পান্থুমাই ঝর্ণা (Panthumai Waterfall) বা পাংথুমাই অথবা পানতুমাই ঝর্ণা বাংলাদেশ এবং ভারত সীমান্তে মেঘালয়ের জাফলং ইউনিয়নে এক অসম্ভব সুন্দর গ্রাম পান্থুমাই এ অবস্থিত।
আজকের পোস্টে আমরা সিলেট জেলার পান্থুমাই ঝর্ণা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। চলুন শুরু করা যাক…
আরও: বিছনাকান্দি – গোয়াইনঘাট, সিলেট
পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | পান্থুমাই ঝর্ণা |
ধরন | ঝর্ণা/গ্রাম, দর্শনীয় স্থান |
অবস্থান | গোয়াইনঘাট, সিলেট, বাংলাদেশ |
ঢাকা শহর থেকে দূরত্ব | প্রায় ২৯৪ কিলোমিটার |
সিলেট শহর থেকে দূরত্ব | প্রায় ৪৭ কিলোমিটার |
ড্রোন উড়ানো যাবে | অনুমতি নিতে হতে পারে |
পান্থুমাইতে কি রয়েছে
বলা হয়ে থাকে পান্থুমাই মেঘালয় পাহাড় এবং পিয়াইন নদীর পাড়ে অবস্থিত এই গ্রামটি সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর একটি! গ্রামের ঠিক পাশেই বিশাল এই পান্থুমাই ঝর্ণা দেখতে পাবেন। স্থানীয় মানুষের কাছে পান্থুমাই ঝর্ণা, ফাটাছড়ির ঝর্ণা বা বড়হিল ঝর্ণা অথবা মায়াবতী নামে পরিচিত।
মেঘালয়ের উচু উচু পাহাড়ের পাথর বেয়ে নেমে আসা আগ্রাসী জলের ধারা আপনাকে মুগ্ধ করবে। এছাড়া, চারপাশের সবুজ প্রকৃতির আপনা মন কে আরও রাঙিয়ে দিবে।
আপনি চাইলে স্থানীয় মাঝিদের কথা মত নিরাপদ দূরত্বে থেকে ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি ছবি তুলতে পারবেন এবং ভিডিও ধারন করতে পারবেন। যেহেতু ঝর্ণার মূল অবস্থান ভারতে তাই নিরাপদ দূরত্বে থাকাই ভালো। নৌকা ভাড়া ১০০ টাকা বা তার কম বেশি হতে পারে। তবে, আপনি ঝর্ণার যে অংশ বাংলাদেশে পরেছে সেঅংশ থেকে জলপ্রপাত দিয়ে নেমে আসা ঝর্ণার পানিতে গা ভিজিয়ে নিতে পারেন।
আরও: শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ
ঝর্ণা দেখার উপযুক্ত সময়
পান্থুমাই ঝর্ণা দেখার উপযুক্ত সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। কারন, এসময় চারদিকে প্রচুর পানি প্রবাহ থাকে। এছাড়া আপনি চাইলে যে কোন সময় ভ্রমণে যেতে পারেন।
কিভাবে যাবেন
যারা একসাথে অনেক স্থান ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্য বিছনাকান্দি, পান্থুমাই ঝর্ণা এবং লক্ষণছড়া একসাথে ঘুরে আসতে পারেন।
আপনি দেশের যে স্থান থেকেই পান্থুমাই ভ্রমণ করতে চান না কেনো আপনাকে প্রথমে সিলেট শহরে আসতে হবে। ঢাকা থেকে একাধিক বাস, ট্রেন এবং প্লেন রয়েছে সিলেটে যাওয়ার জন্য। আপনি এইসব পরিবহরেন যে কোন একটাতে চরে সিলেট চলে যেতে পারেন।
ঢাকা থেকে সিলেট বাস ভ্রমণ
ঢাকা শহরের কল্যাণপুর, ফকিরাপুল, সায়দাবাদ সহ বেশকিছু জায়গা থেকে গ্রীন লাইন, হানিফ, শ্যামলি, ইউনিক, সৌদিয়া, এস আলম ও এনা পরিবহনের এসি এবং নন-এসি বাস সিলেট যাতায়াত করে থাকে।
ভাড়া: এসি বাসে ভাড়ার নিতে পারে ১৪০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার মত। নন-এসি ভাড়া নিতে পারে ৭০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকার মত।
ঢাকা থেকে সিলেট ট্রেন ভ্রমণ
ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান থেকে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেনে যেতে আপনার সময় লাগতে পারে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা।
ভাড়া: ভাড়া ১৫০ টাকা থেকে ১০৫০ টাকা নিতে পারে।
নোট: আপনি যদি ট্রেনে যেতে চান তাহলে রাত ৯.৫০ এর উপবন এক্সপ্রেসে জাওয়াটাই সব থেকে ভালো। কারন, এতে করে আপনার যেতে যেতে সকাল হয়ে যাবে আর আপনি যদি রাতে ট্রেনে ঘুমিয়ে নিতে পারেন তাহলে, সকালে ট্রেন থেকে নেমেই আপনার ভ্রমন শুরু করে দিতে পারবেন।
চট্টগ্রাম থেকে সিলেট ট্রেনে ভ্রমণ
আপনি যদি চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যেতে চান তাহলে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, উদয়ন এক্সপ্রেসের এসি অথবা নন/এসি থেকে যেতে পারবেন।
ভাড়া: ভাড়া ১৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা নিতে পারে।
প্লেনে সিলেট ভ্রমণ
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নভো এয়ার, ইউএস বাংলা, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং এয়ার এস্ট্রার মাধ্যমে বাই এয়ার বা প্লেনে করে সিলেট যেতে পারেন। যেকোনো অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক গন্তব্যে সস্তায় বিমানের টিকিট কাটুন কুহুডাক এয়ার থেকে।
সিলেট থেকে পান্থুমাই যাওয়ার উপায়
আপনি সিলেট এসে সিলেটের আম্বরখানা থেকে CNG করে হাদারপার নামক স্থানে যাবেন। ভাড়া নিতে পারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। তাছাড়া আপনি চাইলে সারাদিনের জন্য সিএনজি রিজার্ভ নিতে পারেন। ভাড়া নিতে পারে ১২০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকার মত।
হাদারপারে নৌকা ঘাট রয়েছে। নৌকার মাঝির সাথে দরদাম করে হাদারপার থেকে বিছানাকান্দি, পান্থুমাই ঝর্ণা ও লক্ষণছড়া একসাথে ঘুরে আসতে পারেন। ভাড়া নিতে পারে ৮০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা।
নোট: আপনি যদি শীতকালে কিংবা বর্ষার শুরুতে ভ্রমণে যান তাহলে পায়ে হেটেই হাদারপাড় থেকে বিছনাকান্দি যেতে পারবেন। তখন ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা ভাড়ায় এই রুটে মটরবাইক চলাচল করে।
আরও: জাফলং
কোথায় থাকবেন
একদিনের ভ্রমণের জন্য এই স্থান চমৎকার হলেও আপনি চাইলে সিলেট শহরকে হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা ইত্যাদি হোটেলে থাকতে পারবেন।
কোথায় কি খাবেন
ভ্রমণে গিয়ে আপনি বিছনাকান্দিতে কিছু অস্থায়ী খাবার হোটেল থেকে খাবার খেয়ে নিতে পারেন। আপনি জনপ্রতি ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা দিয়ে একটি তরকারি ও শুটকি ভর্তার পেটচুক্তিতে খেতে পারবেন। এছাড়া হাদারপার বাজারে গনি মিয়ার ভূনা খিচুড়ি খেতে ভুলবেন না।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবারের তালিকা
ভ্রমণ টিপস
পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণের সময় কি কি সতর্কতা অবলম্বন করবেন তা নিয়ে ভ্রমণ টিপস।
- আপনি চাইলে একদিনে রাতারগুল দেখে বিছনাকান্দি ভ্রমণ করে আসতে পারবেন।
- ভ্রমণের পূর্বে আপনার প্রয়োজনীয় জামাকাপড়, ক্যামেরা, চার্জার, ব্রাশ ইত্যাদি ব্যাগে ঘুছিয়ে নিন।
- পানিতে নামার জন্য বা গোসল করার জন্য সাথে অতিরিক্ত কাপড় নিয়ে নিন।
- খরচ কমাতে চাইলে দলগত ভাবে ভ্রমণ করতে পারেন।
- নৌকা বা সিএনজি ভাড়া করার সময় ভালো মত দামাদামি করে নিন।
- পানিতে নামার সময় সাথে থাকে ক্যামেরা, ব্যাগ, জামাকাপড় ইত্যাদি নিরাপদ স্থানে রাখুন।
- অনুমতি ছাড়া বর্ডারের খুব কাছে যাবেন না।
- ভ্রমণের সময় সাথে খাবার পানি ও প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার নিয়ে নিবেন।
- অতিরিক্ত ছবি তোলা এবং ভিডিও করতে গিয়ে আসল সৌন্দর্য্য দেখতে ভুলবেন না।
ফেসবুক: Kuhudak