ইনানী সমুদ্র সৈকত (Inani Sea Beach), বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত একটি দর্শনীয় স্থান। কক্সবাজার জেলার পর্যটন সেক্টরে ইমারজিং টাইগার হচ্ছে ইনানী। ভাটার সময় ইনানী সমুদ্র সৈকতে সেন্টমার্টিনের মত প্রবাল পাথরের দেখা পাবেন।
আজকের পোস্টে আমরা ইনানী সমুদ্র সৈকত নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। চলুন শুরু করা যাক…
আরও: সাঙ্গু নদী
ইনানী সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | ইনানী সমুদ্র সৈকত |
ধরন | সমুদ্র সৈকত, দর্শনীয় স্থান |
অবস্থান | ইনানী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | প্রায় ৪১৫ কিলোমিটার (সড়কপথ) |
কক্সবাজার থেকে দূরত্ব | প্রায় ২৩ কিলোমিটার |
হিমছড়ি থেকে দূরত্ব | প্রায় ১৪ কিলোমিটার |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
ইনানী সৈকত বঙ্গোপসাগরের একটি উপকূলভূমি। এই স্থানটি বিংশ শতাব্দীর শেষভাগের দিকে পর্যটন কেন্দ্রে হিসেবে পরিণত হয় বলে ধারণা করা হয়ে থাকে।
আরও: সাজেক ভ্যালি
কি আছে ইনানী সৈকতে
কক্সবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণে ও হিমছড়ি থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইনানী প্রবালগঠিত একটি সমুদ্রসৈকত। আপনি এখানে পশ্চিমে সমুদ্র আর পূর্বে পাহাড়ের এক অপূর্ব সৌন্দর্য্য দেখতে পাবেন। মূলত ইনানির প্রবাল, পাথর আর এক পাশে পাহাড় আরেক পাশে সাগর জন্য পর্যটকদের কাছে বেশি আকর্ষণীয়।
মেরিন ড্রাইভের সড়ক ধরে কক্সবাজার থেকে ইনানী বীচে যেতে হয়। আপনি জানেন কি? কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৮৩ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে ইনানী সৈকত।
এখানে আপনি ভাটার সময় সেন্টমার্টিনের মত প্রবাল পাথরের দেখা পাবেন। কক্সবাজারে যেমন সাগর উত্তাল থাকে এখানে ঠিক তেমন থাকে না তাই এই শান্ত সাগরই পর্যটকদের আরো বেশী বিমোহিত করে।
ভ্রমণের আদর্শ সময় হিসেবে বিকেল বেলার সময়টাকে ধরা হয়। কারন, বিকেল বেলায় পর্যটক তুলনামূলক কম থাকে এখানে আর সাথে অপূর্ব সূর্যাস্ত দেখার সুযোগও পাবেন।
আপনি টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে ইনানী বীচে যাবার সময় হিমছড়ির উঁচু উঁচু পাহাড়, উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ, সমুদ্র তীরের সাম্পান, নারিকেল ও ঝাউবন গাছের সারি আর চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে আপনার ভ্রমণের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে মন প্রফুল্ল হয়ে উঠবে। আপনার ভালো লাগবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
আরও: মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র
কিভাবে যাবেন
ইনানী ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে প্রথমে আপনাকে কক্সবাজার আসতে হবে।
বাস ভ্রমণ
আপনি যদি ঢাকা থেকে যেতে চান তাহলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরণের এসি বা নন এসি সৗদিয়া, এস আলম এর মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, সেন্টমার্টিন হুন্দাই ইত্যাদি বাস সার্ভিস রয়েছে।
ভাড়া: বাস ভাড়া জনপ্রতি ৯০০ টাকা থেকে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত নিতে পারে।
ট্রেন ভ্রমণ
আপনি চাইলে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশান থেকে চট্টগ্রাম অথবা সরাসরি কক্সবাজার এক্সপ্রেস অথবা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে যেতে পারেন। অথবা ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ট্রেনে গিয়ে সেখান থেকে বাসে করেও কক্সবাজার যেতে পারেন।
ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশান হতে সোনার বাংলা, সুবর্ন এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী ও চট্টলা মেইল ট্রেইনে চট্টগ্রাম যেতে পারেন। এরপর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যেতে নতুন ব্রিজ এলাকা অথবা দামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে এস আলম, হানিফ, ইউনিক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণ ও মানের বাসে করে যেতে পারেন।
প্লেনে ভ্রমণ
এছাড়া আপনি চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স, এয়ার এস্ট্রা ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।
ভাড়া: ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান ভাড়া ৪,০০০ টাকা থেকে ১২,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। যেকোনো অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক গন্তব্যে সস্তায় বিমানের টিকেট কাটুন কুহুডাক এয়ার থেকে।
কক্সবাজার থেকে ইনানী সমুদ্র সৈকত
আপনি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে সবসময় ইনানী সমুদ্র সৈকত যাবার খোলা জীপ পাবেন। শুধুমাত্র ইনানী সৈকত ভ্রমণের জন্য কেউ এখানে আসেন না। যারাই এখানে ভ্রমণে আসেন তারা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থান গুলো ভ্রমণ করেন।
খোলা জীপে রিজার্ভ গেলে বেশি টাকা লাগতে পারে তাই ভাড়া করার পূর্বে দামাদামি করে নিবেন। আর একটি জীপে অনায়াসে ১২ থেকে ১৫ জন বসাতে পারবেন।
ভাড়া: খোলা জীপের ভাড়া ১৫০০ টাকা থেকে ২৫০০ নিতে পারে।
এছাড়া আপনি অটোরিকশায় কিংবা ইজিবাইকে করে ইনানী সমুদ্র সৈকত যেতে ও আসতে পারবেন। ভাড়া সিজন ভেদে ৫০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা নিতে পারে। চাইলে আপনি লোকাল CNG তে করে জনপ্রতি ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা ভাড়ায় ইনানী সী বিচ যেতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
কক্সবাজার থেকে ইনানী ভ্রমণের পূর্বে খেয়ে নিতে পারেন। আর সকালে ভ্রমণে গেলে আপনি আনায়াসেই ৫-৬ ঘন্টার মধ্যে ইনানী বীচ থেকে ঘুরে আসতে পারবেন তাই চাইলে হালকা শুকনো খাবার সাথে রাখতে পারেন।
ইনানী গিয়ে খাবার এবং ডাব পাবেন তবে দাম তুলনামূলক বেশি। ঘুরা শেষে দুপুরে খাবারের জন্য কক্সবাজার ফিরে রোদেলা, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষি, নিরিবিলি ইত্যাদি হোটেলে খেয়ে নিতে পারেন। কক্সবাজারে আপনি ছোট থেকে শুরু করে ৫ স্টার মানের হোটেল পাবেন।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবারের তালিকা
কোথায় থাকবেন
আপনি ইনানী সৈকতে ভ্রমণে গিয়ে থাকতে চাইলে ইনানী বিচের আশেপাশে ফাইভ স্টার মানের টিউলিপ সী পার্ল রিসোর্ট, ইনানী রয়াল রিসোর্ট, লা বেল্যা রিসোর্ট হোটল ও রিসোর্ট পাবেন।
তবে আপনি চাইলে কক্সবাজার এসে থাকতে পারবেন। কক্সবাজারে থাকার জন্য প্রচুর হোটেল এবং রিসোর্ট রয়েছে। আপনার বাজেট অনুযায়ী ৫ স্টার মানের পর্যন্ত হোটেল পাবেন।
বি:দ্র: হোটেল খোঁজার ক্ষেত্রে রিকশাওয়ালা, অটোরিকশা বা সিএনজিওয়ালার পরামর্শে নেয়া উচিত নয়। কারন, ওনারা আপনাকে তাদের নির্দিষ্ট হোটেলে উঠিয়ে হোটেল থেকে ২০% থেকে ৫০% পর্যন্ত কমিশন নিয়ে থাকে! অতিরিক্ত এই টাকা আপনার হোটেল ভাড়ার সাথে যুক্ত হয়। তাই, প্রয়োজনে হোটেলের ফেইসবুক পেইজ বা ওয়েবাসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে অথবা নিজেরা খুঁজে হোটেলে উঠতে পারেন।
সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ টিপস
ইনানী সমুদ্র সৈকত ভ্রমণের কিছু টিপস দেয়া হল।
- ভ্রমণের পূর্বে আপনার প্রয়োজনীয় জামাকাপড়, ক্যামেরা, চার্জার, ব্রাশ ইত্যাদি ব্যাগে ঘুছিয়ে নিন।
- একা একা হেঁটে বীচ এর অনেক দূরে চলে যাবেন না।
- ঢাকা থেকে গেলে বেশ লম্বা জার্নি হবে। তাই শারীরিক এবং মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।
- অপরিচিত কারও দেয়া কিছু খাবেন না।
- অফসিজন যেতে পারেন এতে ভ্রমণের খরচ কম হবে।
- বিচের পানিতে নামতে চাইলে সাথে অতিরিক্ত কাপড় নিয়ে নিন।
- কম দামে হোটেলে থাকতে চাইলে বিচ থেকে দূরে লাবনী পয়েন্টের হোটেল গুলোতে থাকতে পারেন।
- সমুদ্রে নামার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন।
- সমুদ্রে নামার পূর্বে আপনার প্রয়োজনীয় ব্যাগ, ক্যামেরা, মোবাইল ইত্যাদি নিরাপদ স্থানে রাখুন।
- এখানে ক্যামেরাম্যান আপনার ছবি তুলে দিতে চাইবে। ছবি তোলার অনুমতি দেয়ার আগে তিনি কেমন ছবি তুলতে পারেন তা আগে দেখে নিন।
- যে কোন সমস্যায় টুরিস্ট পুলিশ এর সাহায্য নিন।
- হাতে সময় নিয়ে বের হন, মেরিন ড্রাইভ ও হিমছড়িতে চাইলে কিছু সময় ব্যয় করতে পারেন। কক্সবাজার থেকে ইনানী যাওয়ার পথে হিমছড়ি পরবে।
- অতিরিক্ত ছবি তোলা এবং ভিডিও করতে গিয়ে আসল সৌন্দর্য দেখতে ভুলবেন না।
আপনার ভ্রমণ হোক নিরাপদ এবং আনন্দময়।
ফেসবুক: Kuhudak