ভ্রমণ করে আসলাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সেচ প্রকল্প মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ও ধনাগোদা নদী / পাম্প হাউজ থেকে। ধনাগোদা নদী এবং মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প এই দুটির অবস্থান বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলায়।
আজকের ভ্রমণে আমরা নদী ও সেচ প্রকল্প ঘুরে দেখব এবং এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। তো চলুন শুরু করা যাক… আজকের ভ্রমণেও আমি আপনাদের ভ্রমণ বন্ধু আরিফ হোসেন সাথে রয়েছি।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ও ধনাগোদা নদী ভ্রমণ
ভ্রমণের শুরুতে প্রথমে আমরা ঘুরে দেখব বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সেচ প্রকল্প মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প। প্রথমে একনজরে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প সম্পর্কে জানা যাক।
একনজরে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প
সেচ প্রকল্প | মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প |
অবস্থান | চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার উধামদিতে অবস্থিত। |
নির্মিত সাল | ১৯৮৭ – ১৯৮৮ সালের অর্থ বছরে |
সেচ প্রকল্প আয়তন | ৬৪ কিলোমিটার |
প্রকল্প | বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ |
পানি উত্তোলন ক্ষমতা | ৪৩.৩৫ কিউমেক |
অধিগ্রহন জমি | ১৭৫৮৪ হেক্টর |
পানি সরবরাহ | ১৪,৪০০ হেক্টর জমি |
বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন | ১৯,০২১ হেক্টর জমি |
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প
১টি পৌরসভা এবং ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে ২০০০ সালের ৩০ এপ্রিল স্বতন্ত্র উপজেলা হিসেবে মেঘনা-ধনাগোদা নদী পরিবেষ্টিত দ্বীপাঞ্চল মতলব উত্তর উপজেলার যাত্রা শুরু হয়! এরপর ২০০০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মতলব উত্তর নব-সৃষ্ট উপজেলা হিসাবে কার্যক্রম শুরু করে।
মজার বিষয় হচ্ছে, পাশ্ববর্তী মতলব উপজেলা উত্তর দিকে হওয়ার ফলে এ উপজেলার নামকরণ করা হয় মতলব উত্তর! মতলব উত্তরের ঐতিহাসিক নিদর্শন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন মতলব উত্তর উপজেলা পরিচিতি তে।
আরও পড়ুন: লুধুয়া জমিদার বাড়ি – মতলব উত্তর, চাঁদপুর
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প নির্মাণ এর কারন ও তারিখ
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প নির্মাণের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারন রয়েছে। তার ভিতরে উল্লেখযোগ্য হল: কৃষি উৎপাদনে সেচ প্রদান, বন্যার ক্ষয় ক্ষতি থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা , জলাবদ্ধতা নিরসন ও নদী ভাংঙ্গন থেকে পরিত্রাণ। ১৯৮৭ – ১৯৮৮ সালের অর্থ বছরে নির্মিত করা হয় মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প এর আয়তন ৬৪ কিলোমিটার। যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সেচ প্রকল্প। সেচ প্রকল্পের জন্য মতলব উত্তর উপজেলার ১৭৫৮৪ হেক্টর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে।
সেচ প্রকল্পের বিবরণ
মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পটি ধনাগোদা নদীর পাশেই অবস্থিত। এই ধনাগোদা নদীর পানি পাম্পের সাহায্যে মতলব উত্তর উপজেলার ভিতরে প্রবাহিত করা হয়। আবার যখন বন্যার পানি অতিরিক্ত হয়ে যায় তখন আবার এই সেচ পাম্পের সাহায্যেই উত্তরের পানি পাম্পের সাহায্যে ধনাগোদা নদীতে নিয়ে আসা হয়।
মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পটি পাম্প হাউজ নামে পরিচিত। এই পাম্প হাউজটি মতলব উত্তর এর উধামদিতে অবস্থিত। এই পাম্প হাউজ এর মাঝখান দিয়ে মতলব উত্তর বেড়ীবাঁধ এর রাস্তা চলে গিয়েছে।
মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯,০২১ হেক্টর জমির বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন এবং ১৪,৪০০ হেক্টর এলাকার জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। মতলব উত্তরে রয়েছে ২টি পানি উত্তোলন কেন্দ্র। একটির অবস্থান উধামদিতে যার বর্ণনা আমি ইতিমধ্যে দিয়েছি। অপরটির অবস্থান মতলব এর কালিপুরে। এটার পানি উত্তোলন ক্ষমতা ২৮.৯ কিউমেক।
এছাড়া মতলব উত্তরে দু্টি বুস্টার পানি উত্তোলন কেন্দ্র রয়েছে। একটির অবস্থান ইসলামপুরে (উত্তোলন ক্ষমতা ২.২৬ কিউমেক), অপরটি দুবগিতে (উত্তোলন ক্ষমতা ৩.৪ কিউমেক)।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প নিয়ে অনেক জানা হল। চলুন এবার ধনাগোদা নদী সম্পর্কে জানা যাক এবং ধনাগোদা নদী ভ্রমণ করে এই নদীতে একটু সাঁতার কাটা যাক!
আরও: নেদায়ে ইসলাম
ধনাগোদা নদী ভ্রমণ
ধনাগোদা নদী যেহেতু মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প এর পাশেই তাই আমাদের গাড়ি নিয়ে বেশিদূর যেতে হয় নি। ওহহ, আজকের ভ্রমণে একটা বিষয়তো বলাই হয় নি!
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ও ধনাগোদা নদী ভ্রমণ করার জন্য আমারা তিন জন: আমি আরিফ হোসেন, সানি এবং ফজলে রাব্বি ভ্রমণে এসেছি। সাথে আজকের ভ্রমণের বাহন হিসেবে রয়েছে মোটরসাইকেল।
চলুন মূল ভ্রমণে ফিরে আসা যাক।
আরও: মেঘনা নদী ভ্রমণ
ধনাগোদা নদীর অবস্থান
ধনাগোদা নদীর অবস্থান: মতলব উত্তর উপজেলাটি উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকে মেঘনা নদী ও পূর্ব দিকে প্রভাহিত ধনাগোদা নদী দ্বারা বেষ্ঠিত রয়েছে। পূর্ব দিকে দাউদকান্দি (কুমিল্লা), উত্তরে গজারিয়া (মুন্সিগঞ্জ), দক্ষিনে মতলব (চাঁদপুর), পশ্চিমে শরিয়তপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলা রয়েছে।
ধনাগোদা নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের চাঁদপুর জেলার ও মতলব উপজেলার একটি প্রবাহমান নদী।
নদীর নাম | ধনাগোদা নদী |
অবস্থান | বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের চাঁদপুর জেলার সদর ও মতলব উপজেলা। |
উত্স | মেঘনা নদী |
দৈর্ঘ্য | ৪১ কিলোমিটার (২৫ মাইল) |
গড় প্রস্থ | ২২৯ মিটার |
পরিচিতি নম্বর | দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ১১ |
ধনাগোদা নদীর বর্তমান অবস্থা
আমরা যখন ধনাগোদা নদী ভ্রমণে এসেছি তখন ঘড়িতে প্রায় দুপুর ১টা। পৌষ থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত ধনাগোদা নদীর পানি অনেক মনে আসে। এ সময় নদীর পানি শুকিয়ে অনেক জায়গায় চর পড়ে যায়। আমরা এসেছি চৈত্র মাসের প্রায় শেষের দিকে।
ধনাগোদা নদীর পানি এখন অনেক শুকিয়ে গেছে। জায়গায় জাগায় চর পরেছে। তবে হঠাৎ হঠাৎই দুই একটা নৌকা দেখা যাচ্ছে। আবার এক দুইটা ট্রলার মালামাল নিয়ে ছুটে চলছে। আমরা রাস্তার পাশে গাড়ি রেখে কাঁধে থাকা ব্যাগ থেকে গোসলের জন্য জামাকাপড় নিয়ে পড়ে নিলাম।
আমরা গোসল করতে ধনাগোদা নদীতে নামব। নদীতে নামার আগে পাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট চতুর্ভুজ আকৃতির ব্লক এর উপর বসে কিছুক্ষণ চারপাশটা উপভোগ করলাম।
১৯৮৮ সালে এই বেড়ীবাঁধ ছুটে ধনাগোদা নদীর পানি ঢুকে পড়েছিল মতলব উত্তর উপজেলায়। এরপর বেড়ীবাঁধ এর ভিতরে সৃষ্টি হয়েছিল অনেক খোদাই পুকুর এর। ১৯৮৮ সালের পর অবশ্য বেশ শক্ত পোক্ত এবং বেশ উচু করে পুনরায় এই বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করা হয়।
