ঘুরে আসলাম ৪০০ বছরের পুরনো ১ গম্বুজ মসজিদ – ছোট হলদিয়া, মতলব উত্তর, চাঁদপুর থেকে। এটি একটি পূরণ নিদর্শন যা চাঁদপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ গুলোর মধ্যে একটি। আজকে আমি আপনাকে নিয়ে যাব ছোট হলদিয়া গ্রামের সেই বিখ্যাত এবং প্রাচীন এক গম্বুজ মসজিদে।
তো চলুন শুরু করা যাক…
নাউরী মন্দির ও রথ – মতলব, চাঁদপুর পড়েছেন কি?
১ গম্বুজ মসজিদ – ছোট হলদিয়া
প্রথমে ছোট হলদিয়া গ্রামের ১ গম্বুজ মসজিদ সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু তথ্য জানা যাক।
একনজরে ১ গম্বুজ মসজিদ
ভ্রমণ স্থান | ১ গম্বুজ মসজিদ |
অবস্থান | সরকার বাড়ী, ছোট হলদিয়া গ্রাম, মতলব উত্তর, চাঁদপুর |
আনুমানিক বয়স | ৪০০ বছর |
স্থাপন করেন | রুপ সরকার |
গম্বুজ সংখ্যা | ১টি |
আকার | ছোট |
প্রথম মুসল্লির সংখ্যা | ৪ জন |
ইতিহাস
ছোট হলদিয়া গ্রাম এর এই মসজিদ টি ১ গম্বুজ মসজিদ নামে পরিচিতি থাকলেও এর সঠিক নাম ছোট হলদিয়া সরকার বাড়ী জামে মসজিদ।
আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর পুর্বে এই মসজিদ টি তৈরি করেন রুপ সরকার। রুপ সরকার সহ আরও ৩ জনের পরিবার মিলে প্রথম ৪জনের পরিবার দিয়ে এই সরকার বাড়ীর যাত্রা শুরু হয়। এরপর তাদের নামাজের জন্য সরকার বাড়ীর প্রথম এই এক গম্বুজ এর মসজিদ টি নির্মাণ করেন রুপ সরকার।
কথিত আছে, নদীতে চড় পরে এখানে প্রথম মানুষের বসবাস শুরু হয়। তখন এই গ্রাম এর চারপাশে কুমিরের খুব আনাগোনা ছিল। কেউ ভয়ে চরের পাড়ে যেতো না। অনেক কে নাকি কুমির ধরেও নিয়ে গিয়েছে।
সরকার বাড়ীর এই ৪ পরিবার এসেছিলেন ৪ জায়গা থেকে। এখানে এসে বাড়ি করে তার নাম দেন সরকার বাড়ী। এরপর নামাজের জন্য জামে মসজিদ টি নির্মাণ করেন।
১ গম্বুজ মসজিদ ভ্রমণ
মতলব উত্তর উপজেলা থেকে এই ১ গম্বুজ মসজিদ এর দূরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার। বড় হলদিয়া গ্রাম এর পরেই এর অবস্থান। আমি মোটরসাইকেল করে বড় হলদিয়া গ্রাম দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছি।
গ্রামের ভিতর দিয়ে রাস্তা চলে গিয়েছে একেবেকে। কোথাও কাচা আবার কোথাও ইট বসানো রাস্তা। আবার কোথাও কোথাও রাস্তা থেকে ইট সরে গিয়েছে। এখন এমন অবস্থা যে না কাচা তো না পাকা রাস্তা। রাস্তার এই অবস্থার কারনে আমাকে মোটরসাইকেল খুব সাবধানতার সাথে ধীরে চালাতে হচ্ছে।
রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে বেশ কয়েকজন কে জিজ্ঞেস করলাম এক গম্বুজ মসজিদ টি কোন দিকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় অনেকেই একই গ্রামের হয়েও এই ৪০০ বছর পুরনো মসজিদ টির কথা জানে না। কয়েকজন যারা বলতে পারলেন তারা আঙ্গুল দিয়ে পথ দেখিয়ে দিলেন।
আরও: মতলব উত্তর উপজেলা পরিচিতি
ছোট হলদিয়া গ্রাম
ছোট হলদিয়া গ্রাম কে স্থানীয় ভাষায় অনেকে ছোট হইলদিয়া বা ছোট হলদিয়া গ্রাম নামে ডাকে। একেবেকে গ্রামের রাস্তা দিয়ে চলে আসলাম ছোট হলদিয়া বাজারে।
গাড়ী থামিয়ে একজন কে জিজ্ঞেস করলাম এক গম্বুজ মসজিদ টি কোন দিকে। তিনি হাসি হাসি মুখ করে আমাকে কারন জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম, দর্শনীয় স্থান ঘুরতে এসেছি। এরপর তিনি আমাকে হাতে ইশারা করে দেখিয়ে দিলেন।
ছোট হলদিয়া বাজার থেকে ১০৭ নং সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয় এর পিছন দিক দিয়ে একটি রাস্তা চলেগিয়েছে সরকার বাড়ীর দিকে। আমি সে পথ ধরেই এগুতে থাকলাম। বাড়ির ভিতরে অবশ্য চিপা রাস্তা রয়েছে। তবে, মোটরসাইকেল নেয়া যায় অনায়াসেই।
গ্রামের একটু ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখা মিলল সেই বিখ্যাত এক গম্বুজ মসজিদ বা ৪০০ বছরের পুরনো সরকার বাড়ী জামে মসজিদ এর সাথে।
মসজিদ টি ১২নং ফরাজিকান্দি, ছোট হলদিয়া ৩ নং ওয়ার্ডের সরকার বাড়িতে অবস্থিত।
আরও: লুধুয়া জমিদার বাড়ি
সরকার বাড়ী জামে মসজিদ
মোটরসাইকেল একপাশে রেখে মসজিদ এর কাছে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলাম। অনেক পুরনো মসজিদ কিন্তু বুজার উপায় নেই। দেখলে মনে হবে না এই মসজিদটি ৪০০ বছরের পুরনো। তবে পুরো ব্যাপারটি ক্লিয়ার হয়েছে যখন মনির হোসেন সরকার (মনু) সাহেবের সাথে কথা হয়।
এক গম্বুজ মসজিদ এর ঠিক পাশেই একটি বিশাল পুকুর রয়েছে। পুকুর এর আরেক পাশেই রয়েছে আরেকটি বিশাল বড় মসজিদ।
মনু সাহেবের সাথে আমার সেখানেই পরিচয়। নতুন মসজিদ এর পাশেই কাজ চলছিল। ওনি ওইখানেই কাজ পর্যবেক্ষণ করছিলেন। আমি ডাকাতেই তিনি আমার সাথে পরিচিত হলেন এবং মসজিদ সম্পর্কে বলা শুরু করলেন।
মনির হোসেন সরকার (মনু) সাহেব এর বাসা সরকার বাড়ীতেই। ওনার বসয় আনুমানিক ৬০ বছর। তিনিই বর্তমানে পুরনো ১ গম্বুজ মসজিদ এবং নতুন জামে মসজিদ এর দায়িত্বে আছেন। পরিচর্যা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ ওনার মাধ্যমেই হয়।
আরও পড়ুন: মান্দারতলী আদর্শ গ্রাম
মসজিদ এর বর্তমান অবস্থা
মনু সাহেব এর কথা অনুযায়ী মসজিদ টি আগের মত নেই। এটাকে তিনি নতুন করে সংস্কার করেছেন। যাতে মসজিদটি নষ্ট হয়ে পুরনো এই মসজিদ টি বিলুপ্ত হয়ে না যায়।
মনু সাহেব আরও বলেন, মসজিদটি পূর্বের তুলনায় অনেকে ডেবে গিয়েছে (মাটির নিচে চলে গিয়েছে) । মসজিদ এর গম্বুজটির চারপাশে নানা রকম কারুকাজ করা ছিল, যা এখন নেই। বেশ কয়েকটি নিশান ছিল, যা বর্তমানে নেই।
১ গম্বুজ মসজিদটির দরজা/প্রবেশ পথ ১টি। যেটি কাঠের তৈরি। মসজিদ এর জানালার সংখ্যা ও ১টি। মসজিদ এর দরজা সবসময় (বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া) বন্ধ থাকে। জানালা দিয়ে যতটুকু দেখা গিয়েছে, ভিতরে ৫/৬ জন নামাজ পরার মত জায়গা রয়েছে।
মনু সাহেব বলেন, আমরা সব সময় জায়গাটা পরিষ্কার পরিছন্ন রাখি। কেউ এখানে নামাজ পড়ে কিনা জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, পুরুষ কেউ নামাজ পরে না তবে, মাঝে মাঝে মহিলারা দূর থেকে এখানে নামাজ পড়তে আসে।
ফেসবুক: Kuhudak