গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত (Guliakhali Sea Beach) বাংলাদেশের সীতাকুণ্ড উপজেলার চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত। গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত এর আরেক নাম মুরাদপুর সৈকত বা মুরাদপুর বীচ নামে পরিচিত।
১ দিনে ঘুরে আসার জন্য চমৎকার দর্শনীয় স্থান এটি।
আজকে আমি চট্টগ্রাম জেলার গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত নিয়ে আলোচনা করব। তবে, এই পোস্ট টি ভ্রমণকারীদের জন্য করা হচ্ছে। তাই এই স্থান এর ইতিহাস সম্পর্কে খুব কম তথ্য থাকবে। লেখার বেশি অংশ জুড়ে থাকবে ভ্রমণ তথ্য। কিভাবে যাবেন, কি কি দেখবেন, কি খাবেন ইত্যাদি।
আসুন, শুরু করা যাক…
আরও: বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
ভ্রমণ স্থান | গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত |
অবস্থান | সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ |
পরিচিত নাম | মুরাদপুর সৈকত, মুরাদপুর বীচ |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | ২১৯ কিলোমিটার |
সীতাকুণ্ড বাজার থেকে দূরত্ব | ৫ কিলোমিটার |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত খুব বেশি দিন হয় নি এটার পরিচিতি লাভ করেছে। কথিত আছে ২০১৪ সালে চুয়েট এর কিছু শিক্ষার্থীর মাধ্যমে প্রথম এই স্থানটির নাম আলোচনায় আসে।
এরপর থেকেই এখানে পর্যটকদের আসা বাড়তে থাকে। গুলিয়াখালী এখনও সরকারী ভাবে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেনি।
তবে এই দর্শনীয় স্থানটি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান থেকে প্রকৃতি ও গঠনগত দিক থেকে একটু ভিন্ন রকম। একদিকে দিগন্ত জোড়া জলরাশি, অন্যদিকে কেওড়া বন দেখতে পাবেন। দেখতে অনেকটা সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মত।
পুরো সৈকত জুড়ে সবুজ গালিচার বিস্তীর্ণ ঘাস। দেখতে দারুণ লাগবে আপনার। আর এই সবুজের মাঝ দিয়েে এঁকে বেঁকে গেছে সরু নালা। ব্যাপারটা অনেকটা ছোট ছোট দ্বীপ এর মত।
আরও: ভ্রমণ টিপস
গুলিয়াখালী বীচ এর আশেপাশের দর্শনীয় স্থান গুলো
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ শেষে হাতে যদি কিছু সময় থাকে তাহলে নিচের দর্শনীয় স্থান গুলো ঘুরে আসতে পারেন।
- বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত
- সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক
- চন্দ্রনাথ মন্দির ও পাহাড়
- ঝরঝরি ঝর্না
- কমলদহ ঝর্ণা
- কুমিরা সন্দ্বীপ ঘাট
- মহামায়া লেক
- খৈয়াছড়া ঝর্ণা
- নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা
- সহস্রধারা ঝর্ণা
গুলিয়াখালী বীচে যাওয়ার উপায়
আপনি খুব সহজেই দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত
যেতে পারবেন। তার জন্য প্রথমে আসতে হবে সীতাকুণ্ডে। বিভিন্ন উপায়ে ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট থেকে সীতাকুণ্ডে আসতে পারবেন।
ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম গামী যে কোন বাসে করেই যেতে পারবেন সীতাকুন্ড। যাওয়া একেবারেই সহজ। আপনি সীতাকুণ্ড যাওয়ার জন্য এসি ও নন এসি দুই ধরনের বাস পাবেন। ভাড়া নিবে ৪৮০ – ১২৫০ টাকা মত। আর অবশ্যই বাসের সুপারভাইজার কে আগেই বলে রাখবেন সীতাকুন্ড নামিয়ে দিতে।
এছাড়া ঢাকা থেকে সীতাকুন্ড মেইল ট্রেনে করে জনপ্রতি ১২০ টাকা ভাড়া সীতাকুণ্ড যেতে পারেন। ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে করে ফেনী যেতে পারবেন, শ্রেনী ভেদে ভাড়া নিবে ২৬৫ – ৮০০ টাকা। ফেনী থেকে লোকাল বাসে করে সীতাকুণ্ড যেতে পারেন। ফেনী থেকে লোকাল বাসে সীতাকুণ্ড যেতে ৫০ থেকে ৭০ টাকা ভাড়া লাগবে।
আরও: মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র
চট্রগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ড যাওয়ার উপায়
চট্রগ্রাম শহরের অলংকার মোড়, খান মোড়, কদমতলী থেকে সীতাকুণ্ড যাবার বাস ও টেক্সি পাবেন। পছন্দ মতো জায়গা থেকে চলে আসতে পারবেন সীতাকুণ্ড বাজারে।
সীতাকুন্ড থেকে গুলিয়াখালী যাওয়ার উপায়
সিএনজি বা অটো নিয়ে সীতাকুন্ড বাস স্ট্যান্ড ব্রীজের নিচ থেকে গুলিয়াখালি বীচের বাঁধ পর্যন্ত চলে আসতে পারেন। ভাড়া নিবে ৩০ টাকা। আপনি চাইলে অটো রিজার্ভ করে নিয়ে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১৫০ – ২০০ টাকার মত।
কোথায় খাবেন এবং থাকবেন
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গুলিয়াখালী বিচে থাকা ও খাবার কোন ব্যবস্থা নেই! হালকা খাবারের জন্য ছোট ১ টি দোকান রয়েছে মাত্র। তাই আসার পথে সীতাকুণ্ড বাজার থেকে প্রয়োজনীয় খাবার নিয়ে নিন।
যদিও এই স্থানটি ১ দিনের ভ্রমণ স্থান। তারপরও যদি থাকতে চান তাহলে সীতাকুণ্ড বাজারে সাইমুন এবং সৌদিয়া হোটেলে থাকতে পারবেন। রুম ভাড়া নিবে ৩০০ – ১৬০০ টাকার মত।
গুলিয়াখালী ভ্রমণ টিপস
- এখানে রাতে না থাকাই ভালো। ট্যুরিস্ট পুলিশ না থাকায় রাতে সৈকতটি নিরাপদ নয়।
- সাঁতার না জানলে বেশি দূর কখনো যাবেন না।
- ভ্রমণ স্থানকে ময়লা ফেলে নোংরা করবেন না।
- জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিন।
- জোয়ারের সময় হলে বীচের কাছে না থাকাই ভালো।
- পানির ঢেউ যখন বাড়বে বীচ থেকে চলে আসবেন। আর জোয়ারের সময় পানি উঠে নালা গুলো পূর্ণ হয়ে যায়। তখন পারাপার হতে সমস্যা হতে পারে।
- আর যেহেতু এটা পর্যটক বান্ধব বীচ নয়, তাই সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
- গ্রীষ্মে এখানে ভ্রমণের সময় সাথে ছাতা অথবা রেইনকোট নিতে ভুলবেন না।
- জায়গাটি অত্যন্ত নির্জন এলাকায় তাই একা ভ্রমণ করা উচিৎ নয়।
- একজন ভ্রমণ কারীর সাথে ক্যামেরা থেকে শুরু করে মোবাইল, ল্যাপটপ, ড্রোন ইত্যাদি থাকে। তাই নিরিবিলি স্থানে ভ্রমণ করার সময় সদা সতর্ক থাকা উচিত। বলাতো যায়না কখন বিপদ ঘটে যায়।
- ভ্রমণে পান করার জন্য সাথে ফ্রেশ পানি নিয়ে নিবেন। সাথে শুকনো খাবার নিতে ভুলবেন না।
- অপরিচিত কারো দেওয়া কিছু খাবেন না।
- কোন ইভেন্ট বা অপরিচিত কারো সাথে ভ্রমণে যেতে চাইলে ভ্রমণ সঙ্গী কীভাবে নির্বাচন করবেন তা পড়ে নিন।
ভ্রমণ জিজ্ঞাসা
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত কোথায় অবস্থিত?
বাংলাদেশের সীতাকুণ্ড উপজেলার চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত।
গুলিয়াখালী প্রবেশের এন্টি ফি কত?
এখানে ভ্রমণে কোন প্রবেশ ফি বা এন্টি ফি প্রয়োজন নেই।
গুলিয়াখালীর অন্য নাম কি?
মুরাদপুর সৈকত বা মুরাদপুর বীচ।
গুলিয়াখালী বীচ এর পরিচিতি কিভাবে হয়?
২০১৪ সালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কিছু ছাত্র ঘুরতে এসে তা ফেসবুক, ইউটিউবে আপলোড করেন। এরপরই সৈকতটির ব্যাপারে সবাই জানতে পারেন।
সৈকতে বোট ভাড়া/গাড়ি পার্কিং এর কোন সু-ব্যবস্থা আছে কি?
হ্যাঁ আছে।
ফেসবুক: Kuhudak