হারিকেন (বাতি)

৩ মিনিটে পড়া যাবে

হারিকেন বাতি (Kerosene lamp বা Hurricane Lamp), বাংলার গ্রামীণ জীবনের এক নিত্য সঙ্গী, যেটি এখনো অনেক গ্রামে ব্যবহৃত হয় এবং গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে। এর আলো ঝাপসা হলেও এটি যেন ঐতিহ্যের আলো জ্বালিয়ে রাখে। বর্তমানে বিদ্যুতের সহজলভ্যতার কারণে হারিকেন বাতির ব্যবহার অনেক কমে গেছে, তবে এটি একটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক উপাদান হিসাবে এখনও গুরুত্বপূর্ণ।

আরও: গরুর গাড়ি

হারিকেন (বাতি) - কুহুডাক আর্কাইভ

ইতিহাস

হারিকেন বাতির প্রচলন শুরু হয়েছিল ১৮০০ শতকের প্রথম দিকে। সে সময় মূলত এই বাতিটি নাবিকদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল, কারণ ঝড়ের মধ্যেও এটি নির্বাপিত হত না। শব্দটি এসেছে ইংরেজি “Hurricane” থেকে, যার অর্থ হল “ঝড়”। এই বাতির আকৃতি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল যাতে এটি প্রবল বাতাস ও ঝড়েও টিকে থাকতে পারে।

হারিকেন (বাতি) - কুহুডাক আর্কাইভ

গঠন ও কার্যপদ্ধতি

হারিকেন বাতির গঠন বেশ সহজ কিন্তু কার্যকর। মূলত এটি তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত:

  • অয়েল রিজার্ভার: নিচের অংশে থাকে, যেখানে জ্বালানী (ক্যারোসিন তেল) সংরক্ষণ করা হয়।
  • উইক (বাতি সলতে): একটি কটনের সলতে বা ফিতা, যা তেলের মধ্যে ডুবে থাকে এবং তেল শুষে জ্বালানীর সরবরাহ নিশ্চিত করে।
  • গ্লাস চিমনি: এর উপরিভাগে থাকে একটি কাঁচের চিমনি বা খোলা অংশ, যা বাতিকে ঘিরে রাখে এবং বাতাসে আগুন নির্বাপিত হওয়া থেকে রক্ষা করে। এটি এমনভাবে নকশা করা যে বাতি নিভে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে এবং আলো ছড়িয়ে পড়ে।

ব্যবহার

হারিকেন বাতি মূলত রাতের আলো হিসেবে ব্যবহৃত হত এবং এখনো অনেক দূরবর্তী গ্রামাঞ্চলে এটি ব্যবহৃত হয় যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনো অসম্পূর্ণ। কৃষকরা সাধারণত রাতের আঁধারে জমিতে কাজ করতে এই বাতি ব্যবহার করত, কারণ এটি বহনযোগ্য এবং সহজেই পরিবহণযোগ্য। রাতের শিক্ষার্থীরা এবং গৃহস্থালির কাজেও এই বাতিটি বেশ উপযোগী ছিল।

হারিকেন (বাতি) - কুহুডাক আর্কাইভ

বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতির কারণে হারিকেন বাতির ব্যবহার কমে এসেছে। মোবাইল টর্চ, LED লাইট বা সোলার লাইটের ব্যবহার বেড়ে গেছে এবং সেগুলোই বেশি প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে যেসব অঞ্চলে বিদ্যুতের অভাব রয়েছে, সেখানে এটি এখনও একটি কার্যকরী বিকল্প। তাছাড়া, ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলায় বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হারিকেন বাতি ব্যবহারের চল আছে।

হারিকেন বাতির গুরুত্ব ও ঐতিহ্য

হারিকেন বাতি শুধু একটি আলোর উৎস নয়, বরং এটি বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অংশ। এটি আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে এবং একসময়কার গ্রামীণ জীবনের অনুষঙ্গ ছিল। আজকাল হারিকেন বাতিকে অনেকেই নস্টালজিয়ার অংশ হিসেবে সংগ্রহ করে রাখেন বা বাড়ির শোভা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করেন।

হারিকেন বাতি বাংলা সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং একসময়ের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য উপকরণ ছিল। বিদ্যুতায়নের সাথে সাথে এই বাতির ব্যবহার অনেক কমে গেলেও এটি আমাদের অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে হারিকেন বাতির ব্যবহার যেমন আমাদের শিকড়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, তেমনি আমাদের প্রজন্মকেও এটির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে।


ফেসবুক: কুহুডাক

শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন

মন্তব্য করুন

Kuhudak (কুহুডাক) LogoKuhudak (কুহুডাক) Logo

আপনার আশেপাশের দর্শনীয় স্থানের তথ্য দিন

কুহুডাকে আপনার আশেপাশের দর্শনীয় স্থানের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন।