সুন্দরবন ভ্রমণ ও বাগের হাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ ট্যুর। সঠিক তারিখ টা ঠিক মনে নেই। তবে, আনুমান করা যাচ্ছে… ২০১২ সাল হবে। আমি গিয়েছিলাম সুন্দরবন ট্যুরে। বইয়ে পড়েছি এবং লোকমুখে শুনেছি সুন্দরবন দেখতে অনেক সুন্দর। এক প্রজাতির গাছ আছে সুন্দরবন এ তার নাম’ই নাকি রাখা হয়েছে সুন্দরি নামে!
সুন্দরবন ভ্রমণ – খুলনা, বাংলাদেশ
ভ্রমণ স্থান | সুন্দরবন |
ধরন | দর্শনীয় স্থান (বনভূমি, প্রাকৃতিক) |
অবস্থান | সুন্দরবন, খুলনা, বাংলাদেশ |
আয়তন | ১,৩৯,৫০০ হেক্টর (৩,৪৫,০০০ একর) |
স্থাপিত | ১৯৯১ |
কর্তৃপক্ষ | বাংলাদেশ সরকার (৬৬%), ভারত সরকার (৩৪%) |
সুন্দরবন এর চারপাশে ঘিরে যে সাগর বা নদী রয়েছে সেটার পানি নাকি লবন দিয়ে ভরা। মানে লবণাক্ত পানি বা নোনা পানি। সুন্দরবন এ রয়েছে গহিন জঙ্গল।
জঙ্গল তো হবেই, সুন্দরবন এর নাম এর অর্থ ই যে সুন্দর জঙ্গল ! এ জাতিয় নানা চমৎকার প্রদ কথা শুনতে শুনতে আমার আগ্রহ জাগতে শুরু করল সুন্দরবন সামনে থেকে দেখার প্রতি। সুন্দরবন এর মাটিতে পা রাখার প্রতি।
সুন্দরবন পরিচিতি
সুন্দরবন ইংরেজিতে Sundarbans । সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম।
গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত।
সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। সুন্দরবন ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। বনভূমিটি, স্বনামে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত।
জরিপ মোতাবেক ৫০০ বাঘ ও ৩০,০০০ চিত্রা হরিণ রয়েছে এখন সুন্দরবন এলাকায়। ১৯৯২ সালের ২১শে মে সুন্দরবন রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
আরও: ট্যুর প্যাকেজ
নামকরণ
বাংলায় সুন্দরবন-এর আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি। সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে, যা সেখানে প্রচুর জন্মায়। অন্যান্য সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এরকম হতে পারে যে, এর নামকরণ হয়তো হয়েছে “সমুদ্র বন” বা “চন্দ্র-বান্ধে (বাঁধে)” (প্রাচীন আদিবাসী) থেকে।
তবে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে সুন্দরী গাছ থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে।
আশাকরি উপরের সংক্ষিপ্ত বর্ননায় সুন্দরবন সম্পর্কে ধারনা পেয়েছেন। সুন্দরবন নিয়ে আমার লেখা বর্নানা তো থাকছেই নিচে। সুন্দরবন নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে উইকিপিডিয়া থেকে ঘুরে আসতে পারেন। 🙂
ট্যুর প্ল্যানিং
সুন্দরবন ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানিং টা হয়েছে হুট করেই। অবশ্য আমি যত জায়গায় ই ভ্রমনে গিয়েছি। সবগুলোর প্ল্যানিং ই হয়েছে হুট করে। যেমন আমি দুপুরে লাঞ্চ করছি আর বন্ধুর মুখে তার খাগড়াছড়ি যাওয়ার গল্প শুনছি। খাওয়া শেষ করেই আমি বেরিয়ে পরেছি খাগড়াছড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে!
আবার কলেজে গিয়ে বন্ধুর সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে… তো বাসায় এসে ব্যাকপ্যাক নিয়ে বেরিয়ে পরেছি কক্সবাজার এর উদ্দেশ্যে! এরকম ভাবে প্রায় যত জায়গায় আমি ঘুরেছি সবগুলোর কোনটাই আগে থেকে প্ল্যানিং ছিল না।
আমি যখন কলেজে পড়তাম। তখন কলেজে আমরা ২টা টীম ছিলাম। যারা প্রায়শই বিকেলবেলা ঘুরতে বের হতাম ভিন্ন ভাবে মিশন নিয়ে! কিরকম? ব্যাপারটা একটু খুলে বলিঃ যেমন, আমাদের কলেজ ছিল কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে। সুতরাং কলেজ ছিল পাহাড় ঘেরা। আমরা ২ টা টীম করেছিলাম।
আরও পড়ুনঃ জাফলং ভ্রমণ, সিলেট
