বাংলাদেশের প্রধান ও সবচেয়ে ব্যস্ত বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (Hazrat Shahjalal International Airport, HSIA), ঢাকা শহরের উত্তরে অবস্থিত। যার আইএটিএ: DAC এবং আইসিএও: VGHS। এটি দেশের অর্থনৈতিক এবং ভ্রমণ শিল্পের মূল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী এই বিমানবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে যাতায়াত করেন।
এই পোস্টে, আমরা এই বিমানবন্দরের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, বর্তমানে কীভাবে এটি পরিচালিত হয়, এবং প্রতিদিনের কার্যক্রমসহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। চলুন শুরু করা যাক…
বিমানবন্দরের ইতিহাস ও উন্নয়ন
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি ১৯৮০-এর দশকে নির্মিত হয়। এটি পূর্বে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামে পরিচিত ছিল, যা ২০১০ সালে পরিবর্তিত হয়ে বর্তমান নাম ধারণ করে। নামটি রাখা হয় বিখ্যাত সুফি সাধক হযরত শাহজালাল (র.) এর নামে, যিনি সিলেটের একজন সম্মানিত ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব।
বিমানবন্দরের ইতিহাস শুরু হয়েছিল মূলত ঢাকার পুরাতন তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে, যেখানে মূলত অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালিত হতো। তবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য আরও বড় একটি বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ার পর, নতুন এই বিমানবন্দর নির্মাণ করা হয়। ১৯৮১ সালে এটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য পুরোপুরি চালু হয়।
নাম | হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর |
বিমানবন্দরের ধরন | বেসামরিক/সামরিক |
অবস্থান | কুর্মিটোলা, ঢাকা, বাংলাদেশ |
পরিচালক | বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ |
আইএটিএ | DAC |
আইসিএও | VGHS (পুরনো: VGZR) |
এএমএসএল উচ্চতা | ২৭ ফুট / ৮ মিটার |
স্থানাঙ্ক | ২৩°৫০′৩৪″ উত্তর; ০৯০°২৪′০২″ পূর্ব |
ওয়েবসাইট | hsia.gov.bd |
অবকাঠামো ও সেবা
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি বর্তমানে তিনটি টার্মিনাল নিয়ে গঠিত। টার্মিনাল ১ এবং ২ মূলত আন্তর্জাতিক যাত্রীদের জন্য ব্যবহার করা হয়, আর টার্মিনাল ৩, যার নির্মাণ কাজ চলছে, ভবিষ্যতে অতিরিক্ত যাত্রীদের সেবা দেওয়ার জন্য নির্মিত হচ্ছে। বিমানবন্দরটি ৮০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে। এর সাথে রয়েছে অত্যাধুনিক সুবিধাসমূহ, যেমন:
- চেক-ইন কাউন্টারস: বিমানবন্দরে মোট ৩৬টি চেক-ইন কাউন্টার রয়েছে, যা বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস: ইমিগ্রেশন প্রসেস সহজ করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, বিমানবন্দরটি পর্যাপ্ত কাস্টমস সুবিধা সরবরাহ করে।
- লাউঞ্জ সুবিধা: ব্যবসায়ী ও প্রিমিয়াম যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। এগুলোতে আরামদায়ক পরিবেশে যাত্রীরা তাদের ফ্লাইটের আগে বিশ্রাম নিতে পারেন।
দৈনিক কার্যক্রম ও ফ্লাইট সংখ্যা
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ২০০টিরও বেশি ফ্লাইট উঠানামা করে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় ধরনের ফ্লাইট রয়েছে। বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার, এয়ার অ্যাস্ট্রাসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্স প্রতিদিন বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে। বিমানবন্দরটি প্রতিদিন গড়ে ২০,০০০-এরও বেশি যাত্রীকে সেবা প্রদান করে থাকে। সকাল, দুপুর এবং রাতের বিভিন্ন সময়ে এখানে যাত্রীদের আসা-যাওয়ার ভিড় লক্ষ করা যায়।
আরও: বিমানবালা কি
যাত্রিবাহী বিমান চলাচল
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন যেসব এয়ারলাইন্স যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনা করে, তাদের তালিকা নিচে দেওয়া হলো। এই তালিকাটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় ধরনের এয়ারলাইন্সকে অন্তর্ভুক্ত করে।
স্থানীয় (Domestic) এয়ারলাইন্স
- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স (Biman Bangladesh Airlines)
- অভ্যন্তরীণ রুট: চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, রাজশাহী, বরিশাল
- ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স (US-Bangla Airlines)
- অভ্যন্তরীণ রুট: চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, যশোর, সৈয়দপুর
- নভোএয়ার (Novoair)
- অভ্যন্তরীণ রুট: চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, সৈয়দপুর
আন্তর্জাতিক (International) এয়ারলাইন্স
- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স (Biman Bangladesh Airlines)
- আন্তর্জাতিক রুট: কলকাতা, দিল্লি, দুবাই, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, জেদ্দা, কুয়ালালামপুর
- ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স (US-Bangla Airlines)
- আন্তর্জাতিক রুট: চেন্নাই, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, দোহা, মাস্কাট
- এয়ার ইন্ডিয়া (Air India)
- রুট: দিল্লি, কলকাতা
- এমিরেটস (Emirates)
- রুট: দুবাই
- কাতার এয়ারওয়েজ (Qatar Airways)
- রুট: দোহা
- সাউদিয়া (Saudia)
- রুট: রিয়াদ, জেদ্দা
- সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স (Singapore Airlines)
- রুট: সিঙ্গাপুর
- এতিহাদ এয়ারওয়েজ (Etihad Airways)
- রুট: আবুধাবি
- থাই এয়ারওয়েজ (Thai Airways)
- রুট: ব্যাংকক
- চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স (China Southern Airlines)
- রুট: গুয়াংঝোউ
এছাড়াও, আরও বিভিন্ন এয়ারলাইন্স রয়েছে যারা বিশ্বের নানা দেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে, যেমন মালিন্দো এয়ার, টার্কিশ এয়ারলাইন্স, জেট এয়ারওয়েজ, শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স, ওমান এয়ার ইত্যাদি।
আরও: বিমানে ভ্রমণের নিয়ম
মালবাহী বিমান চলাচল
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শুধু যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনার জন্যই নয়, মালবাহী (কার্গো) বিমান পরিচালনার ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের একটি বড় অংশ এই বিমানবন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়, যা দেশের অর্থনীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এয়ার কার্গো সেবার মাধ্যমে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ থেকে পণ্য পরিবহন সহজ এবং দ্রুততর হয়ে উঠেছে।
মালবাহী বিমান চলাচলের গুরুত্ব
বাংলাদেশ একটি রপ্তানিমুখী দেশ, বিশেষ করে পোশাক শিল্প (RMG) এ দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের একটি বড় অংশ গঠন করে। এছাড়াও, ইলেকট্রনিক্স, ওষুধ, চামড়া, মাছ, কৃষিজ পণ্যসহ বিভিন্ন শিল্পজাত পণ্যও রপ্তানি করা হয়। এর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী দ্রুত আমদানি করতেও কার্গো ফ্লাইট ব্যবহার করা হয়।
মালবাহী ফ্লাইট পরিচালনাকারী প্রধান এয়ারলাইন্সসমূহ
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় এয়ারলাইন্স মালবাহী ফ্লাইট পরিচালনা করে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
- এমিরেটস স্কাইকার্গো (Emirates SkyCargo)
- রুট: দুবাই এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক গন্তব্য
- এমিরেটসের কার্গো সার্ভিসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চমূল্যের পণ্য পরিবহনে বিশেষায়িত। দ্রুত ও নিরাপদ কার্গো সরবরাহের জন্য এমিরেটস স্কাইকার্গো জনপ্রিয়।
- কাতার এয়ারওয়েজ কার্গো (Qatar Airways Cargo)
- রুট: দোহা ও অন্যান্য গন্তব্য
- কাতার এয়ারওয়েজের কার্গো ফ্লাইট গ্লোবাল লজিস্টিকস সাপ্লাই চেইনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সেবা।
- ইটিহাদ কার্গো (Etihad Cargo)
- রুট: আবুধাবি ও অন্যান্য গন্তব্য
- ইটিহাদ এয়ারওয়েজের কার্গো সার্ভিস বিমানবন্দরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে মালপত্র সরবরাহে সাহায্য করে।
- থাই কার্গো (Thai Cargo)
- রুট: ব্যাংকক
- থাই এয়ারওয়েজের কার্গো বিভাগটি ব্যাংকক থেকে বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মাল পরিবহন করে থাকে।
- ডিএইচএল এভিয়েশন (DHL Aviation)
- রুট: বিশ্বব্যাপী
- ডিএইচএল এভিয়েশন মূলত এয়ার কার্গো পরিবহনে বিশেষায়িত। দ্রুত শিপমেন্টের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এয়ার কার্গো সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
- ইউপিএস এয়ারলাইন্স (UPS Airlines)
- রুট: যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গন্তব্য
- ইউপিএস বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ফেডেক্স এক্সপ্রেস (FedEx Express)
- রুট: যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, এশিয়া
- ফেডেক্স বাংলাদেশের ব্যবসায়িক মাল পরিবহনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কার্গো
- রুট: অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক গন্তব্য
- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে কার্গো পরিবহন করে থাকে। এটি পোশাক শিল্প, কৃষি পণ্য, এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক পণ্য পরিবহনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
মালবাহী ফ্লাইটের সুবিধাসমূহ
- দ্রুত শিপমেন্ট: আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হওয়ার কারণে দ্রুত শিপমেন্ট ব্যবস্থা বিদ্যমান। ফলে পণ্য দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো যায়।
- সুরক্ষা: এয়ার কার্গো পরিবহনে সুরক্ষা ব্যবস্থাও উন্নত। পণ্য স্ক্যান এবং নজরদারি করা হয়, যাতে নিরাপদে পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করা যায়।
- আন্তর্জাতিক সংযোগ: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরাসরি ফ্লাইট সংযোগের কারণে বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্য সহজেই গ্লোবাল মার্কেটে পৌঁছানো যায়।
- বিশেষায়িত পণ্য পরিবহন: বিশেষ করে তাজা মাছ, ওষুধ, এবং উচ্চমূল্যের পণ্যগুলো দ্রুততার সঙ্গে এবং বিশেষ নিরাপত্তার সাথে পরিবহন করা হয়।
মালবাহী বিমানবন্দরের অবকাঠামো
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ক্রমাগত তার কার্গো অবকাঠামো উন্নত করে চলেছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- কার্গো টার্মিনাল: বিমানবন্দরে একটি সম্পূর্ণ পৃথক কার্গো টার্মিনাল রয়েছে, যা আমদানি ও রপ্তানি উভয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- শীতলকরণ সুবিধা: তাজা পণ্য বা তাপমাত্রা সংবেদনশীল পণ্যগুলোর জন্য শীতলকরণ সুবিধা রয়েছে।
- লজিস্টিক সাপোর্ট: বিমানবন্দরটি মালবাহী ফ্লাইট পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট সরবরাহ করে, যেমন পণ্যসম্ভারের আধুনিক প্রযুক্তি, ডকিং সুবিধা, এবং দ্রুত কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সেবা।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
যদিও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মালবাহী ফ্লাইট পরিচালনা যথেষ্ট সফল, তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কার্গো টার্মিনালের পর্যাপ্ততা এবং আরও দ্রুত কাস্টমস প্রক্রিয়া উন্নয়ন প্রয়োজন। তাছাড়া, ভবিষ্যতে আরো বেশি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অবকাঠামো বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব এবং এটি দেশের বাণিজ্যের জন্য আরও ভালো সুযোগ সৃষ্টি করবে।
আরও: এভিয়েশন ফোনেটিক বর্ণমালা
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়, যেমন:
- বডি স্ক্যানার ও মেটাল ডিটেক্টর: বিমানবন্দরে প্রবেশের প্রতিটি পয়েন্টে বডি স্ক্যানার ও মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করা হয়। যাত্রীরা প্রতিটি চেক পয়েন্টে তাদের নিরাপত্তা পরীক্ষা সম্পন্ন করেন।
- সিসিটিভি নজরদারি: পুরো বিমানবন্দর এলাকা জুড়ে ২৪/৭ সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি করা হয়।
- নিরাপত্তা বাহিনী: বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনী নিযুক্ত রয়েছে। যাত্রীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তারা সবসময় তৎপর থাকে।
সুবিধাসমূহ
যাত্রীরা এই বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর একাধিক সুবিধা পান, যা ভ্রমণকে সহজ এবং আরামদায়ক করে তোলে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
- ব্যাগেজ সেবা: যাত্রীরা বিমানে ওঠার আগে বা নামার পরে সহজেই তাদের ব্যাগেজ সংগ্রহ করতে পারেন। বিমানবন্দরের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সার্ভিসও যথেষ্ট উন্নত।
- ফ্রি ওয়াইফাই: যাত্রীদের জন্য ফ্রি ওয়াইফাই সেবা প্রদান করা হয়। তারা তাদের যাত্রা বা কাজের ফাঁকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন।
- শপিং ও রেস্টুরেন্ট: বিমানবন্দরে ডিউটি ফ্রি শপ, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের দোকান রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খাবার পাওয়া যায়।
সম্প্রসারণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিমানবন্দরের যাত্রী ধারণক্ষমতা বাড়াতে বর্তমানে একটি বিশাল উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো টার্মিনাল ৩ নির্মাণ, যা ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন এই টার্মিনালটি চালু হলে বছরে প্রায় ২০ মিলিয়ন যাত্রীকে সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।
এই সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় আরও কিছু উন্নত সুবিধা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমন:
- আরও বড় বিমানবন্দর পার্কিং এলাকা
- উন্নত কার্গো হ্যান্ডলিং সুবিধা
- নতুন রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ে
এছাড়াও, ভবিষ্যতে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আধুনিক ও শক্তিশালী বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
আরও: ২৪ ঘন্টা থেকে ১২ ঘন্টা সময় ফরম্যাট
সংযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা
বিমানবন্দরটি শহরের বিভিন্ন অংশের সাথে ভালোভাবে সংযুক্ত। যাত্রীরা সহজেই ট্যাক্সি, বাস, প্রাইভেট কার, বা রাইড-শেয়ারিং সার্ভিসের মাধ্যমে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারেন। বর্তমানে মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পও চলছে, যা বিমানবন্দরকে আরও সহজে সংযোগ প্রদান করবে। এর ফলে যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দরে যাতায়াত আরও সুবিধাজনক হবে।
চ্যালেঞ্জসমূহ
যদিও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম, তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- যাত্রী চাপে সীমিত অবকাঠামো: বিমানবন্দরের বর্তমান টার্মিনালগুলি প্রায়শই যাত্রী চাপ সামলাতে হিমশিম খায়।
- নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা: যদিও নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত, তবে কখনও কখনও তীব্র যাত্রী চাপে নিরাপত্তা প্রক্রিয়া ধীরগতি পায়।
- যাত্রী সেবা উন্নয়ন: যাত্রীদের সুবিধার জন্য সেবার আরও উন্নতি প্রয়োজন, যেমন আরও দ্রুত চেক-ইন ও ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশের গর্ব এবং দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমান অবকাঠামো এবং চলমান সম্প্রসারণ প্রকল্পগুলির মাধ্যমে এটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরে রূপান্তরিত হতে চলেছে। বিমানবন্দরের ইতিহাস, বর্তমান কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার আলোকে বলা যায়, এটি শুধু বাংলাদেশেরই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে।
আরও: পাসপোর্ট হয়েছে কিনা চেক করবেন যেভাবে
বিমানবন্দর নিয়ে ভ্রমণ জিজ্ঞাসা
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কোথায় অবস্থিত?
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঢাকার উত্তরা এলাকায়, শহরের কেন্দ্রীয় অংশ থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
বিমানবন্দরের IATA এবং ICAO কোড কী?
IATA কোড: DAC,
ICAO কোড: VGHS।
বিমানবন্দরটি কোন সময় থেকে কার্যক্রম শুরু করে?
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এবং সারা দিন এবং রাতে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।
বিমানবন্দর থেকে সিটি সেন্টারে পৌঁছানোর জন্য কী ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে?
বিমানবন্দর থেকে সিটি সেন্টারে পৌঁছানোর জন্য বাস, প্রাইভেট কার, ট্যাক্সি, রাইড-শেয়ারিং সেবা (উবার, পাঠাও) এবং সিএনজি অটোরিকশা পাওয়া যায়।
বিমানবন্দরে লাউঞ্জ সুবিধা কি পাওয়া যায়?
হ্যাঁ, বিমানবন্দরে বেশ কয়েকটি লাউঞ্জ রয়েছে, যেমন ‘Balaka Executive Lounge’ এবং ‘Sky Lounge,’ যেখানে প্রিমিয়াম সেবা প্রদান করা হয়।
বিমানবন্দরে ওয়াইফাই সুবিধা কি রয়েছে?
হ্যাঁ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা পাওয়া যায়। তবে এর ব্যবহারের জন্য নিবন্ধন করতে হতে পারে।
বিমানবন্দরে কী ধরনের ডিউটি-ফ্রি শপিং সুবিধা আছে?
বিমানবন্দরে ডিউটি-ফ্রি শপ রয়েছে যেখানে বিভিন্ন ধরনের পণ্য যেমন পারফিউম, ইলেকট্রনিক্স, চকলেট এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক পণ্য কেনা যায়।
প্রতিদিন বিমানবন্দর থেকে কতগুলো ফ্লাইট ওঠানামা করে?
প্রতিদিন প্রায় ৩০০-৩৫০টি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পরিচালিত হয়।
বিমানবন্দরে যাত্রীদের নিরাপত্তা চেকিং প্রক্রিয়া কেমন?
যাত্রীদের নিরাপত্তা চেকিং প্রক্রিয়া অত্যন্ত উন্নত এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। এখানে মাল্টি-লেভেল নিরাপত্তা স্ক্যানিং এবং ফিজিক্যাল চেকিং করা হয়।
হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ভিসা-অন-অ্যারাইভাল সেবা কি পাওয়া যায়?
হ্যাঁ, নির্দিষ্ট কিছু দেশের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ভিসা-অন-অ্যারাইভাল সুবিধা পাওয়া যায়। তবে শর্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে।
ফেসবুক: কুহুডাক