তারুয়া সমুদ্র সৈকত (Tarua Sea Beach) – চরফ্যাশন, ভোলা জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর একটি। আজকের পোস্টে আমরা বরিশাল বিভাগ এর ভোলা জেলার তারুয়া সমুদ্র সৈকত নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
আপনি একই সঙ্গে বন এবং সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন তারুয়া সমুদ্র সৈকতে!
তারুয়া সমুদ্র সৈকত কিভাবে যাবেন, কি কি দেখবেন, কোথায় থাকবেন, ভ্রমণ টিপস সহ বিস্তারিত দেয়া হল। আরেকটি কথা: সিজন, কর্তৃপক্ষ এবং সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী দর্শনীয় স্থান গুলোর বিভিন্ন পরিবর্তন হতে পারে (যেমন: খোলা থাকার সময়, টিকিট ফি ইত্যাদি) । তাই ভ্রমনের আগে অবশ্যই এই বিষয় গুলো ভালোভাবে জেনে নিতে ভুলবেন না।
চলুন শুরু করা যাক…
তারুয়া সমুদ্র সৈকত
ভ্রমণ স্থান | তারুয়া সমুদ্র সৈকত |
ধরন | দর্শনীয় স্থান (দ্বীপ) |
অবস্থান | চরফ্যাশন, ভোলা, বরিশাল, বাংলাদেশ |
আয়তন | ৩.১১ বর্গ কিলোমিটার |
বনাঞ্চল আয়তন | ২৮.২০ বর্গ কিলোমিটার |
এলাকা | ঢালচর |
চর জেগে উঠেছে | ৪২ – ৪৮ বছর আগে |
সমুদ্র | বঙ্গোপসাগর |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | প্রায় ২১৮ কিলোমিটার |
ভোলা জেলা শহর থেকে দূরত্ব | প্রায় ১৫০ কিলোমিটার |
চরফ্যাশন উপজেলা শহর থেকে দূরত্ব | প্রায় ৩৫ কিলোমিটার |
ড্রোন উড়ানো যাবে | হ্যাঁ |
একনজরে তারুয়া সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিলাম। এবার চলুন তারুয়ার ইতিহাস সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই। এখানে দেয়া তথ্য গুলো উইকিপিডিয়া, সরকারী ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য সোর্স থেকে নেয়া হয়েছে।
তারুয়া ইতিহাস
বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় বঙ্গোপসাগর এর পাশে আজ থেকে প্রায় ৪২ থেকে ৪৮ বছর আগে একটি চর জেগে উঠেছিল। যা অনেকে তারুয়া দ্বীপ নামে চিনেন। এই তারুয়া সমুদ্র সৈকতে যেতে হলে আপনাকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার নৌ-পথ পেরি দিয়ে যেতে হবে।
আরও: ভোলা জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
তারুয়া নামের উৎপত্তি
তারুয়া নামকরণ করা হয়েছে কিভাবে? লোকমুখে এবং ইন্টারনেট ঘেটে যতটুকু জানতে পেরেছি। ছোট্র এই দ্বীপে স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরতে আসতেন। তখন জেলেদের জালে তারুয়া নামে একপ্রকার মাছ ধরা পরত। ধারনা করা হয়, এই কারণেই এই এলাকাটির নামকরণ করা হয়েছে তারুয়া। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের চমৎকার এই দর্শনীয় স্থানটিকে সবাই তারুয়া সমুদ্র সৈকত নামেই চিনে।
বনাঞ্চল
ভোলা শহর থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর সাগারের মোহনায় জেগে উঠা তারুয়া দ্বীপ। বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে ঢালচর থেকে পূর্বদিকে চর শাহজালাল ও চর আশরাফের মাঝামাঝি বিছিন্ন তারুয়া দ্বীপ। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ।
আগেই বলেছি তারুয়া বিচের অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে এখানে একই সঙ্গে আপনি বন এবং সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে পলি জমতে জমতে প্রায় ৪২ থেকে ৪৮ বছর আগে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠেছে তারুয়া দ্বীপ। এরপরে বন বিভাগ নানান ধরনের গছপালা রোপন করলে দ্বীপটি সবুজে ভরে ওঠে। ৩১.৩১ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ২৮.২০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে সুবিশাল বনাঞ্চল।
পাখিদের যেন এক অভয়ারন্য তারুয়া সমুদ্র সৈকত। এখানে পাখির কলতানে মুখরিত থাকে প্রায় সবসময়। তবে শীতকালে অতিথি পাখিদের আগমনে পাখির আনাগোনা কিছুটা বেশি থাকে। এছাড়া, দর্শনীয় স্থান ভোলা ব-দ্বীপের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ঢালচর, কুকরি-মুকরি ও পর্যটন কেন্দ্র তারুয়া বিচে সবসময়ই পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকে। কোনো হিংস্র পশুর ভয় না থাকলেও এখানে রয়েছে: লাল কাকড়া, শিয়াল, বনবিড়াল, হরিণ, সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী।
বাগানের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সরু পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটু ভেতরে গেলেই মনে হবে, এ যেন আরেক ভূবন! সেখানে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বিশাল একটি শীতল ছাঁয়া বিশিষ্ট মাঠ। স্থানীয়ভাবে জায়গাটা বরইতলা নামে পরিচিত।
তারুয়ায় কি কি দেখবেন
তারুয়া দর্শনীয় স্থানে দেখার মত অনে কিছু রয়েছে। আপনি তারুয়া সমুদ্র সৈকত, বালুকাময় মরুপথ, ম্যানগ্রোভ বন, গো চারণভূমি, জেলে নৌকায় চড়ে মৎসাভিযান, বনের মহিষ, শেয়ালের হুক্কা-হুয়া কোরাস, সাগরের উত্তাল গর্জন এবং হাজারও অতিথি পাখি দেখতে পাবেন। তারুয়া সমুদ্র সৈকতে প্রায় ৩০০ ফুট দীর্ঘ, ল্যান্ডিং ষ্টেশন বানানো হয়েছে যেখানে ট্রলার ও ছোট লঞ্চ ভীড়তে পারবে। এছাড়া সৈকতের বিস্তীর্ণ প্রান্তর-জুড়ে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি ভিন্ন সৌন্দর্য সৃষ্টি করে।
তারুয়া ভ্রমণ টিপস
তারুয়া ভ্রমণ টিপস গুলো দেয়া হল:
- এখানে রাতে একা ক্যাম্প করে না থাকাই ভালো।
- সাঁতার না জানলে বেশি দূর কখনো যাবেন না।
- ভ্রমণ স্থানকে ময়লা ফেলে নোংরা করবেন না।
- জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিন।
- সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
- গ্রীষ্মে এখানে ভ্রমণের সময় সাথে ছাতা অথবা রেইনকোট নিতে ভুলবেন না।
- একজন ভ্রমণ কারীর সাথে ক্যামেরা থেকে শুরু করে মোবাইল, ল্যাপটপ, ড্রোন ইত্যাদি থাকে। তাই নিরিবিলি স্থানে ভ্রমণ করার সময় সদা সতর্ক থাকা উচিত। বলাতো যায়না কখন বিপদ ঘটে যায়।
- ভ্রমণে পান করার জন্য সাথে ফ্রেশ পানি নিয়ে নিবেন। সাথে শুকনো খাবার নিতে ভুলবেন না।
- অপরিচিত কারো দেওয়া কিছু খাবেন না।
- কোন ইভেন্ট বা অপরিচিত কারো সাথে ভ্রমণে যেতে চাইলে ভ্রমণ সঙ্গী কীভাবে নির্বাচন করবেন তা পড়ে নিন।
- মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখুন।
তারুয়া যাওয়ার উপায়
আপনি খুব সহজেই দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে তারুয়া সমুদ্র সৈকত যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে লঞ্চে করে প্রথমে চরফ্যাশন যেতে হবে।
ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চ
ঢাকার সদরঘাট থেকে ফারহান ৫ অথবা ৬ এবং তাশরিফ ৪ অথবা ৩ একই দিনে যথাক্রমে সন্ধ্যা ৭টা ৪৫মিনিটে এবং রাত ৮টা ৩০মিনিটে বেতুয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
ভাড়া: ভাড়া ডেকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। নাস্তা সেরে অটোতে চেপে চলে যেতে হবে চর কচ্ছপিয়া, ভাড়া জনপ্রতি ১০০ – ১২০ টাকা।
মটর সাইকেলে গেলে ২০০ – ২৫০ টাকা ভাড়া পড়বে। এক বাইকে ২জন যেতে পারবেন। চর কচ্ছপিয়া থেকে ট্রলারে করে যেতে চর কুকরি মুকরি, ভাড়া ৪০ টাকা। তবে লোকাল ট্রলারে যেতে চাইলে সকাল ১১:৪৫ এর মধ্যে ঘাটে থাকতে হবে। চর কুকরি মুকরিতে পৌছানোর পরে ট্রলারে করে ঢাল চর যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন খুব সহজেই সহজেই।
এছাড়া কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে বিকেল ৩টায় সারাদিনে মাত্র ১টি লঞ্চ ঢালচরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৭০ টাকা।
আপনি চাইলে চর ফ্যাশন থেকেও যেতে পারেন। চর ফ্যাশন বাজার থেকে কচ্ছপিয়া ঘাট বাস কিংবা অটোতে যেতে হবে, সময় লাগবে ঘন্টা দেড়েক। এরপর কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে ২.৩০ ঘন্টায় তারুয়া/ঢাল চর। নৌকা ভাড়া ৩৫০০-৪৫০০ টাকা।
বিখ্যাত খাবার
ভোলা জেলা নারিকেল এবং মহিষের দুধের দই এর জন্য বিখ্যাত। তাছাড়া পাবেন, মহিষের দুধে তৈরি দই, রসগোল্লা। প্রাণভরে সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। রূপালী ইলিশ, খালের টাটকা গলদা চিংড়ী, জালি ডাব, নারকেল দিয়ে রান্না করা কাঁকড়া, খেজুরের রস ইত্যাদি। তবে শীতের সময় ছাড়া খেজুরের রস পাবেন না।
কোথায় থাকবেন
তারুয়া দ্বীপে থাকার মত কোন হোটেল নেই। আপনি এখানে ক্যাম্প করে থাকতে পারেন। এখানে রয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত ঘাস এর সবুজ মাঠ।
এছাড়া, স্থানীয় মানুষজন খুবই অতিথিপরায়ণ। চাইলে এমন কোন পরিবারের সাথে কথা বলে তাদের সাথে থাকতে পারেন। একটু দূরে চর কুকরি মুকরিতে ইউনিয়ন পরিষদের একটি গেস্ট হাউজ রয়েছে। আগের থেকে অনুমতি নিয়ে এখানেও থাকতে পারবেন।
ভ্রমণ জিজ্ঞাসা
তারুয়া সমুদ্র সৈকত নিয়ে কিছু ভ্রমণ জিজ্ঞাসা দেয়া হল।
তারুয়া সমুদ্র সৈকত কোথায় অবস্থিত?
চরফ্যাশন, ভোলা, বরিশাল, বাংলাদেশ।
তারুয়া প্রবেশ ফি কত?
এখানে ভ্রমণে কোন প্রবেশ ফি বা এন্টি ফি প্রয়োজন নেই।
তারুয়া নামের উৎপত্তি হয় কিভাবে?
ছোট্র এই দ্বীপে স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরতে আসতেন। তখন জেলেদের জালে তারুয়া নামে একপ্রকার মাছ ধরা পরত। ধারনা করা হয়, এই কারণেই এই এলাকাটির নামকরণ করা হয়েছে তারুয়া।
ঢাকা থেকে দূরত্ব কত?
প্রায় ২১৮ কিলোমিটার।
তারুয়া চর কত বছর আগে জেগে উঠেছে?
৪২ – ৪৮ বছর আগে
ফেসবুক: Kuhudak