জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমণ – সাভার, ঢাকা। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য অন্যতম পছন্দের এক জায়গা এই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। কারন, এখানে অতিথি পাখি আর প্রাকৃতিক সবুজের সৌন্দর্যে ভরপুর পুরো ক্যাম্পাস।
আজকের ভ্রমণে আমরা ঘুরে দেখব বাংলাদেশের অন্যতম একটি এবং একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়” । যেটি ঢাকা জেলার সাভারে অবস্থিত।
চলুন ভ্রমণ শুরু করা যাক…
আরওঃ জাতীয় স্মৃতিসৌধ ভ্রমণ সাভার, ঢাকা
একনজরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ভ্রমণ স্থানের নাম | জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় |
অবস্থান | সাভার, ঢাকা, বাংলাদেশ |
ধরন | পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় |
স্থাপিত | ১৯৭০ সাল |
কার্যক্রম শুরু | ১৯৭২ সাল |
ইনস্টিটিউট সংখ্যা | ৪ টি |
শিক্ষার্থী | ১৬,৭৮১(২০১৪) |
আয়তন | ৬৯৭.৫৬ একর (২.৮ বর্গকিলোমিটার) |
সংক্ষিপ্ত নাম | জাবি(JU) |
স্থানাঙ্ক | ২৩.৮৮২৪° উত্তর ৯০.২৬৭১° পূর্ব |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | প্রায় ৩২ কিলোমিটার |
তথ্যসূত্র – উইকিপিডিয়া
ভ্রমনের দিন
এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন ট্রাভেল ব্লগ লেখা হয়নি।
কিছুদিন আগে জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে পর পর ২বার যাওয়া হয়েছিল। প্রচণ্ড গরমে ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছিলাম। এই গরমের ভিতরেও এবারের ভ্রমণে কিছু ছবি তুলেছি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমণ
প্রায় দুপুরের দিকে জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে এসে বাস থামল। ক্যাম্পাসের ২টি প্রবেশ ফটক এর মধ্যে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে অবস্থিত ডেইরী গেট এর উল্টো দিকে প্রধান গেইটটি রয়েছে।
আপনি মিরপুর থেকে ভ্রমনে গেলে হাতের বা দিকে পরবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালইয়ের ক্যাম্পাস। আর, মানিকগঞ্জ বা আরিচা থেকে আসলে পরবে হাতের ডান দিকে।
আরওঃ চিড়িয়াখানা ভ্রমণ – মিরপুর, ঢাকা
ক্যাম্পাসের ভিতর ঢুকেই যা দেখবেন
মূল ফটক দিয়ে ঢুকার সময় চোখে পরবে ফুল দিয়ে সাজানো ইংরেজি লিখা (Jahangirnagar University)। মূল গেইট দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকার পর ডানে দেখতে পাবেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি আকারে বেশ বড়। মসজিদটি ২০০৫ সালে কুয়েত এর অর্থায়নে তৈরির কাজ শুরু করা হয়। কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এর কাজ শেষ হয় ২০০৮ সালের মার্চ এর ১২ তারিখে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে প্রথম নামকরণ করা হয় জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। পরে এটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ
বাংলাদেশের ঢাকা শহরের মুঘল আমলের নাম জাহাঙ্গীরনগর থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠটি রয়েছে হাতের বা দিকে। বিশাল আয়তনের এই খেলার মাঠের চারপাশ জুড়ে রয়েছে সবুজ গাছ-পালা।
এটি শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ হলেও এখানে ক্যাম্পাসের নানা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
আরওঃ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর ভ্রমণ, ঢাকা
শহীদ মিনার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার টি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শহীদ মিনার। ৫২ ফুট ব্যাস ও ৭১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট শহীদ মিনারটি ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনের ও ১৯৭১সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক। শহীদ মিনার এর স্থপতি হলেন, রবিউল হুসাইন।
৮টি সিঁড়ি ও ৩টি স্তম্ভ বিশিষ্ট শহীদ মিনারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সম্মুখে গোল চত্বরের মাঝে অবস্থিত।
৮ সিঁড়ি ও ৩টি স্তম্ভ রহস্য
৮ সিঁড়ির রহস্য হচ্ছে, এই ৮টি সিঁড়ি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৮টি তাৎপর্যপূর্ণ বছর। বছর গুলো হল, ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০ ও ১৯৭১ ।
