জাহাপুর জমিদার বাড়ি (Jahapur Zamidar Bari) বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার এক ঐতিহাসিক প্রাচীন জমিদার বাড়ি। প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে গৌরি মোহনের হাত ধরে এই জমিদার বাড়িটি নির্মিত হলেও ১৮৬২ খিস্টাব্দের দিকে বাড়িতে জমিদারীর গোড়াপত্তন শুরু হয়।
কালের বিবর্তনে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে কিন্তু কুমিল্লার জেলার জাহাপুর জমিদার বাড়ি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে রয়েছে।
আজকের পোস্টে আমরা জাহাপুর জমিদার বাড়ি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। চলুন শুরু করা যাক…
আরও: রূপসা জমিদার বাড়ি
জাহাপুর জমিদার বাড়ি ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | জাহাপুর জমিদার বাড়ি |
অবস্থান | জাহাপুর, মুরাদনগর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম |
ধরন | জমিদার বাড়ি |
নির্মিত | ১৮৬২ খিস্টাব্দ |
সৃষ্টিকারী | গৌর মোহন রায় |
আয়তন | ৩ একর |
প্রাসাদ সংখ্যা | ১০টি |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | ৮০ কিলোমিটার (প্রায়) |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
জমিদার বাড়িটি মুরাদনগরের জাহাপুর গ্রামে অবস্থিত। সরোজী মহালের জমিদার রাধিকা মোহন দাস হতে শ্রী গৌরি মোহন রায়ের মাধ্যমে এই পরিবার জমিদারী লাভ করেছিলেন।
আরও: লোহাগড় মঠ
ইতিহাস ও গঠনশৈলী
জমিদার বাড়িটির ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় যে, জমিদারি প্রতিষ্ঠিত ১৮৬২ খিস্টাব্দের দিকে। এই বাড়ির প্রথম পুরুষ ছিলেন শ্রী কানাই লাল রায়। তবে এই বাড়িটি জমিদার হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায় নবম পুরুষ অর্থাৎ শ্রী গৌর মোহন রায়ের আমল থেকে।
আপনি এখানে ভ্রমণে গেলে দেখতে পাবেন যে বাড়ির ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র এখনো টিকে রয়েছে। কারন, এখানে বর্তমানে জমিদার বাড়ির ১৩তম বংশধররা বসবাস করছেন! এই জমিদার বংশধররা মূলত ছিলেন পাট ব্যবসায়ী।
জানা যায় যে, রাণী মহলের সামনে একটি পুকুর ছিল যাতে, রাণীরা এই পুকুরটিতে জাফরান মিশিয়ে স্নান করতেন।
জমিদার বাড়িতে ভ্রমণে গিয়ে প্রথম ফটকে দুইটি সিংহের মূর্তি দেখতে পাবেন। জমিদার বাড়িতে মোট ১০টি প্রাসাদ বা ভবন রয়েছে। ১ম ভবনটি ৩তলা আর বাকি গুলো ২তলা বিশিষ্ট। তবে, ইতিমধ্যে ২টি ভবন প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে বলা যায়।
বাড়ির কিছু সংস্করণ করা হয়েছে। জমিদার বাড়ির সর্বশেষ যে ভবনটি তৈরি করা হয়েছে তা বর্তমান বংশধর প্রফেসর অঞ্জন কুমার রায়ের ও অধ্যক্ষ রঞ্জন কুমার রায়েরপিতামহ জমিদার শ্রী অশ্বীনি কুমার রায় করেছেন।
পাশাপাশি এলাকার লোকজনের চিকিৎসার জন্য দাতব্য চিকিৎসালয়, জগন্নাথ দেবের রথ ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন। ভবন গুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফুলের নকশা করা হয়েছে। জানালার গ্রীলগুলোতেও নকশা দেখতে পাবেন। ভবনের নকশা গুলো মুঘল রীতিতে তৈরি করা হয়েছিল।
আপনি প্রধান তোরণ দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলেই একটি নাট মন্দির দেখতে পাবেন। নাট মন্দিরের ঠিক পাশেই রয়েছে স্থায়ীভাবে নির্মিত দুর্গাদেবীর প্রতিমা।
কিভাবে যাবেন
আপনি বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে এখানে ভ্রমণে যেতে পারেন। ঢাকা থেকে ভ্রমণে আসতে চাইলে ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে কোম্পানীগঞ্জগামী সৌদিয়া, তিশা ইত্যাদি বাসে চড়ে দেবিদ্বারের পান্নারপুল আসবেন। দেবিদ্বার নেমে বাখরাবাদ রোডে প্রায় ১০ কিলোমিটার গেলেই জাহাপুর জমিদার বাড়ি দেখতে পাবেন।
আবার সায়দাবাদ থেকে কুমিল্লার বাসে উঠে ময়নামতি নেমে যাবেন। ময়নামতি থেকে কোম্পানীগঞ্জের বাসে চড়ে দেবিদ্বারের পান্নারপুল চলে যাবেন। এরপর পান্নারপুল থেকে বাখরাবাদ রোডে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে জাহাপুর জমিদার বাড়ি রয়েছে।
কোথায় খাবেন
জমিদার বাড়ি ভ্রমণে গেলে সাথে খাবার পানি নিয়ে নিতে পারেন। জমিদার বাড়ি আশেপাশে ছোট দোকান পাবেন তবে ভালো মানের হোটেল বা রেস্টুরেন্টের জন্য কুমিল্লা শহরে চলে যেতে পারেন। আর জানেন তো, কুমিল্লা জেলা রসমালাইয়ের জন্য বিখ্যাত। তাই কুমিল্লা ভ্রমণে আসল মাতৃভান্ডারের রসমালাই খেতে ভুলবেন না।
কোথায় থাকবেন
জমিদার বাড়ি ভ্রমণে গিয়ে থাকার জন্য জাহাপুরে কোন হোটেল পাবেন না। যদিও এই স্থানটি একদিনের ভ্রমণের জন্য তারপরও যদি থাকতে চান তাহলে আপনাকে কুমিল্লা শহরে যেতে হবে।
কুমিল্লা শহরে থাকার জন্য অনেক হোটেল পাবেন। কুমিল্লা ক্লাব, কুমিল্লা সিটি ক্লাবসহ বেশকিছু ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে এখানে। ভাড়া ৩০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।
ফেসবুক: Kuhudak