লোহাগড় মঠ (Lohagor Moth) বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার লোহাগড় গ্রামে অবস্থিত। লোহাগড় গ্রামে ডাকাতিয়া নদীর পাশে অবস্থিত এই মঠ প্রায় ৪ থেকে ৭ শতাব্দী পুরনো। লোহাগড়ের জমিদার বাড়ির জমিদাররা এই মঠ তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়।
আজকের পোস্টে আমরা ফরিদগঞ্জের লোহাগড় মঠ সম্পর্কে জানার চেষ্টা। চলুন শুরু করা যাক…
আরও: ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর ভ্রমণ
লোহাগড় মঠ ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | লোহাগড় মঠ |
ধরন | মঠ |
অবস্থান | লোহাগড়, বালিয়া, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর |
স্থপতি | ৪ থেকে ৭ শতাব্দী |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | ১১৭ কিলোমিটার (প্রায়) |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
লোহাগড় মঠ একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন নিদর্শন যা ফরিদগঞ্জ উপজেলার চান্দ্রা বাজার থেকে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা
মঠের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় যে, আজ থেকে প্রায় ৪০০ থেকে ৭০০ বছর পূর্বে লোহাগড় জমিদার বাড়ির জমিদাররা এই এলাকাটিতে রাজত্ব করতেন। লোহাগড়ের জমিদার বংশের লোহা ও গহড় নামের অত্যাচারী ও প্রতাপশালী দুই ভাই ছিলেন। তারা জমিদার বাড়ির অবস্থানের সাথে ডাকাতিয়া নদীর কূল ঘেঁষে এই মঠটি নির্মাণ করেছিলেন। মঠ নির্মানের পর তাদের নামেই এই গ্রাম এবং মঠের নামকরণ করা হয়েছিল।
প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এই লোহাগড় মঠে বর্তমানে ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতার ৩টি মঠ, প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ ও মাটির নিচের গহ্বর রয়েছে। ৩ মঠের সবচেয়ে বড় মঠটির শৈল্পিক কারুকার্যময় এবং অন্যান্য মঠ থেকে আলাদা ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
কথিত আছে যে, জনৈক এক ব্রিটিশ কর্তাব্যক্তি ঘোড়া নিয়ে প্রাসাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, কেমন রাজা রে এরা বাবু রাস্তা গুলো ঠিক নেই!। পরবর্তীতে একথা জমিদারের গোলামরা জমিদারের ২ ছেলে লৌহ ও গহড়কে অবহিত করেন।
পরবর্তীতে ওই কর্তাব্যক্তির জন্য নদীর তীর হতে জমিদার বাড়ি পর্যন্ত সিকি ও আধুলি মুদ্রা দিয়ে রাস্তা তৈরী করা হয়েছিল। যার প্রস্ত ছিল ২ হাত, উচ্চতা ১ হাত এবং দৈর্ঘ্য ২০০ হাত লম্বা।
লোকমুখে জানা যায় যে, অত্যাচারী জমিদারী আমলে সাধারণ মানুষ এদের বাড়ির সামনে দিয়ে চলাফেরা করতে পারতন না। ডাকাতিয়া নদীর কুলে তাদের বাড়ির অবস্থানের নির্দেশিকা স্বরূপ সুউচ্চ এই মঠটি নির্মাণ করেছিলেন।
এরপর যখন জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হয় তখন মানুষ স্বর্ণের লোভে মঠের শিখরে উঠার চেষ্টায করে অনেকে গুরুতর আহত হয়েছিল। শুধু তাই নয় কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে বলেও জানা গিয়েছে।
কিছুসূত্র থেকে জানা গিয়েছে যে, যে দুই ভাই এই মঠটি নির্মাণ করেছিলেন। প্রথমে এখানে পাশাপাশি ৫টি মঠ ছিল কিন্তু বর্তমানে এখানে মাত্র ৩টি মঠ অবশিষ্ট রয়েছে।
কিভাবে যাবেন
আপনি বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে এখানে ভ্রমণে যেতে পারবেন। রাজধানী ঢাকা থেকে ভ্রমণে যেতে চাইলে বাসে, লঞ্চে কিংবা ট্রেনে যেতে পারেন।
সড়ক পথে কুমিল্লা হয়ে যেতে পারেন। তবে লঞ্চে যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক। নৌপথে ঢাকার সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে এমভি সিরিজের আল বোরাক, সোনার তরী, মেঘলা রাণী, বোগদাদীয়া, ঈগল, তাকওয়া, মিতালি এবং ইমাম হাসান নামের লঞ্চ চাঁদপুর নৌপথে যাতায়াত করে থাকে।
আপনি সদর ঘাটে সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা বিরতিতে চাঁদপুরের লঞ্চ পাবেন। চাঁদপুর নেমে চাঁদপুর শহর থেকে লোহাগড় মঠের দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। আপনি চাঁদপুর জেলা সদর থেকে বাস, CNG কিংবা মোটর সাইকেলে চান্দ্রা বাজার হয়ে লোহাগড় মঠে যেতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
চাঁদপুর জেলা ইলিশের জন্য বিখ্যাত। মঠ ভ্রমণে এসে খাওয়ার জন্য ফরিদগঞ্জে শাহী রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে রাজধানী, হাজি রেস্টুরেন্ট সহ বেশ কিছু খাবারের হোটেল পাবেন। আপনি যদি লঞ্চে ভ্রমণে যান তাহলে লঞ্চ ঘাটের যেকোন লোকাল রেস্টুরেন্টে অথবা কালীবাড়ি রোডের ক্যাফে কর্নারের পদ্মার ইলিশ খেতে ভুলবেন না।
কোথায় থাকবেন
এই দর্শনীয় স্থানটি একদিনের জন্য চমৎকার। তবে, আপনি চাইলে চাঁদপুরের বড় ষ্টেশন রোড ও কুমিল্লা রোডে বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে এখানে থাকতে পারেন। এছাড়া আপনি চাইলে ঢাকা থেকে ১দিন ভ্রমণ করে আসতে পারবেন।
মঠ ভ্রমণ টিপস
- গ্রীষ্মে ভ্রমণের সময় সাথে করে ক্যাপ, সানগ্লাস, ছাতা ইত্যাদি নিয়ে নিবেন।
- মঠে ভ্রমণের উপযুক্ত সময় শীতকাল। কারন এসময় রাস্তাঘাট ভালো থেকে কিন্তু বর্ষাকালে এই মঠে যাওয়ার রাস্তা বেশ খারাপ হয়ে যায়।
- ভ্রমণের সময় সাথে করে খাবার পানি নিয়ে নিবেন।
ফেসবুক: Kuhudak