বিশ্বের বিখ্যাত ক্লক টাওয়ার

বিশ্বের বিখ্যাত ক্লক টাওয়ার ও তাদের অবস্থান। ক্লক টাওয়ার (The Clock Towers) বা ঘণ্টাঘর মূলত বড় শহরগুলোর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এমন একটি স্থাপনা, যেখানে বড় আকৃতির ঘড়ি লাগানো থাকে। এগুলো কেবল সময় দেখানোর জন্য নয়, বরং ঐতিহ্য, স্থাপত্যশৈলী এবং পর্যটন আকর্ষণের অন্যতম নিদর্শন হিসেবেও বিবেচিত হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক বিখ্যাত ক্লক টাওয়ার রয়েছে, যা স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে।

আরও: আল্পস পর্বতমালা কি

১. বিগ বেন (Big Ben) – লন্ডন, যুক্তরাজ্য

যদি কেউ ক্লক টাওয়ার সম্পর্কে কথা বলে, তাহলে প্রথমেই আসে বিগ বেনের নাম। এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রতীকী ক্লক টাওয়ারগুলোর মধ্যে অন্যতম।

  • অবস্থান: ওয়েস্টমিনস্টার, লন্ডন, যুক্তরাজ্য
  • নির্মাণ বছর: ১৮৫৯
  • উচ্চতা: ৯৬ মিটার (৩১৬ ফুট)

বিগ বেন মূলত টাওয়ারটির বড় ঘণ্টার নাম হলেও এটি সাধারণত পুরো ক্লক টাওয়ারকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এটি লন্ডনের অন্যতম দর্শনীয় স্থান এবং প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক এখানে ভ্রমণ করে।

২. রাজাবাজার ক্লক টাওয়ার – ঢাকা, বাংলাদেশ

ঢাকার পুরান ঢাকায় অবস্থিত রাজাবাজার ক্লক টাওয়ার স্থানীয়ভাবে বেশ পরিচিত। এটি মূলত ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় এবং এখনও ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে টিকে আছে।

- বিজ্ঞাপন -
ভ্রমণ কমিউনিটিতে যোগ দিন - কুহুডাক
  • অবস্থান: রাজাবাজার, পুরান ঢাকা, বাংলাদেশ
  • নির্মাণকাল: ১৯ শতকের শেষভাগ

এটি ঢাকার অন্যতম পুরনো ক্লক টাওয়ার, যা অনেক বছর ধরে সংস্কারের অভাবে কিছুটা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে।

আরও: সৌদি আরবের সবচেয়ে সুন্দর শহর কোনটি

৩. রাজাবাদ ক্লক টাওয়ার – চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ

বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও একটি বিখ্যাত ক্লক টাওয়ার রয়েছে, যা রাজাবাদ ক্লক টাওয়ার নামে পরিচিত।

  • অবস্থান: চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ
  • নির্মাণকাল: ব্রিটিশ আমল

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম এবং শহরের পুরনো ঐতিহ্যকে বহন করে।

৪. প্রাগ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ক্লক – চেক প্রজাতন্ত্র

বিশ্বের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ক্লক টাওয়ারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্রাগ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ক্লক।

  • অবস্থান: প্রাগ, চেক প্রজাতন্ত্র
  • নির্মাণকাল: ১৪১০

এটি কেবল সময় দেখানোর জন্য নয়, বরং জ্যোতির্বিজ্ঞান ভিত্তিক সময় গণনার জন্যও ব্যবহৃত হয়। পর্যটকদের জন্য এটি অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

আরও: সৌদি আরবের সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান

৫. রাজা ঘড়ি – কলকাতা, ভারত

ভারতের কলকাতায় অবস্থিত রাজা ঘড়ি একটি ঐতিহাসিক ক্লক টাওয়ার, যা স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতীক।

  • অবস্থান: কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
  • নির্মাণকাল: ব্রিটিশ শাসনামল

কলকাতার অন্যান্য ব্রিটিশ আমলের স্থাপনার মতো এটিও ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয়।

৬. ঘণ্টাঘর – লাহোর, পাকিস্তান

পাকিস্তানের লাহোর শহরে অবস্থিত ঘণ্টাঘর ব্রিটিশ আমলে নির্মিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

  • অবস্থান: লাহোর, পাকিস্তান
  • নির্মাণকাল: ১৮৮৭

এটি শহরের প্রধান বাজারের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং লাহোরের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা।

আরও: জাদুঘর কাকে বলে

৭. সুলতান আবদুল সামাদ বিল্ডিং ক্লক টাওয়ার – মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অবস্থিত সুলতান আবদুল সামাদ বিল্ডিং এও একটি ক্লক টাওয়ার রয়েছে, যা শহরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

  • অবস্থান: কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া
  • নির্মাণকাল: ১৮৯৭

এর স্থাপত্যশৈলী ভিক্টোরিয়ান ও মুরিশ ডিজাইনের মিশ্রণে তৈরি, যা এটিকে বিশেষ আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

