আহসান মঞ্জিল (Ahsan Manzil) বাংলাদেশের পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত শত বছরের পুরনো একটি দর্শনীয় স্থান। পূর্বে এই স্থানটি ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারীর সদর কাচারি ছিল।
আজকের পোস্টে আমরা নওয়াব আবদুল গনির পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ-র নামে বানানো আহসান মঞ্জিল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। চলুন শুরু করা যাক…
আরও: লালবাগ কেল্লা
আহসান মঞ্জিল ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | আহসান মঞ্জিল |
পূর্ব নাম | রংমহল |
অবস্থান | কুমারটুলী, ইসলামপুর, পুরান ঢাকা |
নির্মিত | ১৮৫৯ – ১৮৭২ সাল |
স্থাপত্যশৈলী | ইন্দো-সারাসেনিক পুনর্জাগরণ স্থাপত্য |
প্রতিষ্ঠাতা | নওয়াব আবদুল গনি |
পরিচালনায় | বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর |
গম্বুজ | ১টি |
নিদর্শন সংখ্যা | ৪,০৭৭ টি |
খোলা থাকার সময় | শনিবার থেকে বুধবার: সকাল ১০:৩০ – বিকাল ৪:৩০ পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩ টা থেকে সন্ধা ৭ টা পর্যন্ত। |
সাপ্তাহিক বন্ধ | বৃহস্পতিবার |
টিকিট মূল্য | ৪০ টাকা (বাংলাদেশী), শিশু জনপ্রতি ১০ টাকা, সার্কভুক্ত ৩০০ টাকা এবং বিদেশি ৫০০ টাকা। |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
যোগাযোগ নম্বার | +88-02-8619396-9, +88-02-8619400 |
আহসান মঞ্জিলে নবাব পরিবারের বহু স্মৃতি বিজড়িত প্রাসাদটি বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এর নির্মাণ কাজ ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয়ে ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে সমাপ্ত হয়েছিল।
ইতিহাস ও স্থাপত্যশৈলী
আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস ও স্থাপত্যশৈলী সম্পর্কে জানা যায় যে, অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝের দিকে জামালপুর পরগনার জমিদার শেখ ইনায়েতউল্লাহ আহসান মঞ্জিলের বর্তমান স্থানে রংমহল নামে একটি প্রমোদভবন তৈরি করে ছিলেন। পরে তার পুত্র শেখ মতিউল্লাহ রংমহলটি ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
১৮৩০ সালের দিকে বেগমবাজারে বসবাসকারী নওয়াব আবদুল গনির পিতা খাজা আলীমুল্লাহ এটি ক্রয় করে বসবাস শুরু করে ছিলেন। এরপর ১৮৫৯ সালে নওয়াব আবদুল গনি প্রাসাদটি নির্মাণ শুরু করেন যা ১৮৭২ সালে সমাপ্ত হয়। তিনি তার প্রিয় পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এই মঞ্জিলের নামকরণ করেন আহসান মঞ্জিল। তখন রংমহল ও পুরাতন ভবনটি অন্দরমহল নামে পরিচিত ছিল।
মঞ্জিলের ছাদের উপর সুন্দর একটি গম্বুজ রয়েছে। এক সময় গম্বুজের চূড়াটি ছিল ঢাকা শহরের সর্বোচ্চ উচু। মূল ভবনের বাইরে ত্রি-তোরণ বিশিষ্ট প্রবেশদ্বার রয়েছে এবং উপরে ওঠার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করার মত সিঁড়ি রয়েছে। এছাড়া পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে ২টি মনোরম তোরণ রয়েছে যা দেখতে আরও সুন্দর লাগে।
