ভীমের জাঙ্গাল (Bhimer Jangal) হলো ভিম রাজার নির্মিত প্রাচীন বা মধ্যযুগের প্রথম দিকে উত্তর বাংলার বরেন্দ্র অঞ্চলের একটি সড়ক ও বাধ। মহাস্থানগড়ের তিন দিক দিয়ে পরিবেষ্টিত এবং বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকা জুরে গড়গুলোতে ভারতের পুর্বাঞ্ছলের গৌরবময় সভ্যতার অসংখ্য কালোত্তীর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা ভীমের জাঙ্গাল।
আজকের ভ্রমণ পোস্টে আমরা বগুড়া জেলার ঐতিহাসিক স্থাপনা ভীমের জাঙ্গাল সম্পর্কে জানব। চলুন শুরু করা যাক…
আরও: মহাস্থান প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর
ভীমের জাঙ্গাল ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | ভীমের জাঙ্গাল |
ধরন | ঐতিহাসিক নিদর্শন, দর্শনীয় স্থান |
অবস্থান | বগুড়া |
ঢাকা শহর থেকে দূরত্ব | প্রায় ২২০ কিলোমিটার |
জনপ্রতি প্রবেশ ফি | ফ্রি |
খোলা থাকে | সবসময় |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
ইতিহাস
প্রত্নতাত্ত্বিক এই ভীমের জাঙ্গাল প্রাচীনকালে বন্যাপ্লাবিত এই অঞ্চলের প্রতিরোধক সড়ক হিসেবে ভিমের জাঙ্গাল ব্যবহৃত হতো বলে ধারনা করা হয়ে থাকে। এছাড়া ভিমের জাঙ্গালের বিস্তৃতি বা পরিধি নিয়ে অনেক দ্বিমত রয়েছে।
তবে ভীমের জাঙ্গালের অধিকাংশ অংশ বগুড়া অঞ্চলে পড়েছে। অনেকে ধারণা করে থাকেন যে, ঘোড়াঘাট থেকে উত্তরে নীলফামারী জেলার ডোমরা পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। আবার কারো কারো মতে, আসামের কামরূপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
যাইহোক, ভীমের জাঙ্গালের বেশকিছু ধ্বংসাবশেষ সিরাজগঞ্জের সীমানা থেকে শুরু হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকের শেরপুর থেকে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরের কাছাকাছি বগুড়া শহরের প্রান্ত ঘেঁষে উত্তরের প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার দামুকদহের বিলে গিয়ে মিশেছে। এর পরিধি অনেক। পরবর্তী সময়ে দিনাজপুর জেলার বিরাট নগর ও ঘোড়া ঘাট পর্যন্ত এই ধ্বংসাবশেষের বিস্তৃতি ঘটে ছিল।
ভীমের জাঙ্গালের ৩৬ টি “মাউন্ড” বা গড় রয়েছে। কোন কোন স্থানে এই জাঙ্গাল ১২ মিটার উঁচু ও ৬ মিটার চওড়া। এর মধ্যে গোবিন্দভিটা ও ভাসু বিহার ইতিমধ্যে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
অনেকের ধারণা করেন, ভিম নামের এক রাজা ভিমের জাঙ্গাল নির্মাণ করেছিলেন। তবে ভিম রাজার পরিচয় নিয়ে স্পষ্ট কোন ধারণা নেই। তবে উল্লেখ্য যে, ভিম রাজা ছিলেন বার শতকের রাজা আবার কেউ বলেন তিনি দ্বিতীয় পাণ্ডব ভিম বা ভগীরাথ রাজবংশের উত্তরাধিকারী।
ভিমের জাঙ্গাল নির্মাণের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ জানা নেই কারো তবে অনুমান করা হয় যে, বহিঃশত্রুর আক্রমনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ইটালির বৃত্তাকার দূর্গের সাদৃশ্যে এই জাঙ্গাল নির্মাণ করা হয়েছিল।
আরও: খেরুয়া মসজিদ
কিভাবে যাবেন
ভীমের জাঙ্গাল ভ্রমণে গিয়ে আপনি শীলাদেবীর ঘাট থেকে শুরু করে বগুড়া জেলার বেশ অনেক গুলো দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসতে পারবেন।
বাস ভ্রমণ
আপনি ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন কিংবা নিজস্ব পরিবহনে শেরপুর যেতে পারবেন। ঢাকার গাবতলী, মহাখালী, শ্যামলী, আব্দুল্লাপুর ও কল্যানপুর থেকে শ্যামলী, এস আর ট্র্যাভেলস, হানিফ এন্টার প্রাইজ, আগমনী এক্সপ্রেস, মানিক এক্সপ্রেস, নাবিল পরিবহন ও আল হামরা ইত্যাদি পরিবহণে বগুড়ায় যেতে পারেন।
ভাড়া: বাসভেদে ভাড়া নিবে ৫৫০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার মত।
ট্রেন ভ্রমণ
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশান থেকে লালমনি বা রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে বগুড়া যেতে পারবেন। বগুড়া শহর থেকে CNG বা অটো রিকশা ভাড়া নিয়ে ভীমের জাঙ্গালের বিভিন্ন স্থানে যেতে পারবেন।
আরও: বগুড়া জেলা পরিচিতি
কোথায় থাকবেন
একদিনের ভ্রমণের জন্য বগুড়া উপযুক্ত নয়। তাই বগুড়ায় রাত্রিযাপনের জন্য সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। বেসরকারী হোটেলের মধ্যে পর্যটন মোটেল, হোটেল নাজ গার্ডেন, বিখ্যাত মম ইন, সেঞ্চুরি মোটেল, হোটেল সিয়েস্তা, আকবরিয়া গ্র্যান্ড হোটেল ও নর্থওয়ে মোটেল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
কোথায় খাবেন
বগুড়ার বিখ্যাত খাবার হল দই। তাই এখানে ভ্রমণে গেলে দই খেতে ভুলবেন না। এছাড়া, শহরে ভাল মানের হোটেল ও রেস্তোরার মধ্যে সাথী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, মায়ের দোয়া হোটেল, অতিথি গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, চাপ কর্নার ও হোটেল সাফিনা ইত্যাদি রয়েছে।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবারের তালিকা
ভিডিও
ভীমের জাঙ্গাল নিয়ে বানানো ভিডিও দেখুন।
ফেসবুক: Kuhudak