বিমানে ভ্রমণের নিয়ম নিয়ে আজকের পোস্ট। কিভাবে সহজে, কম খরচে এবং নিরাপদে বিমানে ভ্রমণ করবেন তার এ টু জেড জানার চেষ্টা করব। আমরা অনেকেই বাস, ট্রেন সহ অন্যান্য বাহনে ভ্রমণ করেলেও কখনো বিমানে ভ্রমণ করিনি। আবার অনেকেরই সচরাচর বিমান ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা নেই। তাই বিমান ভ্রমণের পূর্বে সঠিক নিয়ম-কানুন জানা প্রয়োজন।
কথায় আছে, মানুষ তার প্রথম ফ্লাইটের অভিজ্ঞতা কখনো ভুলে না। প্রথম বিমান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা খুবই চমৎকার হয়ে থাকে। অনেকেই ভয়ে থাকেন যে, বিমানে কিভাবে ভ্রমণ করব। না জানি কত জামেলা হয়ে থাকে। আসলে এসব ভয়ের কিছুই নেই। সঠিক কিছু নিয়ম জানা থাকলে আপনাকে আর বিমান ভ্রমণে ভয় পেতে হবে না।
চলুন শুরু করা যাক…
আরও: কুহুডাক এয়ার
টিকেট বুকিং
বাস, ট্রেন, লঞ্চ ইত্যাদি পরিবহনে যাতায়াতের জন্য যেভাবে টিকেটের প্রয়োজন হয় তেমনি অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বিমান ভ্রমণের জন্য এয়ার টিকিটের প্রয়োজন হয়।
তবে, বাস, ট্রেন, লঞ্চ টিকেটের চেয়ে বিমান টিকেটের নিয়ম-কানুন কিছুটা ভিন্ন। বিমানে ভ্রমণের জন্য আপনার বেশ কিছু ডকুমেন্টের (যেমন: টিকেট, পাসপোর্ট, ভিসা ইত্যাদি প্রয়োজন হয়।
কোন নির্দিষ্ট ফ্লাইটের সিট বুকিং শেষ হয়ে গেলে আপনি সেই ফ্লাইটে যাওয়ার সুযোগ পাবেন না। এখানে লোকাল-বাসের মতো দাঁড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই!
তাই, বিমান ভ্রমণের দিনের এবং সময়ের সঙ্গে প্লেনের শিডিউল মিলিয়ে আপনার জন্য বিমান ভ্রমণের পূর্বে টিকেট বুকিং দিন। যেকোনো অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক গন্তব্যে সস্তায় বিমানের টিকিট বুকিং দিতে যোগাযোগ করুন।
বিমান বা এয়ারলাইন্স ভেদে আলাদা আলাদা ওজন (যেমন: ২০ কেজি, ২৫ কেজি, ৩০ কেজি, ৪০ কেজি, ৪৫ কেজি ইত্যাদি) বহনের অনুমতি দিয়ে থাকে। তাই টিকিট করার সময় আপনি যদি কোন লাগেজ কিংবা ব্যাগ বহন করতে চান তাহলে অবশ্যই জেনে নিন আপনি সর্বোচ্চ কত কেজি ওজনের জিনিসপত্র বহন করতে পারবেন। এছাড়া প্রায় সকল এয়ারলাইন্সে হাতে ৭ কেজি বহনের অনুমতি দিয়ে থাকে।
ফ্লাইটের জন্য প্রস্তুতি
বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ/ডমেস্টিক বিমানের টিকেটের জন্য ভিসা, পাসপোর্টের প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র আপনার আইডি (NID) কার্ড এর কপি হলেই চলে। তবে, আন্তর্জাতিক/ইন্টারন্যাশনাল বিমানের টিকেটের জন্য ভিসা, পাসপোর্ট সহ অন্যান্য পেপারসের প্রয়োজন হয়।
বিমানবন্দরে চেক ইনের জন্য দেশের বাহিরে ভ্রমণের অন্তত ৩ ঘণ্টা পূর্বে বিমানবন্দরে পৌঁছান। না হলে চেক ইন কাউন্টার বন্ধ হয়ে যাবে। আর অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান ভ্রমণ করতে চাইলে ১ ঘণ্টা আগে বিমানে ভ্রমণ করলেই হবে।
বিমানবন্দর চেক-ইন
বিমানে ভ্রমণের পূর্বে প্রথমে বিমানবন্দর চেক-ইন করতে হয়। অর্থাৎ এয়ারপোর্টে ঢোকার পর আপনার ফ্লাইট খুলে দেওয়া হলে আপনি চেক ইন করবেন। চেক ইন করার পর বিমান বন্দর টার্মিনালে থাকা মনিটর এর দিকে খেয়াল রাখুন।
বিমানবন্দরে থাকা নির্দিষ্ট কর্মকর্তাদের আপনার টিকেট, ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজপত্র ও পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। এরপর সব ঠিকঠাক থাকলে আপনার সঙ্গে থাকা লাগেজ জমা দিতে হবে। সেখানে আপনাকে বোর্ডিং পাস এবং লাগেজের ডকুমেন্টস হিসেবে একি কার্ড দেওয়া হবে। কার্ডটি অবশ্যই আপনার সঙ্গেই রাখবেন।
আরও: ভ্রমণ টিপস
বোর্ডিং
বোর্ডিং এর জন্য আপনাকে ডিপার্চার লাউঞ্জে যেতে হবে। এখানে আপনার শরীর থেকে শুরু করে আপনার সাথে থাকা যাবতীয় সবকিছু চেক করবে। সব কিছু ঠিক থাকলে আপনার হ্যান্ড ব্যাগ ও বোর্ডিং পাসে স্ট্যাম্প দিয়ে দিবে। আপনার কোনকিছু সন্দেহজনক মনে হলে তারা আপনার ফ্লাইট বাতিল করে দিতে পারে।
নোট: মনে রাখবেন, যদি আপনি দেশের বাহিরে ভ্রমণ করে থাকেন তাহলে আপনার ইমিগ্রেশন চেক করা হবে। সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে আপনাকে ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
বিমানে উঠুন
আপনার নির্দিষ্ট এয়ারলাইন্সের বিমানে উঠার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে হেটে যেতে পারেন বা আপনাকে গাড়িতে করে প্লেনের কাছে নিয়ে যাবে। ফ্লাইটে প্রবেশ করতে দেওয়া হলে আপনার নির্দিষ্ট সিটে গিয়ে বসুন। আপনার সিট নাম্বার বোর্ডিং এর পাশেই দেখতে পাবেন।
টেক অফ করার পূর্বে পাইলট কিছু নিয়ম-কানুন বলবে মনোযোগ সহকারে নিয়ম গুলো শুনুন এবং তা পালন করুন। মনে রাখবেন, সিটবেল্ট সিগন্যাল দিলে উঠে দাঁড়াবেন না। নির্দিষ্ট উচ্চতায় বিমান ওঠার পর এই সিগন্যাল নিজে নিজে অফ হয়ে যাবে। আপনি চাইলে তখন খাবার খেতে পারবেন, উঠে দাড়াতে পারবেন কিংবা ওয়ারুমে যেতে পারবেন।
বিমান ল্যান্ডিং টাইম
বিমান ল্যান্ডিং টাইম হল বিমান আকাশ থেকে মাটিতে নেমে আসা। ল্যান্ড করার সময় বিমান ধীরে ধীরে মাটির দিকে নেমে আসে। ল্যান্ড করার সময় আপনি টের পাবেন যে প্লেন নীচের দিকে নামছে। প্লেন আপনাকে টার্মিনালে নামিয়ে দিবে।
বিমান থামার সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ানো যাবে না। মনে রাখবেন, সিট বেল্ট খুলতে বলার আগে সিট বেল্ট খুলবেন না। বিমান থেকে নেমে বেল্টের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আপনার ব্যাগ মালামাল বুঝে নিন। বিদেশ ভ্রমণের সময় টার্মিনাল ত্যাগ করার পূর্বে ইমিগ্রেশন অফিসারকে আপনার পাসপোর্ট দেখাতে হবে।
আশাকরি উপরের নিয়ম গুলো ঠিক ঠাক ভাবে পালন করলে প্লেনে ভ্রমণ আপনার কাছে খুবই সহজ মনে হবে। আর অবশ্যই বিমানে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়ে থাকে, যা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন এবং মেনে চলবেন। এছাড়া যে কোন তথ্যের জন্য এয়ারপোর্টে তথ্যকেন্দ্র রয়েছে। প্রয়োজনে তাদের থেকে সহযোগিতা নিতে পারবেন।
আরও: কাতার ভিসা চেক করবেন যেভাবে (সহজ উপায়)
বিমানে ভ্রমণের নিয়ম নিয়ে আরও কিছু টিপস
নিচে বিমানে ভ্রমণের নিয়ম নিয়ে আরও কিছু টিপস দেয়া হলো।
- বিমানের টিকেটের দাম বেশি তাই টিকিট কাটার পূর্বে সঠিক এজেন্সি থেকে টিকেট কিনুন।
- সঠিক সময়ে বিমানবন্দরে আসুন। আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য ৩ ঘণ্টা পূর্বে এবং অভ্যন্তরীণ রুটে ১ ঘণ্টা পূর্বে বিমানবন্দরে পৌঁছান।
- এয়ারপোর্টে যাওয়ার পূর্বেই আপনার লাগেজের ওজন মেপে নিন। লাগেজের ওজন পরিমানের থেকে অতিরিক্ত হলে আপনাকে অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে, না হলে সেটা ফেলে যেতে হবে! আপনার টিকেটে লেখা থাকবে আপনি কত কেজি মালামাল বহন করতে পারবেন। ওয়ারপোর্টে গিয়ে অতিরিক্ত ওজনের জন্য জরিমানা না দিয়ে বা ফেলে না গিয়ে বাসা থেকেই লাগেজ এর ওজন মেপে নেয়াটাই ভালো।
- চেক ইন করার জন্য কোন টার্মিনালের কত নাম্বার গেটে থাকতে হবে তা আগেই জেনে নিন।
- আপনি চাইলে চেকইন করার সময় আপনার পছন্দমত সিট বাছাই করতে পারবেন। অনেকে জানালার কাছে সিট নিতে চায় তাই, কাউন্টারে যিনি থাকবেন তাকে বলুন আপনি কোথায় বসতে চান। মনে রাখবেন, একবার সিট হয়ে গেলে পরবর্তীতে আপনি চাইলেও আপনার সিট পরিবর্তন করতে পারবেন না।
- ঝামেলা এড়াতে আগে থেকেই কি কি জিনিস নিয়ে ভ্রমন করতে পারবেন না এ ব্যাপারে জেনে নিন। বিশেষ করে ধারালো কোন কিছুই ব্যাগে বহন করা যাবে না। এর বাইরে পচনশীলদ্রব্য যেমন কাচা মাংশ, মসলা, ফল ইত্যাদি এগুলোর ব্যাপারেও এয়ারলাইন্স গুলোর নিশেধাজ্ঞা থাকে।
বিমান ভ্রমণের সাধারণ প্রশ্ন-উত্তর
বিমানে ভ্রমণের নিয়ম নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন-উত্তর দেয়া হল। এছারাও যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে মন্তব্যে জানাতে পারেন আমরা উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।
বিমানে কি কি নেওয়া যায় না?
বিমানে সূঁচ, কর্কস্ক্রু, ছুরি, কাঁচি, বুনন সূঁচ, পেনকুইভ, অস্ত্র, খেলনা অস্ত্র, অ্যালকোহল ইত্যাদি নিতে পারবেন না।
এয়ারপোর্টে কি সিগারেট নেওয়া যায়?
না। প্লেন ও এয়ারপোর্টে ধূমপান নিষিদ্ধ। প্লেনে মোবাইল ফোন ও ট্রানজিষ্টার রেডিও ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে তেল বহন করা যাবে কি?
অদাহ্য পদার্থ তেলের মধ্যে রয়েছে যানবাহনে ব্যবহৃত মানসম্পন্ন মোটর তেল এবং অলিভ অয়েল এবং কর্ন অয়েলের মতো খাবারের তেল বহন করা বা চেক করা ব্যাগেজে অনুমোদিত। তবে, ক্যারি-অন ব্যাগেজে থাকা তরল নিরাপত্তা চেকপয়েন্টে 100-ml (3.4 oz) পাত্রে সীমাবদ্ধ।
আমরা কি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে কাঁচি বহন করতে পারি?
পিভট পয়েন্ট থেকে চার ইঞ্চির কম হলে আপনি কাঁচি ব্যবহার করার অনুমতি পাবেন। লম্বা ব্লেড সহ যেকোনো কাঁচি অবশ্যই আপনার চেক করা ব্যাগে ভরে রাখতে হবে।
ফেসবুক: Kuhudak