প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো জামালপুর জামে মসজিদ বা জামালপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ (Jamalpur Zamindar Bari Jame Mosque) বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও জেলার জামালপুর ইউনিয়নের শিবগঞ্জ হাটে অবস্থিত।
আজেক আমরা বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা জামালপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। কি কি দেখবেন, কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কোথায় খাবেন ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত থাকছে। চলুন শুরু করা যাক…
আরও: বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, পঞ্চগড়
জামালপুর জামে মসজিদ
ভ্রমণ স্থান | জামালপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ |
স্থানীয় নাম | জামালপুর জামে মসজিদ |
ধরন | প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা |
অবস্থান | জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, রংপুর |
প্রতিষ্ঠিত | ১৮০১ সাল |
মালিকানা | প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর |
মুসল্লির সংখ্যা | প্রায় ৩০০-৬০০ জন |
উচ্চতা | ৩৫ ফুট |
মিনার | ৮০টি |
গম্বুজ | ৩টি |
ঠাকুরগাঁও জেলা সদর থেকে দূরত্ব | প্রায় ১৩ কিলোমিটার |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | প্রায় ৪০০ কিলোমিটার |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
ভারতের পশ্চিম বঙ্গের তৎকালীন তাজপুর পরগনার জমিদার জামাল উদ্দিন ১৮৬২ সালে জমিদার বাড়ির ভিত্তি স্থাপন করেন। তবে নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই, ১৮৬৭ সালে তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন, যা পরে “জামালপুর জমিদার বাড়ী জামে মসজিদ” নামে পরিচিত হয়।
ইতিহাস ও নির্মাণশৈলী
জামালপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত এবং প্রায় ৩০০-৬০০ মুসল্লির নামাজ আদায়ের সুযোগ রয়েছে। মসজিদটি মূল কক্ষ, ছাদসহ বারান্দা, ছাদবিহীন বারান্দা ও মূল দরজাসহ চারটি অংশে বিভক্ত।
মসজিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর ৩৫ ফুট উচ্চতার ৮০টি মিনার এবং কারুকাজখচিত ৩টি গম্বুজ। গম্বুজ ও মিনারে ফুলেল নকশার অপূর্ব সমন্বয় এই স্থাপনাটিকে অনন্য করে তুলেছে। মূল কক্ষের পরিমাপ ২৯ × ৪৭ ফুট, এবং ছাদবিহীন বারান্দা ২১ × ৪৭ ফুট। পুরো মসজিদে ভেতরে ও বাইরে লতাপাতা ও ফুলের নকশা বিদ্যমান, যা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
কথিত আছে, তৎকালীন তাজপুর পরগনার জমিদারবাড়ি থেকে রওশন আলী নামের একজন ব্যক্তি এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেন। তার বংশধরদের মধ্য থেকেই একজন পরবর্তীতে এই এলাকায় জমিদারি লাভ করেন। ১৮৬২ সালে জমিদারবাড়ির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়, যা ছিল একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। তবে বাড়িটির নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই, ১৮৬৭ সালে একটি মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয়, যা স্থানীয় ইতিহাসে গভীর তাৎপর্য বহন করে।
আরও: তিস্তা ব্যারেজ, লালমনিরহাট ও নীলফামারী
কি কি দেখবেন
- প্রবেশ তোরণ: জমিদার বাড়ির প্রবেশ মুখেই রয়েছে একটি বিশাল তোরণ, যা এর ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলীর প্রাথমিক পরিচায়ক।
- জামে মসজিদ: প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো এই মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত। এখানে একসাথে প্রায় ৩০০-৬০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
- স্থাপত্যের নান্দনিকতা: মসজিদটি মূল কক্ষ, ছাদসহ বারান্দা, ছাদবিহীন বারান্দা এবং মূল দরজাসহ চারটি অংশে বিভক্ত।
- মিনার ও গম্বুজ: মসজিদটির ৩৫ ফুট উচ্চতার আশিটি মিনার ও তিনটি কারুকার্যমণ্ডিত গম্বুজ এর প্রধান আকর্ষণ। ফুলেল নকশার অপূর্ব সমন্বয় এটিকে বিশেষ করে তুলেছে।
