মালদ্বীপ ভ্রমণ গাইড, যাকে সমুদ্রের বুকে এক টুকরো স্বর্গ বলা হয়ে থাকে। মালদ্বীপ (Maldives) হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপ (Island) দেশ। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই দেশ বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশ হিসেবে স্বীকৃত।
ভ্রমণকারীদের জন্য বিখ্যাত এ দেশের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ মাত্র ২.৩ মিটার এবং গড় উচ্চতা মাত্র ১.৫ মিটার। এই দেশে পাবলিক দ্বীপ এবং প্রাইভেট দ্বীপ মিলে ১২০০+ ছোট বড় দ্বীপ রয়েছে! হয়তো এই জন্যই এই দেশের নামের শেষে দ্বীপ লেখাটি যুক্ত রয়েছে।
আজকের এই ভ্রমণ গাইডে আপনাদেরকে সমুদ্রস্বর্গ বা সমুদ্রের মাঝে এক টুকরো অ্যাকুরিয়াম খ্যাত মালদ্বীপ ভ্রমণের বিস্তারিত কিভাবে যাবেন, কি কি দেখবেন, ভিসা, বিমান টিকিট, খাওয়া এবং হোটেলে থাকার খরচ, ভ্রমণ টিপস সহ বিস্তারিত জানাব। তো চলুন আজকের ভ্রমণ গাইড শুরু করা যাক…
বি:দ্র: আপনার ভ্রমণের প্ল্যান যাতে সহজ এবং সুন্দর ভাবে করতে পারেন তার জন্য যতটা সম্ভব ভ্রমণের খুঁটিনাটি সহ বিস্তারিত লেখা হয়েছে। তাই লেখাটি বড় হবে এটাই স্বাভাবিক। ভ্রমণের প্ল্যান করার পূর্বে সম্পূর্ণ লেখাটি সময় নিয়ে ধৈর্য সহকারে পুড়ুন। আশাকরি আপনার ভ্রমণ হবে সুন্দর, আনন্দময় এবং নিরাপদ।
বিমান টিকিট: প্লেনের টিকিট কাটার জন্য ১০০% নিরাপদে কুহুডাক এয়ার থেকে বিমানের টিকিট নিতে পারেন।
আরও: এয়ার টিকিট
মালদ্বীপ ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | মালদ্বীপ |
অবস্থান | দক্ষিণ এশিয়া, এশিয়া |
রাজধানী | মালে |
আয়তন | ২৯৮ বর্গ কিলোমিটার (১১৫ বর্গ মাইল) |
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম (সরকারি) |
ভাষা | ধিবেহী ভাষা বা মালদ্বীপীয় ভাষা |
মুদ্রা | মালদ্বীপীয় রুফিয়াহ (MVR), মার্কিন ডলার (USD, মালদ্বীপের রিসোর্ট দ্বীপে ব্যবহৃত) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+৫ (মালদ্বীপ মান সময়) |
গাড়ী চালনার দিক | বাম |
কলিং কোড | +৯৬০ |
বিমানবন্দর | ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (MLE) |
অ্যাটলস | ২৬টি |
দ্বীপের সংখ্যা | ১২০০+ |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | প্রায় ২,৯৪১ কিলোমিটার |
ইন্ডিয়া থেকে দূরত্ব | প্রায় ২,০৩০ কিলোমিটার |
ভ্রমণের উপযুক্ত সময় | গ্রীষ্মকাল (নভেম্বর থেকে এপ্রিল) |
ড্রোন উড়ানো যাবে | অনুমতি সাপেক্ষে |
আপনি যদি সহজে বা শর্ট ট্রিপে বাংলাদেশ থেকে কোন দেশে ভ্রমণ করতে চান তাহলে চলে যেতে পারেন মালদ্বীপে। এছাড়া আপনার হানিমুনের জন্য প্যারিসের পরেই বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ও রোমান্টিক হানিমুন জায়গা হচ্ছে এই মুহূর্তে মালদ্বীপ।
আপনি বাংলাদেশ থেকে খুব সহজে সরাসরি যেতে পারবেন। কি নেই এই দ্বীপে? চোখ জুড়ানো সাদা-বালির সৈকত, স্বচ্ছ পানি এবং প্রাণবন্ত সামুদ্রিক জীবন, যা বিশ্বব্যাপী ভ্রমণকারীদের জন্য একটি ড্রিম দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে।
আরও: ট্যুর প্যাকেজ
ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
গ্রীষ্মকাল (নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস) হচ্ছে মালদ্বীপ ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। এই সময়ে মালদ্বীপের আকাশ পরিষ্কার থাকে ও সমুদ্রের পানি অদ্ভুত সুন্দর গাড় নীল রঙ ধারণ করে থাকে। আপনি সহজে চারদিকে ঘুরে বেড়ানো, আইল্যান্ড হোপিং এবং ওয়াটার স্পোর্টসে অংশগ্রহণ করার জন্য শুষ্ক আবহাওয়াই উত্তম সময়।
তাই স্বাভাবিক ভাবেই বলা চলে যে, এসময় পর্যটকদের চাপ একটু বেশি থাকে। আপনি যদি বাজেট ট্যুর কিংবা ভ্রমণ খরচ কমাতে চান তাহলে মার্চ ও এপ্রিল মাসে ভ্রমণে যেতে পারেন। কারন, অফ-সিজন হওয়ায় এই সময় গুলোতে সবকিছুর দাম তুলনামূলক কম পাবেন।
আরও: পাসপোর্ট হয়েছে কিনা চেক করবেন যেভাবে
ভ্রমণের প্রস্তুতি নিন
