ভ্রমণ করে আসলাম আল মাদ্রাসাতুল আরাবিয়া ইসলামিয়া (Al Madrasatul Arabia Islamia) – এখলাছপুর, মতলব উত্তর, চাঁদপুর থেকে। এটি একটি ইসলামিয়া মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসাকে অনেকে ইব্রাহীম হুজুরের মাদ্রাসা নামেও চিনেন বা সবার কাছে পরিচিত।
চট্রগ্রাম বিভাগ এর চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার এখলাছপুরে এই আল মাদ্রাসাতুল আরাবিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসাটি অবস্থিত।
আজকের ভ্রমণে আমরা এখলাছপুরে অবস্থিত এই ইব্রাহিম হুজুরের মাদ্রাসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। চলুন শুরু করা যাক…
কলাকান্দা মসজিদ ও মাদ্রাসা সম্পর্কে জানেন কি?
আল মাদ্রাসাতুল আরাবিয়া ইসলামিয়া
১৯৫২ সালে আল মাদ্রাসাতুল আরাবিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার যাত্রা শুরু হয় পদ্মা-মেঘনার পাড়ে। জমিদার আনোয়ার আলী সরকার (ইব্রাহীম হুজুর এর দাদা) প্রথম এই মসজিদ এবং মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা করেন।
আরওঃ নেদায়ে ইসলাম – ফরাযীকান্দী
একনজরে আল মাদ্রাসাতুল আরাবিয়া ইসলামিয়া
নাম | আল মাদ্রাসাতুল আরাবিয়া ইসলামিয়া |
প্রতিষ্ঠাতা | আনোয়ার আলী সরকার |
প্রতিষ্ঠিত হয় | ১৯৫২ সাল |
পূর্বের স্থান | পদ্মা-মেঘনার পাড় |
বর্তমান ঠিকানা | এখলাছপুর, মতলব উত্তর, চাঁদপুর |
পরিচালনা করেন | হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ ইব্রাহীম |
শিক্ষার্থীর সংখ্যা | ৭৫ জন |
পাঠদান হয় | নূরানী মক্তব, নাজেরা এবং হেফজ বিভাগ |
চাঁদপুর থেকে দূরত্ব | ১৭ কিলোমিটার (প্রায়) |
মাদ্রাসার ইতিহাস
১৯৫২ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আনোয়ার আলী সরকার খুব ভালো ভাবেই মাদরাসাটি পরিচালনা করছিলেন। আনোয়ার আলী সরকার সবার কাছে সৎজন লোক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। এছাড়া ওনার ধনসম্পদ এর কোন অভাব ছিল না।
এরপর আনোয়ার আলী সরকার এর ছেলে হাফেজ মাওলানা মুদাসসের হোসেন এই ইসলামিয়া মাদ্রাসার হাল ধরেন। বাবার সাথে তিনিও এই মাদ্রাসার পরিচালনার কাজ করতে থাকেন।
১৯৮৫ সালের দিকে পদ্মা-মেঘনার নদী ভাঙনের ফলে এই মাদ্রাসার সাময়িক ইতি ঘটে। নদী ভাঙনের সাথে সাথে মাদ্রাসাটিও নদিতে বিলিন হয়ে যায়!
এরপর ১৯৮৬ সালে এখলাছপুরে ৯০ শতাংশ জায়গার উপর নতুন করে আল মাদ্রাসাতুল আরাবিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসাটি নির্মাণ করা হয়।
বাবার পর হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ ইব্রাহীম হুজুর এই মাদ্রাসার পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহন করেন। ইব্রাহীম হুজুর দায়িত্ব নেয়ার পর এই মাদ্রাসার প্রচার এবং প্রসার ধিরে ধিরে বাড়তে থাকে।
আরওঃ ১ গম্বুজ মসজিদ – ছোট হলুদিয়া
শিক্ষা ব্যবস্থা
আল মাদ্রাসাতুল আরাবিয়া ইসলামিয়াতে ৩ বিভাগে শিক্ষাদান করা হয়ে থাকে। বিভাগ গুলো হলঃ
- নূরানী মক্তব বিভাগ
- নাজেরা বিভাগ
- হেফজ বিভাগ
উপরের এই তিন বিভাগে মাদ্রাসায় পাঠদান করা হয়ে থাকে। এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৫ জন। আর শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন। ৭৫ জন শিক্ষার্থীর ভিতরে সবাই আবাসিক। অনাবাসিক কোন শিক্ষার্থী নেই।
পড়াশোনা করার জন্য এখানে কাউকে কোন ফি বা এক্সট্রা কোন টাকা দিতে হয় না। এমনকি, একজন শিক্ষার্থীর সম্পূর্ণ (থাকা, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি) খরচ বহন করে এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ ইব্রাহীম।
অবকাঠামো
চাঁদপুর জেলা থেকে মতলব বাজার হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে নতুন বাজার (আনন্দ বাজার) হয়ে প্রায় ১৭ কিলোমিটার যাওয়ার পর আপনি এখলাছপুরে বড় রাস্তার পাশে এই মাদ্রাসাটি দেখতে পাবেন।
মাদ্রাসায় যাওয়ার জন্য আপনাকে ব্রিজ পাড় হয়ে ছোট রাস্তায় আসতে হবে। ছোট রাস্তার সাথেই এই মাদ্রাসার প্রধান এবং একমাত্র প্রবেশ পথটি রয়েছে। আপনি গেইটে প্রবেশ না করে ডান দিকে গেলে একটি পুকুর ঘাট দেখতে পাবেন। এটি এই মাদ্রাসার পুকুর। এখানে হাত-পা ধুয়ে নিতে পারেন।
আবার গেইট দিয়ে ঢুকার সাথেই একটি নলকূপ রয়েছে। এখানেও ফ্রেশ হতে পারেন। হাতের ডান দিকে একটি রান্নাঘর আর বা দিকে ২ তলা বিশিষ্ট একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা রয়েছে। এটিই মূল মাদ্রাসা ভবন। তবে, নীচতলায় মসজিদ।
গেইট থেকে সোজা তাকালে ২চালা টিন বিশিষ্ট একটি অর্ধপাকা লম্বা ঘর দেখতে পাবেন। এটিও মাদ্রাসার কাজে ব্যাবহার করা হয়। আবার আবাসিক শিক্ষার্থীরা এখানে থাকে।
সাদা এবং চকলেট কালারের ২তলা বিশিষ্ট মসজিদ-মাদ্রসাটির নিচতলার বারান্দার ফ্লোরটি বেশ বড়। ইব্রাহীম হুজুর নামাজের পর যারা ওনার সাথে দেখা করতে আসেন তাদের সাথে তিনি এখানেই দেখা করেন। নিচের ফ্লোরটি সম্পূর্ণ টাইলস।
মাদ্রাসাটির চারপাশ উচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। চারপাশে আম, নারকেল এবং অন্যান্য ফলের গাছ রয়েছে। মাদ্রাসার ঠিক মাঠের মাঝ খানে একটি জাম গাছ রয়েছে।
বাৎসরিক ওয়াজ মাহফিল
আল মাদ্রাসাতুল আরাবিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় প্রতি বছর (বাৎসরিক) ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিল এর আয়োজন করা হয়। এখানে ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিলের আয়োজনের কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই।
তবে, প্রতিবছরের ডিসেম্ভব মাস থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যে ২ দিন ব্যাপী এই ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিল এর আয়োজন করা হয়।
মাদ্রাসার শাখা
আল মাদ্রাসাতুল আরাবিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার বেশ কয়েকটি শাখা রয়েছে। তার ভিতরে উল্লেখযোগ্য হলঃ
১। রাঢ়ীকান্দি মাদ্রাসা
২। ঢাকা ফতুল্লা মাদ্রাসা
৩। বোরসর মাদ্রাসা
ইব্রাহীম হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ
আমরা যখন এখলাছপুর গিয়ে পৌছাই তখন আসর নামাজের সময়। আমরা গাড়ী রেখে ওযু করে মসজিদে প্রবেশ করি।আসর নামাজ শেষে ইব্রাহীম হুজুর তসবি হাতে বারান্দায় এসে বসলেন। আমরা পরিচয় দিয়ে ওনার সাথে কথা বলা শুরু করলাম।
ইব্রাহীম হুজুর আমাদের সাথে এই মাদ্রাসার ইতিহাস বলেন। আমরা কথার এক ফাঁকে জানতে চাই যে, এই মাদ্রাসায় কোন সরকারি অনুদান আসে কিনা। হুজুর আমাদের বলেন তিনি কোন অনুদান পান না।
হুজুর আমাদেরকে নাস্তা করান। নাস্তা করার ফাঁকে ফাঁকে তিনি আমাদের মসজিদ এর ইতিহাস বলে যাচ্ছিলেন। আমরা থাকা অবস্থায় একজনলোক এক ঝুড়ি কলা নিয়ে আসছিলেন। তিনি ফ্রি দিতে চাইলেও হুজুর তাকে টাকা দিলেন।
এছাড়া হুজুর আমাদের বললেন, আজকে নাকি কয়েকটা ছাগল কেউ দান করে গেছেন। হুজুর বললেন, আল্লাহ্ রহমতে ভালোই চলছে আমাদের সবকিছু।
ফেসবুক: Kuhudak