সাঙ্গু নদী (Sangu River) বা শঙ্খ নদী বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চল চট্টগ্রাম বিভাগের বান্দরবান (Bandarban) জেলায় অবস্থিত একটি নদী। ২৯৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১১৯ মিটার গড় প্রস্থের নদিটি প্রকৃতি সর্পিলাকার। নদীর পাশে বসবাস কারি লােকজনের ৯০ শতাংশই মারমা। দৈনন্দিন কাজে তারা এই পাহাড়ি নদীর ওপর নির্ভরশীল।
আজকের পোস্টে আমরা সাঙ্গু নদী সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। চলুন শুরু করা যাক…
আরও: মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র
সাঙ্গু নদী ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | সাঙ্গু নদী বা শঙ্খ নদী |
ভিন্ন নাম | রেগ্রীইং খ্যং অর্থাৎ স্বচ্ছ নদী |
ধরন | পাহাড়ি নদী |
অবস্থান | লাগপাই, থানচি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম |
উচ্চতা | ১৮৩ মিটার (৬০০ ফিট) |
দৈর্ঘ্য | ২৯৪ কিলোমিটার (১৮৩ মাইল) |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | ৩৯০ কিলোমিটার (প্রায়) |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবস্থিত একটি পাহাড়ি নদী সাঙ্গু। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী তবে প্রথম হচ্ছে কর্নফুলী। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে কয়েকটি নদীর উৎপত্তি তার মধ্যে সাঙ্গু নদী অন্যতম।
ইতিহাস ও নামকরণ
বাংলাদেশর পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবো কর্তৃক সাঙ্গু নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী ১৫ নাম্বার। ১৮৬০ সালের দিকে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের গেজেটিয়ার প্রকাশকালে ব্রিটিশ শাসকরা ইংরেজিতে এই নদীর নাম দেন সাঙ্গু। তবে মারমা সম্প্রদায়ের ভাষায় শঙ্খকে রিগ্রাই থিয়াং অর্থাৎ স্বচ্ছ পানির নদ বলা হয়।
বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার সীমান্তবর্তী মদক এলাকার পাহাড়ে এ নদীর জন্ম হয়েছে বা উৎপত্তি হয়েছে। বান্দরবান জেলা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, আনােয়ারা ও বাঁশখালীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই নদী একেবারে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। উৎসমুখ হতে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭০ কিলোমিটার।
আরও: বান্দরবান জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
দেখার মত কি আছে সাঙ্গু নদীতে
সাঙ্গু নদীতে ভ্রমণে গেলে নদী, পাহাড়, চারদিকে সবুজ সমারোহ দেখে আপনার ভালো লাগবেই। পাহাড়ের কোল বেয়ে এই নদী এঁকেবেঁকে চলছে গেছে। কোথাও উন্মত্ত আবার কোথাওবা শান্ত এই নদী। মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের পাহাড় থেকে শুরু করে বান্দরবানের ভিতর দিয়ে প্রায় ১৭৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে অবশেষে কর্ণফুলি হয়ে বঙ্গপোসাগরে পড়েছে এই নদী।
এছাড়া এখানে পাহাড়ি এলাকার প্রকৃতি অনুযায়ী অসংখ্য ছোটবড় ঝর্ণা থেকে সৃষ্টি হওয়া ছোট ছোট পাহাড়ি নদী বা ছড়া এসে মিশেছে সাঙ্গু নদীতে। আপনি ইচেছ করলেই বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে স্বল্প খরচে নৌকা বা বোট যোগে নৌকা ভ্রমণে যেতে পারবেন।
শঙ্খ থেকে সাঙ্গু নদী
বাংলাদেশের নদীগুলোর একটি ধারা হচ্ছে যে, উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে থাকে। কিন্তু চট্টগ্রাম বিভাগের বৃহত্তম জলধারা সাঙ্গু দক্ষিণ থেকে প্রথমে গেছে উত্তরে, তারপর পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে এগিয়েছে বঙ্গোপসাগরের দিকে!
এই নদীর একটি অংশ হচ্ছে অমায়ক্রি চং বা রেমাক্রি চং বা প্রধানমন্ত্রীর খাল! মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষে বাংলাদেশের সর্বশেষ রেমাক্রি ইউনিয়নের নাম এ রেমাক্রি চং-এর নাম অনুসারেই। ভাবা যায়? এই যে শঙ্খ থেকে সাঙ্গু আর অমায়ক্রি থেকে রেমাক্রি নামের পরিবর্তন তার কিন্তু রয়েছে বেশ মজার ইতিহাস।
এখানে অমায়ক্রি অর্থ প্রধানমন্ত্রী আর অমায়ক্রি চং অর্থ প্রধানমন্ত্রীর খাল। রেগ্রীইং বোমাংগ্রী বা শঙ্খনদীর রাজা এবং অমায়ক্রি চং বা প্রধানমন্ত্রীর খাল নামের অর্থ থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, এসব নদী বা খালই হলো এ এলাকার জনবসতি স্থাপন, জীবনধারণ ও শাসনকার্য চালানোর অন্যতম পাথেয়। বুঝতে পেরেছেন? এখনো তিন্দু, থানচি, বান্দরবানের মানুষ বোমাং রাজাকে রেগ্রীইং বোমাংগ্রী বলে। এর অর্থ শঙ্খনদীর রাজা।
আরও: সাজেক ভ্যালি
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সাঙ্গু নদীর দূরত্ব প্রায় ৩৯০ কিলোমিটার। আপনি ঢাকা থেকে ভ্রমণে যেতে চাইলে প্রথমে আপনাকে বান্দরবান জেলায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে এসি বা নন এসি সব ধরনের বাসই বান্দরবান যায়। এসি বাসের মধ্যে হানিফ, সেন্টমার্টিন হুন্দাই ও সৌদিয়া পরিবহন এবং নন এসি বাসের মধ্যে হানিফ, এস আলম, ইউনিক পরিবহনে যেতে পারেন।
খরচ: ঢাকা থেকে বাস ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা নিতে পারে।
বান্দরবান থেকে CNG নিয়ে থানচি বাজার হয়ে চলে আসতে পারেন লাগপাই। এখানেই আপনি সাঙ্গু নদীর দেখা পাবেন। এছাড়া থানচি বাজারের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে এই নদী।
কোথায় খাবেন
আপনি চাইলে থানচি বাজারে খেতে পারেন। স্থানীয়দের হরেক রকমের খাবার পাবেন এখানে।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবারের তালিকা
কোথায় থাকবেন
আপনি একদিনে সাঙ্গু নদী ভ্রমণ করে বান্দরবান শহরে চলে আসতে পারেন। বান্দরবান শহরে বিভিন্ন মানের ছোট বড় হোটেল রয়েছে। হোটেল হিল ভিউ, হোটেল প্লাজা বান্দরবান, হোটেল হিল্টন, হোটেল নাইট হেভেন থেকে শুরু করে অনেক হোটেল পাবেন এখানে। তবে আপনি যদি পিক সিজনে ছুটির দিনে ভ্রমণে যান তাহলে আগে থেকে পছন্দের হোটেল কিংবা রিসোর্টে বুকিং করে রাখলে ভালো হবে।
ফেসবুক: Kuhudak