গোয়ালদি মসজিদ (Goaldi Mosque) বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। যা, গোয়ালদী শাহী মসজিদ বা, হুসেন শাহর মসজিদ বা, গায়েবী মসজিদ নামে পরিচিত।
আজকের ভ্রমণে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলায় অবস্থিত প্রাচীন মসজিদ গোয়ালদি মসজিদ নিয়ে আলোচনা করব।
চলুন শুরু করা যাক…
আরও: পানাম নগর
গোয়ালদি মসজিদ
ভ্রমণ স্থান | গোয়ালদি মসজিদ |
ধরন | প্রাক মুঘল স্থাপত্য |
অবস্থান | গোয়ালদি, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ |
স্থাপিত | ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দ |
স্থাপন করেন | মোল্লা হিজাবর খান |
গম্বুজ সংখ্যা | ১টি |
পদার্থ | চুন, সুরকি, কৃষ্ণ পাথর |
আয়তন | ৭.৯২ মিটার |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | ৩৬ কিলোমিটার (প্রায়) |
গোয়ালদি মসজিদ ইতিহাস
গোয়ালদি মসজিদ বাংলাদেশের প্রাক মুঘল স্থাপত্যের একটি নিদর্শনসমূহ। ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে মোল্লা হিজাবর খান সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের আমলে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।
হোসেন শাহ এর রাজত্বকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে যেসব লিপি পাওয়া যায় তার মধ্যে গোয়ালদি মসজিদ ও তার সংলগ্ন শিলালিপি অন্যতম। বিশেষ করে, ভারতের গৌড়, পান্ডুয়া ও বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের ইমারতে ন্যায় এ মসজিদের ভেতর ও বাইরের দেয়ালের পাথর ও ইটের উপরে মুসলিম ঐতিহ্যগত আরবীয় অলংকরন লক্ষ্য করা যায়।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদের ইতিহাসসংবলিত একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে তাতে উল্লেখ করেছেন, মোগল আমলে ঢাকায় রাজধানী স্থাপনের আগে সোনারগাঁয়ে বার ভূঁইয়া প্রধান ঈশা খাঁ, মুসা খাঁ ও এর আগের স্বাধীন সুলতানদের রাজধানী ছিল। রাজধানী ও রাজসভার জন্য মনোরম ইমারত ছাড়াও মুসলিম শাসকেরা এখানে মসজিদ, খানকা ও সমাধি নির্মাণ করেন। তার মধ্যে এ মসজিদ অন্যতম।
মসজিদ এর অবকাঠামো
গোয়ালদি মসজিদ এর অবকাঠামোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, মসজিদ এর আয়তন ৭.৯২ মিটার এবং চারদিকের দেয়াল ১.৬১ মিটার পুরু রয়েছে।
মসজিদটি ১ গম্বুজ বিশিষ্ট। পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মেহরাব রয়েছে। এক গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদের চার কোনায় চারটি গোলায়িত কর্ণার টাওয়ার রয়েছে। এ টাওয়ার গুলো সুলতানী রীতিতে ছাদের সীমানা শেষ হয়েছে।
এছাড়া পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে (এখন ইট দিয়ে ভরাট করা) একটি করে খিলানাকৃতির প্রবেশপথ রয়েছে। পেন্ডেন্টিভের সাহায্যে নির্মিত গম্বুজটির ভিত্তি চারকোণের চারটি স্কুইঞ্চ খিলানের উপর স্থাপিত। মসজিদটির ভেতরে ছাদের ভার রক্ষার জন্য কালো পাথরের কিছু অলংকৃত স্তম্ভও রয়েছে।
সোনারগাঁয়ের সুলতান গিয়াস উদ্দিন শাহর সমাধিতে পাথরের উপর তৈরি নকশার সাথে গোয়ালদি মসজিদের টেরাকোটা নকশার সাথে অনেক মিল দেখা যায়। মসজিদটির পুরু ইটের পৃষ্ঠ সম্পুর্ণ টেরাকোটা অলংকরণ রীতিতে বিভিন্ন নকশা খোদাই করা রয়েছে।
