় বড় ঢেউ পাড়ে আঁচড়ে পরছিল। বৃষ্টি নেই, পরিবেশটা অসাধারণ লাগছিল আমাদের কাছে। আমি বেশ কয়েকবার কক্সবাজার ট্যুরে গিয়েছি। কিন্তু এতো বড় বড় ঢেউ দেখি নি।
অজান্তেই আমার মনে ২লাইন কবিতা চলে আসলো:
“এতো অসাধারণ লাগে নি আমার কক্সবাজার,
যতটা লেগেছে তোমায় দেখে সাগরকন্যা”
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত
কুয়াকাটা যাবেন আর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখবেন না তা কি হয়! সূর্যোদয় দেখার জন্য ঝাউ বনে যাওয়াই ভালো। সেখান থেকেই সূর্যোদয় ভালো দেখা যায়। সমুদ্রের ভিতর থেকে কিভাবে সূর্য উঠে তা দেখার জন্য অনেক লোকই আগে চলে যাণ সেখানে।
আর সূর্যাস্তের দৃশ্যটা আরও চমৎকার। সূর্যটা সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার সময় রংয়ের পরিবর্তনটা আপনি স্পষ্টই দেখাতে পাবেন। কি যে দারুণ লাগে দেখতে। দৃষ্টিনন্দন সূর্যাস্ত দেখার জন্য পর্যটকরা ভিড় জমান কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিম প্রান্ত ‘লেবুর বনে’। তবে, সৈকতের যেকোন প্রান্ত থেকে সূর্যাস্ত দেখা যায়।
কুয়াকাটার কুয়া
আগেই বলেছি কুয়াকাটা নামের উৎপত্তি হয়েছে কুয়াকাটার ‘কুয়া’ ‘কুপ’ শব্দটি থেকে। কুয়াকাটা গিয়ে কুয়া দেখবেন না তা কি হয়!
বর্তমানে অদূরদর্শী কুরুচিকর সংস্কারের ফলে এর সৌন্দর্য এবং প্রাচীন আদল নষ্ট হয়ে গেছে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছেই রাখাইন আদিবাসীদের বাসস্থল কেরানি পাড়ার শুরুতেই বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে রয়েছে এই কুয়াটি। ভ্রমণে গেলে অবশ্যই দেখে আসতে ভুলবেন না।
কুয়াকাটা দর্শনীয় স্থান গুলো
কুয়াকাটার আশেপাশে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। চলুন সেগুলোর সাথে একটু পরিচিত হই।
- কুয়াকাটা বৌদ্ধ মন্দির
- ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী নৌকা
- কুয়াকাটার কুয়া
- কাউয়ার চর
- চর গঙ্গামতী
- ঝাউ বন
- লাল কাঁকড়ার চর
- রূপালী দ্বীপ
- বৌদ্ধ বিহার
- কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান
- পাখি মারা পানি যাদুঘর
- মিষ্টি পানির কূপ
- রাখাইন পল্লী
- বার্মিজ মার্কেট
- শুঁটকি পল্লী
- ঝিনুক বীচ
- লেবুর চর
- তিন নদীর মোহনা
- ফাতরার বন (সুন্দরবনের পূর্বাংশ)
- স্বপ্ন রাজ্য
সমুদ্র সৈকত থেকে বিদায়
এরই মাঝে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান গুলোতে যাবার প্ল্যান করে পরে সেটা বাদ দেয়া হয়েছে। কারন, আমাদের হাতে সময় খুবই কম। ১ ঘন্টার মত আছে। এই অল্প সময়ে কোন প্লেসেই যাওয়া সম্ভব না। গেলেও সেটা উপভোগ্য হবে না।
আমরা প্রায় ঘন্টাখানেক সমুদ্রের পাড়ে কাটালাম। ছবি তুললাম, ভিডিও করলাম, ফেসবুক লাইভ করলাম। ইতিমধ্যে টুরিস্ট পুলিশ চলে এসেছে আমাদের কাছে। সবাইকে চলে যেতে বাধ্য করছে।
অবশেষে অনেকটা টুরিস্ট পুলিশ এর তাড়া খেয়ে বীচ থেকে চলে আসলাম। আমাদের থাকাও ঠিক না। কারন, একজন এর দেখা দেখি অন্যরাও চলে আসছিল। যেমন আমরা অন্যদের দেখে এসেছিলাম।
উপরে এসে আমরা এক জায়গায় বসলাম। সবাইকে ডাব কেটে দেয়া হল। আমরা ডাব খেলাম। কিন্তু চোখ সব সময় সমুদ্রের দিকেই ছিল। এতো চমৎকার সমুদ্র সৈকত ছেড়ে কারই বা যেতে ইচ্ছে করে বলেন?
কিন্তু বিদায় তো জানাতেই হবে। আমরা যে থাকতে পারব না। আমাদের কর্মস্থল আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। আমরাও সে ডাকে সাড়া দিয়ে বিদায় জানালাম সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত কে। বেঁচে থাকলে আবার আমি ফিরে যাব বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার এই সমুদ্র সৈকতে।
আরও: বাংলাদেশের সেরা ৫০ টি দর্শনীয় স্থান বা পর্যটন কেন্দ্র
কুয়াকাটা যাওয়ার উপায়
নদী ও সড়ক পথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। তবে আপনি বিমানে বরিশাল গিয়ে সেখান থেকে কুয়াকাটা যেতে পারেন।
আরও: ভ্রমণ গাইড
বাস ভ্রমণ
ঢাকা থেকে
গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে বেশ কিছু বাস ছেড়ে যায়। উল্লেখযোগ্য পরিবহণ হল- দ্রুতি পরিবহন, সাকুরা পরিবহন। এসব বাস আপনাকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ২০০ মিটার দূরে নামিয়ে দিবে।
ভাড়া: ৫০০ – ৫৫০ টাকা
সময়: ১২/১৩ ঘন্টা
খুলনা থেকে
খুলনা থেকে সকাল ৭ টায় একটি বিআরটিসি বাস কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়াও যেসব বাস খুলনা থেকে ছেড়ে আসে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কুয়াকাটা এক্সপ্রেস, রয়্যাল পরিবহন, সেভেন স্টার সেভেন ডিলাক্স এবং হাওলাদার পরিবহন।
ভাড়া: ৫০০ টাকা (নন এসি)
সময়: ৭/৮ ঘন্টা
উত্তরবঙ্গ থেকে
উত্তরবঙ্গ থেকে রূপসা অথবা সীমান্ত আন্তঃনগর ট্রেনে করে সৈয়দপুর থেকে খুলনা পর্যন্ত করে আসতে পারবেন। তবে রাতের ট্রেনে আসলে সবচেয়ে আলো হয়। এতে সকাল ৭ টার BRTC বাসে করে কুয়াকাটা যেতে পারবেন।
লঞ্চ ভ্রমণ
ঢাকা – পটুয়াখালী – কুয়াকাটা
সদরঘাট থেকে বেশ কিছু লঞ্চ সুন্দরবন-৯, কুয়াকাটা-১, এম ভি প্রিন্স আওলাদ-৭, কাজল-৭, সুন্দরবন-১১, এম ভি এ আর খান-১ প্রভৃতি লঞ্চ পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
লঞ্চ ভাড়া
সিঙ্গেল কেবিন: ৮০০ – ১০০০ টাকা
ডাবল কেবিন: ১৮০০ – ৩৫০০ টাকা
ডেকের ভাড়া: ২০০ – ৩০০ টাকা
বি:দ্র: লঞ্চ থেকে সকালের মধ্যে পটুয়াখালী কিংবা কলাপাড়া নেমে রেন্ট-এ-কার যোগে অথবা কুয়াকাটার বাসযোগে কুয়াকাটা পৌঁছাতে পারেন। সময় লাগবে ২ঘন্টার মত, ভাড়া ১৩০-১৫০ টাকা অথবা আমতলী ঘাঁটে নেমে বাসস্ট্যান্ড থেকে ৫০ – ৭০ টাকা ভাড়ায় কুয়াকাটা যাওয়া যাবে।
ঢাকা – বরিশাল – কুয়াকাটা
সদরঘাট থেকে সন্ধ্যার পর বরিশালের উদ্দেশ্যে একাধিক লঞ্চ ছেড়ে যায়। সকালে বরিশাল পৌঁছায়। বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে রূপাতলি বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে কুয়াকাটা যাবার কোন বাসে উঠে যেতে হবে। সময় লাগবে ৩ ঘন্টার মত। ভাড়া ১৮০-২৫০ টাকা।
লঞ্চ ভাড়া
ডেকে ভাড়া: ১৫০ – ২০০ টাকা
সিঙ্গেল ও ডাবল কেবিন: ৭০০ – ৩,৫০০ টাকা
বিমান ভ্রমণ
