সাজেক ত্রিপুরী ভ্যালি বা সাজেক ভ্যালি (Sajek Valley) বাংলাদেশের একটি অন্যতম নৈসর্গিক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে প্রিয় এই ভ্যালির অবস্থান বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নে। এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য মিজোরাম সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত।
আপনি জানেন কি? বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন হিসাবে সাজেক বিখ্যাত। সাজেকের আয়তন প্রায় ৭০২ বর্গমাইল এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট!
কেন সাজেক ভ্যালি ভ্রমন করবেন?
এককথায় বলতে গেলে বেশীরভাগ মানুষ সাজেকে ভ্রমণ করতে যান, সাদা তুলোর মত মেঘের ভ্যালি দেখতে। এখানে হাত বাড়ালেই মেঘের ছোয়া পাওয়া যায়! আর চারপাশে মনোরম পাহাড় সারি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। তবে, সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে কংলাক পাহাড়।
সাজেক নিয়ে কিছু ধারণা তো পেলেন, এবার চলুন সাজেক ভ্যালি নিয়ে বিস্তারিত জানা যাক। সাথে আছি আমি আরিফ হোসেন। চলুন আজকের সাজেক ভ্রমণ শুরু করি..
আরও: হ্যাপি আইল্যান্ড
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | সাজেক ভ্যালি |
ধরন | দর্শনীয় স্থান, পাহাড় |
অবস্থান | সাজেক, বাঘাইছড়ি, রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম |
আয়তন | প্রায় ৭০২ বর্গমাইল |
অন্যনাম | ত্রিপুরী ভ্যালি, রাঙ্গামাটির ছাদ |
উচ্চতা | সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট |
খাগড়াছড়ি সদর থেকে দূরত্ব | প্রায় ৭০ কিলোমিটার |
দীঘিনালা থেকে দূরত্ব | প্রায় ৪৯ কিলোমিটার |
বাঘাইহাট থেকে দূরত্ব | প্রায় ৩৪ কিলোমিটার |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | প্রায় ৩৩৬ কিলোমিটার |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
রাঙ্গামাটির নৈসর্গিক সাজেক ভ্যালি
রাঙ্গামাটির নৈসর্গিক এই সাজেক ভ্যালিতে যেমন রয়েছে অসাধারণ দর্শনীয় স্থান ঠিক তেমনই ভাবে এখানে ভ্রমণের জন্য আপনাকে বেশ কিছু নিয়ম কানুন মানতে হবে। কি কি নিয়ম মানতে হবে সে বিষয়ে জানাচ্ছি একটু পরে তবে, এখন রাঙ্গামাটির ছাদ তথা নৈসর্গিক সাজেক ভ্যালি নিয়ে আরও কিছু তথ্য জানা যাক।
সাজেকে কখনো খুব গরম আবার ঠান্ডা অনুভূত হবে আপনার। আবার হয়তো কখনো বৃষ্টিতে ভিজে যাবেন কিংবা চোখের নিমিষেই মেঘের ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাবে আপনার চারিপাশ।
সাজেক ভ্রমণের শুরুটা ধরে নিলাম খাগড়াছড়ি থেকে। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প দিয়ে সাজেক ভ্যালি যেতে হবে। এই ১০ নং বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প থেকে আপনাকে ভ্রমণের অনুমতি নিতে হবে। আগেই বলেছিলাম এখানে ভ্রমণের কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে।