বর্তমানে মসজিদটির চারপাশ নিচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। ভিতরে প্রবেশের জন্য একটি মাত্র পথ রয়েছে। এছাড়া মসজিদ এর চারপাশ ফুল এবং অন্যান্য গাছ দিয়ে সাজানো রয়েছে।
১ গম্বুজ মসজিদ
১ গম্বুজ মসজিদ হিসেবে বিখ্যাত গোয়ালদি মসজিদটি রাস্তার পাশেই অবস্থিত। মসাজিদ এর অপর পাশে রয়েছে বাহাউল হক টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট।
মসজিদ এর বর্তমান অবস্থা
গোয়ালদি মসজিদ ভ্রমণে গিয়ে দেখতে পাই যে, ১৯৭৫ সালে মসজিদটির সংস্কার এবং বাংলাদেশ সরকার ঐতিহাসিক এ মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণসহ সার্বিক বিষয়ে দেখভাল করার ফলে মসজিটি আগের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে। তবে, মসজিদ এর কিছু কিছু অংশে শ্যাওলা পরা লক্ষ্য করা যায়।
ঐতিহাসিক গোয়ালদী মসজিদ পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয়। সোনারগাঁয়ের ঐতিহাসিক পানাম নগর, লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর ভ্রমণে এলে অনেকেই এই মসজিদটি ভ্রমণ করতে আসেন।
সুলতানী আমলের গৌরবোজ্জল মুসলিম ঐতিহ্যের অন্যতম সাক্ষী এই গোয়ালদী শাহী মসজিদ।
আরও: তাজমহল সোনারগাঁও
গোয়ালদি মসজিদ ভ্রমণ গাইড
গোয়ালদি মসজিদ ভ্রমণ গাইডে আপনাকে স্বাগতম। ঢাকা থেকে এই মসজিদ এর দূরত্ব প্রায় ৩৬ কিলোমিটার এবং পানাম নগর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।
ঢাকা থেকে বাস ভ্রমণ
আপনাকে ঢাকা গুলিস্তান থেকে স্বদেশ, বোরাক, দোয়েল ও সোনারগাঁ নামক বাসে উঠে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় নামতে হবে।
- স্বদেশ পরিবহণ
- বোরাক পরিবহণ
- দোয়েল পরিবহণ
- সোনারগাঁ পরিবহণ
বাস টিকিট মূল্য: গুলিস্তান থেকে ৪০ হতে ৫০ টাকা (এসি/নন-এসি)।
মোগরাপাড়া থেকে লোকশিল্প জাদুঘরের দূরত্ব প্রায় ২ কিলোমিটার। চাইলে রিক্সা অথবা সিএনজিতে করে যেতে পারেন। এছাড়া নিজস্ব পরিবহণ থাকলে সেটা দিয়েও যেতে পারেন। কারন যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো। আর, লোকশিল্প জাদুঘর থেকে মসজিদ এর দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার।
আপনি সরাসরি মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে অটোরিক্সা, রিক্সা অথবা সিএনজি নিয়ে চলে আসতে পারেন অথবা পানাম নগর, লোকশিল্প জাদুঘর ঘুরে মসজিদটি দেখতে আসতে পারেন।
ভাড়া: মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে পানাম নগর অটোরিক্সা ভাড়া: ১০-৩০ টাকা। পানাম নগর থেকে গোয়ালদি মসজিদ অটোরিক্সা ভাড়া: ১৫-২০ টাকা।
আরও: মায়াদ্বীপ
ভ্রমণ টিপস
গোয়ালদী শাহী মসজিদ ভ্রমণের কিছু টিপস দেয়া হল।
- গোয়ালদী শাহী মসজিদ রাস্তার সাথে হওয়ায় রাস্তা পারাপারে সাবধান হউন।
- জায়গাটি বেশ নির্জন তাই সর্বদা সতর্ক থাকুন।
- সন্ধ্যার সময় এখানে ভ্রমণ না করাই ভালো।
- প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করবেন না।
- বৃষ্টির সময় সঙ্গে ছাতা রাখুন অথবা রেইনকোট রাখুন।
- ক্যামেরা, মানিব্যাগ যাবতীয় জিনিস নিজের সঙ্গে রাখুন।
আপনার ভ্রমণ হোক রোমাঞ্চকর এবং আনন্দময়।
আরও: নারায়ণগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
ফেসবুক: Kuhudak
সুন্দর মসজিদ
ধন্যবাদ