কলাকান্দা মসজিদ ও মাদ্রাসা (ইংরেজি: Kalakanda Mosque and Madrasah) বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার এক বিশেষ চিত্তাকর্ষক স্থান বা দর্শনীয় স্থান।
গত ৫ই এপ্রিল ভ্রমণ করে আসলাম মতলব উত্তর এর চিত্তাকর্ষক স্থান গুলোর একটি কলাকান্দা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে যেটা, কলাকান্দা মসজিদ নামে পরিচিত।
এখানে আরও রয়েছে কলাকান্দা ইসলামীয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা, তাপসী হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ) মহিলা মহাবিদ্যালয়, ঈদগাহ ময়দান, কলাকান্দা কবরস্থান, বৃদ্ধাশ্রম সহ আরও।
আরও: নেদায়ে ইসলাম – ফরাযীকান্দী
আজকের ভ্রমণে আমি কলাকান্দা এসেছি। যতটুকু সম্ভব আমি চেষ্টা করব কলাকান্দা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য স্থান এবং স্থাপনা সম্পর্কে তুলে ধরার।
চলুন কলাকান্দা ভ্রমণ শুরু করা যাক… সাথে আছি আপনাদের ভ্রমণ বন্ধু আরিফ হোসেন (GoArif)।
মিনি কক্সবাজার চাঁদপুর ভ্রমণ পড়েছেন কি?
কলাকান্দা মসজিদ ও মাদ্রাসা
একনজরে কলাকান্দা
প্রথমে চলুন একনজরে বা সংক্ষেপে কলাকান্দা সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা যাক।
ভ্রমণ স্থান | কলাকান্দা |
অবস্থান | ছেংগারচর পৌরসভা, মতলব উত্তর, চাঁদপুর |
আয়তন | ৭ বর্গ কিলোমিটার |
জনসংখ্যা | ১৫,৮৮২ প্রায় (১৯৯১) |
ডাকঘর | ছেংগারচর বাজার |
পোস্ট কোড | ৩৬৪০ |
কলাকান্দা মসজিদ
কলাকান্দা মসজিদ বা কলাকান্দা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ টি ১৯৯৯ সালে স্থাপিত হয়। ৫ গম্বুজ বিশিষ্ট ১তলা কলাকান্দা মসজিদ টি প্রায় ৮১ ফিট দৈর্ঘ্য ও ৬০ ফিট চওড়া।
কলাকান্দা মসজিদ এর সাথে রয়েছে সুউচ্চ প্রায় ১০০ ফিট উচ্চতার একটি মিনার। মিনারেও একটি সবুজ গম্বুজ রয়েছে। মিনার এর নিচেই রয়েছে মসজিদ এর খতিব থাকার রুম।
৫০ শতাংশ জায়গা জুড়ে রয়েছে কলাকান্দার এই কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি। মসজিদ এর পাশদিয়ে কলাকান্দা রাস্তা চলে গিয়েছে ছেংগারচর বাজারের দিকে।
রাস্তার অপর পাশেই রয়েছে ৫তলা বিশিষ্ট তাপসী হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ) মহিলা মহাবিদ্যালয় টি।
মসজিদ এর সামনে পূর্বদিকে রয়েছে ছোট একটি কবরস্থান এবং তার পাশেই উত্তর দিকে রয়েছে ওযুখানা। মসজিদ এর উত্তর পাশে রয়েছে কলাকান্দা ইসলামীয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা।
মসজিদ এর সামনে পূর্ব দক্ষিণে রয়েছে মিনার এবং এর চারপাশে রয়েছে সুন্দর ফুলের বাগান। সুন্দর গেইট সম্মিলিত কলাকান্দা মসজিদটি চতুর্দিকে ইটের বাউন্ডারি দেয়া।
আরও: ৪০০ বছরের পুরনো ১ গম্বুজ মসজিদ
কলাকান্দা মসজিদ এর ইতিহাস
১৯৯৯ সালে স্থাপিত কলাকান্দা এই মসজিদটি প্রথম গ্রামবাসির অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়। তখন মসজিদটি বর্তমান মসজিদ এর মত এতো কারুকার্য এবং গম্বুজ ছিল না।
পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার মসজিদটির সংস্কার কাজ করা হলেও সর্বশেষ আলহাজ্ব শাহজাহান শিকদার মসজিদ এর বেশ বড় একটি সংস্কার কাজ করে। বর্তমানে মসজিদ এর উপরে ৫ গম্বুজ এবং প্রায় ১০০ ফিট উচু মিনার রয়েছে।
এছাড়া ৫টি দরজা, ১২টি জানালা, ৮টি পিলার সহ মসজিদে নামাজের জন্য ৯টি কাতার রয়েছে। মসজিদ এর জানালা গুলো থাই গ্লাস করা।
মসজিদ এর বর্তমান খতিব হাফেজ মাওলানা সালাহ উদ্দিন ২০১০ সাল থেকে এই এর খতিব এর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
আলহাজ্ব শাহজাহান শিকদার
আলহাজ্ব শাহজাহান শিকদার কে আমি ব্যক্তিগত ভাবে তেমন চিনি না, ওনার সাথে আমার কথাও হয়নি। তবে লোক মুখে এবং ইন্টারনেট ঘেটে যতটুকু জানতে পারলাম তিনি ইতিমধ্যে অনেক ভালো কাজে অংশ নিয়েছেন।
শাহজাহান শিকদার একজন শিল্পপতি আবার অনেকে ওনাকে সমাজসেবক হিসেবে চিনেন বা জানেন।
তিনি ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সহ কলাকান্দা ইসলামীয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা, তাপসী হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ) মহিলা মহাবিদ্যালয়, ঈদগাহ ময়দান, কলাকান্দা কবরস্থান, বৃদ্ধাশ্রম (কাজ চলছে) নিজ অর্থায়নে নির্মাণ করেছেন।
এছাড়া আরও অন্যান্য মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণে অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন। এটা অবশ্যই কলাকান্দা বাসীর জন্য গর্বের বিষয়। এরকম মানুষের সত্যি অনেক প্রয়োজন। আল্লাহ্ উনাকে নেক হায়াত দান করুণ। আমিন।
আরও: লুধুয়া জমিদার বাড়ি
কলাকান্দা ইসলামীয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা
কলাকান্দা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এর উত্তর পাশেই কলাকান্দা ইসলামীয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা টি রয়েছে। বিশাল আয়তন নিয়ে এই মাদ্রাসা ও এতিমখানা টি কলাকান্দা রাস্তার ঠিক পাশেই অবস্থিত।
১৯৯১ সালে কলাকান্দা ইসলামীয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা টি স্থাপিত হয়। এটি নির্মাণ করেন আলহাজ্ব শাহজাহান শিকদার। তবে মাদ্রাসা ও এতিমখানাটি পরিচালনা করার জন্য কমিটি রয়েছে।
বর্তমানে কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব গোলাম সারোয়ার পাটোয়ারী মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। মাদ্রাসার কমিটি ২ বছর পর পর পরিবর্তন হয়ে থাকে।
আরও: আল মাদ্রাসাতুল আরাবিয়া ইসলামিয়া
মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচিতি
আবাসিক এবং অনাবাসিক মিলিয়ে কলাকান্দা ইসলামীয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩০জন। এটি একটি কওমি মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় ৪টি বিভাগে শিক্ষা দান করা হয়।
- নূরানী মক্তব
- নাজেরা বিভাগ
- হেফজ বিভাগ
- কিতাব বিভাগ
বর্তমানে কলাকান্দা ইসলামীয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ শাহ আলম। এখানে মোট ৭জন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাঠ দান করে থাকেন।
মাদ্রাসা টি ২তলা বিশিষ্ট। এছাড়া পাশেই আরও ২টি টিনের ঘর রয়েছে। রাস্তা থেকে ভিতরে ঢুকার পর হাতের বা পাশে রয়েছে একটি পুকুর। এরপর একসারি নারিকেল গাছ পার হলেই ২তলা বিশিষ্ট মাদ্রাসাটি আপনার চোখে পড়বে।
