ক্ষণিকের যাত্রা – আমার দেখা অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা হলো চট্টগ্রাম। তাই সুযোগ পেলেই ঘুরে আসি সেখান থেকে। এবারের চট্টগ্রাম ভ্রমণ টা একটু ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল আমার জন্য। কারণ মাত্র ২৫ ঘন্টার মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে আবার ঢাকা ফিরে এসেছি।
বেশ কিছু মানুষের সাথে দেখা করার কথা ছিল কিন্তু অধিকাংশই করতে পারি নি সময় স্বল্পতার কারণে। এই কম সময়ে এতবড় ভ্রমন করায় দুইদিন ধরে ভ্রমন ক্লান্তিতে ভুগেছি অবশ্য। যাইহোক পুরো ভ্রমণ সময় জুড়ে তিক্ত-মধুর অভিজ্ঞতা হয়েছে।
আরও: রাত ২টা ৫২ মিনিট!
ট্রেন ভ্রমণ
ট্রেনের টিকেট না পাওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় ৫ ঘন্টা আগে স্টেশনে গিয়ে পৌছি শেষ মুহূর্তে কেউ টিকেট ফেরত দিতে আসে কিনা এই ভেবে। যাইহোক স্টেশনে যাওয়ার সাথে সাথেই দেখি এক লোক ‘চট্টগ্রাম’ বলে ডাকছে। তখনই বুঝে গেছি এই লোক টিকেটের দালাল, তার কাছে সিটসহ টিকেট পাওয়া যাবে। গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই নন এসি কত? উনি বলল, ৬০০ টাকা। অবশ্য মূল টিকেটের দাম ৩২০ টাকা।
আমি ৪৫০ টাকা বলার পর, উনি একদাম ৫০০ বলে চলে যেতে লাগল। আমি ভাবলাম, থাক নিয়েই নেই পড়ে যদি আবার সিট না পাই। ট্রেনে সিট না পেলে বাসে যেতে হবে। ওইদিকে আকাশটা ক্ষনে ক্ষনে ডেকে উঠছে। বৃষ্টির আভাস পাচ্ছিলাম। এই আবহাওয়ায় বাসে যেতে ইচ্ছে করছিল না। অবশ্য এইটার পিছনে ভিন্ন একটা কারণ ছিল।
গত দুইবছর আগে এমনই এক বৃষ্টির রাতে কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে রোড এক্সিডেন্ট করি। প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়েছিলাম মাথায় আর বুকে। হাতের কয়েক জায়গায় মাংস উঠে গিয়েছিল। সেই রাতের ভয়টা আমার সবসময় দূরের পথে যাত্রার সময় করে বিশেষ করে রাতের ভ্রমনের ক্ষেত্রে। তাই সবসময় চেষ্টা করি রাতের ভ্রমনে বাসকে এড়িয়ে চলতে।
যাইহোক শেষ পর্যন্ত টিকেটটা নিয়ে প্লাটফর্মের দিকে রওনা দিলাম। ট্রেন ছাড়বে রাত ১২টার সময়। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি সবে মাত্র সোয়া সাতটা বাজে, মানে আরো প্রায় পাঁচঘন্টা বসে থাকতে হবে এই স্টেশনেই।
কি আর করা, স্টেশনের একটা বেঞ্চিতে বসে রইলাম। নানান মানুষের নানান কাজ দেখছি। কেউ ঘুমাচ্ছে, কেউ মুড়ি চিবুচ্ছে। একটা সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে বাচ্ছা দৌড়াদৌড়ি খেলছে। এসব দেখতে দেখতে ট্রেন ছাড়ার সময় হলো।
আরও: ভ্রমণ কাহিনী
চট্টগ্রাম এর উদ্দেশ্যে ক্ষণিকের যাত্রা
ট্রেনে উঠে নিজের আসনে বসলাম। জানালার পাশে সিটটা পড়েছে, ভালোই লাগলো। আমার পাশেরজন একটু পড়েই আসল। ট্রেনটা ছাড়তেই দেখি চোখ মুখ থেকে ঘুম হাওয়া হয়ে গেছে। কি করব ভাবতে ভাবতে একটা উপন্যাসের বই বের করলাম ব্যাগ থেকে। পড়তে পড়তে কোন সময় যে ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া স্টেশনে পৌছলাম টেরই পাইই নি।
হুশ ফিরে এল পাশের যাত্রির নড়াচড়ায়। উঠে দেখি লোকটা নামার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। মেজাজটাই গরম হয়ে গেল লোকটার অযাচিত নাড়াচাড়া দেখে। লোকটা নেমে যেতেই অষ্টাদশ কিংবা কুড়ি বছর হবে এমনটা একটা মেয়ে এসে বসল আমার পাশের সেইই সিটটায়।
মেজাজটা আরও গরম হয়ে গেল ওকে দেখে। কারণ হচ্ছে আমি কখনও ভ্রমনের সময় পাশের সিটে কোন অপরিচিত নারীকে বসাতে পছন্দ করি না, এরা পুরো রাস্তায় বিরক্ত করে। কিছুক্ষণ পরপরই বলে ভাইয়া জানালাটা খুলে দেন নইলে বলে জানালাটা লাগিয়ে দেন কিংবা বলে ভাইয়া আমার বমি আসছে কিংবা বলে ভাইয়া আমার জার্নি করতে খারাপ লাগে প্লিজ একটু এপাশে আসবেন আমি একটু বাতাসে বসি।
এইসব নানান ধরনের কথা বলে চরম বিরক্তি করে। মেজাজ গরম নিয়েই আবার বই নিয়ে বসলাম। বইটা যখন শেষ করি তখন ফেনী স্টেশনে এসে পৌছেছি। তাকিয়ে দেখি পাশের মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এ অবস্থায় আমার তো পুরাই অস্থির লাগতে শুরু করল, যতই হোক অপরিচিত নারী পাশে থাকলে যা হয় আর কি।
আরও: বিমান সুন্দরীগণ সেদিন আমার কথা রাখলেন না
অবশেষে চট্টগ্রাম
অবশেষে সকাল সাড়ে সাতটায় নামলাম চট্টগ্রামে। পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা। আমার পরবর্তী গন্তব্য চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকায়। তাই ভাবলাম চকবাজারে গিয়েই নাস্তা খাব। বিশেষ করে হোটেল চকমালঞ্চের তেহারীটা আমার কাছে খুব মজা লাগে। রিকশা ঠিক করে চলে গেলাম চকবাজারের চকমালঞ্চ হোটেলে। নাস্তা করতে করতে যে কাজের উদ্দেশ্যে গিয়েছি কাজটার সময় হয়ে গেল।
আগেই ২দিনের প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু অবিশ্বাস্য ভাবে মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যেই কাজটা শেষ হয়ে গেল। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ফোন আসলো তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। তখন সবে মাত্র সকাল ১০টা বাজে। তারপরে কাছাকাছিতে থাকা পাঁচ জনের সাথে (যাদের সাথে দেখার করার কথা ছিল) দেখা করে দুপুর বারোটার ঢাকামুখী বাস ধরলাম।
ঢাকায় আসতে আসতে সন্ধ্যা সাতটা। মাত্র ২৫ ঘন্টার মধ্যে এতবড় ভ্রমণ টা কিভাবে করলাম নিজেও জানিনা। পুরোটা সময় না ঘুমিয়ে ছিলাম কিভাবে সেটা ভেবে পাচ্ছি না এখনও…
লেখক: এস এ মাহমুদ | ক্ষণিকের যাত্রা ( ভ্রমণ কাহিনী )
আরও: সুন্দরবনে হারিয়ে যাওয়া ৬ কিশোরের শ্বাসরুদ্ধকর ভ্রমণ কাহিনী
ফেসবুক: Kuhudak