পাগলা মসজিদ (Pagla Masjid) বা পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স প্রায় ২৫০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মসজিদ যা কিশোরগঞ্জ সদরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত।
আজকের পোস্টে আমরা বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত কিশোরগঞ্জ জেলার বিখ্যাত পাগলা মসজিদ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। চলুন শুরু করা যাক…
আরও: নিকলী হাওর, মিঠামইন এবং অষ্টগ্রাম
পাগলা মসজিদ ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | পাগলা মসজিদ |
ধরন | প্রাচীন মসজিদ |
অবস্থান | হারুয়া, কিশোরগঞ্জ সদর, ঢাকা |
স্থাপিত | ঈশা খাঁর আমল |
আয়তন | ৩.৮৮ একর |
পৃষ্ঠপোষক | ওয়াকফ্ স্টেট |
ধারণক্ষমতা | ৬,০০০ |
গম্বুজ সংখ্যা | ৩টি |
মিনার | ১টি |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | ১০৩ কিলোমিটার (প্রায়) |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
ঈশা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত, নরসুন্দা নদী বিধৌত, হাওড় অধ্যুষিত, কবি চন্দ্রাবতীর শিবমন্দিরসহ আরও গ্রাম বাংলার নানা রুপ বৈচিত্র ও সোনালী ঐতিহ্যের ধারক এই কিশোরগঞ্জ জেলা। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো তারই একটি ঐতিহাসিক স্থাপনার নাম পাগলা মসজিদ। যা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে আকাশছোঁয়া মিনারে দাঁড়িয়ে আছে।
মসজিদের ইমরাত খুবই সুন্দর এবং নির্মাণশৈলীও বেশ চমৎকার বলা যায়। আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত পাগলা মসজিদটি নানা ধরণের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে খ্যাত রয়েছে।
মসজিদ স্থাপত্যের একটি সাধারণ গাঠনিক রুপে গঠিত পাগলা মসজিদ যেমন- মূল প্রার্থণা কক্ষ, ছাদের উপর স্থাপিত অর্ধ-বৃত্তাকার গম্বুজ এবং উঁচু মিনার রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ভূখণ্ডের মানুষের সংস্কৃতি, ভূ-প্রকৃতি, ভূখণ্ড প্রভৃতি সকল দিকেই নজর রেখেই নির্মিত হয়েছে এই ধর্মীয় স্থাপত্য।
আরও: লালবাগ কেল্লা
ইতিহাস
পাগলা মসজিদের ইতিহাস সম্পর্কে যা জানা যায় তা হল… কথিত আছে যে, পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে আসে এবং বর্তমান মসজিদের কাছে স্থিতু হন। সেইসময় তাঁকে ঘিরে আশে পাশে অনেক ভক্তকূল সমবেত হয়েছিল। সেই পাগলের মৃত্যুর পর তাঁর সমাধির পাশে পরবর্তীতে এই মসজিদটি গড়ে ওঠেছে।
আবার অনেকের মতে, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক হয়বতনগর জমিদার বাড়ির ঈসা খান-র বংশধর দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিল কদর পাগলা সাহেব নামক একজন আধ্যাতিক ব্যক্তি নরসুন্দা নদীর তীরে বসে নামাজ পড়তেন। পরবর্তীতে স্থানটিতে মসজিদটি নির্মত হয়। জিল কদর পাগলার নামানুসারে এই মসজিদটির নাম রাখা হয় পাগলা মসজিদ।
এছাড়াও আরও একটি মত হচ্ছে, তৎকালীন কিশোরগঞ্জের হয়বতনগর জমিদার পরিবারের পাগলা বিবির নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয়ে থাকতে পারে। বর্তমানে এটার নাম পাগলা মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স ।
আরও: খেরুয়া মসজিদ
অবকাঠামো
পাগলা মসজিদের অবকাঠামো আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত হয়েছে। মসজিদের জমির পরিমাণ ৩ একর ৮৮ শতাংশ। যদিও প্রথম দিকে হয়বতনগর দেওয়ানবাড়ির ওয়াকফকৃত ১০ শতাংশ জমিই কেবলমাত্র মসজিদের নামে অন্তর্ভুক্ত ছিল। মসজিদটি তিন তলা বিশিষ্ট এবং ছাদে ৩টি বড় বড় গম্বুজ এবং ৫ তলা ভবনের সমান একটি মিনার রয়েছে। এখানে একসাথে ৬ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায় করতে পারেন। পুরুষ এবং নারীদের নামাজ আদায়ের আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে।
আরও: গোয়ালদি মসজিদ
পাগলা মসজিদ কেন বিখ্যাত
পাগলা মসজিদ জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত হবার কারন হল, ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর মসজিদের দানবাক্স খুলে রেকর্ড ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও পাওয়া যায়! আবার ঠিক ৪ মাস ১০ দিন পর ২০ এপ্রিল ২০২৪ দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। সাথে বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে!
কেন মানুষ এখানে এতো দান করে?
মসজিদটি শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীর কাছেই নয় বরং সকল র্ধমাবলম্বীর কাছে অত্যন্ত পবিত্র ধমীয় স্থান হিসেবে পরিগণিত রয়েছে। অনেকের বিশ্বাস যে, কেউ সহি নিয়তে এই মসজিদে দান করলে তার ইচ্ছা পূর্ণ হয়। এমন বিশ্বাসের কারণে মানুষজন পাগলা মসজিদে প্রচুর দান-খয়রাত করেন। আর সেই ইচ্ছা পূরণকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুরু করে বিদেশিদেরও ঢল পড়ে মসজিদ প্রাঙ্গনে।
আরও: কলাকান্দা মসজিদ ও মাদ্রাসা
কিভাবে যাবেন
পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের গুরুদয়াল সরকারী কলেজ এবং আধুনিক সদর হাসপাতালের খুব কাছেই অবস্থিত। আপনি শহরের যেকোন স্থান থেকে রিকশা বা ইজিবাইক ভাড়া নিয়ে মসজিদে যেতে পারবেন।
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ বাস ভ্রমণ
আপনি যদি ঢাকা থেকে যেতে চান তাহলে, ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে অনন্যা পরিবহণ, অনন্যা ক্লাসিক এবং গোলাপবাগ (সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল) থেকে যাতায়াত, অনন্যা সুপার ইত্যাদি বাসে করে কিশোরগঞ্জ যেতে পারেন। সময় লাগবে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা থেকে ৪ ঘন্টা।
ভাড়া: বাস ভাড়া নিতে পারে ২৯০ টাকা – ৪০০ টাকা।
কিশোরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে রিকশা নিয়ে মসজিদ যেতে পারেন। ভাড়া নিবে ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা। গুরুদয়াল কলেজের বটতলা থেকে হেঁটে ৫ মিনিট গেলেই মসজিদে পৌঁছে যাবেন।
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ ট্রেনে ভ্রমণ
আপনি চাইলে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ ট্রেনে যেতে পারেন। ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার ৩টি আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে।
ভাড়া: ট্রেন ভাড়া শ্রেণী অনুযায়ী ১৩০ টাকা – ৪০০ টাকা নিতে পারে এবং সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা।
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে ষ্টেশনে নেমে অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়ে পাগলা মসজিদ আসতে ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা খরচ হতে পারে। আর আপনি লোকালে গেলে খরচ হবে জনপ্রতি ২০ টাকার মত।
কোথায় খাবেন
কিশোরগঞ্জ জেলা বালিশ মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। এছাড়া শহরের গাংচিল, তাজ, ধানসিঁড়ি, রিভার ভিউ, দোসাই রেস্টুরেন্ট, পানসী ইত্যাদি রেস্টুরেন্টে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন। এছাড়া এখানে হাওড়ের মাছ পাবেন।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবারের তালিকা
কোথায় থাকবেন
কিশোরগঞ্জ একদিনের ভ্রমণের জন্য বিখ্যাত। যদি আপনি রাতে থাকতে চান তাহলে, কিশোরগঞ্জ সদরের স্টেশন রোডে হোটেল শেরাটন, রিভার ভিউ, গাংচিল, নিরালা, উজান ভাটি, ক্যাসেল সালাম সহ বেশকিছু ভাল মানের আবাসিক হোটেল পাবেন। তবে চাইলে অনুমতি নিয়ে জেলা সদরের সরকারি ডাক-বাংলোতে থাকতে পারবেন।
ভ্রমণ জিজ্ঞাসা
পাগলা মসজিদ নিয়ে কিছু ভ্রমণ জিজ্ঞাসা।
পাগলা মসজিদ কোথায় অবস্থিত?
কিশোরগঞ্জ সদরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত।
আরও: ৪০০ বছরের পুরনো ১ গম্বুজ মসজিদ
ফেসবুক: Kuhudak