আর, তিনটি স্তম্ভের একটি বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও অপর ২টি মাটি ও মানুষ এবং স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক মুক্তি ও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে।
আশাকরি বুজতে পেরেছেন।
গোলাকার চত্বরের এই স্থানটি শিক্ষার্থীদের আড্ডার জন্য বিখ্যাত। এখানে আড্ডা দেয়ার ধরাবাঁধা কোন নিয়ম নেই।
চলুন এবার পদ্ম পুকুর বা চৌরঙ্গী মোড় এবং অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য থেকে ঘুরে আসা যাক।
অতিথি পাখি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনেক জলাশয় রয়েছে। প্রতিবছর শীতের সময় এখানে প্রচুর অতিথি পাখি আসে।
আপনি শহীদ মিনার থেকে অথবা নতুন কলা ভবন থেকে ডান দিকে কিছুটা হেটে গেলেই অতিথি পাখিদের দেখা পাবেন।
হাটতে হাটতে চোখে পরবে ছোট ছোট সাইন বোর্ড। আর এগুলোতে লিখা রয়েছেঃ “সামনে পাখির অভয়ারণ্য… পাখিদের বিরক্ত করবেন না… ঢিল ছুরবেন না। গাড়ীর হর্ন বাজাবেন না।”
এছাড়া আরও লিখা রয়েছেঃ পাখিদের প্রতি সদয় হোন… লেকের পাশে নীরবতা বজায় রাখুন… নিরাপদ দূরত্বে থেকে পাখি পর্যবেক্ষণ করুন… ছবি তোলার জন্য ঢিল ছুঁড়ে পাখিদের উড়াবেন না। লেক পরিষ্কার রাখুন; আবর্জনা, পানির বোতল, পলিথিন ফেলবেন না। —— Department of Zoology Jahangirnagar University ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পাখি দেখার উপযোগী সময় হচ্ছেঃ শীতকাল।
আরওঃ জল্লাদখানা বধ্যভূমি ভ্রমণ – মিরপুর, ঢাকা
পদ্ম পুকুর
পদ্ম পুকুর দেখার জন্য আপনাকে চৌরঙ্গী মোড়ে আসতে হবে। আপনি চৌরঙ্গী মোড়ে হেটে অথবা বিক্সায় করে চলে আসতে পারেন।
যেহেতু প্রচণ্ড রোঁদ তাই আমি রিক্সা করে রওনা হলাম। জাহাঙ্গীরনগরে ঘুরার জন্য প্রধান বাহন হল রিক্সা। এছাড়া আপনি জো বাইক (JoBike) করে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
আমি ১০টাকা ভাড়া দিয়ে পদ্ম পুকুরের কাছে চলে আসলাম। ছোট একটি ডোবার মাঝে কংক্রিটের তৈরি একটি পদ্ম ফুটে রয়েছে।
এদিকটা অনেকটাই নিরিবিলি। কিছুক্ষণ পর পর দুই একটা রিক্সা রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে। কিছু শিক্ষার্থী কথা বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে। আবার অনেকে রাস্তার পাশের টুলে বসে গল্প করছে।
মালাই আইসক্রিম
প্রচন্ড রোঁদ। আমি পাশের একটা টুলে বসে পরলাম। পাশদিয়ে একটা আইসক্রিম এর ভ্যান যাচ্ছিল। ডাকলাম তাকে। জিগ্যেস করলাম কত ধরনের আইসক্রিম আছে। আইসক্রিম বিক্রেতা বলল, শুধু মালাই আসিক্রিম আছে তবে দাম ২ ধরনের।
এরকম চমৎকার মালাই আইসক্রিম এর আগে আমি কখনো খাইনি (এইযে আমি এখন মালাই আইসক্রিম সম্পর্কে লিখছি তাতেই জিভে জল চলে আসছে) । হেব্বি টেস্ট।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শুধু প্রকৃতি নয় খাবারের জন্যও বিখ্যাত। এখানে খাবারের জন্য বিখ্যাত একটি জায়গা রয়েছে নামঃ বটতলা।
বটতলা নাকি অনেক রকমের খাবার পাওয়া যায় (বিশেষ করে ১২০ আইটেম এর ভর্তা) তাও আবার খুবই কম দামে! একটু পর আপনাকেও সেখানে নিয়ে যাব, ওয়েট।
মালাই আইসক্রিম খাওয়ার পর এখন আমার মনে হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ২ ধরনের খাবারের জন্য বিখ্যাত।
১। বটতলার ভর্তা বা পাখির ভুনা গোস্ত
২। মালাই আইসক্রিম
বটতলা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বটতলা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক বিখ্যাত স্থান। তবে এই বটতলা খাবারের জন্য বিখ্যাত।
জাবির শহীদ মিনার থেকে সোজা পশ্চিম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাশ দিয়ে অল্প কিছুক্ষণ হেটে গেলেই দেখা মিলবে বটতলার।
বটতলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০টির মত দোকান রয়েছে। প্রায় সব গুলোই খাবারের দোকান। আপনি জাবির বটতলায় ১২০ পদের ভর্তা পাবেন! উল্লেখযোগ্য কিছু ভর্তা নাম হলঃ শুঁটকি ভর্তা, আলু ভর্তা, পেঁপে ভর্তা, রুই মাছের ভর্তা, বাদাম ভর্তা, ইলিশ ভর্তা, রুই মাছ ভর্তা, মরিচ ভর্তা, চিকেন ভর্তা, কালো জিরা ভর্তা, ডাল ভর্তা, সরিষা ভর্তা, ধনে পাতা ভর্তা, শিম ভর্তা, চিংড়ি মাছের ভর্তা, টাকি মাছের ভর্তা, রসুন ভর্তা, লইটা শুঁটকি ভর্তা।
প্রতিটি ভর্তার দাম মাত্র ৫ টাকা। ভাবা যায়!