আপনি ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বরিশাল যেতে পারেন। তবে, আভ্যান্তরিন বিমান ভ্রমণের জন্য পাসপোর্টের প্রয়োজন হবে না। তাই বিমান ভ্রমণের আলাদা কোন ঝামেলা নেই। নিরাপত্তার খাতিরে শুধু আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রটি হলেই চলবে। ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে সপ্তাহে গড়ে ১৮ টি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে।
স্বল্পমূল্যে বিমানের টিকিট এবং ভ্রমণ সম্পর্কিত যেকোন প্রশ্নের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন: ০১৯৭৩৪১৯১০৭
সময়: বিমান যোগে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট বা তার কিছু কম/বেশি।
ভাড়া: ২,৫০০ – ৯,০০০ টাকা
কোথায় খাবেন
কুয়াকাটা ভ্রমণে স্থানীয় রেস্টুরেন্টেও বিভিন্ন রকম দেশী খাবার পাওয়া যায়। এছাড়া খাবার ঘর-১, খাবার ঘর-২, কলাপাড়া হোটেল, হোটেল মান্নান, হোটেল বরিশাল ইত্যাদিতে ভালো মানের খাবার পাবেন।
কুয়াকাটা কোথায় থাকবেন
সাগরকন্যা হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত কুয়াকাটাতে থাকার জন্য ভালো মানের মোটেল, হোটেল রয়েছে। আধুনিক মান সম্মত হোটেল গুলোর মধ্যে রয়েছে- হোটেল নীলঞ্জনা, হোটেল বি-ভিউ, হোটেল গোল্ডেন প্যারেজ, হোটেল বীচ-ভেলী, হোটেল ফ্যামিলী হোমস, কুয়াকাটা গেষ্ট হাউজ, হোটেল সাগর কন্যা, হোটেল আল হেরা, হোটেল আকন, হোটেল সি-গার্ডেন, হোটেল স্মৃতি সহ আরো বেশ কিছু হোটেল ও মোটেল।
মান ও শ্রেনী অনুযায়ী এসব হোটেলে ৪০০ – ৫,০০০ টাকায় থাকতে পারবেন। তবে বাজেট ট্যুর এর ক্ষেত্রে কয়েকজন মিলে শেয়ার করে থাকলে খরচ কম হবে। সিজন ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া গেলে আগে থেকে হোটেল বুক করার প্রয়োজন পরবে না। আর অবশ্যই দামাদামি করে হোটেল বুক করবেন।
আরও: ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর
কুয়াকাটা ভ্রমণ খরচ সম্পর্কে ধারণা
এই প্রথম আমি কোন ভ্রমণ ব্লগে ভ্রমণ খরচ সম্পর্কে একটা ধারণা দিচ্ছি। আশাকরি এতে আপনার ভ্রমণ প্লানে কিছুটা হলেও উপকার হবে। তবে, ভ্রমণ খরচ সঠিক ভাবে বলার কোন উপায় নেই। খরচ আনুমানিক যাইহোক না কেনো তার চেয়ে অতিরিক্ত কিছু টাকা সাথে রাখবেন।
- ঢাকা – বরিশাল লঞ্চে : ডেক ২০০ টাকা, কেবিন ৭০০ – ৩,৫০০ টাকা
- ঢাকা – পটুয়াখালী লঞ্চে : ডেক ৩০০ টাকা, কেবিন ১০০০/২০০০ টাকা
- পটুয়াখালী – কুয়াকাটা বাসে : ১৪০ টাকা
- ঢাকা – কুয়াকাটা বাসে : ৬৫০ টাকা (নন-এসি), ১০০০ টাকা (এসি)
- কুয়াকাটা হোটেল : মোটামুটি মানের হোটেল ভাড়া সিঙ্গেল – ১০০০, ডাবল ১৫০০ টাকা
- মোটরসাইকেল ভাড়া : দুই দিন ৬০০ – ৮০০ টাকা
- সকালের খাবার : দুই দিন দুই বেলা, জনপ্রতি ১০০ – ২০০ টাকা
- দুপুরের খাবার : দুই দিন দুই বেলা, জনপ্রতি ৩০০ – ৪০০ টাঁকা
- রাতের খাবার : দুই দিনের রাতের খাবার, জনপ্রতি ৩০০ – ৪০০ টাকা
- অন্যান্য খরচ : ৫০০ টাকা
সব মিলিয়ে ২ দিন এর জন্য আনুমানিক ৬,৫০০ টাকা (বাজেট ট্যুর)
কুয়াকাটা ভ্রমণ টিপস
নিচের ভ্রমণ টিপস গুলো দেখুন।
- যদি আপনার ১ দিনের জন্য ট্যুর প্ল্যান থাকে তাহলে ঢাকা টেকনিক্যাল থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা বাস ভ্রমণ না করাই ভালো। আমরা ১ দিনের ভ্রমণে ২ ঘন্টা সময় পেয়েছিলাম মাত্র। যাওয়ার সময় বাস এবং আসার সময় বরিশাল লঞ্চে করে এসেছিলাম।
- ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার উত্তম পথ হল লঞ্চ। বাসে প্রায় ১২ থেকে ১৫ ঘন্টা সময় লেগে যায় কুয়াকাটা যেতে। আর লঞ্চে আপনি খুব আরামে চলে যেতে পারবেন এবং সময়ও লাগবে কম।
- কুয়াকাটা গেলে আগে থেকেই জেনে নিন কোন কারনে বন্ধ রয়েছে কিনা।
- একা হেঁটে বীচ এর অনেক দূরে চলে যাবেন না।
- দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে না খাওয়াই ভালো। কারন এখানে খাবারের মান খুব একটা ভালো না। তার উপর দাম নেয় বেশি। যদি খেতেই হয় তাহলে আগে থেকেই কোন খাবারের দাম কতো জেনে নিবেন।
- বরিশাল লঞ্চ এর খাবারের মান খুবই ভালো লেগেছে আমার। পরিবেশও ভালো। দামও তুলনামুলক কম।
- ঢাকা থেকে গেলে বেশ লম্বা জার্নি হবে। তাই শারীরিক এবং মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।
- আসার সময় আমরা বরিশাল লঞ্চে করে এসেছি। লঞ্চ ছাড়ে রাত ৯ টায়। তাই লঞ্চে করে যেতে চাইলে ৯ টার ভিতরেই ঘাটে চলে আসুন। লঞ্চ ঢাকা সরঘাটে সকাল ৫ টায় ভিড়ে।
- অপরিচিত কারও দেয়া কিছু খাবেন না।
- সাথে অতিরক্ত জামাকাপড় রাখবেন।
- সমুদ্রে নামার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন।
- যে কোন সমস্যায় টুরিস্ট পুলিশ এর সাহায্য নিন।
ভ্রমণ জিজ্ঞাসা
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য কত?
দৈর্ঘ্য: ১৮ কিলোমিটার, বিস্তৃতি: ৩ কিলোমিটার
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত কোন জেলায় অবস্থিত?
পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত কোথায় অবস্থিত?
বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের আরেক নাম কি?
সাগরকন্যা
সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায় কোথায়?
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
কুয়াকাটা হোটেল ভাড়া কত?
হোটেল ভাড়া আনুমানিক ৪০০ – ৫,০০০ টাকা
কুয়াকাটার বিখ্যাত খাবার কি?
লেবুর চরের কাঁকড়া ভুনা এবং মহিষের দই
কুয়াকাটা অতিথি পাখি আসে কখন?
শীতকালে বিভিন্ন অতিথি পাখি দেখা যায়
কুয়াকাটা বৌদ্ধ মন্দিরের মূর্তি টির নাম কি?
গৌতম বুদ্ধের মূর্তি
কুয়াকাটার কুয়া কোথায় অবস্থিত?
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছেই রাখাইন আদিবাসীদের বাসস্থল কেরানি পাড়ার শুরুতেই বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে রয়েছে এই কুয়াটি।
বরিশালের লঞ্চ ছাড়ার সময়?
বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছাড়ার সময় রাত ৯ টা
এবারের কুয়াকাটা বাজের ট্যুর হিসেবে প্ল্যান করতে চেয়েছিলাম কিন্তু এটা হয়ে গেলো বাজেট টাইম ট্যুর প্ল্যান! দূরে ভ্রমণে গেলো অবশ্যই হাতে সময় নিয়ে যাবেন। আপনার ভ্রমণ হোক নিরাপদ এবং আনন্দময়য়।
আরও: সুন্দরবন ভ্রমণ
ফেসবুক: Kuhudak