আরও: কলাকান্দা মসজিদ ও মাদ্রাসা
ধনাগোদা নদীতে সাঁতার কাটলাম
পাড়ে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলাম না। কারন, চৈত্রের রোদ ধিরে ধিরে প্রকট হচ্ছিল। দিলাম ধনাগোদা নদীতে ঝাঁপ। নদীর পানি পা দিয়ে যতটুকু নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল, পানির নিচে প্রচুর শৈবাল এর স্পর্শ পাচ্ছিলাম।
কিছু কিছু জায়গায় এতো গভীর যে তলার নাগাল পাচ্ছিলাম না। না পাওয়ারই কথা কারন, এটা নদী… খাল বা পুকুর নয়।
আমরা তিনজন ইচ্ছেমত সাঁতার কাটলাম। কখনো নির্দিষ্ট দূরত্বে একসাথে পাল্লা দিয়ে যাওয়া আবার কখনো কোন বস্তুকে ছুয়ে আসা।
নদীতে নৌকা ভ্রমণ
নদীতে সাঁতার কাটার একপর্যায়ে হঠাৎ দেখা মিলল একটি ছোট ডিঙি নৌকার। যেটা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে ৭/৮ বছরের ছোট এর ছেলে। মাঝীকে ইশারা করাতেই সে আমাদের কাছে চলে আসল।
ছোট নৌকা, সাথে বেশ কয়েকটি ফুটু দিয়ে অবিরত নৌকায় পানি ঢুকছে। প্রথমে উঠব কিনা ভাবলাম। এরপর আমাদের ছোট্ট মাঝি অভয় দেয়ায় নৌকায় চড়ে বসলাম। একে একে আমরা সবাই নৌকায় ঊঠলাম।ছোট্ট মাঝি আমাদের কে বয়ে নিয়ে চলল সামনের দিকে।
কিভাবে যাবেন
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ও ধনাগোদা নদী ভ্রমণ যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি পথ রয়েছে। চাঁদপুর / বাবুরহাট থেকে কিছুক্ষণ পর পর সিএনজি আসে মতলব এর উদ্দেশ্যে। জন প্রতি ভাড়া ৪০টাকা।
সিএনজি আপনাকে মতলব বাজারে নামিয়ে দিবে। মতলব বাজার থেকে ফেরিতে অথবা জনপ্রতি ৫টাকা দিয়ে নৌক করে নদী পার হতে হবে। নদী পার হয়ে সিএনজি অথবা মোটরসাইকেল অথবা অটো রিক্সা দিয়ে চলে আসতে পারেন পাম্প হাউজ বা মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ও ধনাগোদা নদী দেখতে।
আরও: মতলব উত্তর উপজেলা পরিচিতি
এছাড়া কিছুদিন আগে মতলব এর ব্রিজ উদ্বোধন করা হয়েছে। আপনি গাড়ি নিয়ে সরাসরি ব্রিজ দিয়েও আসতে পারেন। আবার, দাউদকান্দি হয়ে ছিরারচর হয়েও মতলব আসতে পারেন।
ফেসবুক: Kuhudak
আমি মেঘনা ধনাগোদা প্রজেক্টটি সপরিবারে দেখতে ইচ্ছুক। কুমিল্লা থেকে আসবো। নদী ভ্রমণ সহ প্রকল্প পরিদর্শন সকল কিছুই দেখতে এবং উপভোগ করতে চাই। দুপুরের খাওয়া দাওয়া এবং রেষ্ট হাউজ, যাতায়াত এর কি কি সুবিধা রয়েছে। দয়াকরে বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো।