নিকলী হাওর (Nikli Haor), মিঠামইন (Mithamain) এবং অষ্টগ্রাম (Austagram) – কিশোরগঞ্জ থেকে ভ্রমণ করে আসলাম। ঢাকা থেকে অনেকে একদিনের ভ্রমণের জন্য দর্শনীয় স্থান খুঁজেন, তাদের জন্য দারুণ এক উপভোগ্য স্থান কিশোরগঞ্জ জেলার এই নিকলী হাওর, মিঠামইন এবং অষ্টগ্রাম। বাংলাদেশের অন্যতম এক বৃহৎ মিঠাপানির জলাভূমি এই হাওর।
নিকলী বর্ষার মৌসুমে ভ্রমণের আদর্শ সময়। হাওরের চারপাশে অথৈ পানি রয়েছে। কিছু স্থানে আপনার মনে হবে আপনি সমুদ্রের মাঝে আছেন। যে দিকে তাকাবেন মনে হবে আকাশ পানির সাথে মিশে গিয়েছে। আর, এর সাথেই মানুষের বসবাস। আপনি যদি মাঝিদের মাছ ধরার দৃশ্য দেখা, হাওরের মাছ খাওয়া, নৌকায় ঘুরে বেড়ানো, কোথাও জেগে ওঠা চরে জলারবনের মাঝে যদি নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চান, তাহলে নিকলী হাওর চলে আসতে পারেন।
আজকের ভ্রমণে আমি নিকলী উপজেলার নিকলী হাওর, মিঠামইন এবং অষ্টগ্রাম সম্পর্কে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করব। আশাকরি আপনার ভ্রমণে এই তথ্য গুলো কাজে আসবে।
চলুন শুরু করা যাক…
আরও: ইলিশ খেতে মাওয়া ফেরি ঘাট, মুন্সিগঞ্জ
নিকলী হাওর ভ্রমণ
ভ্রমণ স্থান | নিকলী হাওর, মিঠামইন এবং অষ্টগ্রাম |
ধরন | দর্শনীয় স্থান, হাওর |
অবস্থান | নিকলী, কিশোরগঞ্জ, ঢাকা, বাংলাদেশ |
আয়তন | ২১৪.৪০ বর্গ কিলোমিটার |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | ১১০ কিলোমিটার (প্রায়) |
কিশোরগঞ্জ সদর থেকে দূরত্ব | ২৫ কিলোমিটার (প্রায়) |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
ঢাকা থেকে নিকলী ভ্রমণ
নিকলী ভ্রমণ কাহিনী আমি সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করব। আশাকরি এই ভ্রমণ গল্প টা আপনাদের ভ্রমণের পরিকল্পনা এবং যাতায়াতে কাজে দিবে। আর কথা না বাড়াই, আজকের ভ্রমণ শুরু করা যাক।
এবারের ভ্রমণে আমরা ৩ জন যাচ্ছি। আমি আরিফ, নাদিম এবং আব্দুল। শুক্রবার সকাল ৭টায় গুলিস্তান বাস স্ট্যান্ড থাকব এই প্ল্যান করে রাতে ঘুমিয়ে পরলাম।
সকাল ৬টা।
আব্দুল এর ফোন কলে ঘুম ভাঙল। আব্দুল ইতিমধ্যে গুলিস্তান এর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিয়েছে। ওহ আচ্ছা আপনাকে তো বলা হয় নি, আব্দুল আসতেছে নারায়ণগঞ্জ থেকে। নাদিম মানিক নগর আর আমি নয়াপল্টন থেকে যাচ্ছি।
ঘুম থেকে উঠে নাদিম কে কল দিয়ে রেডি হতে বললাম। তারপর আমি চলে গেলার ফ্রেশ হতে। সকাল ৭ টায় বাসা থেকে বের হলাম। সচরাচর এতো সকালে আমার ঘুম থেকে উঠা হয় না।
আমি গুলিস্তান যাওয়ার আগেই আব্দুল চলে আসছে। গুলিস্তান গিয়ে আব্দুল এর সাথে দেখা হল। নাদিম এখনও আসে নি। আমরা তিশা পরিবহণ এ ২৫০ টাকা জনপ্রতি ৩টা টিকিট নিলাম।
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে বেশ কিছু বাস ছেড়ে যায়। তবে, যাতায়াত এবং অনন্যা সুপার কটিয়াদি বাস স্ট্যান্ড হয়ে যায় আর বাকি গুলো দাড়িয়াকান্দি বা অন্যান্য পথ দিয়ে যায়। বাসে উঠার আগেই কাউন্টার থেকে জানালো যে, আমরা যাতে দাড়িয়াকান্দি নেমে CNG করে কটিয়াদি চলে যাই।
টিকিট কাটার ৫ মিনিট পর বাস ছড়ে দিল। নাদিম এখনও এসে নি! এদিকে আমরা ২ জন নাদিম কে কল দিয়েই যাচ্ছি। ওর উত্তর একটাই, এইতো চলে আসছি। পরবর্তীতে ওর কাছেই শুনেছি যে, আমাদের যখন বলেছে যে ও রাস্তায় তখন ও রাস্তায় ছিল না! ও গোসল করতে ছিল!!
যাই হোক অনেক বলে ৩ মিনিট এর জন্য গাড়ি থামালাম। নাদিম আসল। আমরা ঢাকা থেকে নিকলী ভ্রমণ শুরু করলাম।
আরও: কিশোরগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
কটিয়াদি বিরতি
প্রায় ২:৪০ মিনিট পর আমরা ভৈরব হয়ে দাড়িয়াকান্দি এসে নামলাম। যেহেতু সকালে কারও কিছু খাওয়া হয় নি তাই আমরা রাস্তার পাশের দোকাল থেকে হালকা কিছু খেয়ে নিলাম।
দাড়িয়াকান্দি থেকে কটিয়াদি CNG ভাড়া জনপ্রতি ৪০ টাকা। আমরা দাড়িয়াকান্দি থেকে সিএনজি করে কটিয়াদি রওনা দিলাম। এদিকের পরিবেশ সুন্দর। রাস্তার ২ পাশে ফসলী জমি।
কটিয়াদি পৌঁছে রাস্তা পার হলেই একটি রেস্টুরেন্ট দেখতে পারেন। নামটা এই মুহূর্তে ভুলে গিয়েছি। কটিয়াদিতে এটাই একমাত্র ভালো মানের রেস্টুরেন্ট।
আমরা ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা করলাম। নাস্তা শেষে নিকলীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
আরও: তারুয়া সমুদ্র সৈকত – চরফ্যাশন, ভোলা
নিকলী হাওর
কটিয়াদি থেকে নিকলী যাওয়ার জন্য CNG পাবেন। লোকালি গেলে ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৮০ টাকা আর রিজার্ভ নিলে ভাড়া নিবে ৪০০ টাকা। আমরা ৪০০ টাকা দিয়ে রিজার্ভ নিলাম।
প্রায় ১ ঘন্টা পর আমরা নিকলী এসে পৌঁছালাম। CNG স্ট্যান্ড থেকে নিকলী শেষ প্রান্তে অর্থাৎ যেখান থেকে ট্রলার ভাড়া করা হয় যেখানে যেতে অটোরিক্সা ১০ টাকা ভাড়া লাগে। আমরা আমাদের CNG নিয়েই চলে গেলাম।
যাওয়ার পথে রাস্তার বা’পাশে জনবসতি আর ডান পাশে হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম। CNG তে বসেই দেখতে পেলাম হাওরের পানিতে হাঁস পালন করা হচ্ছে। চারো দিকে জাল দিয়ে তার মাঝে অনেক গুলো হাঁস।
আমরা রাস্তার একেবারে শেষ প্রান্তে চলে আসলাম। এরপর আর রাস্তা নেই।
একপাশে ছোট ছোট খাবারের দোকান আর অন্য পাশে ছোট এবং বড় ট্রলার সারি সারি ভাবে রাখা আছে। আমাদের প্রথমে ধারনা ছিল যে এখানেই হয়তো সেই রাস্তা রয়েছে যেটা আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখেছি। কিন্তু জানলাম যে, এখান থেকে ট্রলার নিয়ে যেতে হবে মিঠামইন।
হাওরে দুপুরের খাবার
ইতিমধ্যে দুপুর হয়ে গিয়েছে। আমরা খাবার খাওয়ার জন্য একটা হোটেলে ঢুকলাম। খাবারের দোকাল গুলো ছোট ছোট। এখানে প্রায় সব হাওরের মাছ পাওয়া যায়। সাথে আপনি মুরগী, হাঁস, গরুর মাংস ইত্যাদিও পাবেন।
আমরা হাওরের কয়েক প্রকারের মাছ এবং ভর্তা নিলাম। খাবারের স্বাদ খুব বেশি না হলেও খারাপ ছিল না। টেংরা মাছ, বাইন মাছ ইত্যাদি।
হাওর ভ্রমণ
খেতে খেতে একটা বিষয় খেয়াল করলাম। একজন পড়িবার সহ প্রাইভেট কার নিয়ে এসেছেন। তিনি জানতেন যে মিঠামইন এর মূল রাস্তাটা এখানেই রয়েছে বা গাড়ি নিয়েই যাওয়া যাবে। তিনি হতাশ হলেন। এই বিষয়টা জানা খুবই জরুরী।