টীম -১ এর কাজ ছিল… একটি নির্ধারিত বস্তুকে ম্যাপ একে দূরে রেখে আসা। টীম -২ এর কাজ ছিল সেই আঁকা ম্যাপ কে ফলো করে বস্তুটিকে খুজে বের করে আনা। ইন্টারেস্টিং না ব্যাপার টা? এরকম অনেক চমকপ্রদ বিষয় আছে যেগুলো আমরা কলেজে থাকা কালীন করেছিলাম। এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আরেকদিন লিখব।
আমি তখন সবেমাত্র কলেজের হোস্টেল থেকে বেরিয়ে এসে মেসে উঠেছি। একরাতে মেসে শুয়ে শুয়ে ভাবছি। সুন্দরবন এর কথা। পরক্ষনেই শোয়া থেকে উঠে বসে আমার রুমমেট সালাউদ্দিন এর সাথে এ নিয়ে আলোচনা করলাম।
আমার ভিতরে কেমন যেন সুন্দরবন দেখার প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেলো। ল্যাপটপ টা ওপেন করলাম। গুগল এ গিয়ে সার্চ করলাম সুন্দরবন। গুগল এর ইমেজ ট্যাব এ ক্লিক করলাম। তারপর একনাগারে ঘন্টা খানেক ইমেজ গুলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলাম। আমার সুন্দরবন এর প্রতি ভালো লাগা বেড়েই চলল।
প্ল্যানিং বাস্তবায়ন এর পুর্ব প্রস্তুতি
সকাল ১১ঃ০৭ মিনিট। ঘুম থেকে উঠেই সোজা চলে গেলাম আমার প্রানের দোস্ত কাজী মোফাজ্জেল এর কাছে। ও আর আমি একই কলেজে পড়তাম। ও হোস্টেল থেকে আমার আগে বেরহয়েছে। উঠেছে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এর ভিতর একটি অনাবাসিক মেসে। আর আমি উঠেছি ওর খুব কাছে ই একটি মেসে।
আমার মেসের নাম ছিল ফয়সল ভিলা। এটা ক্যান্টনমেন্ট এর কাছেই।
মেস নিয়েও আমার বেশ মজার অভিজ্ঞতা আছে। সময় পেলে অবশ্যই ব্লগে লিখার চেষ্টা করব।
ওর মেসে গিয়ে ওকে পেলাম। ওর খোজ খবর জিজ্ঞাসা করেই সুন্দরবন নিয়ে আমার আগ্রহের কথা বললাম। গতরাতের কথা ও বললাম। সব শুনে মুফাজ্জেল আমাকে বলল ঠিক আছে যাবি তবে ঘুরতে গেলে তো টাকা লাগবে। টাকা আছে সাথে। আমি কিছুক্ষন চুপ করে থাকলাম। ও এবার বলল…
কত টাকা আছে সাথে?
১৫০০ টাকা।
এই টাকায় কিভাবে যাবি!
তারপর ও কিছুক্ষন চুপ করে থাকল। পরক্ষনে বলল, ঠিক আছে আমার কাছে কিছু টাকা আছে। বাকিটা দেখ ম্যানেজ করতে পারিস কিনা। আমি ভিতরে ভিতরে আনন্দ বোধ করলাম। মোফাজ্জেল অনেকটা আমার ট্যুর গার্ডিয়ান এর মত। বুজলেন না? মানে, আমি যত জায়গায় ঘুরতে গিয়েছি কোনটা ই আমার পরিবার এর কেউ জানত না!!
মোফাজ্জেল এর সাথে ই আমার সব আলোচনা হত। টাকা পয়সা মেনেজ করা থেকে শুরু করে সব সময় ও আমার পাশে থাকত। আমি সবসময় একটা বিষয় ই বিশ্বাস করতাম “ইচ্ছে থাকলে টেকা পয়সা কোন ব্যাপার না”
আরও পড়ুনঃ চিড়িয়াখানা ভ্রমণ – মিরপুর, ঢাকা
মোফাজ্জেল এটা খুব ভালো করেই জানে যে, আমি যদি কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য একবার মন স্থির করি। আমি সেখানে গিয়ে ই ছাড়ি। যতই টাকা পয়সা বা অন্য যেকোন সমস্যা ই থাকুক না কেন।
বাই দা ওয়ে, আমি যত জায়গায় ই ঘুরতে গিয়েছি সবগুলো ই ছিলো আমার কাছে অপরিচিত জায়গা। আমি কখনো সেখানে আগে যাইনি! মানে, আমার কাছে সম্পুর্ন এক নতুন অজানা জায়গা। আর আমার এটা ই ভালো লাগত।
ঘুরতে যাওয়ার সময় আমার সাথে থকতো একটা ম্যাপ। আমার স্টাডি করা কিছু আইডিয়া। আমি এই ঘুরতে জাওয়া কে একটা নাম দিয়েছিঃ The Unknown Discover ।
মোফাজ্জেল এর কাছ থেকে টাকা আর ওর নকিয়া ৬৬০০ মোবাইল নিয়ে আমার মেসে চলে আসলাম। বাকি টাকা টা মোহাইমিনুল যোগার করে দিল। মোহাইমিনুল সবসময় ই আমাকে ভিবিন্ন কাজে উৎসাহ যোগাত। টাকা পয়সার ব্যাপারে ও আমাকে হেল্প করত। এবার ও করল।
দুপুরে গোসল করে লাঞ্চ করে নিলাম। এবার ব্যাকপ্যাক গুছানোর পালা। কয়েটা শার্ট প্যান্ট, তোয়ালে, পারফিউম, মোবাইল চার্জার, আমার নোট খাতা, ম্যাপ, টুথব্রাশ ইত্যাদি ব্যাগ এ ঢুকিয়ে নিলাম।
