জল্লাদখানা বধ্যভূমি ভ্রমণ – মিরপুর, ঢাকা। ঘুরে আসলাম জল্লাদখানা বধ্যভূমি বা পাম্পহাউজ বধ্যভূমি থেকে। কান পেতে শুনি, কি বলতে চাইছে জল্লাদখানা বধ্যভূমি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিরপুর।
চলুন শুরু করা যাক…
আরও পড়ুন: চিড়িয়াখানা ভ্রমণ – মিরপুর, ঢাকা
এক নজরে জল্লাদখানা বধ্যভূমি
ভ্রমণ স্থান | জল্লাদখানা বধ্যভূমি |
অবস্থান | মিরপুর-১০, ঢাকা, বাংলাদেশ |
বধ্যভূমি আবিষ্কার | ১৯৯৯ সালের ১৫ই নভেম্বর |
বধ্যভূমি আবিষ্কার করেন | বাংলাদেশ সেনাবাহিনী-এর ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেড |
বধ্যভূমি স্থপতি | কবি রবিউল হুসাইন |
উদ্বোধন | ২০০৭ সালের ২১ জুন |
মাথার খুলি পাওয়া যায় | ৭০টি |
অস্থিখণ্ড পাওয়া যায় | ৫,৩৯২টি |
জল্লাদখানা বধ্যভূমির ইতিহাস
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক নীরিহ বাঙালিদের নির্যতনের পর এখানেই গণকবর দেওয়া হয়েছিল। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমিগুলোর একটি।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীনতাপ্রিয় বাঙ্গালিদের, পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর বিহারি, রাজাকার, আলবদর, আল-শামস ,তাদের ট্রেনিং প্রাপ্ত জল্লাদ দিয়ে নিষ্ঠুর ভাবে জবাই করে বড় বড় সেফটি ট্যাঙ্কির ভিতরে ফেলে রাখত।
তথ্য সুত্রঃ wikipedia
ভ্রমণের প্রস্তুতি
ঢাকা যাত্রাবাড়ী নানা বাসায় বেড়াতে এসেছি ২দিন হল। ২দিন বেশ মজা করেই কেটে গেল। কিন্তু এরপর আর বাসায় থাকতে ভালো লাগছিল না।
আমার গ্রামের এক চাচা (কাজী নূরে আলম) থাকেন মিরপুর ১০ নাম্বার। এখানে তিনি জব করেন। ওনার সাথে মোবাইলে কথা বলার পর ওনি আমাকে তার এখান থেকে ঘুরে যেতে বললেন। আমিও রাজি হয়ে গেলাম।
ভ্রমনের দিন
পরেদিন সাজুগুজু করে নানা বাসা থেকে বেরহলাম। যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুর ১০ এ যাচ্ছি। তখনও আমি জানি না মিরপুরে জল্লাদখানা বধ্যভূমি নামে একটা জাদুঘর আছে!
বাসা থেকে রিক্সা করে যাত্রাবাড়ী মোড়ে এসে বাসে উঠলাম। তখনও ফ্লাইওভার হয় নি।
রাস্তায় অনেক জ্যাম। আমাদের গাড়ি খুব ধিরে এগুচ্ছে। মাঝে মাজে কোন জায়গায় গাড়ি ফুলস্টপ দাড়িয়ে ছিল অনেক সময় ধরে।
বার রে বাপ। প্রায় ৪ ঘন্টার উপরে লেগে গেলো মিরপুর ১০ এ আসতে! নূরে চাচা আমাকে ফোন করে জানালেন তার অফিসে কি যেন একটু জামেলা আছে, আমি যেন ১০ নাম্বার থেকে রিক্সা করে ভিতরে চলে আসি।
আমিও তাই করলাম। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্কর থেকে ১১ নম্বরের দিকে কিছুটা আগালেই মিরপুর বেনারশি পল্লীর প্রথম গেট ধরে পাকা রাস্তাটা আধা কিলোমিটারেরও কম যেতে যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে সেখানে চাচা আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
আমি রিক্সা থেকে নেমে চাচার সাথে কুশল বিনিময় করলাম। চাচা বললেন চলো লাঞ্চ করে নেই।
আমরা লাঞ্চ করতে করতে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। তখনই চাচা জল্লাদখানা বধ্যভূমির কথা আমকে বললেন।
চাচা জল্লাদখানা বধ্যভূমি নিয়ে আমাকে অনেক তথ্য জানালেন। কিছুটা এর ইতিহাস সম্পর্কে বললেন।
আমি বললাম, চলেন খাওয়া শেষ করে জল্লাদখানা বধ্যভূমি দেখে আসি।
আরও পড়ুন: দিয়াবাড়ি ভ্রমণ – উত্তরা, ঢাকা
জল্লাদখানা বধ্যভূমি ভ্রমণ
আমরা লাঞ্চ শেষ করে জল্লাদখানা বধ্যভূমির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আমি রিক্সা নিতে চাইলে চাচা বললেন, এটা খুব কাছেই। আমরা হেটেই যেতে পারব। কয়েক মিনিট লাগবে মাত্র।
রায়ের বাজার বধ্যভূমির পাশদিয়ে অনেকবার যাওয়া আসা করলেও সেখানে যাওয়ার সৌভাগ্য হয় নি আমার।
এই প্রথম আমি কোন বধ্যভূমি দেখতে এসেছি। চাচা বললেন, ১৯৭১ সালে এখানে অনেককে ধরে নিয়ে এসে জবাই করে হত্যা করে একটি কুপে ফেলে দেয়া হয়েছে।
শুনেই আমার গা শিহরিত হয়ে উঠল। কি অমানুষ ছিল ৭১ এর পাক বাহিনীরা! পরবর্তীতে যখন এই বধ্যভূমি খনন করা হয়েছিল তখন এখানে ৭০টি মাথার খুলি, ৫৩৯২টি অস্থিখণ্ড, মেয়েদের শাড়ি, ফ্রক, ওড়না, অলংকার, জুতা, তসবিসহ শহীদদের ব্যবহার্য নানা জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছিল।
ভাবা যায়?
আমি এক এক করে সবগুলো বিষয় খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিলাম।
জল্লাদখানা বধ্যভূমি জাদুঘর
এই জাদুঘরে সেই সময়ের অনেক জিনিসপত্র যেগুলো খনন করে পাওয়া গিয়েছিল সব রয়েছে। আবার আলাদা আলাদা করে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে অনেক তথ্য।
আমি সব পড়তে পারছিলাম না। কারন, আমার চোখে পানি চলে আসছিল। যে কাররই আশার কথা।
ভাবা যায় না… একদম না।
আমরা অনেক সময় নিয়ে জাদুঘর টি ঘুরে ঘুরে দেখলাম। জাদুঘরে তখন আমরা কয়েকজন ছিলাম মাত্র।
এখানে নাকি খুব কম লোকই আসে দেখতে।
আমি ভাবলাম, হয়তো মানুষ এখানে আসলে এর কষ্ট নিতে পারে না। নাহয় আমাদের টাইম নেই এসব দেখার।
আরও পড়ুন: জাতীয় স্মৃতিসৌধ ভ্রমণ সাভার, ঢাকা
উপসংহার
জল্লাদখানা সহ বাংলাদেশে এরকম অনেক খুজে পাওয়া না পাওয়া বধ্যভূমির সংখ্যা কম নয়। আমাদের উচিত একবার হলেও এসব জায়গায় ঘুরে যাওয়া। এগুলোই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি।
সবাই ভাল থাকবেন। আজ আপাতত বিদায়।
ফেসবুক: Kuhudak