জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (National Botanical Garden of Bangladesh) বা, বোটানিক্যাল গার্ডেন অথবা, বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বেরিয়াম বাংলাদেশের ঢাকার মিরপুরে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার পাশে অবস্থিত।
এই জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানটি ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন নামেও সু-পরিচিত। এছাড়া বাংলাদেশের উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রদর্শনের জন্য সবচেয়ে বড় কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।
আজকে আমি আরিফ হসেন ঢাকা মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা, বোটানিক্যাল গার্ডেন ভ্রমণে যাব। ঘুরে দেখার চেষ্টা করব পুরো গার্ডেনটি।
চলুন শুরু করা যাক…
আরও: টাকা জাদুঘর
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান
ভ্রমণ স্থান | জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান |
পরিচিত নাম | বোটানিক্যাল গার্ডেন |
অবস্থান | মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ |
ধরন | উদ্ভিদ উদ্যান |
আয়তন | ৮৪ হেক্টর (২০৮ একর) |
নির্মিত | ১৯৬১ সাল |
উদ্ভিদ প্রজাতি | ৯৫২টি |
উদ্ভিদ | ৬৮ হাজার (প্রায়) |
সেকশন | ৫৭টি |
জলাশয় | ৭টি |
রাস্তা ও ফুটপাত | ৭.৬৭৮ কিঃমিঃ |
অবস্থা | সর্বজনীন |
পরিচালিত | পরিবেশ ও বন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ |
খোলা থাকার সময় | সারা বছর |
টিকিট মূল্য | ১০০ টাকা |
পরিদর্শনের সময় | সূর্যোদয় হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত |
দর্শনার্থীর সংখ্যা | ১৫ লক্ষ (বছর) |
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান কোথায় অবস্থিত
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা, বোটানিক্যাল গার্ডেন বাংলাদেশের ঢাকা জেলার মিরপুরে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার পাশেই অবস্থিত।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ম্যাপ
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে আপনাকে স্বাগতম
২০৮ একরের এই উদ্যানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বাঁশ বাগান, লেক, লেকের উপর দর্শনার্থী ডেক, গোলাপ বাগান, দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদ, পদ্মপুকুর, শাপলা পুকুর, মৌসুমি ফুলের বাগান, বিচিত্র বর্ণের কাঠবিড়ালি, বৈচিত্র্যময় পাখপাখালি, আরও আছে প্রাকৃতিক অনেক ঔদার্য দান যা আপনাকে মানসিক শান্তি দিবে। আপনার প্রকৃতি প্রেমকে করবে জাগ্রত।
আরও: ঢাকা জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
টিকিট মূল্য ও সময়সূচি
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি ১০০ টাকা টিকিট মূল্য দিতে হবে। এছাড়া, ১২ বছরের নিচের শিশুদের প্রবেশে জন্য ৫০ টাকা। বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশে ফি ১,০০০ হাজার টাকা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা সফরে যাওয়া ১০০ জনের গ্রুপকে দিতে হবে ১,০০০ টাকা আর ১০০ জনের বেশির গ্রুপকে দিতে হবে ১,৫০০ টাকা।
ভ্রমণের সময় (নভেম্বর থেকে মার্চ মাস: সকাল ৬:৩০টা থেকে ৭:৩০টা, আর এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস: সকাল ৬টা থেকে ৭টা) পর্যন্ত।
বোটানিক্যাল গার্ডেন সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
বোটানিক্যাল গার্ডেন ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই উদ্ভিদ উদ্যান।
২০৮ একর আয়তনে ৫৭টি সেকশন সম্মিলিত। উদ্যানটি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও জীবনপুল তৈরীর মুখ্য উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়। এখানে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও গবেষণার জন্য সহায়তা প্রদান এবং দর্শনার্থীদের জন্য প্রাকৃতিক শোভা উপভোগের বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হয়।
উদ্যানে ছোট-বড় সাতটি জলাশয়ের মোট আয়তন ১১ একর। তন্মধ্যে একটি জলাশয়ের পাশে জলপ্রপাত ও ডেক রয়েছে। বর্তমানে ১১৪টি উদ্ভিদ পরিবার ভুক্ত ৯৫২টি প্রজাতির গাছ-পালা নিয়ে জাতীয় উদ্যান একটি জীবন্ত সংগ্রহশালা।
এখানে ২৫৫ প্রজাতির ২৮,২০০টি বৃক্ষ, ৩১০ প্রজাতির ৮,৪০০টি গুল্ম ও ৩৮৫ প্রজাতির ১০,৪০০ বিরুৎ জাতীয় গাছ রয়েছে। এছাড়া ৬টি নেট হাউজে রয়েছে বিরল প্রজাতির অর্কিড ও ক্যাকটাস।
উদ্যানে ২২ প্রজাতির ১টি বাঁশ বাগান, গজারি বন, পাম বাগান, মেডিসিনাল বাগান, ফল বাগান, ধাঁধা হেজ, ৫০ বছরের অধিক বটবৃক্ষ প্রভৃতি দর্শনীয় বস্তু। শিক্ষা ও গবেষণার কাজে প্রতিবছর এখানে প্রায় ১৫ লক্ষ দর্শনার্থী আসে।
আরও: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমণ
বোটানিক্যাল গার্ডেন ভ্রমণ
গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে ভ্রমণ করে আসলাম মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশের জাতীয় জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা সবার কাছে পরিচিত বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে।
ভ্রমণের শুরুতেই বলে নেই যে, এই বোটানিক্যাল গার্ডেন নিয়ে অনেকেরই নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তবে আজকের ভ্রমণে আমি দেখার চেষ্টা করব মানুষের মনের সেই নেতিবাচক ধারণার কতটুকুইবা এখন বাস্তবে রয়েছে।
সকাল ১০:৩৫ মিনিট। আমি বোটানিক্যাল গার্ডেন গিয়ে পৌছালাম। জাতীয় এই উদ্যানটি সপ্তাহের ৭দিন সূর্যোদয় হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।
এখানে প্রবেশের টিকিট মূল্য ১০০টাকা। কিন্তু প্রতিবন্ধী ও দুই বছরের শিশুর জন্য টিকিট এর প্রয়োজন নেই।
বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রধান গেইট দুটি পাশাপাশি রয়েছে। চলুন টিকিট নিয়ে গার্ডেন এর ভিতরে প্রবেশ করা যাক।
উদ্ভিদ উদ্যানে যা দেখতে পেলাম
গেইট দিয়ে উদ্ভিদ উদ্যানে প্রবেশের পর আপনাকে হাতের ডান’দিকে যেতে হবে এরপর বা’দিকে মোড় নিয়ে সোজা হেটে যাবেন। আর, দুই পাশে দেখবেন নানা প্রজাতির ফুল এবং অন্যান্য গাছগাছালি।
ডানে মোড় নেয়ার সময় দেখতে পাবেন উদ্ভিদ উদ্যানে ছোট্ট একটা ম্যাপ রয়েছে। তার কিছুটা সামনেই দুই পাশে সাইনবোর্ডে উদ্যান সম্পর্কে নানা তথ্য দেয়া রয়েছে। উদ্যান সম্পর্কে পরিচিতি থেকে শুরু করে আপনি এখানে কি কি দেখতে পাবেন, কিকি করতে পারবেন বা পারবেন না এইসব আর কি।
বর্ণনা গুলো কিছুটা এরকম:
- জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। এর সম্পদ ও সৌন্দর্য রক্ষা করা আপনার আমার সকলেরই দায়িত্ব।
- উদ্যানের অভ্যন্তরে সকল প্রকার অনৈতিক অসামাজিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ।
- বন্যপ্রাণী প্রকৃতির অলংকার, এদের প্রতি কোনোরূপ নিষ্ঠুর আচরণ করবেন না।
- সূর্যাস্তের পর বাগানের অবস্থান নিষিদ্ধ।
- উদ্যানে গাছের ফুল ছিড়া, ফল পাড়া এবং ডাল-পালা ভাঙ্গা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এরপর হাতের বা’দিকে দেখতে পাবেন বিশাল এক সুদৃশ্য গোলাপ বাগান।
এখানে আকর্ষণীয় সুদৃশ্য লাল গোলাপের পাশাপাশি বিরল প্রজাতির ডাবল ডিলাইট, তাজমহল পারফেক্টা, স্টান্ডাড রোজ, মিনিয়েচার ফ্লোরিইয়ান্ডা, পুলিইয়েন্থা সহ প্রায় ১০০ জাতের গোলাপের সমারোহ রয়েছে।
আরও: জল্লাদখানা বধ্যভূমি
উদ্ভিদ উদ্যানে ভ্রমণকালে যা পালনীয়
উদ্ভিদ উদ্যানে ভ্রমণকালে আপনাকে যা পালন করতে হবে তা সম্পর্কে জানা যাক।
- উদ্যানে অবস্থানকালে ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
- উদ্যানের শালীনতা বজায় রেখে চলাফেরা করুন।
- উদ্যানের অভ্যন্তরে খেলাধুলা করা থেকে বিরত থাকুন।
- উদ্যানের অভ্যন্তরে গাড়ি অত্যন্ত ধীরগতিতে ড্রাইভ করুন।
- উদ্যানের গাছপালা ন্যূনতম ক্ষতিসাধন থেকে নিজেকে বিরত রাখুন, অন্যকেও বিরত রাখতে সহায়তা করুন কারণ এটা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
- উদ্যানে বিচরনরত বন্য পাখি ধরা, মারা বা উত্যক্ত করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন এবং অন্যকেও বিরত রাখতে সহায়তা করুন কারন এটাও আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
- আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বাগানে প্রবেশ নিষেধ।
এবার কিছুটা হেটে গেলে সামনে ডান পাশে আঁকাবাঁকা ছোট লেক দেখতে পাবেন।
এখানে লেকের মাঝখানে ছোট একটি দ্বীপ রয়েছে। যা একটি ব্রিজ এর মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে।
ক্যামেলিয়া বিশ্রামাগার
কিছুটা এগিয়ে গেলে দর্শনার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার দেখতে পাবে। বিশ্রামাগারের নাম ক্যামেলিয়া।
শাপলা পুকুর
ক্যামেলিয়া বিশ্রামাগার থেকে কিছুটা সামনে এগুলে ছোট্ট একটা শাপলা পুকুর দেখতে পাবেন। তবে পুকুরে এখন কোন শাপলা নেই!