৮. রাজস্থানের ঘণ্টাঘর – ভারত

ভারতের রাজস্থানে জোধপুর শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি বিখ্যাত ঘণ্টাঘর রয়েছে, যা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।

- বিজ্ঞাপন -
ভ্রমণ কমিউনিটিতে যোগ দিন - কুহুডাক
  • অবস্থান: জোধপুর, রাজস্থান, ভারত
  • নির্মাণকাল: ১৮৮০ সালের দিকে

এটি ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল এবং এখনও সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হয়।

আরও: বাংলাদেশের সেরা ১০টি প্রাকৃতিক ঝর্ণা

৯. ফ্লোরেন্স ক্লক টাওয়ার – ইতালি

ইতালির অন্যতম সুন্দর শহর ফ্লোরেন্সে একটি বিখ্যাত ক্লক টাওয়ার রয়েছে, যা রেনেসাঁ যুগের স্থাপত্যশৈলী বহন করে।

  • অবস্থান: ফ্লোরেন্স, ইতালি
  • নির্মাণকাল: ১৩৪৮

১০. কর্নওয়ালের ক্লক টাওয়ার – কানাডা

কানাডার কর্নওয়ালে অবস্থিত একটি দৃষ্টিনন্দন ক্লক টাওয়ার, যা শহরের ঐতিহ্য বহন করে।

  • অবস্থান: কর্নওয়াল, কানাডা
  • নির্মাণকাল: ১৯ শতক

আরও: বান্দরবান কিসের জন্য বিখ্যাত

১১. আবরাজ আল বাইত ক্লক টাওয়ার – মক্কা, সৌদি আরব

বিশ্বের বৃহত্তম এবং উচ্চতম ক্লক টাওয়ারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আবরাজ আল বাইত ক্লক টাওয়ার, যা সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত। এটি মুসলিম বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের জন্য একটি বিশাল কমপ্লেক্সের অংশ।

  • অবস্থান: মক্কা, সৌদি আরব
  • উচ্চতা: ৬০১ মিটার (১,৯৭২ ফুট)
  • নির্মাণকাল: ২০১২
  • বিশেষত্ব:
    • এটি বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম ভবন
    • ক্লক ফেস বা ঘড়ির ডায়ালের ব্যাস ৪৩ মিটার, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ঘড়ি।
    • প্রতি রাতে ২ মিলিয়নেরও বেশি এলইডি আলো দ্বারা আলোকিত হয়।
    • এটি ইসলামের পবিত্র স্থান মসজিদুল হারামের ঠিক পাশে অবস্থিত।

এই ক্লক টাওয়ারটি শুধুমাত্র সময় দেখানোর জন্য নয়, বরং এটি একটি বিলাসবহুল হোটেল, শপিং মল, মিউজিয়াম এবং ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারেরও অংশ। হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের সুবিধার্থে এখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।

আবরাজ আল বাইত ক্লক টাওয়ার সৌদি আরবের অন্যতম আইকনিক স্থাপনা এবং প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এটি দেখার সুযোগ পান।

১২. স্পাসকায়া টাওয়ার ক্লক – মস্কো, রাশিয়া

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে অবস্থিত স্পাসকায়া টাওয়ার ক্লক (Spasskaya Tower Clock) ক্রেমলিনের অন্যতম আইকনিক স্থাপনা। এটি শুধুমাত্র একটি ক্লক টাওয়ার নয়, বরং রাশিয়ার রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে।

  • অবস্থান: মস্কো ক্রেমলিন, রাশিয়া
  • উচ্চতা: ৭১ মিটার (২৩৩ ফুট)
  • নির্মাণকাল: ১৪৯১ (ঘড়িটি যুক্ত করা হয় ১৬২৫ সালে)
  • বিশেষত্ব:
    • এটি ক্রেমলিনের প্রধান প্রবেশদ্বারে অবস্থিত।
    • ঘড়ির ব্যাস ৬.১২ মিটার, যা রাশিয়ার বৃহত্তম ঘড়িগুলোর মধ্যে একটি।
    • প্রতি ঘন্টায় এটি রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী সংগীত বাজায়।
    • সোভিয়েত আমলে এই ঘড়িটি রাশিয়ার কমিউনিস্ট সরকারের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো।

স্পাসকায়া টাওয়ার ক্লক রাশিয়ার ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি মস্কো শহরের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।

ক্লক টাওয়ার শুধুমাত্র সময় দেখানোর যন্ত্র নয়, বরং এটি একটি শহরের ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির অংশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক বিখ্যাত ক্লক টাওয়ার রয়েছে, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য বড় আকর্ষণ।


ফেসবুক: কুহুডাক

শেয়ার করুন
Kuhudak (কুহুডাক) LogoKuhudak (কুহুডাক) Logo

আপনার আশেপাশের দর্শনীয় স্থানের তথ্য দিন

কুহুডাকে আপনার আশেপাশের দর্শনীয় স্থানের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন।