জাফলং ভ্রমণ, সিলেট নিয়ে এবারের পোস্ট। জাফলং এর বিস্তারিত থাকবে এই লেখায়। চলুন শুরু করা যাক…
এটা ঠিক আমার SSC পরিক্ষার আগের কথা। বাসায় থেকে ঠিক মত পড়ালেখা করছিলাম না। সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর খেলাধুলা করে সময় পার হচ্ছিল।
বড় ভাইয়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (SUST) সিলেটে পড়তেন। পরিক্ষায় যাতে ভালো রেজাল্ট করি তাই ভাইয়া আমাকে তার সাথে করে সিলেটে নিয়ে গেলেন।
আরও: শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ
বাসায় থেকে পড়াশুনা করতে হবে আমাকে। একজন শিক্ষক ও নিয়োগ করে দিলেন। স্যার বাসায় এসে আমাকে পড়াতেন।
আমার প্রধান কাজ পরালেখা। আর অন্যান্য কাজ গুলো হচ্ছে, ঘুম আর খাওয়াদাওয়া করা। ও, ওয়াশরুমেও যেতাম মাঝে মাঝে।
আরও পড়ুন: লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
একনজরে জাফলং – সিলেট
ভ্রমণ স্থান | জাফলং, সিলেট |
অবস্থান | গোয়াইনঘাট উপজেলা, সিলেট |
সিলেট শহর থেকে দূরত্ব | ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে |
জাফলং ভ্রমণ প্রস্তুতি
সিলেট এসেছি প্রায় ১মাস এর মত হয়ে গেলো…। একদিন রাতে ভাইয়া কে বললাম, আমার বুরিং লাগছে এখানে। বাড়ি যাব।
ভাইয়া বললেন, সিলেট আসলি ১মাস হল মাত্র। এখনি বাড়ি যাবার চিন্তা! পরালেখা করবে কে শুনি।
আমি আর কিছু বললাম না। চুপ করে রইলাম।
রাতে খাওয়াদাওয়া শেষে ভাইয়া বললেন, চল আগামীকাল ঘুরে আসি কোথাও থেকে। সিলেটে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা, যেমনঃ শ্রিমঙ্গল, তামাবিল, লালাখাল, মাদবকুন্ড, জাফলং সহ আরও অনেক।
আমি বললাম সব গুলোতে যাব। ভাইয়া বলল ঠিক আছে, কিন্তু প্রথমে কোনটাতে যেতে চাস। আমি জাফলং এর কথা অনেক শুনেছি। ওইখানে গেলে নাকি ইন্ডিয়া দেখা যায়। সাথে ইন্ডিয়ার ব্রিজ সহ কত কি।
আমি বললাম তাহলে জাফলং চলেন। এছাড়া ইতিমধ্যে আমি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (SUST) এর ভিতরে পুরটা ঘুরে দেখেছি।
খুবই সুন্দর জায়গা। বড় বড় পাহাড়ও রয়েছে এটার ভিতরে। বিশাল এরিয়া। বিশেষ করে শহীদমিনার টা পাহাড়ের উপরে হওয়ায় আমার খুবই সুন্দর লেগেছে।
আরও: শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ – মৌলভীবাজার, সিলেট
ভ্রমণের দিন
পরের দিন আমি ভাইয়া এবং তার একজন ফ্রেন্ড মিলে জাফলং এর উদ্দেশ্যে রওনা দেই। প্রথমে আমরা সিএনজি করে শিবগঞ্জে যাই। সেখান থেকে বাসে করে জাফলং এর দিকে যেতে থাকি।
রাস্তার পাশে যা দেখলাম
জাফলং যাওয়ার সময় বেশ উচু নিচু পাহাড় পড়ে। তবে একেবারে জাফলং এর কাছাকাছি চলে আসলে আপনি রাস্তার ডান পাশে ভারতের বেশ কিছু পাহাড়ে ঝর্না দেখতে পাবেন।
অপরূপ সুন্দর লাগবে আপনার কাছে। মনে হবে আপনি কোন স্বপ্নের দেশে চলে এসেছেন।
আমার কাছে তো দারুন লেগেছে।
উচু নিচু পাহাড়ে একেবেকে যাওয়া রাস্তা দিয়ে আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলছে। আর, আমি জানালা দিয়ে বাহিরের অপরূপ দৃশ্য দেখছি।
জাফলং ভ্রমণ
আমরা জাফলং চলে এসেছি।
জাফলং এর কাছাকাছি যে সব দর্শনীয় স্থান রয়েছে
১। লালাখাল
২। তামাবিল
৩। জৈন্তাপুর
৪। সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা
আপনি জানেন কি? জাফলং এ গেলে আপনি পানের বাগান দেখতে পাবেন! কি সুন্দর ভাবে সুপরি গাছের সাথে পেচিয়ে রয়েছে পান গাছ গুলো।