আহসান মঞ্জিলের অভ্যন্তরে ২টি অংশ আছে। বৈঠকখানা ও পাঠাগার আছে পূর্ব অংশে। পশ্চিম অংশে আছে নাচঘর ও অন্যান্য আবাসিক কক্ষ। নিচতলার দরবারগৃহ ও খাওয়া-দাওয়ার জন্য ভোজন কক্ষ রয়েছে। জানা যায় যে, লর্ড কার্জন ঢাকায় আসলে এই ভবনে থাকতেন।
আরও: বড় কাটরা
জাদুঘর
আহসান মঞ্জিল কে জাদুঘর করার পূর্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর অযত্ন ও অপব্যবহারে আহসান মঞ্জিল ধ্বংসপ্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। তখন নবাব পরিবারের উত্তরসূরিরা এই মঞ্জিল নিলামে বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভবনটির রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করেছিলেন এবং তিনি এটি নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত বাতিল করে এখানে জাদুঘর ও পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দেন। মঞ্জিলটি অনেকবার সংস্কার করা হয়েছে। এরপর সৌন্দর্যবর্ধন, পরিমার্জনের করে ১৯৯২ সালে আহসান মঞ্জিল জাদুঘর পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়ে ছিল।
আরও: জাতীয় সংসদ ভবন
আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে কি আছে
পর্যটকদের কাছে আহসান মঞ্জিল ভ্রমণের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে জাদুঘরের সংগ্রহশালা! এখানে মোট ৪,০৭৭ টি নিদর্শন ২৩টি কক্ষে প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত করা রয়েছে। ৯টি কক্ষ সেই নবাবী আমলের মতো করেই সাজানো রয়েছে। এছাড়া এখানে মঞ্জিলের ইতিহাস, নওয়াবদের পরিচিতি ও বংশতালিকা দেখতে পাবেন।
নওয়াবদের ব্যবহৃত বড় বড় আয়না থেকে শুরু করে বৃহদাকার লোহার সিন্দুক, কাঠের আলমারী, ডাইনিং রুম, ড্রয়িং রুম, কাচ ও চিনামাটির থালা-বাসন, হাতির মাথার কঙ্কাল, ঢাল ও তরবারি, নওয়াব আমলের বিভিন্ন ধরনের অলংকৃত রুপা, ক্রিস্টালের তৈরি চেয়ার-টেবিল, সিংহাসন, বিভিন্ন ধরনের তৈলচিত্র, ফুলদানি, হিন্দুস্থানী রুম, রাজকীয় অতিথিদের বেডরুম, নাচঘর সহ কত কিছু।
জাদুঘরের গ্যালারী সমূহ
জাদুঘরের গ্যালারী সমূহে ৩১টি কক্ষের ২৩টিতে প্রদর্শনী করা আছে। এর মধ্যে ৯টি কক্ষ লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরীতে প্রাপ্ত ও মি. ফ্রিৎজকাপ কর্তৃক ১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্রের সাথে মিলিয়ে সাজানো রয়েছে।
এছাড়া আহসান মঞ্জিলের তোষাখানা ও ক্রোকারীজ কক্ষে থাকা তৈজসপত্র ও নওয়াব এস্টেটের পুরোনো অফিস এডওয়ার্ড হাউজ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণ করে প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে। জাদুঘরে এখন পর্যন্ত সংগৃহীত নিদর্শন সংখ্যা হচ্ছে ৪০৭৭টি।
আরও: বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
টিকেট মূল্য
আহসান মঞ্জিল পরিদর্শন জন্য সাধারণ দর্শনার্থীদের টিকিট মূল্য জনপ্রতি ৪০ টাকা, ১২ বছরের নিচে অপ্রাপ্ত শিশুদের টিকেট মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্যে টিকেট মূল্য ৩০০ টাকা এবং দেশের বাহিরের নাগরিকদের জন্যে বা বিদেশিদের জন্য টিকেট মূল্য ৫০০ টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়।