জিন্স প্যান্ট এর সাথে কেস আর শার্ট পড়ে নিলাম। মেস ম্যানেজার কে ডেকে মিল অফ করে দিলাম অনির্দিষ্ট কালের জন্য। ম্যানেজার আমার কথা শুনে হাসলেন। যাইহোক বিসমিল্লাহ্ বলে বাসা থেকে বের হলাম সুন্দরবন এর উদ্দেশ্যে।
ঢাকায় একরাত
কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন এ এসে ঢাকার জন্য এটা টিকেট কাটতে গেলাম। আমকে বলল ট্রেন এর টিকিট নাকি শেষ! এরপর রাত ৮টার দিকে যেটা আসবে সেটার টিকেট কাটার জন্য বলছে। কিন্তু কথা হল, আমি তো এখান থেকে ঢাকায় পৌছে আবার রাতের ট্রেনেই খুলনা যাবো।
এখন যদি এখান থেকে ই রাতের ট্রেনে যাই তাহলে ঢাকায় পৌছাতে পৌছাতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। আর আমার খুলনার ট্রেন টা ও মিস হয়ে যাবে।
টিকেট কাউন্টারে বললাম, এই ট্রেনে যাওয়ার কি কোন উপায় আছে? আমাকে তারা বলল, আপনি চাইলে দাড়িয়ে যেতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে ও কিন্তু আপনাকে টিকেট কাটতে হবে এবং সম্পুর্ন টিকিটের টাকা দিতে হবে।
কি আর করা… খুলনার ট্রেনের কথা ভেবে টিকিট কেটে নিলাম। সময় তখন বিকাল ৪ টা এর মত বাজে। প্রায় দের ঘন্টা অপেক্ষা করার পর ট্রেন আসল কিন্তু একি, ট্রেনে যে মানুষ আর মানুষ! এতো মানুষ, যে ট্রেন ই ঠিক মত দেখা যাচ্ছে না! বহু কষ্টে ট্রেনে উঠলাম ঠিক কিন্তু বসার তো দুরের কথা দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া ই ভার।
যাইহোক কোন রকম ভাবে একপাশে দাড়াতে পারলাম তাও অনেক ঠেলে ঠুলে।
ট্রেন চলতে লাগল। একের পর এক স্টেশন এ দাঁড়াচ্ছে আর লোকজন উঠছে হু হু করে। তখন কি যে বিরক্ত লাগছিল নিজের কাছে। আরো বেশি বিরক্ত আর টেনশন হচ্ছিল ট্রেন চলার গতি দেখে। যাকে কচ্ছপ গতি বলে।
আমাদের ট্রেন যখন ঢাকার কাছাকাছি তখন, এক ভদ্রলোক আমাকে তার সীট এর হাতলে বসার সুযোগ করে দিলেন। কাধে ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার পা অবশ হয়ে গিয়েছিল। হাতলে বসে দুনিয়ার সব সুখ খুজে পেলাম আমি।
আরও পড়ুনঃ তাজমহল সোনারগাঁও ভ্রমণ
এভাবে ই ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পৌছালো ট্রেন।
রাত ১২ঃ২৭!
ট্রেন থেকে বের হয়ে ই একটা পানির বোতল নিয়ে পানি খেলাম। তারপর সোজা চলে গেলাম টিকিট কাউন্টারে। খুলনার ট্রেন নাকি ইতিমধ্যে ই স্টেশন ছেড়ে চলে গিয়েছে! মনটাই খারাপ হয়েগেলো। একটা রিক্সা নিয়ে ছুটে গেলাম বাস স্টেশন এ। শুনেছি কপালে যেদিন খারাপ লেখা থাকে সেদিন নাকি, সবদিক দিয়ে ই খারাপ হয়। বাসের কাউন্টার গুলো বন্ধ। কয়েকজন কে জিজ্ঞের করে জানতে পারলাম।
আজ রাতে খুলনার শেষ বাসটি ছেড়ে চলে গিয়েছে। আগামী কাল ছাড়া আর কোন বাস খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে না।
বাধ্য হয়ে ফিরে আসলাম হোটেল এর খোঁজে। স্টেশন এর পাশে ই কিছু হোটেল পেলাম মোটামুটি মানের। ২ স্টার বলা যায়। একটা হোটেলের রিসিপসনে গিয়ে একরাতের জন্য একটি রুম ভারা নিলাম। ২য় তলায় আমার রুম । রুম এর চাবি নিয়ে ২য় তলায় উঠে আমার রুমে ঢুকলাম।
যতটা খারাপ হবে ভেবেছিলাম রুম ততটা খারাপ না। রুমে এসি নেই ঠিক তবে, স্মার্ট টিভি থেকে শুরু করে সব কিছুই ছিল। একে তো ট্রেনে দাড়িয়ে এসেছি। তারউপর আবার ট্রেন মিস, বাস মিস! সব কিছু মিলিয়ে খুব ক্লান্তি বোধ করছিলাম। জামা কাপড় ছেড়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গোসল করে নিলাম। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এসে ডিনার এর জন্য হোটেল থেকে বের হলাম। রাত তখন আনুমানিক ১ঃ৩৮ এর মত বাজে।
খাবারের প্রায় হোটেল গুলো ই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেক খুঁজাখুঁজির পর একটা পেলাম। ডিনার শেষে রুমে ফিরে এসেই ফ্রেশ একটা ঘুম দিলাম।
