কাপ্তাই লেক (Kaptai Lake) বা কাপ্তাই হ্রদ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার একটি কৃত্রিম হ্রদ বা লেক। ১৯৫৬ সালে কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কর্ণফুলি নদীর উপর কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
আজকের পোস্টে কাপ্তাই উপজেলার কাপ্তাই লেক বা হ্রদ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। চলুন শুরু করা যাক…
আরও: সাজেক ভ্যালি
কাপ্তাই লেক বা হ্রদ ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | কাপ্তাই লেক |
ধরন | কৃত্রিম হ্রদ |
অবস্থান | কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম |
প্রবাহ | কর্ণফুলী নদী |
গড় গভীরতা | ১০০ ফুট (৩০ মিটার) |
সর্বাধিক গভীরতা | ৪৯৫ ফুট (১৫১ মিটার) |
আয়তন | প্রায় ১১ হাজার বর্গ কিলোমিটার |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | প্রায় ৩১২ কিলোমিটার |
চট্টগ্রাম থেকে দূরত্ব | প্রায় ৫৮ কিলোমিটার |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
প্রায় ১১ হাজার বর্গ কিলোমিটারের কাপ্তাই লেক পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে প্রকৃতির অপরূপ নৈসর্গিক অনন্য পাহাড়, লেকের অথৈ জলরাশি এবং চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহে রয়েছে।
আরও: হ্যাপি আইল্যান্ড
ইতিহাস
১৯৫৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আমেরিকার অর্থায়নে পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কর্ণফুলি নদীর উপর কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করে, ফলে রাঙামাটি জেলার প্রায় ৫৪ হাজার একর কৃষি জমি প্লাবিত হয়ে যায় এই কাপ্তাই লেকের সৃষ্টির কারনে। প্রায় ১১,০০০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই কৃত্রিম লেক দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড়।
লেকের গড় গভীরতা ১০০ ফুট (৩০ মিটার) আর সর্বাধিক গভীরতা হচ্ছে ৪৯৫ ফুট (১৫১ মিটার)। এখানে বাঁধের পাশে রয়েছে ১৬টি জলকপাট যা ৭৪৫ ফুট (২২৭ মিটার) দীর্ঘ একটি পানি নির্গমন পথ বা স্পিলওয়ে রাখা হয়েছে। এই স্পিলওয় দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৫ লাখ ২৫ হাজার কিউসেক ফিট পানি নির্গমন করতে সক্ষম।
কি আছে কাপ্তাই লেকে
আপনি ভ্রমণে গেলে দেখতে পাবেন যে, এখানে রয়েছে ছোট বড় পাহাড়, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, ঝর্ণা আর জলের সাথে সবুজের দারুণ মিতালী। এখানে একদিকে যেমন রয়েছে পাহাড় আর বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্ভার ঠিক তেমনি লেকের অথৈ পানিতে রয়েছে বহু প্রজাতির মাছ ও অফুরন্ত জীববৈচিত্র যা আপনাকে পুলকিত করবে।
লেকের চারপাশের পরিবেশ দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন পাশাপাশি ছোট ছোট দ্বীপ, নানাবিধ পাখি এবং জল কেন্দ্রিক মানুষের জীবনযাত্রা আপনাকে প্রতি মূহুর্তে দারুণ বিমোহিত করবে। লেকটি কৃত্রিম হলেও প্রকৃতি তার সমস্ত রুপে উজাড় করে সাজিয়েছে কাপ্তাই হ্রদ।
লেক ঘিরেই মূলত রাঙামাটি জেলার কাপ্তাইয়ে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে। লেকের উপর রয়েছে রাঙ্গামাটির সেই বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রীজ। এছাড়া লেকের দুই পাশেই পাহাড় এবং টিলা দিয়ে ঘেরা রয়েছে।
আপনি এখানে ভ্রমণে আসলে ট্রলার ভাড়া করে লেক ভ্রমণ করতে পারবেন। এছাড়া ট্রলারে করে শুভলং জলপ্রপাতে যেতে পারবেন। লেকের পাড়ে আপনার চোখে পড়বে নতুন চাকমা রাজবাড়ি ও বৌদ্ধ মন্দির।
ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
আপনি সারা বছরই কাপ্তাই লেক ভ্রমণে যেতে পারবেন তবে, বর্ষায় লেকের পাশের ঝর্ণাগুলোর পরিপূর্ণ রূপের দেখা পাবেন। তাই বলা যায় যে কাপ্তাই লেক ভ্রমণের আদর্শ সময় হচ্ছে বর্ষাকাল।
আরও: আলুটিলা পর্যটন পার্ক
কিভাবে যাবেন
আপনি বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে এখানে ভ্রমণে যেতে পারবেন।