কাসালং ব্রিজ দিয়ে টাইগার টিলা আর্মি পোস্ট ও মাসালং বাজার পার হলেই দেখা পাবেন সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া যার উচ্চতা প্রায় ১৭২০ ফুট। রুইলুই গ্রাম থেকে অল্প কিছু সময়ের মধ্যে চলে যাবেন সাজেক। এখানে হেলিকপ্টার নামার জন্য হেলিপ্যাডের ব্যবস্থা আছে।
সাজেক তো চলে আসলেন, এবার চলুন সাজেক ভ্রমণ সম্পর্কে একটু ধারণা নেই। প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘন্টার ট্রেকিং করে সাজেক এর রুইলুই পাড়া থেকে দেখে আসতে পারেন সুন্দর কমলক ঝর্ণা। অনেকের কাছে কমলক ঝর্ণা পিদাম তৈসা ঝর্ণা অথবা সিকাম তৈসা ঝর্ণা নামে পরিচিতি রয়েছে।
সাজেকের শেষ গ্রাম কংলক পাড়া যেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ১৮০০ ফুট উচুতে অবস্থিত। আপনি কংলাক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখতে পাবেন। যেখান থেকে কর্ণফুলী নদী উৎপন্ন হয়েছে। এখানের বিজিবি ক্যাম্প এর পর আর কোন ক্যাম্প না থাকায় নিরাপত্তা জনিত কারণে কর্তৃপক্ষ কংলাক পাড়ায় মাঝে মাঝে যাওয়ার অনুমতি দেয় না। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ শেষে ফেরার সময় হাজাছড়া ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার ইত্যাদি দেখে আসতে পারেন।
ভ্রমণ তো হলো, এবার চলুন সাজেক ভ্রমণের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে জেনে নেই।
আরও: বাংলাদেশের সেরা ৫০ টি দর্শনীয় স্থান বা পর্যটন কেন্দ্র
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
আপনি প্রতিটি মৌসুমে সাজেক ভ্যালির আলাদা আলাদা সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। তবে, শীতের সময় সাজেক একরকম আর বর্ষায় সম্পূর্ণ অন্যরকম! তাই ভ্রমণপিপাসুরা বছরজুড়ে সাজেকে ছুটে যান।
তবে বিশেষ করে বর্ষার শুরু থেকে শীতের শুরু পর্যন্ত, অর্থাৎ মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রকৃতি সবচেয়ে সতেজ থাকে বলে এসময় সাজেক বেশি সুন্দর। তখন সারাদিন মেঘ ভেসে বেড়ায় এখানে সেখানে। মেঘ এসে আপনাকে ঢেকে দিতে পারে যখন তখন। এই সময়টাকে ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হিসেবে ধরা যেতে পারে।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার দর্শনীয় স্থান
সাজেক ভ্রমণ গাইড
সাজেক যাওয়ার উপায় বা ভ্রমণ গাইডে কিভাবে আপনি সহজে, কম খরচে এবং নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারবেন তা নিয়ে বিস্তারিত থাকছে।
সাজেক সহজে যাতায়াতের/ভ্রমণের জন্য খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা হয়ে যেতে পারেন। তাই ভ্রমণের প্রথমে আপনাকে খাগড়াছড়ি আসতে হবে।
বাস ভ্রমণ
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি ভ্রমণে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সৌদিয়া, সেন্টমার্টিন হুন্দাই, রবি এক্সপ্রেস, ইম্পেরিয়াল এক্সপ্রেস, দেশ ট্রাভেলস, শ্যামলী, শান্তি পরিবহন, এস আলম, রিলাক্স ট্রান্সপোর্ট, ঈগল ইত্যাদি বাস ঢাকার গাবতলী, কলাবাগানসহ শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছেড়ে যায়।
ভাড়া: নন-এসি ভাড়া ৭৫০ টাকা – ৮৫০ টাকা। এসি ভাড়া ১০০০ টাকা – ১৬০০ টাকা নিতে পারে।
টিপস: ছুটির দিনে যেতে চাইলে আগে থেকেই টিকেট কেটে রাখা ভালো নাহয় পড়ে টিকেট পেতে ঝামেলা পোহাতে হতে পারে।
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বরের কাছ থেকে জীপগাড়ি/চাঁন্দের গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে সাজেক ভ্যালি ঘুরে আসতে পারবেন। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যেতে সময় লাগে প্রায় ২ থেকে ৩ ঘন্টা।
খরচ: যাওয়া আসা সহ দুইদিনের জন্যে রিজার্ভ ভাড়া নিবে ৯,০০০ টাক – ১০,৫০০ টাকার মত। এক গাড়িতে করে ১২-১৫ জন যেতে পারবেন।
CNG: সিএনজি দিয়ে সাজেক যেতে পারবেন। রিজার্ভ ভাড়া নিতে পারে ৪০০০ টাকা – ৫০০০ টাকার মত।
টিপস: পাহাড়ি উঁচু নিচু রাস্তা বলে সিএনজি দিয়ে ভ্রমণ না করাই উত্তম।
পার্বত্য যানবাহন মালিক কল্যান সমিতি ভাড়ার তালিকা
নিচে জীপ ও পার্বত্য যানবাহন মালিক কল্যান সমিতি কর্তৃক খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার ভাড়ার তালিকা দেয়া হল।
যাত্রার ধরণ | পিকআপ গাড়ি | জীপ (চান্দের) গাড়ি |
---|---|---|
২ রাত সাজেক যাপন, আলুটিলা, রিছাং ঝর্ণা ও ঝুলন্ত ব্রিজ | ১৩,২০০ টাকা | ১১,৪০০ টাকা |
সাজেক যাওয়া ও আসা | ৬,০০০ টাকা | ৬,০০০ টাকা |
সাজেক ১ রাত যাপন | ৮,৩০০ টাকা | ৭,৭০০ টাকা |
সাজেক ১ রাত যাপন, আলুটিলা, রিছাং ঝর্ণা ও ঝুলন্ত ব্রিজ | ১০,৪০০ টাকা | ৯,০০০ টাকা |
সাজেক ২ রাত যাপন | ১১,১০০ টাকা | ৯,৬০০ টাকা |
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক গ্রুপ ট্যুর
আপনি চাইলে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক গ্রুপ ট্যুর দিতে পারেন। আপনি বা আপনারা যদি একা বা ২-৩ জন হন তাহলে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্ত্বর থেকে সাজেক যাওয়ার অনেক গ্রুপ পাবেন।
শাপলা চত্ত্বর থেকে অন্য গ্রুপের সাথে কথা বলে তাদের সাথে শেয়ার করে যেতে পারেন অথবা জিপ সমিতির অফিসে গেলে ওরা গ্রুপ ম্যানেজ করে দিবে। গ্রুপে গেলে খরচ অনেক কম আসবে।
আপনি চাইলে প্রথমে খাগড়াছড়ি থেকে দিঘীনালায় গিয়ে সেখান থেকে সাজেক ভ্রমণ করে আসতে পারেন। খগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা বাসে যেয়ে ভাড়া নিতে পারে ৪৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা। আর যদি মোটরসাইকেলে যান তাহলে জনপ্রতি ভাড়া নিতে পারে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা।
বি: দ্র: আপনি চাইলে মোটরসাইকেল রিজার্ভ করে সাজেক ঘুরে আসতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন যে, গাড়ি ভাড়া করার পূর্বে অবশ্যই দরদাম করে নিবেন।
গুরুত্বপূর্ণ: এখানে কিছু বিষয় উল্লেখ্য যে, আপনি চেষ্টা করবেন সকাল ৯টা থেকে ৯:৩০ মিনিটের মধ্যে দিঘীনালায় থাকতে। না হলে আপনাকে দুপুর ২:৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ঘটনা হলো যে, দিঘীনালা থেকে নিরাপত্তার জন্যে সেনাবাহীনির এসকোর্টে যেতে হয়। আর সেনাবাহিনীর এসকোর্ট দিনে মাত্র ২বার পাওয়া যায়। কোন কারনে আপনি যদি সকালের এসকোর্ট মিস করেন তাহলে আপনাকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আর যদি এটাও মিস করেন তাহলে পরের দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে! সুতরাং খুব গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখবেন, এসকোর্ট ছাড়া আপনি যাবার অনুমতি পাবেন না।
চট্রগ্রাম থেকে সাজেক
আপনি যদি চট্রগ্রাম থেকে সাজেক ভ্রমণে যেতে চান তাহলে খাগড়াছড়ি বা দিঘীনালা হয়ে সাজেক যেতে হবে। খাগড়াছড়ি যেতে চট্রগ্রামের কদমতলী বাস টার্মিনাল থেকে BRTC এসি বাসে কিংবা শান্তি পরিবহনে করে যেতে পারবেন। BRTC এসি বাস দিনে ৪ বার কদমতলী বাস স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় আর ভ্রমণে আপনার সময়য় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা থেকে ৫ ঘন্টা।
ভাড়া: এসি বাসে যেতে জনপ্রতি ভাড়া নিতে পারে ২২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। আর শান্তি পরিবহনের ভাড়া নিতে পারে ১৯০ টাকা থেকে ২২০ টাকা।
রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক
আপনি যদি রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক ভ্রমণে যেতে চান তাহলে, রাঙ্গামাটি বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭:৩০ মিনিট থেকে ৮:৩০ মিনিটের মধ্যে বাস বাঘাইছড়ির উদ্দেশ্যে ছাড়ে যায়। বাঘাইছড়ি যেতে সময় লাগবে ৬ ঘন্টা থেকে ৭ ঘন্টা এবং ভাড়া নিতে পারে ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা।
আর আপনি কিন্তু চাইলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকেও সরাসরি বাঘাইছড়ি যেতে পারেন। বাঘাইছড়ি গিয়ে জীপ বা স্থানীয় চাদেঁর গাড়ি অথবা মোটরসাইকেলে করে সাজেক ভ্যালীতে যেতে পারবেন।
আপনার যদি লঞ্চ ভ্রমণ ভালো লাগে তাহলে রাঙ্গামাটি থেকে নৌপথে বাঘাইছড়ি যেতে পারেন। রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭:৩০ মিনিট থেকে ১০:৩০ মিনিটের মধ্যে লঞ্চ বাঘাইছড়ির উদ্দেশ্যে ছাড়ে যায়। লঞ্চে যেতে সময় লাগে ৫ ঘন্টা থেকে ৬ ঘন্টা। জনপ্রতি ভাড়া নিতে পারে ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা।
কক্সবাজার থেকে সাজেক
আপনি যদি কক্সবাজার থেকে সাজেক যেতে চান তাহলে কক্সবাজার – খাগড়াছড়ি রুটে যাতায়াতকারী শান্তি পরিবহনের বাসে যেতে পারবেন। কক্সবাজার থেকে শান্তি পরিবহনের বাস রাত ৯ টা থেকে ১০টা পর্যন্ত খাগড়াছড়ির উদ্দ্যেশে ছেড়ে যায়।
ভাড়া: বাস ভাড়া নিন এসি জনপ্রতি ৫৫০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা নিতে পারে।
কোথায় খাবেন
সাজের ভ্রমণে খাওয়ার জন্য অবশ্যই সাথে খাবার পানি রাখবেন। আর সাজেকে খাওয়ার জন্য সব রিসোর্টে খাবার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আগে থেকে যদি রিসোর্টগুলোতে বলে রাখেন তাহলে আপনার বা আপনাদের জন্য পছন্দমত রান্না করে দিবে।
রিসোর্টগুলোতে খাবারে মধ্যে পাবেন ভাত, ডাল, আলুভর্তা, মুরগীর মাংস ইত্যাদি। এছাড়া চাইলে আদিবাসীদের ঘরেও খেতে পারবেন। তবে এর জন্য আপনাকে আগে থেকেই বলে রাখতে হবে কি কি খাবেন।
সাজেকে বার বি কিউও করতে পারবেন। চাইলে বন্ধুদের নিয়ে বার বি কিউও পার্টি করে হইহুল্লোড়ে মেতে উঠতে পারেন। আরেকটি বিষয়, সাজেকে কিন্তু খুব কম দামে পেঁপে, আনারস, কলা ইত্যাদি ফল পাবেন।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবারের তালিকা
কোথায় থাকবেন
সাজেকে থাকার জন্য প্রচুর রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। আপনার পছন্দ মত যে কোন রিসোর্ট বা কটেজে থাকতে পারেন। এছাড়া চাইলে আগে থেকে বুকিং দিয়ে যেতে পারবেন। নিচে কয়েকটি রিসোর্ট ও কটেজ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো-
আদিবাসী ঘর
আপনি যদি বাজেট ট্যুর করে থাকেন অথবা কম খরচে থাকতে চান তাহলে সাজেকের আদিবাসীদের ঘরে থাকতে পারেন। আদিবাসীদের ঘরের চেয়ে কমে আর কোথাও থাকার সুযোগ পাবেন না। তবে মনে রাখবেন, পড়িবার বা কাপলদের থাকার জন্য আদিবাসীদের ঘর আদর্শ নয়।
ভাড়া: আদিবাসীদের ঘরে থাকার জন্য একরাতে জনপ্রতি ভাড়া ১৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা নিতে পারে।
সাজেক রিসোর্ট
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরিচালিত সাজেক রিসোর্টে (Sajek Resort) থাকতে পারেন। এখানে আপনার জন্য খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনিতে কর্মরত বা প্রথম শ্রেনীর সরকারি কর্মকর্তাদের জন্যে বিশেষ ডিসকাউন্ট রয়েছে।
ভাড়া: সাজেক রিসোর্টে থাকার জন্য নন এসি রুম ভাড়া নিতে পারে ১০,০০০ টাকা থেকে ১৮,০০০ টাকা।
যোগাযোগ নম্বর: 01859-025694, 01847-070395, 01769-302370
রুন্ময় রিসোর্ট
আপনি চাইলে রুন্ময় রিসোর্টে (Runmoy Resort) থাকতে পারেন। রুন্ময় রিসোর্টে ৫ টি রুম রয়েছে। এই রিসোর্টের প্রতিটি কক্ষে ২ জন করে থাকতে পারে।
ভাড়া: থাকার জন্য রুম ভাড়া ৪ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা নিতে পারে।
যোগাযোগ নম্বর: 01865-47688
আলো রিসোর্ট
আপনি যদি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়ায় থাকতে চান তাহলে আলো রিসোর্টে (Alo Resort) থাকতে পারেন। এখানে থাকার খরচও কম। এই রিসোর্টেও ৬টি রুম রয়েছে। তবে ৬টি রুমের মধ্যে ডাবল রুম রয়েছে ৪টি (২টি বেড করে)।
ভাড়া: আলো রিসোর্টে থাকার খরচ ১ হাজার টাকা থেকে ১৫০০ টাকা হতে পারে।
যোগাযোগ নম্বর: 01841-000645
লুসাই কটেজ
আপনি যদি সুন্দর ডেকোরেশন ও ভালো ল্যান্ডস্কেপিক ভিউ পেতে চান তাহলে ফেসবুক গ্রুপ টিজিবির লুসাই কটেজে (TGB Lushai Cottage) থাকতে পারেন। এখানে কাপল, ফ্যামিলি কিংবা গ্রুপের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম রয়েছে।
ভাড়া: লুসাই কটেজের ভাড়া ২৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা নিতে পারে।
যোগাযোগ নম্বর: 01634-198005
জুমঘর ইকো রিসোর্ট
চাইলে আপনি জুমঘর ইকো রিসোর্টে (Jumghor Eco Resort) থাকতে পারেন। এই কটেজে থাকার জন্য মোট ৬টি কাপল রুম রয়েছে। চাইলে প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৪জন করে থাকতে পারবেন।
ভাড়া: জুমঘর ইকো রিসোর্টে থাকার জন্য ৪ হাজার টাকা থেকে ৪৫০০ টাকা নিতে পারে।
যোগাযোগ নম্বর: 01884-208060
মেঘ মাচাং রিসোর্ট
আপনি যদি সাজেকের সেরা ভিউ পেতে চান তাহলে আপনা মেঘ মাচাং (Megh Machang) রিসোর্টে থাকতে হবে। এই রিসোর্ট পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
মেঘ মাচাং রিসোর্টে ৫টি কটেজ রয়েছে। সবগুলো কটেজ থেকেই আপনি হিলভিউ পাবেন এবং কিছু কটেজ কাঠের এবং কিছু বাঁশ দিয়ে বানানো হয়েছে। এখানের প্রতিটি কটেজে আপনি এচাট বাথরুম পাবেন। মেঘ মাচাং রিসোর্টে এক রুমে সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ জন থাকতে পারবেন।
এখানে প্রতিটা কটেজে ফ্যানের ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া সরাসরি বিদ্যুৎের ব্যবস্থা না থাকায় কক্ষ গুলোতে ২৪ ঘন্টা সোলার পাওয়ার দ্বারা ব্যাকাপ দেওয়া থাকে। আর জেনারেটর দেওয়া হয় সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত।
ভাড়া: মেঘ মাচাং রিসোর্টে কাঠের কটেজ গুলোর ভাড়া ৪ হাজার টাকা যা, ছুটির দিনে বেড়ে ৪৫০০ টাকা হয়ে থাকে। আর বাশের কটেজ গুলোর ভাড়া ৩৫০০ টাকা যা, ছুটির দিনে বেড়ে ৪ হাজার টাকা হয়ে থাকে।
যোগাযোগ নম্বর: 01822-168877
ম্যাডভেঞ্চার রিসোর্ট
এখানের ম্যাডভেঞ্চার রিসোর্টে (Madventure Resort) কাপলদের জন্য প্রিমিয়াম কাপল রুম রয়েছে। তাছাড়া রিসোর্টের প্রতি তলায় রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা আর ২৪ ঘন্টা ইলেকট্রিসিটি ও পানির ব্যবস্থা তো রয়েছেই।
ভাড়া: প্রিমিয়াম কাপল রুম ভাড়া নিতে পারে ৪ হাজার টাকা আর ক্লাসিক কাপল রুম ভাড়া নিতে পারে ৩৫০০ টাকা।
যোগাযোগ নম্বর: 01885-424242
রিসোর্ট রুংরাং
আপনি যদি সাজেকের বেস্ট রিসোর্ট গুলোর একটিতে থাকতে চান তাহলে রিসোর্ট রুংরাং (Resort RungRang) -তে থাকতে পারেন। এই রিসোর্টে বসেই আপনি দিগন্তজোড়া সারি সারি পাহাড় এবং মেঘের উড়োউড়ি দেখতে পারবেন। রিসোর্ট রুংরাং -এ ৪টি ডাবল রুম ও ৪টি কাপল রুম রয়েছে।
ভাড়া: নান্দ্যনিক ইন্টেরিয়র ডিজাইনে সাজানো রিসোর্ট রুংরাং -এ থাকার জন্য ডাবল বেড রুম ভাড়া ২৮০০ টাকা যা ছুটির দিনে ভাড়া ৩৫০০ টাকা এবং কাপল রুম ২ হাজার টাকা যা ছুটির দিনে ২৮০০ টাকা দিতে হবে।
যোগাযোগ নম্বর: 01884-710723, 01869-649817
ভ্রমণ সতর্কতা ও টিপস
ইতিপূর্বে সাজেক ভ্রমণ নিয়ে বেশ কিছু টিপস দেয়া হয়েছে। চাইলে সব গুলো সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ টিপস পড়ে আসতে পারেন।
আর নিচে ভ্রমণে নিরাপত্তা ও কিছু ভ্রমণ টিপস দেয়া হলো-
- সাজেক কয়েকদিনের ভ্রমণের জন্য চমৎকার জায়গা। তাই, ভ্রমণের পূর্বে আপনি যদি শুধু সাজেক ভ্রমণ করতে চান তাহলে আপনার ভ্রমণ প্ল্যান ঐ ভাবে করতে হবে। যেহেতু কয়েকদিনের ভ্রমণ তাই অনেক কিছুর প্রয়োজন হতে পারে।
- সাজেকে অনেক জায়গায় বিদুৎ নেই কিন্তু সোলারের ব্যবস্থা রয়েছে। তাই ভ্রমণের শুরুতে সাথে করে পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে নিতে পারেন।
- অনেকে না জানার কারনে দুই তিন দিনের জন্য গাড়ি ভাড়া করে থাকেন। তাই দুই তিন দিনের জন্যে গেলে গাড়ি বসিয়ে না রেখে, শুধু যাবার জন্যে গাড়ি ঠিক করুন, ফিরে আসার সময় অন্য কোন গাড়িতে আসুন কিংবা দিঘীনালা থেকে ফোন করে গাড়ি পাঠিয়ে ফেরত আসতে পারবেন।
- সাজেকে শুধুমাত্র রবি, এয়ারটেল ও টেলিটক এর নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায়। তাই ভ্রমণের পূর্বে একাধিক সিম নিয়ে নিতে পারেন।
- সাজেক যাবার পথে কয়েক জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প রয়েছে। সেখানে ভ্রমণকারী সদস্যদের কিছু তথ্য জমা দিতে হয়। নিরাপত্তার সার্থে অবশ্যই তাদের সহযোগিতা করুন। সাথে করে নিজের জাতীয় পরিচয় (NID) পত্রের একাধিক কপি রাখুন।
- হেলিপ্যাড থেকে সূর্যাস্ত দেখার চেষ্টা করবেন। এতে চমৎকার ভিউ পাবেন আশাকরি।
- আরও সাজেক ভ্রমণ টিপস দেখুন।
সাজেক ভ্রমণ খরচ
সাজেক ভ্রমণ খরচ কেমন হতে পারে তার একটা ধারণা দেয়া হল। তবে এক এক জনের ভ্রমণের খরচ এক এক রকম হতে পারে।
- যাওয়া এবং আসার ভাড়া: বাসে ৫২০ + ৫২০ টাকা
- কটেজ ভাড়া: ৩০০ টাকা (যদি ৪ জনের জন্য এক রুম হয়)
- চান্দের গাড়ি ভাড়া: ৯০০ টাকা (৯ জনের জন্য)
- খাগড়াছড়িতে খাওয়া: ৪০ + ১২০ + ১২০ টাকা
- সাজেকে খাওয়া: ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা ৩বেলার খাবার খরচ
- প্রবেশ ফি: ৭০ টাকা
সাজেকে খাবার খরচ
- ভাত + ডাল + আলুভর্তা + সবজি + দেশি মুরগী: দাম ২০০ টাকা
- ভাত + ডাল + আলুভর্তা + সবজি + ফার্মের মুরগী: দাম ১৫০ টাকা
- ভাত + ডাল + আলুভর্তা: দাম ১০০ টাকা
- এছাড়া রাতে ব্যাম্বু চিকেন অথবা বারবিকিউ খেতে চাইলে দিতে হবে ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা।
বাজেট ট্যুরের ক্ষেত্রে আপনার ভ্রমণ খরচ ২৬০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা হতে পারে।
ভ্রমণ জিজ্ঞাসা
সাজেক ভ্রমণে সাধারণ কিছু প্রশ্ন-উত্তর বা ভ্রমণ জিজ্ঞাসা।
সাজেক ভ্যালি কত ফিট উপরে?
সাজেক ভ্যালি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এক প্রাকৃতিক ভূ-স্বর্গ।
কোন ঋতু সাজেক উপত্যকার জন্য উপযুক্ত?
সাজেকের সেরা সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বর্ষাকাল সবচেয়ে ভালো সময়। তবে, আপনি প্রতিটি মৌসুমে সাজেক ভ্যালির আলাদা আলাদা সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
সাজেক ভ্যালি পাহাড়ের উচ্চতা কত?
কংলাক পাহাড় বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নে অবস্থিত রয়েছে। আর কংলাক পাহাড় সাজেক ভ্যালির সর্বোচ্চ চূড়া হিসেবে ধরা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট।
ফেসবুক: কুহুডাক