- ঐতিহ্যবাহী দেখভাল: জমিদার পরিবারের বর্তমান বংশধরেরাই জমিদার বাড়ি ও মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশে এমন নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর মসজিদ খুবই বিরল, যা ইতিহাসপ্রেমী দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
কিভাবে যাবেন
আপনি বাংলাদেশের যেকোন স্থান থেকে বাস, ট্রেন বা নিজস্ব পরিবহনে এখানে ভ্রমণে আসতে পারবেন।
বাস ভ্রমণ: রাজধানী ঢাকা থেকে ভ্রমণে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও রুটের কর্ণফুলি পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, নাবিল পরিবহন, বাবলু এন্টারপ্রাইজ বা কেয়া পরিবহনের যেকোনো বাসে করে ঠাকুরগাঁও চলে আসতে পারবেন। বাস ভাড়া নিতে পারে ৮০০ থেকে ২৪০০ টাকা
ট্রেন ভ্রমণ: ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন অথাব বিমানবন্দর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে পঞ্চগড় রুটে চলাচলকারী যেকোন ট্রেনে ঠাকুরগাঁও চলে আসতে পারেন। ট্রেনের ভাড়া নিতে পারে ৬৫০ থেকে ২৩০০ টাকা।
জামালপুর জমিদার বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঠাকুরগাঁও থেকে পীরগঞ্জ থানার পথে যাত্রা করলে শিবগঞ্জ হাটে পৌঁছানোর পর আরও প্রায় ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলেই আপনি জমিদার বাড়িতে পৌঁছাবেন। রাস্তা সহজ এবং সুলভ হওয়ায় যাতায়াত বেশ সুবিধাজনক।
আরও: ভিন্নজগত পার্ক – গঙ্গাচড়া, রংপুর
কোথায় খাবেন
ঠাকুরগাঁও জেলা তার বিখ্যাত সূর্যপুরী আম এর জন্য সুপরিচিত। এখানকার স্থানীয় খাবারের রেস্টুরেন্টগুলো ভোজনরসিকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
- প্রধান রেস্টুরেন্ট: মুন্সির হোটেল, উজ্জল হোটেল, বাবুর হোটেল, শহিদুল হোটেল, নিরিবিলি হোটেল, আনসারি হোটেল এবং নিউ সুরুচি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট। এছারাও আরও আশেপাশে আরও হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট পাবেন।
- জনপ্রিয় খাবার:
- সিদল ভর্তা: বিভিন্ন ধরনের শুঁটকি ও মশলা দিয়ে তৈরি এ ভর্তা এখানকার একটি বিশেষ খাবার।
- পিঠা: চালের গুড়া দিয়ে তৈরি পিঠা এই অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী মজাদার আইটেম।
ঠাকুরগাঁওয়ের এই স্থানীয় খাবারগুলো ভ্রমণকারীদের স্বাদে এবং মনে একটি আলাদা ছাপ ফেলে।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবারের তালিকা
কোথায় থাকবেন
ঢাকা থেকে এখানে ভ্রমণে গেলে একদিনে ঘুরে আসা কঠিন। তাই থাকার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ের নর্থ সার্কুলার রোড এলাকায় বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেখানে ভ্রমণকারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
আবাসিক হোটেল
- হোটেল সালাম ইন্টারন্যাশনাল
- হোটেল প্রাইম ইন্টারন্যাশনাল
- হোটেল শাহ্ জালাল
- হোটেল সাদেক
সরকারি আবাসন
- জেলা পরিষদ বাংলো এবং সরকারি সার্কিট হাউজ -এ থাকতে চাইলে সরকারি রেফারেন্স প্রয়োজন। ভাড়ার পরিমাণ সরকারি চাকুরেদের জন্য স্বল্প এবং বেসরকারি চাকুরেদের জন্য একটু বেশি হলেও হাতের নাগালের মধ্যে।
বেসরকারি এনজিও পরিচালিত রেস্ট হাউজ
যারা প্রকৃতির কাছাকাছি এবং কোলাহলমুক্ত পরিবেশে থাকতে চান, তাদের জন্য শহর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে জগন্নাথপুরে বেশ কিছু রেস্ট হাউজ রয়েছে।
- ESDO ও RDRS পরিচালিত রেস্ট হাউজ
- সিঙ্গেল ও ডাবল রুম (এসি এবং নন-এসি)।
- নিরাপত্তা বেষ্টিত পরিবেশ, ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা, বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুৎ।
- সকালের নাস্তা ভাড়ার অন্তর্ভুক্ত।
- খাওয়ার চাহিদা অনুযায়ী সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার সরবরাহ।
বুকিংয়ের প্রয়োজনীয়তা
এনজিও পরিচালিত রেস্ট হাউজগুলোতে থাকতে হলে আগাম বুকিং করতে হবে। কারণ, এই জায়গাগুলো বিদেশি অতিথি ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের লোকজনের জন্য বেশ জনপ্রিয়। পরিবার নিয়ে নির্বিঘ্নে থাকার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ের এই আবাসন ব্যবস্থা আদর্শ।
আরও: ভ্রমণ টিপস
ফেসবুক: কুহুডাক