কখন বা কোন সিজনে ভ্রমণে যাবেন তা ঠিক করার পর এবার ভ্রমণের প্রস্তুতি নিন। প্রথমে ঠিক করুন কত দিনের জন্য ভ্রমণে যাবেন, কে কে যাবেন এবং কেন ভ্রমণে যাবেন। এসব প্রশ্নের উত্তর গুলো ঠিক করে নিন। কারন, কেউ হয়তো ভ্রমণে যাবেন শুধুমাত্র সুন্দর সময় কাটাতে। আবার কেউ হয়তো যাবেন ট্রাভেল ভ্লগ বানাতে, আবার কেউ যাবেন হানিমুনে। তাই ভ্রমণের শুরুতে আপনার উদ্দেশ্য ঠিক করে নিন।
বলা বাহুল্য যে, যারা সমুদ্র সৈকত প্রেমী বা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের জন্য মালদ্বীপ ভ্রমণ হবে অবিস্মরণীয় এক দারুণ অভিজ্ঞতা।
মালদ্বীপ ভ্রমণে যা যা লাগবে
মালদ্বীপ ভ্রমণে প্রথমে যা লাগবে তা হল, আপনার মানসিক আগ্রহ। মন স্থির করে টাইম এবং ভ্রমণের সময়কাল ঠিক করুন। বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য মালদ্বীপে ভিসা অন এরাইভাল (On Arrival Visa)। আপনার বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণে জন্য যা যা লাগবে তার একটা লিস্ট দেয়া হল-
- একটি বৈধ পাসপোর্ট (অবশ্যই ৬ মাসের বেশি মেয়াদ থাকতে হবে)
- মালদ্বীপ ভ্রমণের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ
- যাওয়া এবং আসার বিমান টিকিট
- হোটেল বুকিং কনফার্মেশন (ফেক বুকিং গ্রহনযোগ্য নয়)
- ইমুগা (ট্রাভেলার ডিক্লেয়ারেশন) [ফ্লাইটের ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে ফর্ম পূরণ করতে হবে]
- অন এরাইভাল ভিসা (এয়ারপোর্টে ভিসা নিয়ে কোন ঝামেলা বা জটিলতা নেই)
পূর্বেই বলেছি বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য মালদ্বীপে ভিসা অন এরাইভাল। মালদ্বীপ এয়ারপোর্টে যাওয়ার পর আপনার পাসপোর্টে একটা সিল দিয়ে দিবে। ব্যাস, আপনার ভিসার যাক শেষ। বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এয়ারপোর্টে আপনার থেকে শুধুমাত্র যাওয়া এবং আসার বিমান টিকিট চাইবে সাথে পাসপোর্ট, ইমুগা এবং হোটেল বুকিং কনফার্মেশন চাইবে।
মনে রাখবেন, আপনাকে দেয়া অন এরাইভাল ভিসার মেয়াদ ৩০ দিন। চাইলে অতিরিক্ত ফি দিয়ে আরও ৬০ দিন সহ মোট ৯০ দিন মালদ্বীপে থাকতে পারবেন।
পরামর্শ: হোটেল বুকিংয়ের ক্ষেত্রে অনেকে ইন্টারন্যাশনাল কার্ড ব্যাবহার করে ফেক হোটেল বুকিং করে যান। পরে মালদ্বীপ গিয়ে আর সেই হোটেলে না উঠে সস্তা অন্য হোটেলে থাকেন। কারও কারও ক্ষেত্রে এই চালাকি কাজ করলেও অনেকে মালদ্বীপ এয়ারপোর্টে নামার পর কনফার্ম হোটেল বুকিং না থাকায় ইমিগ্রেশন থেকে তাকে ফেরত পাঠাচ্ছে।
তাই ভ্রমণের পূর্বে ফেক হোটেল বুকিং করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার ভ্রমণ হউক নিরাপদ এবং আনন্দময়।
মালদ্বীপ ভিসা ফি কত
মালদ্বীপ ভ্রমণের অন এরাইভাল ভিসার কোন ফি নেই! মানে, আপনার থেকে অন এরাইভাল ভিসার জন্য কোন টাকা নিবে না। এটা সম্পূর্ণ ফ্রি।
আরও: ট্যুরিস্ট ভিসা সম্পর্কে অফিসিয়াল তথ্য
বিমান টিকিট মূল্য
মালদ্বীপে বিমান বা প্লেন ছাড়া অন্য কোন উপায়ে যাওয়া যায় না। তাই, বিমানে ভ্রমণে যেতে আপনাকে টিকিট মূল্য বা টিকেট ফেয়ার কত হবে এবং কিভাবে কম টাকায় যাওয়া যায় তা জানতে হবে।
আমরা জানি যে, এয়ারলাইন্স, তারিখ এবং সময় ভেদে বিমানের ভারা/ফেয়ার কম বেশি হয়ে থাকে। ঢাকা হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (HSIA) থেকে প্রতিদিন সরাসরি ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ও শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স (কলোম্বো [CMB] এয়ারপোর্টে ট্রানজিট নিবে) মালদ্বীপের ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (MLE) ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।
টিপস: বিমান ভারা/ফেয়ার কম পেতে চাইলে ভ্রমণের কম পক্ষে ১ মাস থেকে ৩ মাস পূর্বে আপনার টিকিট কেটে নিতে পারেন। কম খরচে এবং নিরাপদে কুহুডাক এয়ার থেকে আপনার বিমানের টিকিট নিতে পারেন।
সাধারণত ঢাকা থেকে মালে-ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানে যেতে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৯০ হাজার টাকা লাগে। ঢাকা থেকে মালে এয়ারপোর্টে সরাসরি ফ্লাইটে যেতে সময় লাগে ৪ ঘন্টা ২০ মিনিটের মত।
আরও: বিমানে ভ্রমণের নিয়ম
ইমুগা (ট্রাভেলার ডিক্লেয়ারেশন)
ভ্রমণের পূর্বে অনলাইন থেকে আপনার ইমুগা (ট্রাভেলার ডিক্লেয়ারেশন) ফর্ম পূরণ করে নিন। কিভাবে আপনি ইমুগা (ট্রাভেলার ডিক্লেয়ারেশন) ফর্ম পূরণ করবেন তা জন্য বিস্তারিত দেখুন: ইমুগা ফর্ম পূরণের গাইডলাইন।
আরও: ভ্রমণের পূর্বে যে ৭টি টিপস আপনার জানা প্রয়োজন
মুদ্রা এবং পেমেন্ট
মালদ্বীপের স্থানীয় মুদ্রা হল মালদ্বীপীয় রুফিয়াহ Maldivian Rufiyaa (MVR)। এছাড়া বেশিরভাগ পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট বা হোটেলে মার্কিন ডলার ব্যবহার করা হয়। আপনার সাথে যদি ইন্টারন্যাশনাল কার্ড থাকে তাহলে আপনি অনায়েশে সব স্থানে পেমেন্ট করতে পারবেন তবে, কেনাকাটার জন্য বা স্থানীয় বাজারে যাওয়ার জন্য সাথে কিছু স্থানীয় মুদ্রা মালদ্বীপীয় রুফিয়াহ নিয়ে যেতে পারেন।
আপনি এয়ারপোর্টে অথবা ঢাকার বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ অফিস থেকে টাকা থেকে মালদ্বীপীয় রুফিয়াহ বা ডলার একচেঞ্জ করে নিতে পারে। ১ মালদ্বীপীয় রুফিয়াহ = ৭ টাকা ৫৪ পয়সা (কম-বেশি হতে পারে)।
ভ্রমণে লাগেজে কি কি নিবেন
আপনার ভ্রমণে লাগেজে কি কি নিবেন তা অবশ্যই ভ্রমণের সাথে সম্পর্কিত হতে হবে। লাগেজে কি কি নিবেন তা অবশ্য আপনি কোন সময় (গরম, শীত) ভ্রমণে যাবেন, কত দিন ভ্রমণে থাকবেন এবং কি উদ্দেশ্যে ভ্রমণে যাবেন তার উপর নির্ভর করবে।
যদি আপনি ট্রাভেল ভ্লগ বানাতে যান তাহলে সাথে করে ক্যামেরা সেটাপ, ড্রোন, পাওয়ার ব্যাংক ইত্যাদি নিয়ে যাবেন। আর যদি হানিমুনে যান তাহলে আপনাদের প্রয়োজনীয় কাপড়-জামা দিয়ে লাগেজ ভরবেন। ভ্রমণে জন্য প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত জামাকাপড় বা অন্য কিছু নেয়া ঠিক নয়। শুধু শুধু ভারী লাগেজ টেনে লাভ কি বলেন?
তবে সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুর জন্য উপযুক্ত হালকা, আরামদায়ক পোশাক নিতে পারেন। সাথে সুইমসুট, সানস্ক্রিন, সানগ্লাস, ক্যাপ, জুতা, ব্রাশ, তোয়ালে, মোবাইল চার্জার ইত্যাদি রাখতে পারেন। আর আপনি যদি ওয়াটার স্পোর্টস বা স্নরকেলিং করতে চান তাহলে সাথে করে স্নরকেলিং গিয়ার আনার কথা ভুলবেন না।
হোটেল/রিসোর্টে বুকিং
মালদ্বীপ ভ্রমণের পূর্বে হোটেল বুকিং করা বাধ্যতামূলক। মালদ্বীপকে বলা হয়ে থাকে হাজার দ্বীপের দেশ। এখানে পাবলিক দ্বীপ এবং প্রাইভেট দ্বীপ রয়েছে। যেহেতু এটি মুসলিম প্রধান দেশ তাই, পাবলিক দ্বীপ এবং প্রাইভেট দ্বীপের আদালা কিছু নিয়ম রয়েছে।
এখানের পাবলিক দ্বীপগুলোতে ট্যুরিস্টদের পাশাপাশি মালদ্বীপের স্থানীয়রা বসবাস করে থাকেন আর প্রাইভেট দ্বীপগুলোর বিলাসবহুল রিসোর্ট রয়েছে। আর প্রাইভেট দ্বীপগুলোকে ট্যুরিস্টদের টার্গেট করে বানানো হয়েছে।
ভ্রমণে পূর্বে আপনি অনলাইনে বা ওয়েবসাইটে থেকে হোটেল বুকিং দিতে পারবেন। আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কোন হোটেলে থাকতে পারবেন। নিচে ৩ ধাপে কিছু হোটেল এবং রিসোর্টের নাম এবং ওয়েবসাইট ঠিকানা দেয়া হল। ওয়েবসাইটে ঢুকে আপনার পছন্দ অনুযায়ী হোটেল বা রিসোর্ট বুকিং দিতে পারেন। বুকিং এর জন্য আপনার ইন্টারন্যাশনাল কার্ড দিয়ে বুকিং করতে হবে।
মালদ্বীপে প্রায় ১৪০ টা বিভিন্ন ধরণের রিসোর্ট রয়েছে আর হোটেলের সংখ্যা প্রচুর। কয়েক ধরণের রিসোর্ট হল-
- ওয়াটার ভিলা রিসোর্ট
- বীচ ভিলা রিসোর্ট
- ওয়াটার ভিলা উইথ প্রাইভেট পুল রিসোর্ট
হুলহুমালে সেরা হোটেল
বেশিরভাগ পর্যটকই রাজধানী মালে থেকে ৪ থেকে ৫ মিলোমিটার দূরে হুলহুমালে তে থাকতে চান। হুলহুমালের সেরা হোটেলগুলো নিচে দেয়া হল-
মাফুশি আইল্যান্ড
আপনার ট্যুর প্ল্যান অনুযায়ী হুলহুমালেতে ১ থেকে ২ রাত থেকে চলে যেতে পারেন মাফুশি আইল্যান্ড। এটি একটি পাবলিক আইল্যান্ড যেখানে ট্যুরিস্টদের জন্য আছে বিকিনি বীচ আর লোকালদের জন্য রয়েছে লোকাল বীচ। জেনে রাখা ভালো যে, এই মাফুশি আইল্যান্ড বাংলাদেশীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
প্রাইভেট দ্বীপ
আপনি চাইলে মালদ্বীপের সবচেয়ে আকর্ষনীয় স্থানের অসংখ্য প্রাইভেট দ্বীপগুলোর মধ্যে একটিতে রাত্রিযাপন করতে পারেন। এই দ্বীপে থাকতে হলে প্রতি রাতে আপনাকে প্রায় ১ লক্ষ টাকা দিতে হবে!
এখানের বাংলো গুলো সরাসরি সমুদ্রের উপরে ধার ঘেষে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আপনি সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের অসাধারণ ভিউ পাবেন এখানে। আর সমুদ্রের পানির অপরুপ সৌন্দর্য্য তো রয়েছেই।
বি:দ্র: হোটেল বুকিং করার পর বুকিং এর কপি অবশ্যই সাথে রাখবেন। কারন, এয়ারপোর্টে আপনার থেকে এই হোটেল বুকিং কপি চাইলে।
পরামর্শ: রিসোর্ট বুকিং দেয়ার পূর্বে খেয়াল রাখবেন মালে শহর থেকে রিসোর্টের দূরত্ব কত। কারন, আপনি সস্তায় রিসোর্ট পেয়ে বুকিং দিলেন, যা মালে শহর থেকে অনেক দূরে। ফলে হবে কি, রিসোর্টে যেতে আপনাকে সি-প্লেন ব্যাবহার করতে হবে। আর সি-প্লেন দিয়ে রিসোর্টে যাওয়া আসা করে আপনার খরচ কমার চেয়ে কয়েক গুন বেড়ে যেতে পারে!
তাই রিসোর্ট বুকিং করার সময় এই বিষয়টা খেয়াল রাখবেন। চেষ্টা করবেন মালে শহর থেকে কাছাকাছি কোথাও রিসোর্ট নিতে। এতে কম খরচে এবং কম সময়ে স্পিডবোট দিয়ে রিসোর্টে যাতায়েত করতে পারবেন।
বিমানবন্দর
বিমানের টিকিট কাটা, হোটেল বুকিং এবং লাগেজ ঘুছিয়ে নির্দিষ্ট দিনে ফ্লাইট টাইমের ৩ ঘন্টা পূর্বে এয়ারপোর্টে চলে আসুন। বাসা থেকে বের হওয়ার পূর্বে সাথে পাসপোর্ট, বিমানের টিকেট কপি, NID কপি, হোটেল বুকিং কপি, লাগেজ ইত্যাদি সব কিছু নেয়া হয়েছে কিনা যাচাই করে নিন।
মনে রাখবেন, বিমানবন্দরে চেক ইনের জন্য দেশের বাহিরে ভ্রমণের অন্তত ৩ ঘণ্টা পূর্বে বিমানবন্দরে পৌঁছান। না হলে চেক ইন কাউন্টার বন্ধ হয়ে যাবে। আর অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান ভ্রমণ করতে চাইলে ১ ঘণ্টা আগে এয়ারপোর্টে পৌঁছালেই হবে।
সব কিছু শেষে বিমানে গিয়ে উঠুন এবং ৪ ঘন্টা ২০ মিনিটের বিমান যাত্রা শেষে ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (MLE) নামুন।
হুলহুলে আইল্যান্ডের ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চেক আউটের সময় আপনার সব তথ্য যাচাই করে অন এরাইভাল ভিসার ফর্ম দিবে। ভিসা ফর্ম পূরণ করে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে আপনার অন এরাইভাল ভিসার কাজ সম্পূর্ণ করুন ও ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমসের সকল কাজ শেষে এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে আসুন।
বি:দ্র: আপনি আপনার পাসপোর্ট দিয়ে ফ্রিতে লোকাল সিম নিতে পারবেন।
আরও: কম খরচে বিমানের টিকিট করুন কুহুডাক এয়ার থেকে।
অ্যাটলস
মালদ্বীপে মোট ২৬টি অ্যাটলস (Atolls) রয়েছে। অ্যাটলস আবার কি জিনিস! অ্যাটলস এর বাংলা হচ্ছে, প্রবালপ্রাচীর। ছোট বড় অনেক গুলো দ্বীপ মিলে একটা প্রবালপ্রাচীর তৈরি হয়। আর এই এক এক টা প্রবালপ্রাচীর কে অ্যাটল বলা হয়ে থাকে। আর ২৬টি প্রবালপ্রাচীর বা অ্যাটলস নিয়ে মালদ্বীপ গঠিত হয়েছে।
মালদ্বীপে গিয়ে কি কি দেখবেন
মালদ্বীপে গিয়ে কি কি দেখবেন বা মালদ্বীপে গিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরবেন তার একটা লিস্ট দেয়া হল। এছাড়া আপনার ইচ্ছেমত যে কোন স্থানে ঘুরে বেড়াতে পারেন।
- ভ্রমণে আপনি হুলহুমালে সৈকতে বসে সমুদ্রের গাড় নীল রঙের পানি উপভোগ করতে পারেন ও মালে সিটি ঘুরে দেখা এবং শপিং করতে পারেন।
- মাফুশি আইল্যান্ডে বীচ ভিউ রুমে বসে রিল্যাক্স করা, সমুদ্র দেখা ও বীচে বসে চারপাশের পরিবেশ উপভোগ করতে পারেন।
- মাফুশি আইল্যান্ডের প্রধান আকর্ষন হচ্ছে নানারকম ওয়াটার অ্যাক্টিভিটি যার মধ্যে রয়েছে স্নরকেলিং উইথ শার্ক, টার্টেল ও ডলফিন, স্কুবা ডাইভিং এবং প্যারাসেইলিং এর মত দারুণ সব উপভোগ্য এক্টিভিটি। বিশেষভাবে বলা যায় যে, স্নরকেলিং উইথ শার্ক হবে আপনার মালদ্বীপ ট্রিপের সেরা অ্যাডভেঞ্চার।
- আপনি লাক্সারি প্রাইভেট বীচ রিসোর্টে অবশ্যই এক রাত যাপন করার চেষ্টা করবেন। এই দেশের প্রাইভেট বীচগুলোর আবহ ও সার্ভিসের কোন তুলনা হয় না।
- ওভারওয়াটার বাংলো গুলোতে সাধারনত ইন-বিল্ট পুল বা জাকুজ্জি থাকে। তাই ১৪০ ডলার খরচ করে ব্রেকফাস্ট ইন পুল সেবা নিতে পারবেন যাতে থাকবে পুলের ভেতর সকালবেলার সুস্বাদু ব্রেকফাস্ট খাবার।
- মালদ্বীপ পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর একটি স্থান। তাই যত ইচ্ছা ছবি তুলুন আর ভরিয়ে ফেলুন আপনার ইন্সটাগ্রাম! তবে খেয়াল রাখবেন, বেশি ছবি তোলা বা ভিডিও করতে গিয়ে ভ্রমণের আসল সৌন্দর্য্য দেখতে ভুলবেন না।
কিভাবে রিসোর্টে পৌছাবেন
আপনি এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে রিসোর্টে যাওয়ার জন্য স্পিডবোট, সীপ্লেন বা ডমেস্টিক ফ্লাইট ব্যাবহার করতে পারেন। অবশ্যই এটা নির্ভর করে আপনি এয়ারপোর্ট থেকে কত দূরে হোটেল বুকিং করেছেন।
আপনার রিসোর্টটি যদি মালের কাছাকাছি হয় তাহলে স্পিডবোটে করে চলে যেতে পারবেন। কেন স্পিডবোটে করে যেতে হবে তার কারন হল, বেশীরভাগ রিসোর্ট গুলো সমুদ্রের মাঝে এক এক দ্বীপে অবস্থিত।
স্পিডবোট গুলো বেশিরভাগ রিসোর্ট দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। আর আপনি যখন স্পিডবোট দিয়ে রিসোর্টের দিকে যেতে থাকবে তখন সমুদ্রের নীল পানি আর চারপাশের পরিবেশ আপনাকে দারুণ এক অভিজ্ঞতা দিবে। দূরত্বের উপর নির্ভর করে স্পিডবোট দিয়ে যেতে ২০ মিনিট থেকে ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
বি:দ্র: আপনার হোটেল/রিসোর্ট যদি আরও দূরে হয় তাহলে পানিতে ল্যান্ড করতে পারা সীপ্লেনে করে আপনাকে নিয়ে যাবে। স্পিডবোট থেকে শুরু করে সীপ্লেন সব কিছুর খরচ আপনার বহন করতে হবে অথবা হোটেল/রিসোর্ট বুকিং এর সময় যুক্ত করে নিতে পারেন।
৫ দিন ৪ রাত মালদ্বীপ ভ্রমণ প্ল্যান
চলুন আমরা ৫ দিন ৪ রাত মালদ্বীপ ভ্রমণ প্ল্যান তৈরি করার চেষ্টা করি। এটা একটা ধারণা মাত্র। আপনি আপনার মত করে সুন্দর একটা ভ্রমণ প্ল্যান তৈরি করে নিবেন।
১ম দিন ভ্রমণ প্ল্যান
১ম দিন কি কি ভ্রমণ প্ল্যান করবেন তার একটা লিস্ট দেয়া হল। এছাড়া আপনি চাইলে আপনার মত করে ভ্রমণ প্ল্যান করে নিতে আপ্রেন।
রিসোর্ট চেক-ইন
আপনার বুকিং করা নির্দিষ্ট হোটেল/রিসোর্টে পৌঁছে চেক-ইন করুন। রিসোর্টের কর্মীরা আপনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাবে এবং তাদের প্রয়োজনীয় ফর্মালিটি শেষ করে আপনাকে আপনার রুমে প্রবেশ করার অনুমতি দিবে। রুমে ঢুকে কিছুটা বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করুন। এরপর আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা শুরু করুন।
রিসোর্ট এক্সপ্লোর
হোটেল/রিসোর্টে উঠার পর কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে রিসোর্ট এক্সপ্লোর করতে বের হতে পারেন। রিসোর্টের চারপাশ দেখতে কেমন। চকচকে নীল পানিতে পা ভেজাতে পারেন। এছাড়া চারোপাশ ঘুরে দেখতে পারেন। এভাবে করে আপনার ভ্রমণের প্রথম দিন উপভোগ করুন।
২য় দিন ভ্রমণ প্ল্যান
আপনার ভ্রমণের ২য় দিনে উপভোগ করুন মালদ্বীপের আসল সৌন্দর্য। দ্বিতীয় দিনে সকালের নাস্তা শেষে বেরিয়ে পরুন। কি কি স্থান ঘুরে দেখতে পারেন তা নিচে দেয়া হল-
আন্ডারওয়াটার স্পোর্টস এবং ডাইভিং
২য় দিনে আপনি আন্ডারওয়াটার স্পোর্টস এবং ডাইভিং করতে পারেন। বলা হয়ে থাকে মালদ্বীপ তার সমৃদ্ধ সামুদ্রিক জীবন এবং প্রাণবন্ত প্রবাল প্রাচীরের জন্য বিখ্যাত।
স্নরকেলিং বা স্কুবা ডাইভিংয়ের মতো এক্টিভিটিসের মাধ্যমে ন্ডারওয়াটার অ্যাডভেঞ্চার দিয়ে আপনার দিন শুরু করতে পারেন। আপনি যখন ভ্রমণ করবেন তখনকার ঋতু এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে রঙিন মাছ, সামুদ্রিক কচ্ছপ এবং এমনকি মান্তা রশ্মি বা তিমি হাঙরের বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
সার্ফিং
আপনার যদি সার্ফিং করতে ভালো লাগে বা আগ্রহী হোন তাহলে, এখানে চমৎকার সার্ফিংয়ের সুযোগ রয়েছে। বিশ্ব মানের সার্ফিং ব্যবস্থার পাশাপাশি সার্ফ উৎসাহীরা ভারত মহাসাগরের অত্যাশ্চর্য পটভূমির মধ্যে রোমাঞ্চকর রাইডগুলি উপভোগ করতে পারবেন।
স্যান্ড ব্যাঙ্ক পরিদর্শন
সার্ফিং শেষে সমুদ্রে ভাটার সময় পাড়ের বালির তীরগুলি ঘুরে দেখতে আপ্রেন। এখানে নীল জলে ঘেরা আদিম বালির তীরগুলি এক মনোরম বিচ্ছিন্ন দ্বীপ তৈরি করেছে। চাইলে এখানে বিশ্রাম নিতে পারেন বা সাঁতার কাটতে পারেন।
ডলফিন শো
স্যান্ড ব্যাঙ্ক পরিদর্শন শেষে হোটেলে ফিরে খাবার খেয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে বিকেলের দিকে ডলফিন শো দেখতে চলে আসুন। স্ফটিক-স্বচ্ছ পানিতে ডলফিনদের ঝাঁক দেখতে নৌকা নিয়ে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়তে পারেন।
সূর্যাস্ত উপভোগ
ডলফিন শো শেষে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে রোমান্টিক সূর্যাস্ত দেখতে পারেন। দিগন্তের নীচে ডুবন্ত সূর্যের শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য দেখার সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না।
রিসোর্ট এক্টিভিটি
মালদ্বীপে হাজারের উপর রিসোর্ট রয়েছে আর বেশীরভাগ রিসোর্ট আপনার জন্য বিভিন্ন এক্টিভিটিস অফার করে থাকে। সুইমিং পুল, ফিটনেস সেন্টার বা স্পা ট্রিটমেন্টের মতো সবধরনের সুবিধাই এখানে রয়েছে।
৩য় দিন ভ্রমণ প্ল্যান
মালদ্বীপ ভ্রমণের ৩য় দিন আপনি সকালে উঠে সকালের নাস্তা করে রিসোর্ট ছাড়িয়ে স্থানীয় দ্বীপগুলোতে ঘুরে আসতে পারেন। এই দেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করুন।
দ্বীপ ভ্রমণ
আপনি বা আপনারা একজন স্থানীয় গাইড ভাড়া করে অথবা নিজেরা কাছাকাছি জনবসতিপূর্ণ দ্বীপে ঘুরে আসতে পারেন। এখানের প্রতিটি দ্বীপের নিজস্ব আকর্ষণ রয়েছে এবং দ্বীপগুলো মালদ্বীপের জনগণের দৈনন্দিন জীবনের পরিচয় বহন করে।
স্থানীয়দের সংস্কৃতি
আপনি বা আপনারা স্থানীয় দ্বীপগুলিতে সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। এখানকার স্থানীয়রা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করুন, তাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন এবং তাদের সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ এবং রীতিনীতির স্বাক্ষী হতে পারেন।
স্থানীয় বাজার
হাতে একটু সময় নিয়ে স্থানী থোলহি বাজার থেকে ঘুরে আসতে পারেন। এই বাজারে প্রচুর মানষ কেনা-কাটা করে থাকে তাই বাজার থাকে সব সময় কোলাহলপূর্ণ।
এই বাজারে আপনি তাজা খাবার থেকে শুরু করে মশলা, হস্তনির্মিত কারুশিল্প, ঐতিহ্যবাহী পোশাক সহ স্থানীয় নানা পণ্য পাবেন। আপনার পছন্দ অনুযায়ী বাজার থেকে কিনে নিতে পারেন।
ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প
মালদ্বীপ তার অসাধারণ হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখানে আপনি বার্ণিশ, কুয়ার দড়ি তৈরি, মাদুর বুনন এবং জটিল কাঠ খোদাই ইত্যাদি হস্তশিল্প পাবেন।
মালদ্বীপের খাবার
মালদ্বীপের বিখ্যাত খাবার হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ। এছাড়া সামুদ্রিক খাবার, নারকেল ভিত্তিক তরকারি, মাস হুনি বা বাজিয়া সহ নানা প্রকার ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে।
বোদু বেরু পারফরম্যান্স
আপনি বা আপনারা চাইলে মালদ্বীপের ঐতিহ্যবাহী বোদু বেরু পারফরম্যান্সে অংশগ্রহণ করতে পারেন। বোদু বেরু এখানে একটি প্রাণবন্তসঙ্গীত এবং নৃত্য ফর্ম। চাইলে সংস্কৃতির প্রাণবন্ত চেতনাকে প্রতিফলিত করে ড্রামের বাজনা, সুরেলা গান এবং উদ্যমী নাচ উপভোগ করতে পারেন।
স্থানীয় উৎসব
আপনি যখন ভ্রমণ করবেন তখন যদি স্থানীয় কোনো উৎসব থাকে তাহলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতে পারেন। মন খুলে উদযাপনে যোগ দিন আর মেতে উঠুন উৎসবে।
সমুদ্র সৈকতে পিকনিক
যদি আপনি দ্বীপ ঘুরে দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে যান তাহলে, এবার আপনার বিশ্রামের পালা। আরামদায়ক প্রশান্তির জন্য সমুদ্রতীরে পিকনিকের ব্যবস্থা করতে পারেন। সমুদ্র সৈকতের পাশে একটি নির্জন স্থান খুঁজে রিসোর্ট থেকে খাবার নিয়ে এসে এখানে পিকনিক করতে পারেন।
৪র্থ দিন ভ্রমণ প্ল্যান
৪র্থ দিন ভ্রমণ প্ল্যানে রিল্যাক্সেশন এবং স্পার জন্য সময় রাখুন। মালদ্বীপে রয়েছে বিশ্বমানের স্পা সুবিধা। তাই ভ্রমণে আপনি স্পা নিতে পারেন।
স্পা ট্রিটমেন্ট
বরাবরের মত মালদ্বীপ তার ব্যতিক্রমী স্পা সুবিধার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে। আপনি এখানে নানা রকমের প্রাচীন এবং সমসাময়িক স্পা নিতে পারবেন। প্রশান্তিদায়ক ম্যাসেজ থেকে শুরু করে ফেসিয়াল এবং বডি ট্রিটমেন্ট পর্যন্ত, দক্ষ থেরাপিস্টের মাধ্যমে দক্ষতার সাথে আপনাকে পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি দিতে সক্ষম।
যোগব্যায়াম
আপনি আপনার মন এবং শরীরকে শিথিল রাখার জন্য ইয়োগা সেশনে অংশগ্রহণ করতে পারেন যা আমরা যোগব্যায়াম বলে থাকি।
সাগর পাড়ের সময় ব্যয় করুন
আপনি যে রিসোর্টে উঠেছেন সে রিসোর্টের চারপাশে থাকা পুরনো সৈকত গুলির ঘুরে দেখার জন্য সময় ব্যয় করুন। সমুদ্র পাড়ের বালির উপর হাটতে পারেন, সূর্যের নিচে রোদ পোহাতে পারেন অথবা সতেজ জলে ডুব দিতে পারেন।
ওয়াটার ভিলা
আপনি যদি প্রাইভেল আইল্যান্ড ওয়াটার ভিলায় থাকেন তাহলে ওয়াটাভিলার অন্যন্য সব সুবিধাগুলো নিতে পারেন। আপনার প্রাইভেট ডেকে বিশ্রাম নিতে পারেন, জ্যাকুজিতে ভিজতে পারেন অথবা ওভারওয়াটার হ্যামকে শান্তিতে ঘুমাতে পারেন।
সূর্যাস্ত উপভোগ
এখানে সূর্যাস্তের পূর্ব সময়য় কে গোল্ডেন আওয়ার বলে। আপনি এই গোল্ডেন আওয়ার খ্যাত সময়ে সমুদ্র সৈকতে চুপচাপ হাঁটতে পারেন।
সাঁতার কাটুন
আপনার রিসোর্টের পুল বা আপনার ওয়াটার ভিলার চারপাশের শান্ত পানিতে সাঁতার কাটতে পারবেন। এখানে প্যাডেলবোর্ডিং বা কায়াকিংয়ের মতো অন্যন্য এক অভিজ্ঞতার নিতে পারেন।
৫ম দিন ভ্রমণ প্ল্যান
৫ দিনের এই ট্যুর প্লানের শেষ দিন অর্থাৎ ৫ম দিনে আপনার ভ্রমণ প্ল্যান করুন। আপনার ভ্রমণের সমাপ্তি যেন সুন্দর এবং আনন্দময় হয় তার দিকে খেয়াল রাখুন।
ট্যাক্স-ফ্রি কেনাকাটা
ভ্রমণের শেষের দিন আপনি বিনা ট্যাক্সে বা ট্যাক্স-ফ্রি বিমানবন্দরে কেনাকাটা করতে পারেন। মালদ্বীপের ভ্রমণ অ্যাডভেঞ্চারের স্মৃতি ধরে রাখতে সাথে এমন কিছু কেনাকাটা করুন যা আপনার স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে।
মালদ্বীপকে বিদায়
শেষের দিন মালদ্বীপকে বিদায় জানানোর আগে খেয়াল রাখুন আপনার হোটেল/রিসোর্টে চেক-আউট টাইম কখন এবং আপনার ফিরতি প্লেনের ফ্লাই টাইম কখন। ফ্লাইট টাইমের ৩ ঘন্টা পূর্বে এয়ারপোর্টে থাকুন। রিসোর্ট চেক-আউট করার সময় খেয়াল রাখুন আপনার প্রয়োজনীয় মালামাল ঠিক মত ব্যাগে ডুকিয়েছেন কিনা।
ইমিগ্রেশন ফর্মালিটি
মালদ্বীপকে বিদায় জানিয়ে ইমিগ্রেশন ফর্মালিটির জন্য ইমিগ্রেশন এবং সিকিউরিটি চেকিং করতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট নিয়ে সামনে এগিয়ে যান। আপনার ৫ দিনের ভ্রমণ শেষে নিরাপদে বাসায় ফিরে আসুন।
মালদ্বীপ ভ্রমণে কত টাকা লাগে
বলা যায় যে মালদ্বীপ ভ্রমণ বেশ ব্যয়বহুল। তবে আপনি যদি বাজেট ট্যুর করতে চান তাহলে আপনার খুব গুছানো এবং বাজেট ফ্রেন্ডলি একটা ট্যুর প্ল্যান করতে হবে।
নিচে ২ জনের মালদ্বীপ ভ্রমণ খরচ কত হতে পারে তার একটা ধারণা দেয়া হল-
বিমানের টিকেট
বিমানে ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে মালদ্বীপের রিটার্ন টিকেটের মূল্য ২ জনের ৮৫,০০০ থেকে ১,১৮,০০০ পর্যন্ত হতে পারে। তবে মনে রাখবেন যে, টিকেট মূল্য/ফেয়ার কম বা বেশি হওয়া নির্ভর করবে আপনি মালদ্বীপ ভ্রমণের কতদিন আগে টিকেট বুক করছেন তার ওপর। সুতরাং চেষ্টা করুন ১ থেকে ৩ মাস আগে টিকিট বুক করতে।
হুলহুমালে
- এয়ারপোর্ট থেকে হুলহুমালে যাতায়াত খরচ: ৪৫০ টাকা (ট্যাক্সিতে গেলে)
- রুম রেন্ট (দুই রাত): ১৫,০০০ টাকা
- খাবার খরচ: ১০,০০০ টাকা
- মালে শহর ঘুরে দেখা ও সিম কার্ড কেনার খরচ: ৮,০০০ টাকা
মাফুশি আইল্যান্ড
- হুলহুমালে থেকে মালে এয়ারপোর্ট যাতায়াত খরচ: ৪৫০ টাকা (ট্যাক্সিতে গেলে)
- মালে থেকে মাফুশি আইল্যান্ড খরচ: ৫,০০০ টাকা (স্পীডবোটে)
- রুম ভাড়া (দুই রাত): প্রায় ১৬,০০০ টাকা
- খাবার খরচ: ১০,০০০ টাকা
- ওয়াটার অ্যাক্টিভিটি খরচ: ৩৫,০০০ টাকা
- কোভিড টেস্ট (দুই জনের): ৮,৫০০ টাকা
প্রাইভেট আইল্যান্ড রিসোর্ট
- রুম ভাড়া (এক রাত): প্রায় ১ লাখ টাকা (স্পীডবোটে যাতায়াত সহ)
- খাবার খরচ: ২৫,০০০ টাকা
- মাফুশি থেকে মালে এয়ারপোর্ট যাতায়াত খরচ: ৫,০০০ টাকা (স্পীডবোটে)
টাকা বাঁচাবেন কিভাবে
প্রচুর খরচ তাই না? আসুন এবার জানার চেষ্টা করি কি উপায়ে আমরা ভ্রমণের খরচ কমাতে পারি।
- আপনি যদি বাজের ট্যুর করতে চান তাহলে মালদ্বীপে সবচেয়ে সাশ্রয়ী যাতায়াত মাধ্যম হচ্ছে ফেরী। তাই এয়ারপোর্ট-হুলহুমালে-এয়ারপোর্ট রুটে ফেরীতে যাতায়াত করে টাকা বাঁচাতে পারেন। তবে আমরা এটা সুপারিশ (Recommend) করি না।
- মাফুশি আইল্যান্ডে বাঙালি খাবার খেলে খাবারের খাতে অনেক টাকা বাঁচাতে পারেন।
- টাকা বাচানোর আরেকটি উপায় হচ্ছে অফ সিজনে ভ্রমণে যাওয়া। এসময় সব কিছুর দাম তুলনা মূলক কম থাকে।
- আপনি যদি প্রাইভেট রিসোর্টে ওয়াটার অ্যাক্টিভিটিজ ট্রাই না করেন বরং সব ওয়াটার অ্যাক্টিভিটিজ মাফুশি থেকে করে আসেন তাহলেও টাকা বাঁচাতে পারেন।
- আরেকটি উপায় হলো, মালদ্বীপ এয়ারপোর্ট বা লোকাল মানি এক্সচেঞ্জার থেকে মুদ্রা বিনময় না করে ঢাকা থেকে মানি এক্সচেঞ্জ করে নিয়ে গেলে আপনার টাকা বাঁচাতে পারেন। এর কারন হল, লোকাল অথবা মালদ্বীপ এয়ারপোর্টে আপনার টাকার বিপরীতে ডলার অথবা মালদ্বীপীয় রুফিয়াহর মূল্য কম পাবেন।
ভ্রমণে যে ৭টি জায়গা দেখতে ভুলবেন না
অসাধারণ সৌন্দর্যের দেশ মালদ্বীপ। এই দেশে ভ্রমণে গেলে যে ৭টি জায়গা দেখতে ভুলবেন না তার লিস্ট নিচে দেয়া হল।
- মালে সিটি
- ভাধু আইল্যান্ড
- ইথা আন্ডারসি রেস্টুরেন্ট
- হোয়েল সাবমেরিন
- গ্র্যান্ড ফ্রাইডে মসজিদ
- ব্যানানা রিফ
- ফুলহাদু আইল্যান্ড
ভ্রমণে হাতে যদি বেশি সময় নিয়ে ঘুরতে যান তাহলে উপরের ৭টি স্থান ঘুরে আসতে পারেন। আশাকরি আপনার ভালো লাগবে।
ভ্রমণ জিজ্ঞাসা
মালদ্বীপ ভ্রমণে সাধারণ কিছু প্রশ্ন-উত্তর বা ভ্রমণ জিজ্ঞাসা। এরপরও যদি আপনার কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে কমেন্টে জানাতে পারেন অথবা আমাদের ফেসবুক পেজে কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে জানাতে পারেন।
মালদ্বীপের এক টাকায় বাংলাদেশের কত?
১ মালদ্বীপীয় রুফিয়াহ = ৭ টাকা ৫৪ পয়সা (কম-বেশি হতে পারে)।
মালদ্বীপ এর ভাষার নাম কি?
ধিবেহী ভাষা বা মালদ্বীপীয় ভাষা। এছাড়া সিংহলি ভাষা, আরবি ভাষা এবং বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার প্রচলন আছে। তবে বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়।
মালদ্বীপ কি মুসলিম দেশ?
হ্যাঁ। সুন্নি ইসলাম মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় ধর্ম।
মালদ্বীপ এর রাজধানীর নাম কি?
মালদ্বীপের নামকরণ করা হয়েছে প্রধান দ্বীপ এবং রাজধানী মালে।
মালদ্বীপ যেতে কত বছর বয়স লাগে?
মালদ্বীপে যাওয়ার জন্য বয়সসীমা নেই তবে, আপনি যদি কাজের জন্য মালদ্বীপ যেতে চান তাহলে আপনার বয়স সর্বনিম্ন ২০ বছর হতে হবে।
মালদ্বীপে কয়টি দ্বীপ আছে?
মালদ্বীপে পাবলিক দ্বীপ এবং প্রাইভেট দ্বীপ মিলে ১২০০ বেশি ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে!
ফেসবুক: কুহুডাক