ঢাকা থেকে কাপ্তাই
রাজধানী ঢাকা থেকে ভ্রমণে যেতে চাইলে, ঢাকার সায়েদাবাদ কিংবা কমলাপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন মানের বাসে সরাসরি কাপ্তাই যেতে পারবেন।
ভাড়া: ঢাকা থেকে বাসে জনপ্রতি ভাড়া লাগতে পারে ৮০০টাকা থেকে ১০০০ টাকা। আর সময় লাগবে প্রায় ৭ থেকে ৮ ঘন্টা।
চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই
আপনি চাইলে চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই যেতে পারবেন। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রতি ৩০ মিনিট পর পর কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই বাসে যেতে সময় লাগবে প্রায় ২ ঘন্টা।
ভাড়া: বহদ্দারহাট থেকে বাস ভাড়া ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা নিতে পারে।
ঢাকা থেকে ট্রেন ভ্রমণ
আপনি চাইলে ঢাকা কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে চট্রগ্রাম যেতে পারেন। চট্রগ্রাম রেল স্টেশনে নেমে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে কাপ্তাই যেতে পারেন।
বান্দরবান থেকে কাপ্তাই
আপনি বান্দরবান থেকে কাপ্তাই ভ্রমণে যেতে পারেন। বান্দরবান থেকে কাপ্তাই যেতে চাইলে আপনাকে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে রাঙ্গামাটি গামী বাসে চড়ে বড়ইছড়ি নামতে হবে। বড়ইছড়ি থেকে CNG দিয়ে কাপ্তাই যেতে পারবেন।
এছাড়া রাঙ্গামাটি থেকে সড়ক পথে বাসে কিংবা CNG -তে অথবা ট্রলার কিংবা নৌকায় করে কাপ্তাই লেক হয়ে কাপ্তাই বাজার যেতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
ভ্রমণে সাথে করে অবশ্যই খাবার পানি রাখবেন। এছাড়া ভ্রমণে গিয়ে খাওয়ার জন্য লেকের মাঝখানে ছোট ছোট দ্বীপে কিছু রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে, সেখান থেকে খাবার খেয়ে নিতে পারেন।
এছাড়া, কাপ্তাইের কাছে বেরান্যে লেক শোর ক্যাফে, জুম রেস্তোরা, প্যারাডাইস ক্যাফে ইত্যাদি রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে নিতে পারবেন। এখানে নৌবাহিনীর ঘাঁটি সংলগ্ন ভাসমান রেস্টুরেন্ট রয়েছে, চাইলে এখান থেকেও খেয়ে নিতে পারে।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবারের তালিকা
কোথায় থাকবেন
এই স্থানটি চাইলে একদিনে ভ্রমণ করে আসতে পারেন। তবে, ভ্রমণে গিয়ে থাকার জন্য রাঙ্গামাটি শহরে থাকতে পারেন অথবা লেক প্যারাডাইস পিকনিক স্পটেও থাকতে পারবেন।
এছাড়া, অনুমতি নিয়ে কাপ্তাইয়ের সরকারি রেস্ট হাউজ, পিডিবি, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বন বিভাগের রেস্ট হাউস গুলোতে থাকতে পারবেন।
ভ্রমণ সতর্কতা ও টিপস
- ভ্রমণে গেলে সাথে অবশ্যই খাবার পানি রাখবেন।
- একসাথে দলগত ভাবে অনেকে গেলে আপনার খরচ কম হবে।
- অফসিজনে ও ছুটির দিন ব্যাতিত গেলে আপনার ভ্রমণ খরচ কম হবে।
- ট্রলার/বোট রিজার্ভ করার সময় কি দেখবেন কোথায় যাবেন তা ভালো করে বলে নিবেন।
- রিজার্ভ করার সময় দরদাম করে নিতে ভুলবেন না।
- কোথাও কোথাও লেকের পানির গভীরতা অনেক, নামতে চাইলে অবশ্যই মাঝিকে জিজ্ঞেস করে নিন অথবা মাঝির পরামর্শ গ্রহন করুন।
- পরিবেশে ও জীববৈচিত্রের ক্ষতি হয় এমন কাজ দয়া করে করবেন না।
- স্থানীয় মানুষদের সাথে ভালো আচরণ করুন।
ভ্রমণ জিজ্ঞাসা
কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণে সাধারণ কিছু প্রশ্ন-উত্তর বা ভ্রমণ জিজ্ঞাসা।
কাপ্তাই লেক কি কৃত্রিম?
হ্যাঁ। কাপ্তাই হ্রদ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙামাটি জেলার একটি কৃত্রিম হ্রদ বা লেক।
কাপ্তাই বাঁধের দৈর্ঘ্য কত?
কাপ্তাই বাঁধের দৈর্ঘ্য ৬৭০.৬ মিটার বা ২,২০০ ফুট।
কাপ্তাই হ্রদের উচ্চতা কত?
কাপ্তাই হ্রদের উচ্চতা ৫৪.৭ মিটার।
রাঙ্গামাটি থেকে কাপ্তাই লেক কত কিলোমিটার?
প্রায় ৮ কিলোমিটার
হ্রদ শব্দের অর্থ কি?
হ্রদ শব্দের অর্থ হচ্ছে লেক। এছাড়া বলা যায় যে, হ্রদ হল পৃথিবীর পৃষ্ঠে প্রাকৃতিক ভাবে বা কৃত্রিম ভাবে সৃষ্ট, অপেক্ষাকৃত বড় এবং স্থির জল।
ফেসবুক: কুহুডাক