জার্নি বাই বাস
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে গেলাম। একটা রেস্টুরেন্ট এ ঢুকে সকালের নাস্তা করে নিলাম। তারপর সোজা গাবতলি বাস স্ট্যান্ড। গাবতলি আমার কাছে নতুন এক জায়গা। আগে কখনো আমি এখানে আসিনি।
হানিফ পরিবহনে একটা টিকিট কাটলাম খুলনার জন্য। বাস ছাড়বে দুপুর ১ঃ৩০ মিনিটে। ঘড়িতে সময় বাজে তখন ১১ঃ ৫৫। কাউন্টারে বসে আছি।
একটা ছোট্র ছেলে বসে আছে আমার পাশে। সময় কাটানোর জন্য ওর সাথে গল্প শুরু করলাম। ওর নাম রফিক। বাসা খুলনার কাছে কি যেন একটা জায়গার নাম বলল। আমার ঠিক মনে নেই। ওর বাবা ও আছে ওর সাথে। রফিক ৪র্থ শ্রেনিতে পড়ে।
আরও পড়ুনঃ জজ নগর (Judge Nagar) ভ্রমণ – শামীমা রাতুল শিশু পার্ক ও মিনি জো
ছেলেটা বেশ ভালোই। আমাকে খুলনা সম্পর্কে অনেক কিছু জানালো। কথা চলতে থাকল ওর সাথে।
আমাদের বাস ছেড়েছে ১ঃ৪০ এর দিকে। জানালার পাশে আমার সিট। টিকিট কাটার সময়ই বলেছি যাতে আমাকে বাসের মাঝামাঝি এবং হাতের বা দিকে জানালার পাশে সিট দেয়। ওনি সেটা ই করেছেন।
বাসে উঠার আগে অবশ্য দুপুরের খাবার খেয়ে নিয়েছি। সাথে শুঁকন খাবার আর পানি নিয়েছি। এটা লং জার্নির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাসে উঠার আগে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নেয়া জরুরি। এতে আপনার বাস ভ্রমন হবে আরাম দায়ক। না হলে ভিতর থেকে চাপ আসলে কেস্কি মারা ছাড়া উপায় থাকবে না। ভ্রমন হবে বিদঘুটে।
বাস চলছে। আমি কানে হেডফোন লাগিয়ে পুরন দিনের বাংলা এবং হিন্দি গান শুনছি। যে কোন জার্নিতে আমার পুরন দিনের গান অনেক ভালো লাগে। সময় টা কে অনেক উপভোগ্য করে তোলে। বাসের জানালা কাচের ভিতর দিয়ে বাহিরের দৃশ্য উপভোগ করছি। আর বাস চলছে শাঁ শাঁ করে।
মাঝপথে একবার বিরতি দিয়ে আবার বাস চলতে থাকল। বিরতিতে সবাই ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিল যারযার মত। আমিও করলাম।
রাত ১১ এর উপরে। আমার হাতের বা দিকে ষাট গম্বুজ মসজিদ রেখে বাস এগিয়ে চলল খুলনার সর্বশেষ বাস স্টেশন এ। রাতে বাস এর টিপ শেষে শহর থেকে দূরে এখানে এসেই বাসগুলো রাখা হয়। খুলনা শেষ বাস স্ট্যান্ড এ বাস পৌছাতে পৌছাতে বাস প্রায় খালি হয়ে গিয়েছে।
রফিক ইতিমধ্যে তার বাবার হাত ধরে বাস থেকে নেমে পরেছে। সর্বশেষ বাস স্ট্যান্ডে এসে আমারা ছিলাম মাত্র ৪ জন। এর ভিতর বাস ড্রাইভার ১ জন, হেল্পার ১ জন আর আমরা বাস যাত্রী ২ জন। বাস কন্ট্রাক্টর আগেই নেমে পড়েছে।
যাক অবশেষে আমি খুলনায় পৌছালাম।
খুলনায় রাত্রি যাপন
বাস থেকে নেমেছিতো ঠিক কিন্তু একি…! এ আমি কোথায় আসলাম!! চারদিকে শুধু অন্ধকার। কোন লোকালয় নেই। জনমানব শূন্য। প্রথমে একটু ভরকে গিয়েছিলাম। পরক্ষনে ভালো করে তাকিয়ে দেখি অনেক দূরে একটা লাইট জ্বলছে। আলো লক্ষ্য করে এগিয়ে গেলাম।
এরকম রাত বিরাতে আমার চলতে তেমন ভয় লাগে না। এমনি একটা রাতে পৌছে ছিলাম খগড়াছড়ি তে। ওই খানে চারপাশে আলো ছিল। কারন ওটা ছিল একটা ছোট খাটো বাজার। কয়েকটা দোকান খোলা ছিল। কিন্তু কোন হোটেল দেখতে পাচ্ছিলাম না।
আমার রাতে থাকার জন্য একটা হোটেল দরকার ছিল। আশেপাশে কোথাও হটেল আছে কিনা সেটা জানার দরকার ছিল। কাউকে জিজ্ঞেস করতে যাব ভেবে একটা দোকানের দিকে যাওয়া শুরু করেছিলাম মাত্র। আমি থমকে দাড়িয়ে গেলাম।
আমি একা।
আমার সাথে টাকা পয়সা ছিল। মোবাইল ছিল। ছিল ল্যাপটপ ও। আরো অনেক কিছু। রাত তখন ১ টার উপরে বাজে। এতো রাতে একটা ছেলেকে পেয়ে তার কাছ থেকে সব কিছু নিয়ে নেয়া ব্যাপার না। তাছাড়া আমি তো কাউকে চিনিও না। কোন লোকটা ভালো?
