বালিয়াটি জমিদার বাড়ি (Baliati Zamindar Bari) বা বালিয়াটি প্রাসাদ থেকে ভ্রমণ করে আসলাম। কিন্তু দুঃখজনক হল, দর্শনীয় স্থানটি সরকারী হওয়ায় করোনা ভাইরাস এর এই সময়ে বন্ধ রয়েছে।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে অবস্থিত।
বাহির থেকে দেখা চমৎকার এই দর্শনীয় স্থান টি নিয়ে আজকে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করব। সাথে থাকছি আমি আরিফ হোসেন।
আরও: বালিয়াটি জমিদার বাড়ি (ভ্রমণ গাইড)
চলুন শুরু করা যাক…
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
ভ্রমণ স্থান | বালিয়াটি জমিদার বাড়ি |
ধরন | জমিদার বাড়ি |
অবস্থান | সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, বাংলাদেশ |
আয়তন | ১৬৫৫৪ বর্গমিটার |
স্থাপিত | ১৯ শতক |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | ৬৪.৪ কিলোমিটার (ম্যাপ) |
প্রবেশ মূল্য | ২০ টাকা |
ড্রোন উড়ানো যাবে | না |
এবার চলুন বালিয়াটি জমিদার বাড়ি সম্পর্কে কিছু ইতিহাস জানা যাক।
ইতিহাস
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি ইতিহাস সম্পর্কে স্থানীয় মাধ্যমে এবং ইন্টারনেট ঘেটে যতটুকু জানতে পেরেছি তা হল, প্রায় ১৮ শতেক মাঝামাঝির দিকে একজন লবন বণিক গোবিন্দ রাম সাহা বালিয়াটি জমিদার বাড়ি নির্মান কাজ শুরু করেন।
এই গোবিন্দ রাম সাহা এর উত্তরাধিকারীগন বাংলাদেশে তৎকালীন শিক্ষাখাতে উন্নয়নের জন্য অনে কাজ করেছেন।
আরও: মানিকগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
জমিদার বাড়ী ভ্রমণ
চলুন জমিদার বাড়ি ভ্রমণ শুরু করা যাক। আমরা ঢাকা পল্টন থেকে বাসে করে প্রথমে গাবতলী বাস স্ট্যান্ড যাই। সেখান থেকে এস বি লিংক বাসে চড়ে সাটুরিয়া জিরো পয়েন্টে নামি। সেখান থেকে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা করে সোজা বালিয়াটি জমিদার বাড়ি গিয়ে পৌছাই।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ির বর্তমান অবস্থা
আমরা চলে এসেছি জমিদার বাড়ি। বাসে থাকতেই বেশ কয়েকবার বৃষ্টি হয়েছে। জমিদার বাড়ী পৌছানো মাত্রই আবার শুরু হল বৃষ্টি। জমিদার বাড়ির পাশের রয়েছে ছোট কয়েকটি দোকান। সাথে এখানে একটি খাবারের হোটেল রয়েছে। আমরা দোকানের ছাউনির নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম।
ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছি করোনার কারনে জমিদার বাড়ি বন্ধ রয়েছে। জাবেদ এই নিউজ পাওয়া মাত্রই তার মন খারাপ হয়ে গেলো। বেচারা এর আগেও একবার এই জমিদার বাড়িতে এসেছিল তখনও কি এক কারনে জমিদার বাড়ি বন্ধ ছিল।
জাবেদ এর মন খারাপের আরও একটা কারন হল, এখানে আসার আগে গুগল করে জেনেছিল বালিয়াটি জমিদার বাড়ি খোলা রয়েছে। কিন্তু এসে দেখে বন্ধ!
যাইহোক এখন তো আর কিছুই করার নেই। বৃষ্টি ইতিমধ্যে থেমে গিয়েছে। আমরা জমিদার বাড়ির গেইটের সামনে গেলাম। সেখানে সাইনবোর্ডে হলুদ রঙ দিয়ে বড় করে লেখা রয়েছে “সরকারি বন্ধ”।
আরেকটি সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে:
“The Antiquities Act 1968 (amendment ordinance 1976) এর ১৯ নং ধারা অনুযায়ী এই প্রত্নসম্পদের ধ্বংস, অনিষ্ট সাধন, বিকৃতি, পরিবর্তন, ক্ষয়ক্ষতি করলে, ভেঙ্গে ফেললে এর কোন অংশের উপর কিছু লিখলে বা খোদাই করে কোন চিহ্ন স্থাপন বা দাগ কেটে সৌন্দর্যহানি করলে সর্বাধিক ১ বৎসর পর্যন্ত জেল বা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে।”
— মহাপরিচালক
আরও: ভ্রমণ টিপস
জমিদার বাড়ী কারুকার্য
প্রায় ১৬,৫৫৪ বর্গমিটার আয়তেনর জমিদারবাড়ি উপর ছড়িয়ে রয়েছে ৭টি দক্ষিণমুখী দালান। জমিদার বাড়ির একেবারে সামনে রয়েছে ৪ টি দালান। এগুলো তখন ব্যবসায়িক কাজে ব্যাবহার করা হতো।
এই প্রসাদের ঠিক পেছনের প্রাসাদকে বলা হয় অন্দর মহল যেখানে জমিদার বসবাস করত।
জমিদার বাড়ির প্রবেশ ফটকের দুই পাশে স্থাপিত রয়েছে দুটি সিংহের চমৎকার মূর্তি। সমস্ত জমিদার চত্বর উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা রয়েছে। আমরা উঁকিঝুঁকি দিয়ে তেমন কিছু দেখতে পাইনি।
আমরা গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু ছবি তুললাম। জমিদার বাড়ির সামনে রয়েছে বেশ বড় একটি দীঘি।
মিনি পার্ক
বালিয়াটি জমিদার বাড়ির ঠিক সামনেই রয়েছে মিনি পার্ক। মিনি পার্ক এর কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয় নি।
আরও: ভ্রমণ গাইড
জমিদার বাড়ি দীঘি
জমিদার বাড়ির সামনেই রয়েছে বেশ বড় একটি দীঘি, আমরা হাঁটতে হাঁটতে দিঘির মাথায় চলে এলাম। এখানে ৩ জন লোক জমিদার বাড়ির ছবি তুলছেন।
দিঘির এই পাশ থেকে জমিদার বাড়ি দেখতে চমৎকার লাগে। আমরা কিছুক্ষন দিঘির/পুকুর পাড়ে বসে রইলাম।
আমাদের মত আরও অনেকে এসেছেন জমিদার বাড়ি দেখতে। সবার একই অবস্থা। অনেকে কিছুক্ষন ঘুরে ফিরে মন খারাপ করে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেকে চলে যাচ্ছেন পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি দেখতে। এই জমিদার বাড়ি থেকে পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত।
কিভাবে যাবেন
বালিয়াটি জমিদারবাড়ি ভ্রমণে কিভাবে যাবেন, কি কি দেখবেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারি ভ্রমণ গাইড দেখুন এখানে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি ভ্রমণ গাইড
বালিয়াটি জমিদার বাড়ী ভ্রমণ টিপস
বালিয়াটি ভ্রমণের কিছু টিপস দেয়া হল:
- যে কোন ঋতুতেই আপনি বালিয়াটি ভ্রমণে যেতে পারেন।
- সন্ধার পর এখানে ভ্রমণ না করাই ভালো।
- প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করবেন না।
- ভিতরে প্রস্রাব বা পায়খানা করার মতো জঘন্য কাজ করবেন না।
- বৃষ্টির সময় সঙ্গে ছাতা রাখুন অথবা রেইনকোট রাখুন।
- ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের নিচে বসবেন না।
- ক্যামেরা, মানিব্যাগ যাবতীয় জিনিস নিজের সঙ্গে রাখুন।
- প্রবেশের সময় টিকিট সংগ্রহ করুন।
আমাদের বালিয়াটি ভ্রমণ শেষ। আমাদের এখন পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি ভ্রমণে যাওয়ার সময় হয়েছে। আমরা চলে যাচ্ছি কিন্তু আপনি এখানে ভ্রমণ করতে ভুলবেন না কিন্তু।
আপনার ভ্রমণ হোক নিরাপদ এবং আনন্দময়য়। আল্লাহ হাফেজ।
ফেসবুক: Kuhudak