এরপর বেশ কিছুটা হেটে গেলে মূল উদ্যানে প্রবেশের আরেকটি ফটোক দেখতে পাবেন। এখানে আপনার টিকিট টি আরেকবার চেক করা হতে পারে। এখানে মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশ নিষেধ।
মূল গেইটের সাথেই একটি ওয়াশরুম রয়েছে। মূল গেইট দিয়ে একটু সামনে এগুলেই বা’দিকে দেখতে পাবেন দর্শনার্থী কেন্দ্র।
এরপর রয়েছে সেকশন-৭ এর সবুজ চত্বর। যেখানে মৌসুমী ফুল এবং পাতাবাহারের বাগান রয়েছে।
আরও: বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর
গাইড ম্যাপ
উদ্যানে ভ্রমণের জন্য একটি গাইড ম্যাপ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক উদ্যান কীভাবে ভ্রমণ করবেন
সবুজ চত্বর থেকে দুই পাশের নানা ফুল ও নানা প্রজাতির বৃক্ষের গাছ দেখতে দেখতে চলে আসেন আন্তর্জাতিক উদ্যান।
আন্তর্জাতিক উদ্যান টি ১৯৭৩ সালে তৈরি করা হয়েছে। এখানে তেমন কিছু নেই। ইট সিমেন্ট দিয়ে আস্ত একটা গোল সার্কেল বানানো হয়েছে। আপনি চাইলে এখানে বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারেন।
বিশ্রাম নেয়া শেষ হলে হেটে সামনে চলে আসেন। এখন আপনি দুই ভাবে ভ্রমণ করতে পারেন।
১। আন্তর্জাতিক উদ্যান থেকে সোজা রাস্তা ধরে হেটে চৌরাস্তা দিয়ে গ্রীনহাউজ হয়ে পরিচালকের কার্যালয় – বোটানিক্যাল গার্ডেন জামে মসজিদ – ওয়াচ টাওয়ার – পদ্মপুকুর – পদ্ম নীড় – শাপলা পুকুর – বাঁশ বাগান হয়ে – আন্তর্জাতিক উদ্যান।
২। আন্তর্জাতিক উদ্যান থেকে বাঁশ বাগান হয়ে – শাপলা পুকুর – পদ্ম নীড় – পদ্মপুকুর – ওয়াচ টাওয়ার – বোটানিক্যাল গার্ডেন জামে মসজিদ – পরিচালকের কার্যালয় – গ্রীনহাউজ – চৌরাস্তা হয়ে আন্তর্জাতিক উদ্যান।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ভ্রমণ
আমরা ২ নাম্বার নির্দেশনা অনুযায়ী ভ্রমণ করব। এজন্য আন্তর্জাতিক উদ্যান থেকে কিছুটা সামনে এসে চৌরাস্তার কিছুটা আগে হাতের বা’দিকে বাঁশ বাগানের দিকে যেতে হবে।
তবে বাঁশ বাগান যাওয়ার পূর্বে দেখতে পেলাম দর্শনার্থীদের বসার জন্য নতুন ছাউনি তৈরীর কাজ হচ্ছে। এছাড়া টুকটাক অনেক সংস্কারের কাজ চোখে পড়লো।
আরও: জাতীয় স্মৃতিসৌধ
বাঁশ বাগান
আন্তর্জাতিক উদ্যান থেকে প্রথমে বাঁশ বাগান চলে আসলাম। এই বাঁশ বাগানে ২২ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে।
বেশিক্ষণ এখানে সময় ব্যয় না করে সামনে এগিয়ে চললাম। কারন বাঁশের কথা শুনলেই কেমন যেন লাগে!
আরও: জল্লাদখানা বধ্যভূমি
শাপলা পুকুর
বাঁশ বাগান থেকে সামনে এগুলে বিশাল এক শাপলা পুকুর এর দেখা পাবেন। শাপলা পুকুরের পাড়ের চারপাশে বড় বড় অনেক নারিকেল গাছ রয়েছে।
এইসময় শাপলা পুকুরে তেমন পানি নেই। তবে এখানেও সংস্কারকাজ লক্ষ্য করার মতো। আগের চেয়ে পাড়ের পরিধি বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া পুকুরের ৩পাশে বসার জন্য টুল রয়েছে। তবে বড় দর্শনার্থী ছাউনিটি রয়েছে পুকুরের উত্তর পাশে। এর পাশেই রয়েছে বাঁশ বাগান।
পদ্ম নীড়
শাপলা পুকুর থেকে পদ্ম-নীড় যাওয়ার জন্য বাঁশ বাগান এর ভিতর দিয়ে সুন্দর রাস্তা রয়েছে।
আপনি বনের রাস্তা দিয়ে কিছুটা হেটে সামনে আসলেই দেখতে পাবেন পদ্ম নীড়। পদ্ম নীড় বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিল্ডিং এর উপর শেওলা ধরেছে দেখলাম। পদ্ম নীড়ের পাশেই রয়েছে বিখ্যাত পদ্মপুকুর।
আরও: চিড়িয়াখানা
পদ্মপুকুর
পদ্মপুকুর বোটানিক্যাল গার্ডেন এর একটি জনপ্রিয় স্থান। এই জায়গাটি দর্শনার্থীদের কাছে খুবই প্রিয়। বর্তমানে এটাকে প্রজাপতির প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
পদ্মপুকুরে এখন কোন পদ্ম নেই! কারন পদ্মপুকুরে যে কোন পানি নেই। এপ্রিল হতে সেপ্টেম্বর এখানে পদ্ম ফুল দেখা যায়।
ওয়াচ টাওয়ার
পদ্মপুকুর পাড়ে কিছুসময় থাকার পর ডানে মোড় নিয়ে চলে আসলাম ওয়াচ টাওয়ার। ওয়াচ টাওয়ারটি বেশ উচু। কিন্তু এটি এখন বন্ধ।
এই ওয়াচ টাওয়ার এর ঠিক নিচেই একটি টং দোকান রয়েছে। এখানে আপনি চা-বিস্কুট থেকে শুরু করে ঠান্ডা পানি, কোলড্রিংস, শুকনো খাবার পেয়ে যাবেন।
সময় থাকলে এখানে বসে চা পান করে নিতে পারেন। ভালো লাগবে আপনার। আমি একটু চা পান করে নিলাম।
আরও: বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর
বোটানিক্যাল গার্ডেন জামে মসজিদ
ওয়াচ টাওয়ার এর সাথেই বোটানিক্যাল গার্ডেন জামে মসজিদ রয়েছে।
নামাজের সময় হলে বোটানিক্যাল গার্ডেন জামে মসজিদে নামাজ আদায় করে নিতে পারেন।
পরিচালকের কার্যালয়
বোটানিক্যাল গার্ডেন জামে মসজিদ এর পরেই রয়েছে পরিচালকের কার্যালয়। আমার কাছে এই স্থানটি খুবই চমৎকার লেগেছে।
কার্যালয়টি যেমন সুন্দর তেমনি আশেপাশের জায়গা গুলো নানা ফুল এবং বৃক্ষরাজি দিয়ে সাজানো। কার্যালয়টির ঠিক সামনেই বিশাল আয়তনের এক ফুলের বাগান রয়েছে।
পরিচালকের কার্যালয়ের বা’দিকে হেটে গেলে দেখতে পাবেন ফার্ম হাউস। এখানে বিভিন্ন উদ্ভিদের ছোট ছোট চারা রয়েছে।
গ্রীনহাউজ
পরিচালকের কার্যালয় থেকে সামনে আসলে দেখতে পাবেন গ্রীনহাউজ।
গ্রিন হাউজে ৮০ প্রজাতির ক্যাকটাস ও সাকুলেন্ট সংরক্ষিত রয়েছে। ১৯৯৪ সালে গ্রিন হাউজটি নির্মান করা হয়। বিভিন্ন প্রজাতির ক্যাকটাসের মধ্যে রয়েছে ওল্ডম্যান, ফিসহুক ক্যাকটাস, ম্যামিলারিয়া, ক্ষেপালিয়া, মেলো ক্যাকটাস, গোল্ডেন ব্যারেল, সিরিয়াম হেক্সোজেনাস, র্যাট টেইল, আপাংসিয়া সিডাম, হাওয়ার্থিয়া, পিকটোরিয়া ইত্যাদি। বেশিরভাগ ক্যাকটাস মেক্সিকো থেকে আনা হয়েছে।
এছাড়া, অর্কিড গ্রিন হাউজে দেশি-বিদেশি প্রায় ৮৫ প্রজাতির অর্কিড সংরক্ষিত রয়েছে। নেট হাউজে ছায়াতরু সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রায় ১০০ প্রজাতির ছায়াতরু রয়েছে এ হাউজে।
আরও: ঢাকা জেলা
চৌরাস্তা
গ্রীনহাউজের পাশেই চৌরাস্তা রয়েছে। আপনি চাইলে এখান থেকে উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে যেতে পারবেন। কারন, উদ্যানের সকল রাস্তা এখানে এসে মিলিত হয়েছে।
তাছাড়া আপনি যদি রাস্তা ধরে সোজা দক্ষিণ দিকে যান তাহলে আন্তর্জাতিক উদ্যান হয়ে মূল গেইটের সামনে চলে আসতে পারবেন।
আরও: গোলাপ গ্রাম
নার্সারি
উদ্ভিদ উদ্যানের প্রায় ৫ একর জায়গা জুড়ে একটি বিশাল নার্সারি রয়েছে। এ নার্সারিতে ফুল, ফল, লতা, গুল্ম ইত্যাদি উদ্ভিদের চারা চাষ করা হয়। সরকার নির্ধারিত মূল্যে দিয়ে নার্সারি থেকে চারা কিনতে পারবেন আপনি।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ভ্রমণ টিপস
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা, বোটানিক্যাল গার্ডেন ভ্রমণের জন্য কিছু ভ্রমণ টিপস দেয়া হল।
- মাদকদ্রব্য নিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করবেন না।
- উদ্যানে টিকেট সংগ্রহ করে প্রবেশ করুন।
- টিকিট সঙ্গে রাখুন যেকোন সময় কাজে লাগতে পারে।
- ভ্রমণের সময় অবশ্যই সাথে করে খাবার পানি এবং শুকনো খাবার নিয়ে নিবেন। কারণ উদ্যানটি বেশ বড় আপনি হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন।
- হাটার সময় তাড়াহুড়া করবেন না ধীরে ধীরে হাঁটেন তাহলে ক্লান্ত কম হবেন।
- উদ্যানের ভিতরে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হবেন না।
- ভ্রমণের সময় সঙ্গে ছাতা রাখুন।
- গরমের সময় যতটা সম্ভব হালকা পাতলা গড়নের জামা কাপড় পড়ার চেষ্টা করুন।
- কাউকে বিরক্ত করবেন না।
- হেঁটে ক্লান্ত হয়ে গেলে বিশ্রাম নিয়ে নিন।
- প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করবেন না।
- জায়গাটি খুবই গহীন তাই ক্যামেরা এবং মোবাইল ব্যবহারে সাবধান থাকুন।
- একা হলে জঙ্গলের গহীনে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকুন।
- উচ্চস্বরে হৈচৈ করবেন না।
- বন্যপ্রাণী থেকে সাবধান।
- লেকের পানিতে নামবেন না।
- কারো দেয়া কোন কিছু খাবেন না।
- যেকোন প্রয়োজনে হেল্পলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করুন: ০১৯০৪-৩০৫২৯৪
বোটানিক্যাল গার্ডেন ভ্রমণ গাইড
ঢাকা থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেন এর দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার।
বাস ভ্রমণ
গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে লেগুনায় চড়ে সরাসরি বোটানিক্যাল গার্ডেন।
ভাড়া: ১০টাকা।
সদরঘাট বাস টার্মিনাল থেকে মিরপুর ১ হয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেন।
ভাড়া: ২৫টাকা।
কোথায় খাবেন
খুব খিদে না পেলে জাতীয় উদ্যানের সামনের ছোট ছোট ফাস্টফুডের দোকান থেকে কিছু না কিনে খাওয়াই ভালো। কারণ এখানে প্রত্যেকটি দ্রব্যের দাম অনেক বেশি।
মানসম্মত খাবারের জন্য সনি সিনেমা হলের পাশে বা, মিরপুর-১ গোল চত্বরের যে কোন রেষ্টুরেন্ট খেতে পারেন।
ফেসবুক: Kuhudak
বাই কিছু ঔসুদি গাছ লকবে ২৫ থেকে ৩০ টা জাত
একটা সময় এখানে অনেক ঘোরাঘুরি করেছিলাম এবং বন্ধুরা মিলে ক্রিকেটও খেলা হয়েছে অনেকবার। তবে এখন অনেক সিকিউরিটি যুক্ত হয়েছে। মানুষ সাচ্ছন্দ্যে ঘোরাঘুরি করতে পারে।
জেনে ভালো লাগল। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
best
thanks
যাক আগের চেয়ে ভালো হয়েছে!
ধন্যবাদ 🙂
darun arif vai
thanks
অসাধারন। এত বিস্তারিত তথ্য অন্য কোথাও পাইনি।
ধন্যবাদ।