আপনি যদি মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন তাহলে ট্রলারে করে মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে পারবেন। মোটরসাইকেল যারা নিয়ে আসেন তারা সবাই এভাবেই যায়। কিন্তু ট্রলারে করে প্রাইভেট কার নিয়ে যাওয়া তো সম্ভব না। তাই ভ্রমণের সময় এই বিষয়টা খেয়ার রাখবেন।
এখান থেকে আপনি ২ ভাবে ট্রলার ভাড়া করতে পারবেন। লোকাল ভাবে গেলে জনপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ভাড়া নিবে। আর রিজার্ভ গেলে ১২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা নিবে। ট্রলারের সাইজ, কয়জন যাবেন এবং দর্শনার্থীদের চাপের উপর নির্ভর করে ভাড়া কম বেশি হয়ে থাকে। ট্রলার ভাড়া করার সময় দরদাম করে নিবেন।
আমরা ১৪০০ টাকা দিয়ে ট্রলার রিজার্ভ নিলাম। হাওর যাত্রা শুরু হলো… ১:৩০ মিনিট এর পথ। ওরা আমাদেরকে নিয়ে যাবে আবার নিয়ে আসবে।
ট্রলারে উঠার সাময় হালকা খাবার নিয়ে নিতে পারেন। সাথে পানি নিয়ে নিবেন।
নিকলী হাওর এক অসাধারণ জায়গা। যে দিকে তাকাবেন পানি আর পানি। আমি এর আগে কখনো হাওরে যাই নি। হাওর যে এতো বড় হতে পারে তা আগে জানা ছিল না। দেখছি আর অবাক হচ্ছি। আপনিও হবেন, হতে বাধ্য! ধিরে ধিরে আমারা মিঠামইন এবং অষ্টগ্রাম এর দিকে এগুতে থাকলাম।
আজকের আবহাওয়া অনেক সুন্দর। রোদ ছিল না আবার অন্ধকারও ছিল না। যথেষ্ট আলো ছিল। সাথে হাওরের সু-বাতাস। সব মিলিয়ে প্রকৃতি যেন আমাদের স্বাগত জানাতে এক ভিন্ন সাঁজে সেজেছে।
ট্রলার গুলোতে উপরে বসার জন্য চেয়ার দিয়ে থাকে। তার উপরে থাকে ছাউনি। তবে যদি বৃষ্টি হয় তাহলে ট্রলারের ভিতরে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
আমরা ছবি তুল্লাম আর ভিডিও করলাম। ট্রলারের সামনে গিয়ে বসলাম। হাওরের পরিষ্কার পানিতে পা ভিজালাম। কিছুটা আসার পর আপনি আরও অবাক হবে যে, যে দিকে তাকাবেন মনে হবে যে আকাশ হাওরের পানির সাথেই মিশে গিয়েছে। আপনি সমুদ্রের একটা ফিল পাবেন।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবারের তালিকা
বেশ কিছুটা আসার পর আপনি দেখতে পাবেন দূরে ঐ বহু দূরে ১ টি বা ২ টি গাছ সাহস করে একা দাঁড়িয়ে রয়েছে। অবাক হবেন যে এটা কিভাবে সম্ভব। আমিও অবাক হয়েছি… ভেবেছি, কিন্তু কিছুই মিলাতে পারি নি।
হাওরের এই সৌন্দর্য লিখে বা ছবি দেখিয়ে বুজানো সম্ভব না। এজন্য আমি বলে থাকি,
ছবি বা ভিডিও দেখে আপনি কখনো বাস্তব ফিল নিতে পারবেন না। এর জন্য আপনাকে ভ্রমণ করতে হবে।
আরিফ হোসেন
বেশ কিছুটা আসার পর আপনি একটি চর দেখতে পাবেন। যেখানে অনেক গুলো ঘরবাড়ি রয়েছে। আমরা প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট এর পথ পাড়ি দিয়ে মিঠামইন এসে পৌঁছালাম।
মিঠামইন
ইতিমধ্যে হালকা বৃষ্টি শুরু হইয়েছে। আমরা ট্রলার ঘাটে নামলাম। এখান থেকে অটোরিক্সা করে আমাদের বড় ব্রিজ যেতে হবে। বড় ব্রিজ অষ্টগ্রাম এর ভিতরে পরেছে।
আমরা ২৫০ টাকা দিয়ে অটোরিক্সা রিজার্ভ নিলাম। সময় ১ ঘন্টা ২০ মিনিট। কিছুটা আসার পর বৃষ্টি থেমে গেলো। আমরা মিঠামইন এর রাস্তা দিয়ে আগিয়ে যাচ্ছি।
কি অসাধারণ এক সৌন্দর্য! দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। দুই পাশে পানি আর মাঝে দিয়ে সুন্দর রাস্তা। রাস্তার পাশে পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে। এই সৌন্দর্য দেখার জন্যই মানুষ অনেক দূর থেকে হাওর পাড়ি দিয়ে এখানে ছুটে আসে। এখানে আসাটা আসলেই যথার্থ।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার দর্শনীয় স্থান
অষ্টগ্রাম
মিঠামইন দিয়ে কিছুটা আসার পর ডান দিকে একটা বাঁক নিয়ে সোজা অষ্টগ্রাম এর দিকে এগুতে থাকলাম। এখানের সৌন্দর্য আপনি সরাসরি নিজের চোখে না দেখলে বুঝতে পারবেন না। কতটা দারুণ লাগে।
রাস্তা একেবেকে চলে গেছে অষ্টগ্রাম এর দিকে। সামনেই চোখে পড়ল বিদায় নিকলী স্বাগত অষ্টগ্রাম!
আমরা বড় ব্রিজ এসে অটোরিক্সা থেকে নামলাম। প্রচুর মোটরসাইকেল আসতেছে… যাচ্ছে। অনেকে মোটো ভ্লগিং করছে। আমরা ছবি তুললাম ভিডিও করলাম। বেশ কিছুক্ষণ থাকলাম এখানে।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবারের তালিকা
মাননীয় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এর বাড়ি
অষ্টগ্রাম ভ্রমণ শেষে নিকলী হয়ে আমরা মাননীয় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এর বাড়িতে চলে আসলাম। ওনার বাসা ট্রলার ঘাট এর সাথেই। বাড়ির ভিতরে ঢুকতে কোন বাঁধা নেই। একজন পুলিশ কে দেখলাম বসে আছে।
সবাই বাড়ির ভিতরে ঢুকছে, ছবি তুলছে। আমরা ভিতরে প্রবেশ করলাম। বাড়িতে কেউ থাকে না। বাড়ির পাশে একটু সুন্দর মসজিদ রয়েছে।
আমরা বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এর বাড়িতে কিছুক্ষণ থেকে বিদায় নিলাম। ইতিমধ্যে আমাদের ট্রলার পাইলট আমাকে কল দিয়েছেন চলে যাওয়ার জন্য।
বিদায় নিকলী
একদিনের এই নিকলী ভ্রমণ আমার কাছে দারুণ লেগেছে। আপনিও চাইলে বন্ধুদের বা পড়িবার নিয়ে চলে আসতে পারেন।
ট্রলার দিয়ে যাওয়ার পথে আমরা হাওরের পানিতে গোসল করতে ভুলিনি। আপনারাও চাইলে পানিতে ঝাপাঝাপি করে নিতে পারেন।
বিদায় নিকলী। সময় এবং সুযোগ হলে আবার তোমার কাছে ফিরে আসব। ভালো থেকো।
নিকলী হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
পূর্বেই বলেছি নিকলী হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময় বর্ষার মৌসুমে। আপনার যদি হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার ইচ্ছে থাকে তাহলে, বর্ষার সময় আসলে বেশি উপভোগ করতে পারবেন। বর্ষার সময়টাকেই ভ্রমণের আদর্শ সময় বলা হয়ে থাকে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস এর মধ্যে গেলেই দেখা পাবেন অপরূপ সৌন্দর্য এবং দিগন্ত বিস্তৃত এক নিকলী হাওর।
নিকলী যাওয়ার উপায়
ট্রেন ও সড়ক পথে ঢাকা থেকে নিকলী যাওয়া যায়। কিভাবে সহজে নিকলী ভ্রমণে যেতে পারেন বিস্তারিত জেনে নিন। তবে তথ্য গুলো যেমন, ভাড়া, যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদি পরিবর্তন হতে পারে।
আরও: জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান
বাস ভ্রমণ
ঢাকা থেকে
আপনি ঢাকা সায়েদাবাদ অথবা গোলাপবাগ থেকে অনন্যা সুপার বাস সার্ভিসে যেতে পারেন। সুপার বাস সার্ভিস প্রতিদিন ভোর ৫:৩০ মিনিট থেকে ১৫ মিনিট পর পর বাস ছেড়ে যায়।
ভাড়া: জনপ্রতি ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা।
বি: দ্র: একদিনের ভ্রমণের জন্য আপনাকে অবশ্যই সকাল ৭টার আগেই বাসে রওনা দিতে হবে। বাসে কিশোরগঞ্জ এর আগেই কটিয়াদি বাস স্ট্যান্ড নেমে যাবেন। ঢাকা থেকে কটিয়াদি আসতে সময় লাগবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টা এর মত।
এরপর, নিকলী যেতে আপনাকে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দিয়ে সিএনজি রিজার্ভ করতে হবে। দূরত্ব ২২ কিলোমিটার প্রায়। আর যেতে সময় লাগবে প্রায় ১ ঘন্টা ২০ মিনিট।
কিশোরগঞ্জ থেকে
আপনি যদি কিশোরগঞ্জ জেলা শহর থেকে নিকলী ভ্রমণে যেতে চান তবে কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে ষ্টেশনের সংলগ্ন নিকলীগামী সিএনজি ষ্টেশনে চলে যান। সদর থেকে নিকলী হাওর এর দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার প্রায়। লোকালে বা রিজার্ভ নিয়ে নিকলী যেতে সময় লাগবে প্রায় ১ ঘন্টা।
ভাড়া: লোকালে যেতে জনপ্রতি ভাড়া ৭০ টাকা আর সিএনজি রিজার্ভ নিলে ভাড়া নিবে ৩৫০ – ৪০০ টাকা।
ভৈরব থেকে
আপনি ভৈরব থেকেও লোকাল কিংবা রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে নিকলী যেতে পারবেন। সময় লাগবে প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট।
ভাড়া: লোকালে যেতে জনপ্রতি ভাড়া ১২০ টাকা আর রিজার্ভ নিলে ৬০০ টাকা।
ট্রেন ভ্রমণ
ঢাকা থেকে
আপনি ঢাকা থেকে ট্রেনে গিয়ে একদিনে ঘুরে দেখতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই আন্তঃনগর এগারো সিন্ধুর প্রভাতী ট্রেনে আসতে হবে।
ট্রেন সময়সূচী: এগারো সিন্ধুর প্রভাতী বুধবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬ দিন কমলাপূর ষ্টেশন থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে বিমানবন্দর, টঙ্গী, নরসিংদী ও ভৈরব ষ্টেশন হয়ে কিশোরগঞ্জ যায়।
ভাড়া: ট্রেনের টিকেট ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।
বি: দ্র: যদি ট্রেনে যান তাহলে সবচেয়ে ভাল হয় কিশোরগঞ্জ সদরে পোঁছার আগের ষ্টেশন গচিহাটা ষ্টেশনে নেমে গেলে। ঢাকা থেকে ট্রেনে রওনা দিয়ে আপনি সকাল ১১ টার মধ্যেই গচিহাটা ষ্টেশনে চলে যেতে পারবেন।
এরপর, ষ্টেশন থেকে ইজিবাইক অথবা CNG দিয়ে সহজেই চলে যেতে পারবেন ১৫ কিলোমিটার দূরের নিকলী বাজারে। ইজিবাইকে জনপ্রতি ৩৫ টাকা অথবা রিজার্ভ নিলে ২৫০ – ৩০০ টাকা ভাড়ায় নিকলী যেতে পারবেন। সময় লাগবে প্রায় ১ ঘন্টা। সিএনজি রিজার্ভ নিলে খরচ হবে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা আর সময় লাগবে প্রায় ৪০ মিনিট।
কোথায় খাবেন
নিকলী যেখানে নামবেন সেখানেই মোটামুটি মানের কয়েকটি খাবার হোটেল আছে। হোটেল সেতু, ক্যাফে ঢেউ সহ আরও বেশ কিছু হোটেল পাবেন। হাওরের তাজা মাছের নানা পদ দিয়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকায় ভরপেট খেয়ে নিতে পারবেন।
আরও: ভ্রমণ গাইড
নিকলী কোথায় থাকবেন
আপনি নিকলীতে থাকার জন্য কোন ভালো মানের আবাসিক হোটেল পাবেন না। আগেই বলেছি এটা ডে ট্যুর এর জন্য চমৎকার। তবে যদি থাকতে হয় তাহলে, চেয়ারম্যান গেস্ট হাউজ অথবা ভালো উপজেলা ডাক বাংলো তে থাকতে পারবেন।
এছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে গিয়ে সেখানে থাকতে পারবেন। চাইলে নৌকায় বা ক্যাম্পিং করে রাত পার করে দিতে পারবেন। তবে, নিরাপত্তার বিষয়টা সবসময় মাথায় রাখবেন। কারন, ভ্রমণে নিরাপত্তা সবার আগে।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
নিকলী হাওর এর আশেপাশে আরও বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। সময় পেলে ঘুরে আসতে পারেন।
- গুরই শাহী জামে মসজিদ (রিকসা বা মটরসাইকেলে করে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন।)
- নিকলী বেড়ি বাঁধ (নিকলী উপজেলা অফিসের সামনে থেকে বেড়িবাদ শুরু তাই পায়ে হেটে দেখা যাবে তার সৌন্দর্য।)
- পাহাড় খাঁর মাজার (নিকলী উপজেলা থেকে ট্রলারে করে ও মটর সাইকেলে করে যাওয়া যায়।)
- গুরই প্রাচীনতম আখড়া (কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলায় গুরই ইউনিয়নে এই আখড়া অবস্থিত। শুকনো মৌসুমে রিকসা, মটরসাইকেল, সিএনজি দিয়ে যাওয়া যায় কিন্তু বর্ষা মৌসুমে নৌকা বা ট্রলার যোগে যেতে হয়।)
নিকলী হাওর ভ্রমণ টিপস
নিকলি হাওর নিয়ে ভ্রমণ টিপস গুলো দেখুন।
- যাদের পানিতে ভয় (Water Phobia) রয়েছে তারা নিকলী হাওর ভ্রমণের সময় অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করুন। কারন এটা হাওর। চারপাশে শুধু পানি আর পানি।
- বর্ষার মৌসুমে প্রচুর ভ্রমণ প্রেমীরা এখানে ঘুরতে যান। ভ্রমণের আগে বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে পোশাক নিয়ে নিবেন।
- আপনি যদি মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন তাহলে ট্রলারে করে নিয়ে যেতে পারবেন। মোটরসাইকেল যারা নিয়ে আসেন তারা সবাই এভাবেই যায়। কিন্তু ট্রলারে করে প্রাইভেট কার নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাই ভ্রমণের সময় প্রাইভেট কার নিয়ে আসার বিষয়টা খেয়াল রাখবেন।
- যারা সাতার পারেন না তারা লাইফ জ্যাকেট নিয়ে পানিতে নামবেন।
- যেখানে পানির গভীরতা বেশী সেখানে নামার সময় সাবধান থাকুন।
- সাথে অতিরিক্ত পোশাক নিয়ে নিন।
- ট্রলার বা নৌকায় উঠার আগে হালকা খবার এবং পানি নিয়ে নিন।
- মোবাইল, মানিব্যাগ, ক্যামেরা, ড্রোন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস সাবধানে রাখুন।
- নৌকায়/ট্রলার চড়ার সময় সতর্ক থাকুন।
- নিকলী হাওরের রাস্তায় অনেক মোটরসাইকেল চলে তাই, রাস্তায় দাড়িয়ে ছবি তুলার সময় সতর্ক থাকুন।
- বাচ্চাদের প্রতি অতিরিক্ত খেয়াল রাখুন।
- কারও সাথে খারাপ ব্যাবহার করবেন না।
- নৌকার উঠে লাফালাফি করবেন না।
- নৌকায় ভাড়া করার সময় দরদাম করে নিন।
- হাওরের পানি পান করবেন না।
- পানিতে মলত্যাগ করবেন না।
- সন্ধ্যার পর এখানে না থাকাই ভালো।
হাওর নিয়ে কবিতা
তোল ভাটিয়ালি, এ নদী রুপালি ঢেউয়ের তালি নৌকা বাজাও
ছইয়ের নিচে কর্কট বিছে হাওয়ার পিছে দৃশ্য সাজাও…
কবিতা: হাওরের মা
লিখেছেন: মহিবুর রহিম
বাতাস আর জলরাশি কোনকালে তোমার দুঃখ বুঝে না
তোমার স্নায়ুতন্ত্রে বেজে চলে দুর্ভাগ্যের গর্জন
সরল শ্রমের সার্থকতা খেয়ে যায় বৈরী সময়
সোনার ধানের স্বপ্ন ভাসে ছিন্ন কচুরিপানার মতো
খালিয়াজুরী তাহেরপুরে হাহাকার করে শূন্য বাথান
সচ্ছল কৃষাণের স্বপ্ন যেন আহত ডানার পাখি
আজ সে ফিরে না ঘরে, ঘর্মাক্ত ফসলের ঝংকারে
যেন তার বিচ্ছেদি বাজে মৃত শূন্য হিজলের ডালে
ইটনায় জগন্নাখপুরে মিটামইনে দুঃখভারাক্রান্ত ঢেউ ভেসে আসে
জনম দুঃখী হাওরের মা নিশ্চল নির্বাক চেয়ে থাকে
উঠানের গোলাঘরে রঙিলা বউ-ঝিয়েরা এ কেমন শোক পালন করে
তাদের ধানের দোলনা ঝুলে বিধবার সাদা শাড়ি হয়ে
এই ভরা বৈশাখে গ্রামে গ্রামে থেমে আছে ফসল তোলার গান
দাওয়ালিরা ফিরে আসে ভেজা ভেজা দুঃখ আটি নিয়ে
অথৈ পানিতে ভাসে দঁড়ি-দড়া খাড়ি চাটাই বোল
নিকলীতে অষ্টগ্রামে থেমে আছে ফসল তোলার কলরোল
হাজার দুঃখের ভিড়ে এই দুঃখ দেখনি কোন কালে
তোমার আশার মতো জমি ও বসতভিটা ভেঙেছে বহুবার
ঢেউ বান বন্যা টলাতে পারেনি তোমার আদি প্রাকৃত তরণী
আজ কেন তবে নিশ্চল নির্বাক চেয়ে আছো হাওরের মা!
ভ্রমণ জিজ্ঞাসা
নিচে কিছু সাধারণ ভ্রমণ জিজ্ঞাসা দেয়া হল।
নিকলী হাওর কোথায় অবস্থিত?
নিকলী হাওর ঢাকা বিভাগ এর কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার অবস্থিত।
ঢাকা টু নিকলী হাওর কত কিলোমিটার?
১১০ কিলোমিটার (প্রায়)
নিকলী হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময় কখন?
নিকলী হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময় বর্ষার মৌসুমে। আপনার যদি হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার ইচ্ছে থাকে তাহলে, বর্ষার সময় আসলে বেশি উপভোগ করতে পারবেন। বর্ষার সময়টাকেই ভ্রমণের আদর্শ সময় বলা হয়ে থাকে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস এর মধ্যে গেলেই দেখা পাবেন অপরূপ সৌন্দর্য এবং দিগন্ত বিস্তৃত এক নিকলী হাওর।
ড্রোন উড়ানো যাবে?
হ্যাঁ
মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া যাবে?
হ্যাঁ
প্রাইভেট কার বা বড় গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে?
না। আপনাকে গাড়ি রেখে যেতে হবে।
ফেসবুক: Kuhudak