বক্সনগর ত্রিপুরা, ভারত থেকে ভ্রমণ করে আসলাম। বক্সনগর ভারতের বিধানসভা কেন্দ্র। এটা ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় অবস্থিত।
গত ১৭ই নভেম্বর ২০১২ সালে বন্ধু আলাউদ্দিন এর সাথে বক্সনগর ত্রিপুরা (Boxanagar Tripura), ভারত ভ্রমণে গিয়েছিলাম। আজকে আমি আপনার ভ্রমণ বন্ধু আরিফ হোসেন (GoArif) আপনাকে আমার ভারত ভ্রমণের বিস্তারিত বলাব।
চলুন ভারত ভ্রমণ শুরু করা যাক…
বক্সনগর ত্রিপুরা, ভারত
এক নজরে বক্সনগর ত্রিপুরা
ভ্রমণ স্থান | বক্সনগর |
অবস্থান | আগরতলা, পশ্চিম ত্রিপুরা, ভারত |
রাজ্য | ত্রিপুরা |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | ১৩৩ কিলোমিটার (প্রায়) |
ভ্রমণ প্রস্তুতি
২০১২ সালের দিকের কথা। তখন আমি কুমিল্লা ছিলাম। আলাউদ্দিন আর আমি একই ডিপার্টমেন্টে পড়াশুনা করতাম। আলাউদ্দিন এর সাথে ২০১০ থেকে আমার পরিচয়।
আলাউদ্দিন ওর সাথে ওর বাড়ি বেড়াতে যেতে খুব চাপাচাপি করছিল অনেকদিন ধরে। নভেম্বর ২০১২ সালের ১৬ তারিখে রাজি হয়ে গেলাম। ওর বাসা ইন্ডিয়া বর্ডারের কাছেই।
যথারীতি ব্যাগ ঘুছিয়ে আমরা রওনা দিয়ে দিলাম। কুমিল্লা থেকে আলাউদ্দিন এর বাসায় যেতে বাসে সময় লাগে প্রায় ১:২০ মিনিট। আমরা প্রায় বিকেলের দিকে বাসায় গিয়ে পৌছালাম।
মজার বিষয় হচ্ছে আমাদের এক সিনিয়র ভাই মোশাররফ হোসেন এর বাসাও এখানেই। মজাটা এখানে: মোশাররফ ভাই আমার বন্ধু আলাউদ্দিন এর ভাগ্নে!
রাতে ঘুমানোর আগে পরিকল্পনা হল, আলাউদ্দিন এর ভারতের এক বন্ধুর মাধ্যমে আগামীকাল আমরা আগরতলার বক্সনগর ভ্রমণে যাব।
আরও: টাকা জাদুঘর – মিরপুর, ঢাকা
ভ্রমণের দিন
১৭ই তারিখ সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম। আমরা ভারতের উদ্দেশ্যে হেটে রওনা দিলাম। আগেই বলেছি আমার ফ্রেন্ড এর বাসা ভারত বর্ডার এর কাছেই। তাই কোন বাহনের প্রয়োজন হল না।
আমরা নাবিয়াবাদ রোড ধরে কিছুক্ষণ হেটে বাদিকে মোড় নিয়ে আরও কিছুক্ষণ হাটলাম। এদিকের বেশীরভাগ মানুষ কৃষিকাজের সাথে জড়িত। হাটতে হাটতে আলাউদ্দিন সে কথাই বলছিল আমাকে।
আলাউদ্দিন প্রায়ই এদিকে আসে খেলাধুলা করা জন্য। ওর নাকি অনেক বন্ধু আছে এখানে। কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটা বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। এটা আলাউদ্দিন এর এক বন্ধুর বাসা। আমরা ওর বন্ধুকে বাসায়ই পেলাম।
আলাউদ্দিন ইতিমধ্যে ওর বন্ধুর সাথে আমাকে নিয়ে ভারতে যাওয়ার কথা বলেছে। ওর বন্ধুও রাজি হয়েছে। ওনিও ওনার আরেক ভারতীয় বন্ধুর সাথে কথা বলে রেখেছেন।
আলাউদ্দিন আমাকে ওর বাংলাদেশী বন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। আমরা না চাওয়া সত্ত্বেও তিনি আমাদেরকে জোরপূর্বক নাস্তা করতে বাধ্য করলেন। আমরা নাস্তা করতে করতে ওনি প্রস্তুত হয়ে নিলেন। নাস্তা শেষে আমরা ভারত ভ্রমণের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
প্রথম ভারত ভ্রমণ
বর্ডার এর কাছে আসতেই ভারতের সেই বন্ধু আমাদেরকে রিসিভ করতে চলে আসলেন। আলাউদ্দিন প্রথমে ওনার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। এরপর আমরা বর্ডারের দিকে এগোলাম।
ভারতের সেই বন্ধু বিএসএফ এর সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেন। এরপর আমাদের কাছে এসে বললেন, চলেন এবার যাওয়া যাক।
আমরা বর্ডার পার হলাম। এই প্রথম আমার পা ভারতের মাটি স্পর্শ করল। আমি এক অন্যরকম অনুভূতি অনুভব করলাম।
আরও: নাগাল্যান্ড রাজ্য, ভারত
মিনি স্টেডিয়াম বক্সনগর
আমরা ভারতের ছোট বড় আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে হেটে চললাম। ভারতের এই স্থান সম্পর্কে ভারতের বন্ধু আমাদেরকে বিস্তারিত বলছিলেন।
বক্সনগরের মানুষের জীবন যাত্রা থেকে শুরু করে তাদের আচার-আচরন, কথার ধরন ইত্যাদি আরকি।
বক্সনগর এর মেঠোপথ ধরে যাওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম বাংলাদেশের টিউবওয়েল আর ভারতের টিউবওয়েল সম্পূর্ণ আলাদা!
এখানকার বেশীরভাগ মানুষ ফুল চাষ করে জিবিকা নির্বাহ করে। বাংলাদেশের সাভারের বিরুলিয়ায় সাদুল্লাপুর নামে একটি গ্রাম রয়েছে। যেটাকে সবাই গোলাপ গ্রাম নামে চিনে। সাদুল্লাপুর গ্রামের বেশীরভাগ মানুষ গোলাপ ফুল চাষ করে আর ভারতের এই বক্সনগরে চাষ হয় গাঁদা ফুল। এছাড়া তারা অন্যান্য ফুল চাষও করে থাকেন।
আমরা পায়ে হেটে এগিয়ে চললাম। বেশ কিছু দূর পর পর কিছু বাড়ি দেখা যাচ্ছিল। বাড়ী গুলো অবস্থা খুব একটা ভালো না। জরাজীর্ণ বাড়ী।
ইতিমধ্যে আমরা একটা বাজার অতিক্রম করে এসেছি। এখানে অনেকে বাংলা বলেন তবে বেশীরভাগ মানুষ হিন্দিতেই কথা বলেন।
বাজারে আমরা চা পানের একটা বিরতি দিয়েছিলাম। চা পান শেষে আবার হাটা শুরু করলাম। কিছু পথ হেটেই চলে আসলাম মিনি স্টেডিয়াম বক্সনগর।
বক্সনগরের এই মিনি স্টেডিয়ামে প্রায় সব রকমের খেলাধুয়া হয়ে থাকে। মিনি স্টেডিয়াম মানে তো বুঝতেই পারছে ছোট খেলার মাঠ। মাঠটি আসলেই ছোট।
মাঠের এক পাশে একটি দুইতলা বিল্ডিং রয়েছে। এটা খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুম। এছাড়া খেলার অন্যান্য অফিশিয়াল কাজ এখানেই হয়ে থাকে।
আরও: ভারতের দর্শনীয় স্থান সমূহ
নেতাজী সংঘ বক্সনগর
মিনি স্টেডিয়ামে কিছুক্ষণ থাকার পর আমরা আবার হাটা শুরু করলাম। চাঁদ সওদাগর বাড়ি সংলগ্ন নেতাজী সংঘ বক্সনগর, পশ্চিম ত্রিপুরা চলে আসলাম।
নেতাজী সংঘ ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আমরা এখানে কিছুক্ষণ সময় কাটালাম।
আরও: পানাম নগর ভ্রমণ – সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বক্সনগর
চাঁদ সওদাগর বাড়ি থেকে অনেকটা হেটে আমরা চলে আসলাম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বক্সনগরে।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ইতিহাস
বক্সনগরে রয়েছে বিশাল বৌদ্ধ স্তূপ, চৈত্রগ্রহ, একটি মাঠ এবং পোড়া ইটের কাঠামোর আবিষ্কার প্রাচীন ত্রিপুরার শিল্পকলা ও স্থাপত্য ও ধর্মীয় দিক গুলো ফুটে রয়েছে।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে পাওয়া ইট নির্মিত স্তূপটি ১৫.৪০x ১৫.৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের বর্গাকার। স্তূপের বেসমেন্টটি আটটি ছাঁচে ক্রমযুক্ত হ্রাসযুক্ত ক্রমে সাজানো হয়েছে যার উপরে টেপারিং মেডিটি বিভিন্ন মাপের কাদার মর্টার এবং পোড়া ইট দিয়ে সেট করা হয়েছে।
চৈতগ্রহের ধ্বংসাবশেষটি স্তূপের পূর্ব দিকে রয়েছে যা পরিকল্পনা অনুসারে আয়তক্ষেত্রাকার এবং পূর্ব-পশ্চিম দিকে সারিবদ্ধ। পাশের দেয়ালগুলি ১.৬০ মিটার অবধি বেঁচে থাকা ছাড়া চৈতগ্রহের সুপারস্ট্রাকচার সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
আরও: ভ্রমণ টিপস
ইট দিয়ে নির্মিত মঠটিতে প্রতিটি পাশের পাঁচটি কোষের মধ্যে একটি দীর্ঘ করিডোর রয়েছে।
বক্সানগরে আরেকটি মাউন্ট খনন করে ত্রিরাথা বিশিষ্ট চেম্বারের একটি সম্পূর্ণ পোড়া ইটের কাঠামো উন্মোচিত হয়েছে। যেখানে দেখা যায় যে তিনটি মুখের অবশেষ রয়েছে মাত্র।
এই মুখপাত্রগুলি পবিত্র কক্ষের পূর্ব দিকে অবস্থিত একটি আধা-বৃত্তাকার কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসে। এই কাঠামোর সামনে চারদিকে প্রাচীর দ্বারা আবদ্ধ একটি আয়তক্ষেত্রাকার হল রয়েছে।
এই হলের ভিতরে সম্ভবত একটি ভক্তদের জমায়েত করার সুবিধার্থে একটি ইটভাটা মেঝে দেওয়া হয়েছে। এই কাঠামোগুলির চারপাশে একটি বিস্তৃত প্রডাক্সনাপথ সরবরাহ করা হয়।
তবে ধারনা করা যায় এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন গুলো ব্রিটিশ আমলের। তার মানে একসময় এখানে জমিদারের বসবাস ছিল।
এখানে বেশ কয়েকটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। আমরা পুরো জায়গাটি সময় নিয়ে ঘুরে দেখলাম। কিন্তু এদিকে প্রচন্ড রোদে আমাদের অবস্থা নাজেহাল।
আমরা কিছু ছবি তুললাম। চারপাশটা কিছুক্ষণ হেটে দেখলাম। সবশেষে ভারতীয় বন্ধুকে বিদায় জানিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
আরও: বাংলাদেশের সেরা ৫০ টি দর্শনীয় স্থান বা পর্যটন কেন্দ্র
ফেসবুক: Kuhudak
I want to travel to India too. Its looks wonderful.
YES!
ভাইয়া আপনার ব্লগ টা খুব ভালো লাগলো, ভাইয়া আপনার প্রতিদিন পেজ ভিউ কত হয়। দয়া করে জানাবেন একটু।
আপনাকে ধন্যবাদ। সাইটের পেজ ভিউ ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার এর মত। তবে, এটা গত ৬ মাস আগের রিপোর্ট। মাঝখানে সাইট বন্ধ ছিল। গুগল থেকে সাইট একেবারে সরিয়ে নিয়েছিলাম। গত ২ সপ্তাহ হলো সাইট আবার চালু করেছি। গুগল আবার নতুন করে ইনডেক্স শুরু করেছে। তাই বর্তমানে সাইটের ভিজিটর কম।