বাংলাদেশের ঢাকা (Dhaka) শহরের পুরান ঢাকার মুঘল আমলের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন বড় কাটরা (Bara Katra)। এটি পুরান ঢাকার চকবাজারের বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। আজকের পোস্টে আমরা ঐতিহাসিক নিদর্শন বড় কাটরা সম্পর্কে জানব।
চলুন শুরু করা যাক…
আরও: পানাম নগর
বড় কাটরা ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | বড় কাটরা |
ধরন | ঐতিহাসিক নিদর্শন, দর্শনীয় স্থান |
অবস্থান | চকবাজার, পুরান ঢাকা, বাংলাদেশ |
ঢাকা শহর থেকে দূরত্ব | প্রায় ১৪ কিলোমিটার |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
জনপ্রতি প্রবেশ ফি | ফ্রি |
খোলা থাকে | সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত |
কাটরা মানে কি?
কাটরা বা কাটারা এর আরবি ও ফরাসি অর্থ হলো ক্যারাভ্যানসারাই অবকাশযাপন কেন্দ্র। বাংলাদেশের পুরান ঢাকায় মুঘল শাসনামলে দুটি অন্যন্য কাটরা নির্মাণ করা হয়ে ছিল। এরমধ্যে একটি হলো বড় কাটারা ও অপরটি হলো ছোট কাটারা।
বড় কাটরার ইতিহাস
বড় কাটরার ইতিহাস তেমন বড় নয়! ঢাকার চকবাজারের দক্ষিণে অবস্থিত মুঘল আমলের একটি সরাইখানা হল এই বড় কাটরা। সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজার নির্দেশে ১৬৪৪ থেকে ১৬৪৬ খ্রিস্টাব্দে দিওয়ান (প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা) মীর আবুল কাসিম দ্বারা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে এই ইমারতটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
তিনি সবার কাছে মীর-ই-ইমারত নামে পরিচিত ছিলেন। কাটরায় শাহ সুজার বসবাস করার কথা থাকলেও পরে এটি মুসাফিরখানা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। বর্তমানে এটি জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম, বড় কাটরা মাদ্রাসার তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ধ্বংসপ্রায় বড় কাটরা ইমারতকে সংরক্ষণ ও সংস্কারের জন্য অধিগ্রহণ করতে চাইলেও মালিকদের বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
আরও: বিছনাকান্দি
বর্তমান অবস্থা
স্থাপত্য সৌন্দর্যের কারণে একসময় বড় কাটরার ব্যাপক সুনাম থাকলেও বর্তমানে এর ফটকটি ভগ্নাবশেষ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। এক সময় বড় কাটরার তোরণে ফার্সি ভাষায় শাদুদ্দিন মুহম্মদ সিরাজী লিখিত একটি পাথরের ফলক লাগানো ছিল। যেখানে এই মুসাফির খানার নির্মাতা ও এর রক্ষনাবেক্ষনের ব্যয় নির্বাহের উপায় সম্পর্কে জানা যায়। ফলকটিতে লেখা ছিল যে:
সুলতান শাহ্ সুজা সব সময় দান-খয়রাতে মশগুল থাকিতেন। তাই খোদার করুণালাভের আশায় আবুল কাসেম তুব্বা হোসায়নি সৌভাগ্যসূচক এই দালানটি নির্মাণ করিলেন। ইহার সঙ্গে ২২টি দোকানঘর যুক্ত হইল- যাহাতে এইগুলির আয়ে ইহার মেরামতকার্য চলিতে পারে এবং ইহাতে মুসাফিরদের বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা হইতে পারে। এই বিধি কখনো বাতিল করা যাইবে না। বাতিল করিলে অপ্রাধী শেষ বিচার দিনে শাস্তি লাভ করিবে। শাদুদ্দিন মুহম্মদ সিরাজি কর্তৃক এই ফলকটি লিখিত হইল।
উত্তর ও দক্ষিণ দিকে বড় কাটরার দুইটি প্রবেশ পথ রয়েছে। আয়তাকার প্রাঙ্গণ ঘিরে নির্মিত বড় কাটরার কক্ষের সংখ্যা মোট ২২টি। পূর্ব-পশ্চিম অংশের মাঝামাঝি ৩তলা সমান উচ্চতার ফটকের দুইপাশে দ্বিতল ঘরের সারি এবং দুইপ্রান্তে আটকোণা দুইটি বুরুজ রয়েছে।
বড় কাটরা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে কুহুডাক আর্কাইভে ভিজিট করতে পারেন।
আরও: টাকা জাদুঘর
কিভাবে যাবেন
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের যেকোন জায়গা থেকে পুরান ঢাকা এসে রিক্সা নিয়ে চকবাজারের দক্ষিণ দিকে বাবুবাজার এলাকায় অবস্থিত বড় কাটরায় যাওয়া যায়। ঢাকার বাহিরের অন্য কোন জেলা থেকে ভ্রমণে আসতে চাইলে প্রথমে আপনাকে ঢাকা আসতে হবে, তারপর উপরের উল্লেখ্য অনুযায়ী ভ্রমণে যেতে পারেন।
ফেসবুক: Kuhudak