মিনি কক্সবাজার চাঁদপুর ভ্রমণ করে আসলাম! এটা চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেড বা তিন নদীর মোহনা থেকে কয়েক মিনিট এর দূরত্বে অবস্থিত। চাঁদপুরের পদ্মার চর টি এখন সবার কাছে চাঁদপুর মিনি কক্সবাজার নামে পরিচিত।
ভ্রমনে আজ এসেছি চাঁদপুর এর বর্তমানে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে খুব জনপ্রিয় এই পদ্মার চর বা মিনি কক্সবাজার চাঁদপুর। আজকের এই ভ্রমন যাত্রায় রয়েছি আপনাদের ভ্রমণ বন্ধু আরিফ হোসেন এবং আমার সাথে রয়েছে নাদিম আল মাহমুদ।
চলুন ভ্রমণ শুরু করা যাক…
ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর ভ্রমণ পড়েছেন কি?
চাঁদপুর মিনি কক্সবাজার ভ্রমণ
একনজরে মিনি কক্সবাজার চাঁদপুর
মিনি কক্সবাজার ভ্রমনে আমরা চাঁদপুর এর এই পদ্মার চর টি সম্পূর্ণ ঘুরে দেখার চেষ্টা করব। তো প্রথমে চলুন চাঁদপুর এর এই মিনি কক্সবাজার সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা যাক।
ভ্রমণ স্থান | মিনি কক্সবাজার চাঁদপুর বা পদ্মার চর |
অবস্থান | চাঁদপুর মোহনা বা বড় স্টেশন মোলহেড থেকে কয়েক মিনিট এর দূরত্ব |
যাতায়াত ব্যবস্থা | ট্রলার বা স্পীড বোর্ড |
ভাড়া | ৫০-১০০ টাকা |
ড্রোন | উড়ানো যাবে |
এবার চলুন মিনি কক্সবাজার চাঁদপুর ভ্রমণের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানা যাক।
মিনি কক্সবাজার ভ্রমণ প্রস্তুতি
চাঁদপুর এর মিনি কক্সবাজার বা পদ্মার চর দর্শনীয় স্থান টি ২০১৮ সাল থেকে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করে আসছে। ২০১৮ সাল থেকে শুরু হবার কারন হচ্ছে, পদ্মার পাড়ে চর পরেছে ২০১৮ সালে। এরপর ১ জন ২ জন করে ভ্রমণ করতে করতে এখন সেখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার দর্শনার্থী ভ্রমনে আসেন।
গতকয়েকদিন আগে পত্রিকার মাধ্যমে প্রথম এই স্থান সম্পর্কে জানতে পারি। এরপরই পদ্মার পাড়ে ভ্রমনে যাওয়ার জন্য সময় বের করতে থাকি। কিন্তু পরীক্ষার কারনে ভ্রমণে যাওয়া হয়ে উঠছিল না।
১৪ই এপ্রিল, ২০১৯। পহেলা বৈশাখ মানে বাংলা বছরের প্রথম দিন। বিশেষ এই দিনটিকে নির্বাচন করি মিনি কক্সবাজারে ভ্রমণে যাওয়ার। প্রথমে একা ভ্রমণে যাওয়ার প্ল্যান ছিল, পরে নাদিম আমার সাথে যোগ দেয়।
পহেলা বৈশাখ ১৪২৬ এর প্রথম দিন সকাল ১০:৩০ মিনিট। আমরা সিএনজি করে মতলব উত্তর থেকে চাঁদপুর এর উদ্দেশ্যে ভ্রমণ শুরু করি।
মিনি কক্সবাজার চাঁদপুর
প্রায় ১১:৪৫ মিনিট এর দিকে আমরা চাঁদপুর সিএনজি ষ্টেশন এসে নামি। সিএনজি মতলব থেকে জন প্রতি ৬০ টাকা করে নেয়। রেগুলার ভাড়া ৫০ টাকা হলেও বিশেষ দিনের জন্য ১০ টাকা বাড়িয়ে ৬০ টাকা নিয়েছে। সিএনজি ষ্টেশন থেকে এটোরিক্সা জন প্রতি ১০ টাকা দিয়ে বড় স্টেশন মোলহেড চলে আসলাম।
যেহেতু আজকে বিশেষ দিন তাই প্রচুর মানুষ ভীর জমিয়েছে চাঁদপুর এর এই বড় ষ্টেশনে। অটোরিক্সা ভীর ঠেলে সামনে এগোতে না পারায় আমাদের কে একটু দূরে নামিয়ে দিল। আমরা হেটে বড় স্টেশন মোলহেড বা তিন নদীর মোহনা চলে আসলাম।
মাথার উপরে দুপুরের প্রখর রোদ, আরেক দিকে মানুষের প্রচণ্ড ভীরে দম বন্ধ হবার অবস্থা। আমরা জেলা ব্র্যান্ডিং পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ করলাম। জেলা ব্র্যান্ডিং পর্যটন কেন্দ্র চাঁদপুর পৌরসভার সহযোগিতা এবং চাঁদপুর জেলা প্রশাসন এর ব্যবস্থাপনায় তৈরি করা হয়েছে। এই স্থানকে বড় স্টেশন মোলহেডও বলা হয়ে থাকে।
পদ্মার পাড় ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা
পদ্মার পাড় ভ্রমণে যাওয়ার জন্য তিন নদীর মোহনায় অনেক ট্রলার ও স্পীড বোর্ড রয়েছে। ট্রাল গুলো সবাই মিলে এক যোগে কাজ করে। ভাড়া করার জন্য আপনি এখানে লোকাল এবং রিজার্ভ দুই ধরনের ট্রলারই পাবেন।
ট্রলার ভাড়া
তবে আপনি যেভাবেই যান না কেনো… পদ্মার চর ভ্রমণ শেষে আপনি যে কোন ট্রলারেই ফিরে আসতে পারবেন। ট্রলার চালক ট্রলারে উঠার সাথে সাথেই আপনার কাছ থেকে যাওয়া এবং আসার ভাড়া একসাথে নিয়ে নিবে। যার ফলে ভ্রমণ শেষে আপনি ফিরত আসা যে কোন ট্রলারে চলে আসতে পারবেন। তখন আপনার কাছ থেকে ভাড়া নিবে না। ট্রলার ভাড়ার কোন টিকিট সিস্টেম নেই।
ট্রলারের রেগুলার ভাড়া যাওয়া এবং আসা ৫০ টা। তবে বিশেষ দিনে এটা বেড়ে যেতে পাড়ে। আমরা যেহেতু বিশেষ দিনে ভ্রমণে গিয়েছি তাই, আমাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০০ টাকা করে ভাড়া নিয়েছে।
আরও: ৪০০ বছরের পুরনো ১ গম্বুজ মসজিদ
মিনি কক্সবাজার চাঁদপুর ভ্রমণে কিছু সতর্কতা
মিনি কক্সবাজার চাঁদপুর ভ্রমণে আপনাকে অবশ্যই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিচে এক এক করে সেগুলো দেয়া হল।
- কালবৈশাখী বা ঝড়ের দিনে মিনি কক্সবাজার ভ্রমণ না করাই উত্তম।
- চাঁদপুরের মোহনা খুব বিপদজনক স্থান হিসেবে চিহ্নিত। এখানে তিন নদী একসাথে মিলিত হওয়ার ফলে একটি ঘূর্ণ্যমান অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ভ্রমণের সময় বিশেষ স্থানটি পরিহার করুন।
- মিনি কক্সবাজার চাঁদপুরে ভ্রমণের জন্য সকাল অথবা বিকাল বেলা উত্তম সময়। দুপুরে ভ্রমণ না করাই ভালো। দুপুরে ভ্রমণে এলে অবশ্যই সাথে সানগ্লাস, ছাতা এবং খাবার পানি নিয়ে আসতে ভুলবেন না। গরমে ভ্রমণের আরও বিস্তারিত জানুন: গরমে আরামদায়ক ভ্রমণের গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- ট্রলারে উঠার সময় সতর্ক থাকুন। কারন ট্রলারে উঠার জন্য আপনাকে বেশকিছু বড় বড় চতুর্ভুজ আকৃতির ব্লক পার হতে হবে। এই ব্লক গুলো খুবই পিচ্ছিল।
- ট্রলারে উঠার সময় মই ব্যাবহার করুন।
- ট্রলার চলার সময় নদীর ঢেউ এর কারনে দুলতে পারে, আপনি যদি এতে ভয় পান তাহলে ট্রলারের সাইডে না বসে মাঝ খানটাতে টুল এর উপর বসুন।
- ট্রলার থেকে নামার সময় মই ব্যাবহার করুন। তাড়াহুড়া করে ট্রলারের পাশ দিয়ে নামার সময় সতর্ক থাকুন। পানির গভীরতা না জেনে উচু থেকে নামতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পাবেন না।
- পানিতে নেমে গোসল করার আগে আপনার জামাকাপড়, জুতা, মোবাইল, মানিব্যাগ নিরাপদ স্থানে রাখুন।
- গরম বালুর উপর দিয়ে হাটার সময় পায়ে জুতা পরে নিন।
- নদীর পানি পান করবেন না।
মিনি কক্সবাজার চাঁদপুর ভ্রমণে যা দেখলাম
৮ থেকে ১০মিনিট ট্রলার চলার পর আমরা চলে আসলাম পদ্মার পাড় বা মিনি কক্সবাজার! ট্রলার থেকে নেমে প্রথমে আটটি ছাতা ও বেঞ্চ চোখে পড়ল আমাদের। একই সারিতে বালুচরে পাতা বেঞ্চ, ওপরে রঙিন ছাতা গুলো বসানো হয়েছে। এ ছাড়া একটি শৌচাগার, একটি দোকান ও একটি মসজিদ রয়েছে এখানে।
আমরা যেহেতু বিশেষ দিনে এখানে ভ্রমণে এসেছি, তাই আজকে এখানে দর্শনার্থীদের উপচে পরা ভিড় লক্ষ্য করলাম। ছোট ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে যুবক এবং বয়স্করাও এখানে ভ্রমণে এসেছেন!
অনেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন আবার অনেকে বন্ধু বান্ধবরা মিলে এসেছেন। আবার অনেকে একা ভ্রমণে এসেছেন।
পদ্মার পাড়
পদ্মার পাড় এর আগেও আমি অনেকবার এসেছি। তবে এই চরে প্রথম আসা হয়েছে। পদ্মার চরটি বেশ বড়। অনেকটা ইংরেজি অক্ষর “U” আকৃতির। তবে উল্টো দিক থেকে তাকালে এটাকে ইংরেজি “w” আকৃতির মনে হবে।
এখানের পানি খুব একটা পরিষ্কার দেখা গেলো না। পানিতে রয়েছে কিছু কচুরিপানা। সাথে কিছু শৈবাল ও আগাছা।
পদ্মার পাড়ে নেমেই যে পাশে বেঞ্চ এবং ছাতা দেখতে পাবেন ঠিক তার পিছনেই রয়েছে কিছু জাউবন গাছ আর ধু ধু বালি।
আরও দেখুন: মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ও ধনাগোদা নদী ভ্রমণ
পদ্মার পাড় কি আসলেই মিনি কক্সবাজার?
যারা এখনও ভ্রমণে পদ্মার পাড়ের এই নতুন চরে যান নি তারা অনেকেই প্রশ্ন করেন, পদ্মার পাড় কি আসলেই মিনি কক্সবাজার?
আমি ঘুরে এসে তার উত্তরে বলব “হাঁ” । এটা মিনি কক্সবাজার এর মতই। এখানে আসলে আপনি কিছুটা হলেও কক্সবাজার এর স্বাদ পাবেন। তবে মূল কথা হচ্ছে, কক্সবাজার কক্সবাজারই। এটার সাথে অন্য কিছুর তুলনা চলে না। আমার কক্সবাজার ভ্রমণ দেখুন।
চোখ জুড়িয়ে যাওয়া পদ্মা
আমরা বেশ কিছুক্ষন হাটা হাটি করার পর পদ্মার এক পাড়ে এসে বসলাম। যদিও দুপুরের রোদে শরীর পুড়ে যাচ্ছিল, কিন্তু পদ্মার পাড়ে বসে সব ভুলে গেলাম। পা ভিজালাম পদ্মার নদীর পানিতে।
পদ্মার পাড়ে বসে নিজের অজান্তে গেয়ে উঠলাম…
এই পদ্মা এই মেঘনা এই যমুনা, সুরমা নদী তটে
আমার রাখাল মন গান গেয়ে যায়
এই আমার দেশ এই আমার প্রেম।
সত্যি এক অসাধারণ অনুভূতি পেলাম এই পদ্মার পাড়ে বসে। সময় পেলে আপনিও একদিন সময় নিয়ে ঘুরে যেতে পারেন পদ্মার পাড়ের এই মিনি কক্সবাজার থেকে।
আরও: কলাকান্দা মসজিদ ও মাদ্রাসা
কিভাবে যাবেন
মিনি কক্সবাজার চাঁদপুর ঢাকা থেকে কিভাবে ভ্রমণে যাবেন-
বাস
ঢাকা সায়েদাবাদ বাস স্টেশন থেকে পদ্মা এক্সক্লিসিভ পরিবহণে করে চাঁদপুর যেতে পারেন। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ৩০ মিনিট পর পর বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া নিবে ২৭০ টাকা।
চাঁদপুর বাস স্টেশন নেমে অটোরিকশা করে বড় স্টেশন, তিন নদীর মোহনা চলে আসতে পারবেন। অটোরিকশা ভাড়া নিবে ১০/১৫ টাকা। এরপর মোহনা থেকে ট্রলারে করে পদ্মার চর বা মিনি কক্সবাজার চাঁদপুর। যাওয়া এবং আসার ট্রলার ভাড়া নিবে অফ সিজন ৫০টাকা এবং বিশেষ দিনে ১০০ টাকা বা মন বেশি হতে পারে।
লঞ্চ
ঢাকা সদরঘাট হতে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছেড়ে যায় সকাল ৭ঃ২০ মিনিট থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত।
ভাড়াঃ ডেকে জনপ্রতি ১০০টাকা। চেয়ারে ১৫০ টাকা। নন-এসি চেয়ারঃ ২৫০-২৮০ টাকা। এসি কেবিন (সিঙ্গেল): ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকেও চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছেড়ে যায়। ভাড়া নিবে সুলভঃ ১৩০ টাকা নন-সুলভঃ ৬০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
চাঁদপুরে থাকার জন্য মোটামোটি মানের বেশকিছু হোটেল রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিছু হোটেল হচ্ছেঃ ভাই ভাই আবাসিক হোটেল, তালতলা বাসস্টেশন হোটেল সকিনা।
ভাড়াঃ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা নিবে।
চাঁদপুর জেলার দর্শনীয় স্থান গুলো দেখুন। মিনি কক্সবাজার চাঁদপুর।
ফেসবুক: Kuhudak
বর্ষার সিজনে মিনি কক্সবাজার আ যাওয়া যাবে??
একদিনের ভ্রমনের জন্য পারফেক্ট জায়গা। একসাথে চাঁদপুর মোহনা এবং মিনি কক্সবাজার! আহা ?
হ্যাঁ, অসাধারণ জায়গা!