এরকম পরিস্থিতিতে আমার স্টাডি বলেঃ প্রথমে দেখো কোন হোটেল আছে কিনা। হোটেল না পেলে দেখো কোন ডাক্তার এর চেম্বার বা দোকান খোলা আছে কিনা। কারন ডাক্তার ৯৫% ভালো লোক হয়।
আমি তাদের পেশার কথা বলছি না কিন্তু! আমি ও তাদের কে মাঝে মাঝে সুযোগ পেলে কষাই বলে ডাকি। যদিও আমার পরিবারে আমার বাবা এবং মেঝো ভাই ডাক্তার।
আলোর দিকে এসে দেখি একটা ছোট্র ভাতের দোকান, তার ভিতরে ২ জন লোক বসে আছে। একজন এর বয়স ৫০ এর উপরে হবে। সে টাকা গুনছে। দেখে মনে হল সারাদিন এর ইনকাম এর হিসাব করছে। আরেকজন পিচ্ছি ছেলে বসে আছে। বয়স ১০-১৫ এর মত হবে।
আমি কাছে যেয়ে বললাম। খাবার এর কি কিছু আছে? টাকা গুনতে গুনতে লোকটা বলল এই ওনাকে খাবার দে। আমাকে বলল, আপনি বসেন।
পিচ্চি ছেলেটা বলল, কি দিব…? মাছ, মুরগি, ভর্তা, ডাল… কি দিব?
হোটেল এর মুরগির উপর আমার ভরসা কম। তাই বললাম মাছ আর ডাল দাও। ভর্তা আমার ভালো লাগে না।
আরও পড়ুনঃ সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর ভ্রমণ – নারায়ণগঞ্জ
খেতে খেতে পিচ্চিকে জিজ্ঞেস করলাম এখানে থাকার হোটেল আছে? হ্যাঁ আছে তো। আমি খাওয়া বন্ধ করে ওকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায়? কত দূর এখান থেকে। বেশি দূরে না… হাইটা ই জাইতে পারবেন। ওই যে দেখেন না লাইট টা জলতাছে। ওইটা ই হোটেল। আমি ঘড় ফিরিয়ে দেখলাম, আরে তাই তো । আমি তো খেয়াল ই করিনি। খাবার হোটেল থেকে খুব ভালো করেই দেখা যাচ্ছে লাইট এর আলো।
আমি খাওয়া শেষ করে টাকা দিয়ে আবার আলোর পথে ছুটলাম।
৩ তলা বিশিষ্ট একটা আবাসিক হোটেল। হোটেল টা দেখে মন হল বেশিদিন হয় নি এটার বয়স। হোটেল এর সামনে গিয়ে দেখি, গেটে কোন দারওয়ান নেই। আমি গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম।
রিসিপসনে লাইট জ্বলছে। কিন্তু কেউ নেই!
আমি কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে তারপর সোফায় বসলাম। প্রায় ৭ মিনিট পর একজন মধ্যবয়স্ক লোক আসল। আমাকে দেখে বলল কোথা থেকে এসেছেন। ঢাকা থেকে। হোটেল এ থাকব ১ রাত।
লোকটি আমাকে হোটেল ভাড়ার একটা চার্ট দিলেন এবং কতদিন থাকব জিজ্ঞেস করলেন। সাথে আমাকে একটা ফর্ম দিলেন পুরন করার জন্য।
আমি হোটেল এর টাকা দিয়ে রুম এর চাবি নিয়ে ২য় তলায় চলে আসলাম। আমার রুম এর সাথে একটা বারান্দা ও আছে। রুমে কোন টিভি নেই। বাথরুম এর ঝর্না নষ্ট। আরো কত হাবি যাবি। আমি কোন রকমে গোসল করে ঘুম দিলাম। মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রাখলাম সকাল ৬টার। খুব ভোরে উঠতে হবে।
খানজাহান আলীর মাজার
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। মোবাইলে এখনো এলার্ম বাজে নি। কারন এখন বাজে ৫ঃ৫৫ । মোবাই এর এলার্ম টা বন্ধ করে বাথরুম এর ঢুকলাম। ফ্রেশ হয়ে বেরহয়ে এসে বারান্দায় গেলাম। বারান্দা থেকে দেখা যাচ্ছে প্রায় কয়েকশ বাস সারিবদ্ধ ভাবে দাড়িয়ে রয়েছে।
সকালের ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশ আমার খুব ভালো লাগে। যদিও সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারি না। মাঝে মাঝে আমার এতো দেরি করে ঘুম থেকে উঠা দেখে মনে হয়। আমার জন্ম নেয়ার কথা ছিল অ্যামেরিকাতে কিন্তু ভুলে আমি বাংলাদেশ এ চলে আসছি। হাহা…
আরও পড়ুনঃ ভ্রমণের সেরা ২৫টি টিপস
সকাল সকাল রুম চেকাউট করে চলে আসলাম। উদ্দেশ্য প্রথমে যাব খানজাহান আলীর মাজার। রিক্সা ঠিক করলাম। রিক্সা ঠিক করার পিছনেও আমার অভিজ্ঞতা ব্যাবহার করি। থাক, সেটা না হয় আরেকদিন বলব। কোন একটা ব্লগে ।
দাড়ি ওয়ালা মধ্যবয়স্ক রিক্সা ওয়ালা আমাকে প্রথমে নিয়ে যাবে খানজাহান আলীর মাজার এ। এর পর ষাট গম্বুজ মসজিদ এ। ভাড়া ও ঠিক হয়ে গেলো।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ পরিচিতি
খানজাহান আলীর মাজার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ননা
হযরত খানজাহান আলি (র.) (জন্ম ১৩৬৯ – মৃত্যু অক্টোবর ২৫, ১৪৫৯) ছিলেন একজন মুসলিম ধর্ম প্রচারক এবং বাংলাদেশের বাগেরহাটের স্থানীয় শাসক।
খানজাহানের প্রথম স্ত্রীর নাম সোনা বিবি। কথিত আছে সোনা বিবি ছিলেন খানজাহানের পির নুর-কুতুবুল আলমের একমাত্র কন্যা।
খানজাহানের দ্বিতীয় স্ত্রী রূপা বিবি ওরফে বিবি বেগনি ধর্মান্তরিত মুসলমান ছিলেন। খানজাহান আলি তাঁর দুই স্ত্রীর নাম অনুসারে সোনা মসজিদ এবং বিবি বেগনি মসজিদ নামে মসজিদ নির্মাণ করেন।
হযরত খানজাহান আলি (র.) অক্টোবর ২৫, ১৪৫৯ তারিখে (মাজারশরিফের শিলালিপি অনুযায়ী ৮৬৩ হিজরি ২৬শে জিলহাজ) ষাট গম্বুজ মসজিদের দরবার গৃহে এশার নামাজ রত অবস্থায় ৯০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
প্রতি বছর চৈত্র মাসের পূর্ণিমার সময় খান জাহান আলির মাজারে ওরস অনুষ্ঠিত হয় এবং লক্ষাধিক লোক তাতে সমবেত হয়। বর্তমানে মোড়ল বংশ তারই সবচেয়ে নিকটবর্তী বংশধর হিসেবে খুলনা ,রামপালসহ বিভিন্ন দেশ বিদেশ এ বসবাস করছে।
খানজাহান আলীর মাজার ঘুরে দেখা
রিক্সায় যেতে যেতে রিক্সার মামা টি আমাকে অনেক প্রশ্ন করলেন। যেমন, আমি কি করি, কোথায় থাকি, কেন এখানে এসেছি ইত্যাদি ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ বিশ্ব পরিচিতি
আমি এতো দূর থেকে ঘুরতে এসেছি শুনে তিনি অনেক আনন্দিত হলেন। আমাকে খুলনা সম্পর্কে, খানজাহান আলীর মাজার সম্পর্কে নানা কথা বলতে থাকলেন। আমি ও মন দিয়ে শুনতে থাকলাম। ভালোই লাগছিল ওনার কথা গুলো।
খানজাহান আলীর মাজার এর কাছাকাছি এসে আমাকে একটা পরামর্শ দিলেন। বললেন, অনেকেই এই মাজারে ঘুরতে আসে। আর এখানে এসে ধোঁকাবাজির খপ্পরে পরেন।
মাজারে ঢুকার সময় ২পাশে দোকান রয়েছে। তারা অনেকটা জোর করে মানুষের কাছে মোমবাতি, আগরবাতি, গোলাপজল ইত্যাদি বিক্রি করে। তাই আমাকে বললেন, ওনি আমাকে তার আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দিবেন যদি প্রয়োজন হয় তাহলে। আর বললেন, আমি যেন কারো কথার উত্তর না দেই। আমি বললাম ঠিক আছে।
রিক্সা ওয়ালা মামা তার রিক্সা বাহিরে রেখে আমার সাথে মাজারে চললেন।
সিঙ্গাইর মসজিদ
মাজারে প্রবেশ করলাম। ওনার বর্ননা মত দেখি সবই মিলে যাচ্ছে।
খানজাহান আলীর মাজার একটা কুমির আছে। কিন্তু আমি গিয়ে সেটা দেখতে পাই নি। আমার সাথে যে মোবাইটা ছিল সেটা দিয়ে আমি কিছু ছবি তুললাম। মামা আমার কিছু ছবি তুলে দিলেন। তারপর আমি জুতা খুলে মাজারের ভিতর প্রেবশ করলাম।
যিয়ারত করলাম। বেরহয়ে আসলাম। বেশ কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করার পর আমরা চলে আসলাম মাজার থেকে।
আরো পড়ুনঃ কক্সবাজার ভ্রমণ
ষাট গম্বুজ মসজিদ
আমাকে নিয়ে মামা আবার রিক্সা চালানো শুরু করলেন। এবার আমরা যাবো বাগের হাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ। অনেকক্ষণ রিক্সা চালানোর পর আমরা ষাট গম্বুজ মসজিদ এ এসে পৌছালাম। ষাট গম্বুজ মসজিদ এ ভিতরে প্রবেশ এর জন্য টিকেট এর ব্যাবস্থা রয়েছে।
আমি মামাকে বললাম চলেন ভিতরে যাই। ওনি প্রথমে রাজি হননি। পরে রিকোয়েস্ট করাতে রাজি হলেন। আমি ২ টা টিকিট কাটলাম। আমরা ভিতরে প্রবেশ করলাম। কি এক অপরূপ সুন্দর ই না এই মসজিদ। সুবহানআল্লাহ।
আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি মসজিদ এর ভিতরে এবং বাহিরে ঘুরে ঘুরে দেখলাম। মসজিদ এর পিছনে একটা দিঘী আছে। সেটার পাড়ে গিয়ে কিছুক্ষন বসলাম।
মসজিদ এ কিছু তাবলীগ এর মানুষ ছিল। তারা সকাল এর নাস্তা করছিল। আমাকে তাদের সাথে খাওয়ার জন্য বলেছিল কিন্তু ঘুরাঘুরির দিকে মন পড়ে থাকাতে তাদের সাথে নাস্তা করতে পারি নি।
বাগের হাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ নিয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ননা
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটির গায়ে কোনো শিলালিপি নেই। তাই এটি কে নির্মাণ করেছিলেন বা কোন সময়ে নির্মাণ করা হয়েছিল সে সম্বন্ধে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
তবে মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী দেখলে এটি যে খান-ই-জাহান নির্মাণ করেছিলেন সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ থাকে না। ধারণা করা হয় তিনি ১৫শ শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেন। এ মসজিদটি বহু বছর ধরে ও বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিল।
পাথরগুলো আনা হয়েছিল রাজমহল থেকে। এটি বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের একটির মধ্যে অবস্থিত; বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো এই সম্মান প্রদান করে।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা ট্রাভেল ব্লগ সাইট এর লিস্ট
অনেক সময় নিয়ে ঘুরঘুরির পর আমরা ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসি।
এবার মামা আমাকে নিয়ে যাবেন বাস স্ট্যান্ড এ। যেখান থেকে বাসে করে মংলা যেতে হবে। মংলা থেকে লঞ্চে করে সুন্দরবন।
বাস স্ট্যান্ড এসে রিক্সা মামা আমাকে নামিয়ে দিয়ে গেলেন। আমি ভাড়ার সাথে কিছু টাকা টিপ্স হিসেবে তাকে দেই। সে খুব খুশি হয়।
সুন্দরবন ট্যুর
বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসে চড়ে চলে আসলাম মংলা। সময় লাগল প্রায় দের ঘন্টার মত। বাস থেকে নামতে যাবো। কয়েকজন এসে রীতিমত টানাটানি শুরু করে দিল। চলেন আমার ট্রলারে… আরেকজন বলছে চলেন আমার লঞ্চে।
আমি পাশকাটিয়ে চলে আসলাম।
প্রচন্ড রৌদ্র। আশেপাশে বেশ কিছু দোকানপাট রয়েছে। আমি দুপুরের লাঞ্চ সেরে নিলাম। লাঞ্চ করতে করতে যতটুকু বুজলাম এখানে আমার মত কেউ একা আসে না।
দলবল নিয়ে আসে। কেউ ফ্যামিলি নিয়ে আসছে, আবার কেউ বন্ধু বান্ধব নিয়ে আসছে। হইহুল্লোর করছে। আবার অনেকে গরমে ইংরেজি V এর মত পা ছড়িয়ে বসে আছে।
আমি লাঞ্চ শেষ করে হাটতে হাটতে মংলা ঘাট এ চলে আসলাম। বাস থেকে যেখানে নেমেছি এটা তার থেকে বেশি দূরে নয়। আজকে আকাশ ভালো ই মনে হচ্ছে।
বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। লোকজন আসছে আর ট্রলার, লঞ্চ এ করে সুন্দরবন এর উদ্দেশ্যে আনন্দ করতে করতে ছুটে যাচ্ছে। এখানে একটা আলাদা ব্যাপার রয়েছে। যেমন, লোকাল ভাড়া নেয়ার কোন সিস্টেম নেই।
সুন্দরবন ভ্রমণ
আপনি একা হোন আর দলগত হউন না কেন… আপনাকে লঞ্চ বা ট্রলার রিজার্ভ ভাড়া নিতে হবে।
আমি তো আবার একা। লঞ্চ ভাড়া অনেক বেশি। আর একটা লঞ্চে যাত্রী ১ জন মানে আমি একা। ব্যাপারটা কেমন বেশি রাজকীয় হয়ে যায় না।
আরো পড়ুনঃ জজ নগর পার্ক ও মিনি জো
একটা ট্রলার এর কাছে গেলাম। দেখি বাপ বেটা দুইজন ই খুটি নাটি কি বিষয় নিয়ে যেন কাজ করছে। আমাকে দেখে বলল যাবেন? বললাম হ্যাঁ যাবো। ভাড়া কত? ১৪০০ টাকা। কম কত। কম নাই!
কিছুক্ষন কথা বলে বুজলাম ভাড়া কম হবার নয়। এদিকে সময় ও চলে যাচ্ছে। রাজি হয়ে গেলাম…
আমাকে বলল, সাথে শুকনো খাবার আর পানি নিয়ে নেন। সমুদ্রের পানি নোনা আর ওইখানে যে পানি পাওয়া যায় তার দাম অনেক বেশি। আমি পানি আর শুঁকনো কিছু খাবর নিয়ে নিলাম। ট্রলার ছেড়ে দিল।
দুই পাশে লোকালয় রেখে একটা নালার ভিতর দিয়ে আমাদের ট্রলার এগিয়ে চলল। কিছু দূর যাওয়ার পর বড় নদী তে চলে আসল আমাদের ট্রলার। আমি ট্রলার এর ছাদে উঠে আসলাম। প্রচন্ড রৌদ। আমাকে একটা ছাতা দেয়া হল। কিছুক্ষন চলার পর ট্রলার বা দিকে মোর নিল।
প্রথম সুন্দরবন এর দেখা
প্রায় ১ ঘন্টার মত চলার পর ছোট ছেলেটি আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে দেখাল… ওই যে দেখেন কিছু জায়গা কালো দেখা যাচ্ছে। ওইটা ই সুন্দরবন। আমি ও দেখলাম। অনেক দূরে একটা জঙ্গল দেখা যাচ্ছে। ওই তো সুন্দরবন!
আমার একটা স্বপ্ন পুরন হবার সময় চলে আসছে। বইয়ের পাতা আর কম্পিউটার এর স্কিন এ দেখা সেই সুন্দরবন আমার চোখের সামনে।
আরও পড়ুনঃ চিড়িয়াখানা ভ্রমণ – মিরপুর, ঢাকা
এখন আর এক পাশে কোন লোকালয় দেখা যাচ্ছে না। শুধু পানি আর পানি। আর অন্য পাশে সুন্দরবন।
আমি ট্রলার এর ছাদ থেকে নিচে নেমে আসলাম। হাত দিয়ে পানি নিলাম। জিব্বাহ লাগালাম। সত্যি নোনতা পানি। আমি এর আগে কখনো নোনা পানির স্বাদ নেই নি। বই এ শুনেছি মাত্র। আসলে জীবনে যেটা ই প্রথম ঘটে থাকে তা সত্যি দারুণ এক অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে। আর ওই সময় টা কি যে আনন্দের হয় তা বলে বুজানো মুশকিল।
আমরা এসে পৌছালাম সুন্দরবন এ! আহা সুন্দরবন!
ট্রলার থেকে নামলাম। সাথে ওই ছেলেটা ও। সুন্দরবন এ ও টিকিট এর সস্টেম রয়েছে। আমি টিকিট কাটলাম।
সুন্দরবন জাদুঘর
ঢুকার মুখেই ছোট্র একটা যাদুঘর এর মত রয়েছে। তাতে বাঘ, হরিন সহ নানা প্রজাতির প্রানির অংশ রয়েছে। পাশে রয়েছে ছোট চিড়িয়াখানা ।
তাতে রয়েছে, কুমির এর ছানা, বড় কুমির, হরিন ইত্যাদি। তবে সব গুলো ই জাল দিয়ে আটকানো।
সুন্দরবন এ প্রবেশ করার জন্য রয়েছে একটি গেইট। তার ভিতর দিয়ে রাস্তা করা। রাস্তাটি কাঠের তক্তা দিয়ে বানানো। নিচে অগনিত লাল কাঁকড়া। আমি অনেক্ষন ধরে ১টা লাল কাঁকড়া ধরার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পারছিলাম না।
ধরতে গেলেই এগুলো গর্তে ঢুকে যায়। আর মাটি সম্পুর্ন কাদা। এজন্যই কাঠ দিয়ে উচু করে রাস্তা বানানো হয়েছে পর্যটক দের জন্য।
সুন্দরবন এর গাছ
চারপাশে শুধু গাছ আর গাছ। এগুলো প্রায় গুলোতেই নাম লেখা আছে। যেমন, গরান, সুন্দরি, বাইন ইত্যাদি। আমরা কাঠের রাস্তা দিয়ে ভিতরে হাটতে থাকলাম। ঢুকার সময় আমাদের বলেদেয়া হয়েছে যাতে বেশি ভিতরে প্রবেশ না করি।
কারন, বাঘ এর আক্রমন যে কোন সময় হতে পারে। আমরা বেশ কিছুটা ভিতরে গেলাম। আমি হাটতে থাকলাম… পাশে তাকিয়ে দেখি আমার সাথের ছেলেটা দাড়িয়ে পড়েছে। আমি ভাবছিলাম ও মনেহয় কিছু দেখেছে। আমি জিজ্ঞেস করাতে বলল, আর ভিতরে যাওয়া আমাদের ঠিক হবে না।
আমরা কিছুক্ষন ভিতরে থাকার পর বেরিয়ে আসলাম। আরো কিছুক্ষন সেখানে অবস্থান করে আমি কোন প্রানি দেখা যায় কিনা লক্ষ্য করছিলাম।
তারপর আমরা শুকনো খাবার খেলাম। যে বোতল টা দিয়ে পানি নিয়ে গিয়েছিলাম। সেটা তে করে ই একবোতল নোনা পানি ভরলাম।
বিদায় সুন্দরবন
অবশেষে চলে আসার পালা। অনেক ক্ষন থেকে আমরা আবার ট্রলারে চলে আসলাম। ট্রলার স্টার্ট দেয়া হল। ট্রলার ঘুরল। আমরা ও ঘুরলাম।
আমার আরেকটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন হল। সুন্দরবন এর রূপ দেখা হল। সুন্দরি গাছ হাত দিয়ে ছোয়া হল… আমার পা নোনা পানিতে ভিজল… সুন্দরবন এ আমার পা পরলো।
আমাদের ট্রালার ছুটে চলল… বাড়ী ফেরার উদ্দেশ্যে…।
ফেসবুক: Kuhudak
great website ❤️
thanks
অনেক বড় লেখা!
আপনাকে অনেক শুকনা লাগছে।
valo arif
okk.. thanks
Great post ever 🙂
thank you so much.