গাড়ি থেকে নেমে কিছুটা পথ হাটতে হয়। এরপর উচু জায়গা ধিরে ধিরে নিচু হয়ে পানির সাথে মিশে গেছে।
আরও পড়ুনঃ জাতীয় স্মৃতিসৌধ ভ্রমণ সাভার, ঢাকা
জাফলং -এ এসে যা দেখলাম
জাফলং ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। এটা পর্যটকদের জন্য বিখ্যাত জায়গা।
এখানে একপাশে বাংলাদেশ এবং অন্য পাশে ভারত সিমান্ত রয়েছে।
দুইপাশে বেশ উচু ২টি পাহাড় রয়েছে। যেটাকে একটি ব্রিজ এর মাধ্যমে সংযোগ করা হয়েছে। ২টা পাহাড়ই ভারত সিমান্তে অবস্থিত।
আমরা যখন জাফলং গিয়ে পৌছেছি, তখন প্রায় দুপুর। কড়া রোদ।
জাফলং এর ইতিহাস
জাফলং এ বাংলাদেশ এর অপর পাশে ভারতের ডাওকি অঞ্চল। ডাওকি অঞ্চলের পাহাড় থেকে ডাওকি নদী এই জাফলং দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মূলত পিয়াইন নদীর অববাহিকায় জাফলং অবস্থিত। সিলেট জেলার জাফলং-তামাবিল-লালখান অঞ্চলে রয়েছে পাহাড়ী উত্তলভঙ্গ।
ঐতিহাসিকদের মতে নাকি বহু হাজার বছর ধরে জাফলং নির্জন বনভূমি ছিল। যা ছিল খাসিয়া জৈন্তা রাজার অধীনে। এরপর খাসিয়া জৈন্তা রাজ্যের অবসান ঘটে ১৯৫৪ সালে। তারপর বেশ কয়েকবছর জাফলংয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা পতিতও হয়ে পড়েছিল।
পরে ব্যবসায়ীরা পাথরের খোঁজার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে নৌপথে জাফলং আসতে শুরু করে, আর পাথর ব্যবসার জনপ্রিয়তা পেতে থাকলে একসময় এখানে নতুন জনবসতি গড়ে উঠে।
আরও: মাধবপুর লেক ভ্রমণ – মৌলভীবাজার, সিলেট
চলুন জাফলং ভ্রমণ শুরু করা যাক
জাফলং এর নদিতে রয়েছে প্রচুর বড় ছোট পাথর। জাফলং এর মূল পয়েন্টে যাওয়ার জন্য আপনাকে নৌকার সহযোগিতা নিতে হবে।
নৌকা করে আমরা মূল পয়েন্টে চলে আসলাম। একদিকে মানুষ পাথর তুলছে। অপর দিকে অনেকেই হইহুল্লোড় করে গোসল করছে।
সিলেটের বেশ কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে গেলে আপনার গোসল করতে ইচ্ছে করবে। তারভিতরে জাফলং একটি।
আমি গোসল করাটা খুব মিস করছিলাম তখন।
আমি হেটে হেটে চারদিকটা ঘুরে দেখছিলাম। এখানকার পানি খুবই পরিষ্কার। আপনি পানির নিচের সবকিছু দেখতে পাবেন।
আমি ঝর্না থেকে গড়িয়ে পরা পানি হাতে নিয়ে খেয়েছি। মিনারেল ওয়াটার হুম… মিনারেল ওয়াটার!
জাফলং বর্ডার
আমরা বাংলাদেশ এবং ভারত এর মাঝামাঝি স্থান জাফলং বর্ডার এ কিছুক্ষন দাঁড়ালাম। চারদিকটা দেখলাম। ছবি তুললাম।
ব্যাপারটা এরকম ছিল যে, আমি ভারতে দাড়িয়ে আছি… বাংলাদেশ থেকে কেউ আমার ছবি তুলছিল।
মজা না…?
জাফলং কে বিদায়
অনেকক্ষণ ঘুরাঘুরির পর কিছুটা ক্লান্তি বোধ করছিলাম। এদিকে প্রখর রৌদ্র তো আছেই। আমরা জাফলং এর মূল পয়েন্ট থেকে চলে আসলাম।
হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সাথে অপরূপ জাফলং কে বিদায় জানাতে হল। আমাদের জাফলং ভ্রমণ এখানেই শেষ করলাম।
আরও পড়ুন: আই সি ডি ডি আর বি মতলব ভ্রমণ
উপসংহার
কোন ভ্রমণই আমার শেষ হয়ে শেষ হয় না। বারংবার আমার সেই স্থানে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে। কারন, আমি যে প্রকৃতি ভালবাসি। প্রকৃতিও আমায় ভালবাসে।
আমার জাফলং ভ্রমণ তারই একটি অংশ ছিল। কথা দিলাম সময় এবং সুযোগ পেলে তোমার কাছে আবার ফিরে আসব অপরূপ সৌন্দর্যের জাফলং, সিলেট।
আপাতত, বিদায়…।
ফেসবুক: Kuhudak
yoo Go….
Yooo…