শাপলা গ্রাম সাতলা (Shapla Gram Satla) বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের বিলগুলো স্থানীয়দের কাছে শাপলার বিল নামে পরিচিত।
আজকের পোস্টে আমরা বরিশালের শাপলা গ্রাম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। চলুন শুরু করা যাক…
শাপলা গ্রাম ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | শাপলা গ্রাম |
ধরন | বিল |
অবস্থান | সাতলা, উজিরপুর, বরিশাল |
আয়তন | প্রায় ১০ হাজার একর |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | প্রায় ১৬৬ কিলোমিটার |
বরিশাল সদর থেকে দূরত্ব | প্রায় ৬০ কিলোমিটার |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
সাতলাকে বরিশালের শাপলার রাজ্য বলা হয়ে থাকে। শাপলার রাজ্যে ফুটে রয়েছে হাজারো লাল শাপলা। এটি একটি বিল। বিলের পানিতে ফুটে রয়েছে হাজার হাজার লাল শাপলা দেখে মনে হবে যেন সূর্য্যের লাল আভাকেও হার মানায়।
কি আছে শাপলা গ্রামে
বরিশাল সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে সাতলা গ্রাম। আপনি সাতলা ভ্রমণে গেলে দেখতে পাবেন যে, এখানে অনেক গুলো বড় বড় বিল রয়েছে। আর বিলে ফুটে রয়েছে হাজার হাজার লাল শাপলা।
সাতলা গ্রামের বিলগুলো স্থানীয়দের কাছে শাপলার বিল নামে পরিচিতি রয়েছে। আপনার যদি নৌকা করে শাপলা বিল ঘুরতে ভালো লাগে তাহলে সাতলা ভ্রমণে যেতে পারেন।
শাপলা বিলে ৩ ধরণের লাল, সাদা আর বেগুনি শাপলা দেখতে পাওয়া যায়। এখানে ঠিক কবে থেকে শাপলা ফোটা শুরু হয়েছে তা সঠিক করে কেউ বলতে পারে না। তবে, এই বিলে শাপলার পরিমান এতো বেশি দেখে এটাকে শাপলা গ্রাম নামে অবহিত করা হয়ে থাকে।
আপনার যদি ফটোগ্রাফি করতে ভালো লাগে তাহলে সাতলা হবে আদর্শ জায়গা। প্রায় ১০ হাজার একর জলাভূমির শাপলা বিলে আপনি লাল শাপলা সবচেয়ে বেশি দেখতে পাবেন।
সারা দেশে সাতলা থেকেই বেশি শাপলা ফুল সরবরাহ করা হয়। আর গ্রামের অধিকাংশ মানুষ তাই শাপলা বিপণনের সাথে যুক্ত রয়েছে।
আরও: তারুয়া সমুদ্র সৈকত
ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
শাপলা ফুটার একটা নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। সাধারণত আগস্ট মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই ৩ মাস এখানে শাপলা ফুটে থাকে। তাই এই সময় আপনি এখানে ভ্রমণে আসলে সবচেয়ে বেশি শাপলা দেখতে পাবেন।
হাজার হাজার শাপলা (Water Lily) একসাথে দেখতে চাইলে আগস্ট মাস থেকে অক্টোবর মাসে মধ্যে সাতলা চলে যান। আর শাপলা দেখতে চাইলে চেষ্টা করবেন খুব সকালে যেতে। কারণ, বেলা গড়ানোর সাথে সাথে শাপলা ফুল বুজে যায় কিংবা শাপলা ফুল ব্যবসাহীরা ফুল বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যায়।
তাই খুব সকালে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। আর দূর থেকে এখানে ভ্রমণে গেলে এক রাত গ্রামে থেকে ভোরে শাপলা বিলে চলে যেতে পারেন।
আরও: নিঝুম দ্বীপ
কিভাবে যাবেন
আপনি বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে সাতলা ভ্রমণে যেতে পারবেন।
ঢাকা থেকে বরিশাল বাস ভ্রমণ
রাজধানী ঢাকা থেকে বাসে ভ্রমণে যেতে চাইলে গাবতলি বাস টার্মিনাল হতে শাকুরা, ঈগল এবং হানিফ পরিবহনের এসি বা নন-এসি বাস নিয়মিত বিরতিতে প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহণের বাস যাতায়াত করে থাকে।
ভাড়া: বাসে জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ৬০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা নিতে পারে। মনে রাখবেন ঢাকা থেকে বরিশালগামী বাসগুলো সাধারণত বরিশাল শহরের নতুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ডে যায়।
ঢাকা থেকে বরিশাল লঞ্চ ভ্রমণ
আপনি চাইলে ঢাকা থেকে বরিশাল লঞ্চে যেতে পারেন। ঢাকা থেকে লঞ্চে যাওয়া সবচেয়ে ভাল মাধ্যম।
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে বরিশালগামী এম ভি মানামী, কুয়াকাটা ২, কীর্তনখোলা ১০, এডভেঞ্চার ১, এডভেঞ্চার ৯, সুন্দরবন ৯, সুন্দরবন ১০, সুরভী ৭, সুরভী ৮, পারাবত ৯ ইত্যাদি লঞ্চগুলো ছেড়ে যায়। লঞ্চগুলো পরদিন ভোরে গিয়ে বরিশাল পৌঁছায়।
ভাড়া: লঞ্চে জনপ্রতি ২০০ টাকা থেকে ৮০০০ টাকা নিতে পারে।
বরিশাল থেকে সাতলা ভ্রমণ
আপনি বরিশাল থেকে বাসে শিকারপুর এসে অটো ভাড়া করে উত্তর সাতলা যেতে পারবেন। এছাড়া বাসে বরিশাল যাওয়ার পথে উজিরপুরের নুতনহাট বাস টার্মিনালে নেমে সেখান থেকেও সরাসরি অটো ভাড়া করে সাতলা শাপলা বিল যেতে পারবেন।
আরও একটি উপায় হলো, আপনি বরিশাল থেকে মহেন্দ্র গাড়িতে চড়েও শাপলা গ্রাম যেতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
বরিশাল জেলা আমড়ার জন্য বিখ্যাত। সাতলা ভ্রমণে গিয়ে আপনি খাওয়ার জন্য আশেপাশে ছোট ছোট দোকান পাবেন। এছাড়া ভালো মানের হোটেলের জন্য বরিশাল শহরে এসে খেতে পারেন।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবারের তালিকা
কোথায় থাকবেন
শাপলা বিলে ভ্রমণে গিয়ে থাকার জন্য আপনাকে শহরে আসতে হবে। কারন, সাতলায় থাকার মতো ভালো কোন ব্যবস্থা নেই।
তবে, খুব সকালে বিলে যেতে চাইলে আপনি সাতলার স্কুলে অথবা স্থানীয় কোন গৃহস্তের বাড়িতে কথা বলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। গ্রামের মানুষ খুবই অতিথিপরায়ন।
আর বরিশাল শহরে থাকার জন্য গ্র্যান্ড পার্ক, রিচমার্ট গেস্ট হাউজ, হোটেল এরিনা, এথেনা, সেডোনা সহ বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল পাবেন। কম খরচে থাকতে চাইলে পোর্ট রোড ও সদর রোডের পাশের হোটেলে থাকতে পারেন।
ফেসবুক: Kuhudak