এছাড়া আরও পাবেন, পাখির ভুনা গোস্ত, মুরগির মাংস,গরু, হাঁস, শিং মাছ, রুই মাছ, ইলিশ ভাজি ইত্যাদি।
এখানে খাবারের জন্য কি পরিমাণ ভিড় হয় তা আপনি দুপুরে খেতে গেলে বুজতে পারবেন। আমি কয়েকটা দোকানে ঢুকতে চেষ্টা করেও ভীরের কারনে ঢুকতে পারিনি। শেষে একটু ভিড় কমাতে একটা দোকানে ঢুকলাম।
তবে আমি লাঞ্চ করেছি পাখির মাংস দিয়ে। সাথে ভর্তা আর ডাল তো ছিলই। এখানে খাবারের দাম আসলেই কম। ভাত একপ্লেট ৫ টাকা মাত্র।
ইচ্ছে মত পেট ভরে তো খাওয়া হল; চলুন এবার ভাস্কর্য সংশপ্তক টা দেখে আসি।
আরওঃ দিয়াবাড়ি ভ্রমণ – উত্তরা, ঢাকা
ভাস্কর্য সংশপ্তক
ভাস্কর্য সংশপ্তক টি বটতলার খুব কাছেই। জাবি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য সংশপ্তক। এই ভাস্কর্যটি মুক্তিযোদ্ধা বিজয়ের প্রতিচ্ছবি হিসেবে এক পা ও এক হাত হারিয়েও এক সংশপ্তক মুক্তিযোদ্ধা বিজয়ের হাতিয়ার উর্ধে তুলে ধরেছে।
স্থপতি হামিদুজ্জামান খান ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ এটি নির্মাণ করেন। তৎকালীন জাবির উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সালেহ আহম্মেদ এটি উদ্বোধন করেন।
মাটি থেকে ভাস্কর্যটির ঊচ্চতা হল ১৫ ফুট। মূল ভাস্কর্যটি ব্রোঞ্জ ধাতুতে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, এটি নির্মানে লাল সিরামিক ইট ব্যবহার করা হয়েছে।
জাবিতে আরও একটি ভাষা আন্দোলনের স্মরণে ভাস্কর্য রয়েছে “অমর একুশ”। স্থপতি শিল্পী জাহানারা পারভীন এটি তৈরি করেছেন।
প্রজাপতির বাগান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে প্রজাপতির বাগান! এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে তা নয় সাথে রয়েছে জীববৈচিত্র্য।
এখানে আপনি প্রজাপতি বাগান দেখতে পাবেন। দেখতে পাবেন প্রজাপতিরা কিভাবে ইচ্ছেমত ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়িয়ে মধু খায়। এখানে কেউ তাদেরকে বিরক্ত করে না। এছাড়া এখানে রয়েছে প্রজাপতিদের জন্য আলাদা আলাদা ঘর আর প্রজননকেন্দ্র।
আরও: ঢাকা জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
✈ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ট্যুর – সাভার, ঢাকা
ফেসবুক: Kuhudak
খুবই ভালো একটি ব্লক ভাই।আমি আপনার আর্টিকেল দিয়ে একটা ভিডিও বানাতে চাই কাইন্ডলি একটু আপনার মতামত জানাবেন।
অবশ্যই বানাতে পারেন ভাই। তবে রেফারেন্স ব্যাবহার করলে উপকৃত হব। আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। ভিডিওতে কি আপনার নাম মেনশন করবো নাকি আপনার ওয়েবসাইট মেনশন করব।?
ওয়েবসাইট
Love you jahangirnagar University
সাভার