তাপসী হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ) মহিলা মহাবিদ্যালয়
কলাকান্দা মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে রাস্তার অপর পাশেই দেখতে পাবেন ৫তলা বিশিষ্ট তাপসী হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ) মহিলা মহাবিদ্যালয়। মহাবিদ্যালয়টি কলাকান্দা মহিলা কলেজ নামেও পরিচিত।
তাপসী হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ) মহিলা মহাবিদ্যালয় এখনও উদ্বোধন করা হয়নি। তবে মহাবিদ্যালয় এর কাজ সম্পূর্ণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশাকরা হচ্ছে ২০২০ সাল নাগাদ এটি চালু করা হবে।
এছাড়া মহাবিদ্যালয় এর পাশেই শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য আবাসিক ছাত্রাবাসের ভবনের কাজ প্রায় শেষের দিকে।
ঈদগাহ ময়দান, কলাকান্দা
তাপসী হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ) মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে উত্তর দিকে ২মিনিট এর মোটরসাইকেল পথ পারি দিয়ে চলে আসলাম কলাকান্দা ঈদগাহ ময়দান।
কলাকান্দা ঈদগাহ ময়দানটিও রাস্তার পাশেই। ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশের আগে প্রথমে চোখে পড়ল একটি ছোট মসজিদ এর দিকে। মসজিদ এর পাশেই রয়েছে বেশ বড় একটি দীঘি। এর পরেই রয়েছে কলাকান্দা ঈদগাহ ময়দান।
কালাকান্দা ঈদগাহ ময়দান এর চারপাশ উচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। গেইট এর শুরুতে কিছু অংশ পাকা করা হলেও ময়দান এর ভিতরের বাকি অংশ কাচা মাটি।
ঈদগাহের পশ্চিম পাশে মিম্বার এর অংশটুকু ছাউনি দিয়ে বেশ সুন্দর ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
কলাকান্দা করবস্থান
কলাকান্দা কবরস্থানটি দেখতে হলে আপনাকে ঈদগাহ ময়দান থেকে বেশ কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে দক্ষিন দিকে আসতে হবে। তবে এটিও রাস্তার পাশে রয়েছে।
কলাকান্দা কবরস্থানটিও করেছেন আলহাজ্ব শাহজাহান শিকদার। কবরস্থান এর প্রধান গেইটে কালো সাইনবোর্ডে সাদা অক্ষরে লিখা রয়েছেঃ
সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে বিজ্ঞপ্তি
দুঃস্থ ও মানবতার সেবায় অত্র কবরস্থান সর্বস্তরের মুসলিম মুর্দা সমাহিত করার জন্য সদা উন্মোক্ত। কলাকান্দা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম/খতিব সাহেবের তত্ত্বাবধানে মুর্দার দাফন সামগ্রি প্রয়োজনে মুক্ত হস্তে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
অনুরোধক্রমে কর্তৃপক্ষ
ফেসবুক: Kuhudak
শ্রদ্ধেয় শাহজাহান শিঁকদার সাহেব এর মাধ্যমে আমার ব্যাবসায়িক জীবন শুরু। তাকে আমি ১৯৮৮ সাল থেকে পারিবারিক ভাবে চিনি। তিনি একজন মা ভক্ত ভালো মানুষ। উক্ত প্রকল্প গুলো নির্মাণাধিন জানতাম কিন্তু দেখা হয় নি। আজ এই ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে দেখে আনন্দবোধ করেছি। সেই সাথে তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনি আমাদের শাহজাহান শিঁকদার সাহেবকে আরও হায়াত বাড়িয়ে দিন আমিন।
আমিন
কলাকান্দা মসজিদ