হরিপুর জমিদার বাড়ি (Haripur Zamidar Bari) বা হরিপুর বড়বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিণবেড় গ্রামে অবস্থিত। এই জমিদার বাড়িটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।
আজকের পোস্টে আমরা নাসিরনগরের হরিপুর জমিদার বাড়ি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। চলুন শুরু করা যাক…
আরও: জাহাপুর জমিদার বাড়ি
হরিপুর জমিদার বাড়ি ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | হরিপুর জমিদার বাড়ি |
স্থানীয় নাম | হরিপুর বড়বাড়ি |
ধরন | প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন |
অবস্থান | হরিণবেড়, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া |
মালিক | বাংলাদেশ সরকার |
স্থাপিত | ১৮শ শতাব্দী |
আয়তন | প্রায় ৫ একর |
গম্বুজ | ২টি |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | ১১৭ কিলোমিটার (প্রায়) |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
তিতাস নদীর পূর্বপ্রান্তে প্রায় ১৭৫ বছর আগে ১৮শ শতাব্দীতে জমিদার কৃষ্ণপ্রসাদ রায় চৌধুরী এবং হরিপ্রসাদ রায় চৌধুরী জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরীর মৃত্যুবরন করার পর হরিপদ রায় চৌধুরী ও শান্তি রায় চৌধুরী এবং পরবর্তীতে উপেন্দ্র রায় চৌধুরী ও হরেন্দ্র রায় চৌধুরী উত্তরাধিকারসুত্রে জমিদার বাড়ির মালিকানা ও জমিদারি লাভ করেছিলেন।
ইতিহাস ও নির্মাণশৈলী
ঐতিহাসিকদের তথ্য মতে আজ থেকে প্রায় ১৭৫ বছর আগে জমিদার গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরী ও কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী হরিপুর এই হরিপুর জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন।
প্রায় ৫ একর জমির উপর নির্মিত এই জমিদার বাড়ি ১৯৪৭ সালের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর উপেন্দ্র রায় চৌধুরী ও হরেন্দ্র রায় চৌধুরী বাড়িতে পুরোহিতদের রেখে কলকাতায় চলে যান।
হরিপুরের জমিদারগণ ত্রিপুরার প্রভাবশালী জমিদারগণের উত্তরসুরি ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। ঐতিহাসিক নৌকা বাইচ এখান থেকেই শুরু হয় হয়েছিল। বর্তমানে জমিদার বড় বাড়িটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দ্বারা সংরক্ষিত রয়েছে। হরিপুর জমিদার বাড়ি স্থানীয়দের কাছে হরিপুর বড়বাড়ি নামে পরিচিত।
বাড়িটি ২ গম্বুজ এবং ৩তল বিশিষ্ট বাড়িটির আয়তন এবং আড়ম্বরপূর্ণ স্থাপত্য ঐতিহাসিক যুগের শৈল্পিক নৈপুণ্যের স্বক্ষর বহন করে আছে। আপনি ভ্রমণে গেলে দেখতে পাবেন যে, প্রাসাদটির ৬০টি কক্ষে নাট্যশালা, দরবার হল, গুদাম, গোশালা, রন্ধনশালা, প্রমোদের কক্ষ, খেলার মাঠ, মঠ, মন্দির, মল পুকুর ইত্যাদি রয়েছে।
২য় তলায় যাওয়ার জন্য রয়েছে ৬টি সিঁড়ী ও ৩য় তলায় যাওয়ার জন্য রয়েছে ২টি সিঁড়ী। উত্তর-পশ্চিম পার্শ্বে ৬টি শয়ন কক্ষ, ৪টি পূর্ব পার্শ্বে এবং ৪টি রয়েছে পুকুরের পশ্চিম পার্শ্বে। এছাড়া বাড়িটির ঠিক পশ্চিম পার্শ্বে রয়েছে সান বাঁধানো ঘাট যা নদীতে গিয়ে নেমেছে এবং এর উভয় দিকে মঠদ্বয় আরও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে এর মধ্যে একটি উত্তর পার্শ্ব কৃষ্ণপ্রসাদ রায় চৌধুরী ও অপরটি দক্ষিণ পার্শ্বে গৌরীপ্রসাদ রায় চৌধুরীর।
বাড়িটি নির্মিত হওয়ার সময় এ অঞ্চলের যাতায়তের জন্য আরামদায়ক ছিল নদীপথে ভ্রমণ। তাই বাড়িটির মূল ফটক হিসাবে নির্মিত হয়েছে আকর্ষণী ঘাট।
বাড়িটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর কারনে এখানে বেশকিছু নাটক ও সিনেমার দৃশ্যধারন করা হয়েছে। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত ঘেটুপুত্র কমলা চলচ্চিত্রটির বেশ কিছু অংশ হরিপুর জমিদার বাড়িতে ধারন করা হয়েছে। এছাড়া মধু মালতি, নাইওরী, দ্য লাস্ট ঠাকুর ইত্যাদি চলচ্চিত্র জমিদার বাড়িতে ধারন করা হয়েছে।
কিভাবে যাবেন
আপনি বাংলাদেশের যেকোন স্থান থেকে এখানে ভ্রমণে যেতে পারবেন। রাজধানী ঢাকা থেকে ভ্রমণে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে সিলেটের যেকোনো বাসে করে মাধবপুর বাজারে নেমে যাবেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, হরিপুর রাজবাড়ী যাওয়ার জন্য সবচেয়ে সহজ ও সুবিধাজনক রুট হচ্ছে ঢাকা – সিলেট হাইওয়ে ধরে যাওয়া। তাই, ঢাকা থেকে সিলেট কিংবা হবিগঞ্জগামী বাসে করে মাধবপুর বাজারে নেমে সেখান থেকে CNG ভাড়া করে হরিপুর বড়বাড়ি দেখতে যেতে পারেন।
এছাড়া আপনি যদি ট্রেনে যেতে চাইন তাহলে ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন যেতে পারেন। ট্রেনে যাওয়ার জন্য নয়াপাড়ার টিকেট কাটবেন।
ট্রেনে সকাল ৬:৪০ মিনিটে ভ্রমণ শুরু করে নয়াপাড়া সকাল ১০টার মধ্যে চলে যেতে পারবেন। নয়াপাড়া নেমে রিজার্ভ অটোরিকশা করে চলে যেতে পারেন হরিপুর জমিদার বাড়ি অথবা প্রথমে মাধবপুর যেতে পারেন সেখান থেকে হরিপুর। আবার সন্ধা ৬:২০ মিনিটে ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন রয়েছে, চাইলে আবার ট্রেনে চলে আসতে পারেন।
কোথায় খাবেন
জমিদার বাড়ি ভ্রমণে গিয়ে খাওয়ার জন্য আশেপাশে ছোট ছোট দোকান পাবেন। আর ভ্রমণে গেলে অবশ্যই সাথে করে খাবার পানি নিয়ে নিবেন। এছাড়া নাসিরনগরে এসে খাবারের হোটেল পাবেন।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবারের তালিকা
কোথায় থাকবেন
এটি একদিনের ভ্রমণের জন্য চমৎকার স্থান। তবে যদি আপনি ভ্রমণে গিয়ে থাকতে চান তাহলে অনুমতি সাপেক্ষে মাধবপুর বাজারে অবস্থিত জেলা পরিষদ রেস্ট হাউস অথবা লাকি হোটেল, মাধবপুর হাইওয়ে রেস্ট হাউস কিংবা ভিশন হোটেলে থাকতে পারবেন।
ফেসবুক: Kuhudak