প্রতিবন্ধী ভ্রমণকারীদের জন্য আহসান মঞ্জিলে কোন টিকিটের প্রয়োজন হয় না। এছাড়া আগের থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা আবেদন করলে বিনামূল্যে আহসান মঞ্জিল জাদুঘর দেখতে পারবেন।
টিকিট ক্রয়ের নিয়মাবলী
অনলাইনে টিকিট সংগ্রহের জন্য নিচের নিয়ম গুলো ফলো করুন।
- অনলাইনে টিকেট সংগ্রহ করতে প্রথমে এই লিংকে প্রবেশ করুন: www.ahsanmanzilticket.gov.bd
- প্রথম বক্সে আপনার নাম লিখুন এবং ২য় বক্সে আপনা মোবাইল নাম্বার দিন অথবা ইমেইল দিতে পারেন। Login বাটনে ক্লিক করুন।
- আপনার মোবাইলে একটি ভেরিফিকেশ পিন কোড যাবে। সেটি বক্সে লিখে আবার Login বাটনে ক্লিক করুন।
- (Purchase eTicket) অপশনে ক্লিক করুন। জাদুঘরে ভ্রমণের তারিখ, টিকিট সংখ্যা লিখে Submit বাটনে ক্লিক করুন। তবে ক্যাটাগরি তে আপনার সঠিক অপশন নির্বাচন করুন।
- Make Payment বাটনে ক্লিক করে পেমেন্ট গেটওয়ে দিয়ে আপনার পেমেন্ট সম্পন্ন করুন। এখানে বিকাশ, নগদ রকেট সহ একাধিক পেমেন্ট গেটওয়ে পাবেন। আপনার পছন্দ মত গেটওয়ে দিয়ে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।
- পেমেন্ট করা শেষে ডাউনলোড এবং প্রিন্ট বাটন দেখতে পাবেন। এখান থেকে আপনার টিকিট সংগ্রহ করুন।
ভ্রমণের সময়সূচী
আহসান মঞ্জিল প্রতি বৃহস্পতিবার এবং অন্যান্য সরকারী ছুটির দিনে সম্পূর্ন বন্ধ থাকে। এছাড়া প্রতি শনিবার থেকে বুধবার এই ৫দিন সকাল ১০:৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫:৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে। আর ১দিন প্রতি শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
কিভাবে যাবেন
আপনি যদি ঢাকার বাহির থেকে আসেন তাহলে, আহসান মঞ্জিল ভ্রমণের জন্য আপনাকে প্রথমে ঢাকা আসতে হবে। এরপর ঢাকার যে কোন স্থান থেকে ঢাকার সদরঘাটগামী যে কোন বাসে উঠে জগন্নাথ ইউনিভার্সিটির কাছে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নেমে যাবেন। এখান থেকে আপনি পায়ে হেঁটে অথবা ৩০ থেকে ৫০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে আহসান মঞ্জিল যেতে পারেন।
আবার আপনি ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে প্রথমে গুলিস্তান এসে এখান থেকে রিকশা অথবা CNG নিয়ে সদরঘাট হয়ে যেতে পারেন। আরও একটি উপায় রয়েছে, গুলিস্তানের নর্থ সাউথ রোড ধরে নয়াবাজার মোড় হয়ে বাবুবাজার ব্রিজের আগে নেমে রিক্সা করে যেতে পারেন।
কোথায় খাবেন
ভ্রমণে এসে আপনি মঞ্জিলের আসে পাশে অনেক খাবারের দোকান বা হোটেল পাবেন। আর জানেন তো পুরান ঢাকা বিরিয়ানি থেকে শুরু করে কাচ্চি সহ হরেক রকমের খাবারের জন্য বিখ্যাত। তাই এখানে খবারের জন্য মন মতো আইটেম পেয়ে যাবেন। খাবারের মানও পাবেন ভালো।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবারের তালিকা
ভ্রমণ জিজ্ঞাসা
পুরান ঢাকার এই আহসান মঞ্জিল নিয়ে আপনার কিছু সাধারণ ভ্রমণ জিজ্ঞাসা নিচে দেয়া হল।
আহসান মঞ্জিল কবে বন্ধ থাকে?
প্রতি বৃহস্পতিবার এবং অন্যান্য সরকারী ছুটির দিনে সম্পূর্ন বন্ধ থাকে।
মঞ্জিল কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
মঞ্জিল নির্মিত হয়েছে ১৮৫৯ – ১৮৭২ সাল।
আহসান মঞ্জিল কে নির্মাণ করেন?
নওয়াব আবদুল গনি
ফেসবুক: Kuhudak