বাংলাদেশের ২৫ টি জনপ্রিয় খাবারের তালিকা দেখুন। বাংলাদেশের খাবারগুলো আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। প্রতিটি অঞ্চলে রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খাবার, যা ভোজন রসিকদের তৃপ্তি দিয়ে থাকে। এই পোস্টে, আমি বাংলাদেশের ২৫ টি জনপ্রিয় খাবারের তালিকা নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরার চেষ্টা করব।
আরও: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবারের তালিকা
বাংলাদেশের জনপ্রিয় খাবারের তালিকা
ভাত
ভাত বাংলাদেশের প্রধান খাবার এবং এটি সাধারণত দুপুর ও রাতের খাবারে খাওয়া হয়। ধানের শস্য থেকে তৈরি ভাত সহজেই হজমযোগ্য এবং সবার কাছে প্রিয়। ভাতের সঙ্গে সাধারণত ডাল, সবজি, মাছ বা মাংস পরিবেশন করা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাতের প্রস্তুত প্রণালীতে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। যেমন, পোলাও, খিচুড়ি, বিরিয়ানি ইত্যাদি।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাতের নানা রকম প্রস্তুতি রয়েছে। যেমন:
- পোলাও: সুগন্ধি চাল দিয়ে তৈরি বিশেষ ভাত, যা সাধারণত বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়।
- খিচুড়ি: ডাল এবং চাল একসঙ্গে রান্না করা হয়, যা বর্ষাকালে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
- বিরিয়ানি: মাংস এবং মসলার সঙ্গে সুগন্ধি চাল দিয়ে তৈরি একটি জনপ্রিয় খাবার, যা ঢাকার খাবারের অন্যতম আকর্ষণ।
বিরিয়ানি
বিরিয়ানি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু খাবার। এটি বিভিন্ন মশলা, সুগন্ধি চাল, মাংস এবং সবজি দিয়ে তৈরি করা হয়। উৎসব, বিশেষ অনুষ্ঠান এবং পরিবারের জমায়েতে বিরিয়ানি একটি অপরিহার্য খাবার।
উপাদান
বিরিয়ানির প্রধান উপাদানগুলো হল:
- সুগন্ধি বাসমতি বা পোলাও চাল
- মাংস (মুরগি, খাসি, গরু, বা ভেড়া)
- দই, পেঁয়াজ, টমেটো, আদা-রসুন বাটা
- মশলা (জিরা, ধনিয়া, গরম মশলা, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা)
- ঘি বা তেল
- আলু (কিছু বিশেষ ধরনের বিরিয়ানিতে)
জনপ্রিয় বিরিয়ানির ধরন
- কাচ্চি বিরিয়ানি: কাচ্চি বিরিয়ানি খুবই জনপ্রিয় একটি ধরন, বিশেষ করে ঢাকায়। এতে মাংস এবং চাল একসঙ্গে মেশানো হয় এবং ধীরে ধীরে রান্না করা হয়। মাংসটি আগে থেকে মেরিনেট করে রাখা হয় যাতে এটি ভালোভাবে মশলার সাথে মিশে যায়।
- তেহারি: তেহারি সাধারণত গরুর মাংস দিয়ে তৈরি করা হয় এবং এটি অন্যান্য বিরিয়ানির চেয়ে একটু ভিন্ন। তেহারির স্বাদ বেশি মশলাদার এবং এতে পেঁয়াজ ও টমেটোর প্রাধান্য বেশি থাকে।
- মোরগ পোলাও: মোরগ পোলাও বাংলাদেশের আরেকটি জনপ্রিয় ধরন। এতে মুরগির মাংস এবং সুগন্ধি চাল ব্যবহৃত হয় এবং এটি সুস্বাদু মশলা দিয়ে রান্না করা হয়।
আরও: বাংলাদেশের সেরা ৫০ টি দর্শনীয় স্থান বা পর্যটন কেন্দ্র
ইলিশ মাছ
ইলিশ মাছ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং এটি পদ্মা নদীর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ইলিশের স্বাদ ও গন্ধ বাঙালিদের প্রিয়। ইলিশ মাছ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের রান্না করা হয়:
- সর্ষে ইলিশ: সর্ষে বাটা দিয়ে ইলিশ মাছ রান্না করা হয়, যা অত্যন্ত জনপ্রিয়।
- ভাপা ইলিশ: ইলিশ মাছকে মসলায় মাখিয়ে কলাপাতায় মুড়ে ভাপানো হয়।
- দই ইলিশ: দই দিয়ে রান্না করা ইলিশ মাছের বিশেষ পদ, যা অত্যন্ত সুস্বাদু।
মোরগ পোলাও
মোরগ পোলাও একটি বিশেষ খাবার যা সাধারণত বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়। এটি মূলত সুগন্ধি চাল, মুরগির মাংস, দুধ, কিশমিশ, কাজু, এবং বিভিন্ন মশলা দিয়ে রান্না করা হয়। মোরগ পোলাওয়ের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল মাংস ও চালের মসৃণ মিশ্রণ, যা প্রতিটি কামড়ে সুস্বাদু অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
খিচুড়ি
খিচুড়ি হল ডাল ও চাল একসঙ্গে রান্না করা একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার। বিশেষ করে বর্ষাকালে খিচুড়ি অত্যন্ত জনপ্রিয়। খিচুড়ি সাধারণত বিভিন্ন সবজি, মাংস বা মাছ দিয়ে পরিবেশন করা হয়। ঢাকাই খিচুড়ি ও চট্রগ্রামের মাটির চুলায় রান্না করা খিচুড়ি বিশেষ স্বাদযুক্ত।
এটি সাধারণত চাল এবং ডাল একসঙ্গে রান্না করে তৈরি করা হয় এবং বিভিন্ন সবজি এবং মাংস যোগ করে এর পুষ্টিগুণ ও স্বাদ বাড়ানো হয়।
উপাদান
খিচুড়ি তৈরির প্রধান উপাদানগুলো হল:
- চাল
- মুগ ডাল বা মাসুর ডাল
- আলু, গাজর, ফুলকপি, শিম, মটরশুঁটি (বিকল্প)
- পেঁয়াজ, আদা, রসুন, কাঁচা মরিচ
- হলুদ, ধনিয়া গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো
- তেজপাতা, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ
- তেল বা ঘি
- লবণ
জনপ্রিয় খিচুড়ির ধরন
- ভুনা খিচুড়ি: ভুনা খিচুড়ি হলো মশলাদার এবং সুস্বাদু খিচুড়ি। এতে মাংস (মুরগি, খাসি বা গরু) যোগ করা হয় এবং এটি ধীরে ধীরে ভুনা করে রান্না করা হয়। এই ধরনের খিচুড়ি বিশেষ করে উৎসব এবং বিশেষ অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়।
- সবজি খিচুড়ি: সবজি খিচুড়ি হলো পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খিচুড়ি। এতে বিভিন্ন ধরনের সবজি যেমন আলু, গাজর, ফুলকপি, শিম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এটি ভেজিটেরিয়ানদের জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
- সরল খিচুড়ি: সরল খিচুড়ি হলো সহজ এবং সাধারণ খিচুড়ি, যা সাধারণত চাল এবং ডাল দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি সাধারণত পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ এবং সামান্য মশলা দিয়ে রান্না করা হয়।
রসমালাই
রসমালাই একটি প্রাচীন বাঙালি মিষ্টি, যা বিশেষভাবে বিশেষ অনুষ্ঠানে ও উৎসবে পরিবেশন করা হয়। এটির উৎস প্রায় ১০০০ বছর পূর্বের পুরানো ভারতীয় পর্বে পাওয়া যায়। এর নাম “রসমালাই” সংস্কৃত ভাষার “রস” (রস) ও “মালাই” (মসৃণ বা নরম) শব্দের সমন্বয়ে গঠিত, যা এর নরম এবং সুস্বাদু প্রকৃতির পরিচায়ক। এটি মূলত ছানা (পনির) ও দুধ থেকে তৈরি করা হয় এবং এটির রূপান্তরের প্রক্রিয়া বেশ বড়গুলোতে মধুর পানির সাথে সিক্রিয় অবদান রয়েছে।
রসমালাই একটি মিষ্টান্ন, যা ছানা দিয়ে তৈরি। ছোট ছোট ছানার টুকরো দুধে ভিজিয়ে রসমালাই তৈরি করা হয়। দুধের সাথে চিনি ও এলাচ মিশিয়ে রসমালাই তৈরি করা হয়। বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার রসমালাই বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
পিঠা
পিঠা হল বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার। শীতকালে পিঠার প্রচলন বেশি হয়। বিভিন্ন ধরণের পিঠার মধ্যে অন্যতম হল:
- চিতই পিঠা: চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি পিঠা, যা নারকেল ও গুড়ের সাথে পরিবেশন করা হয়।
- ভাপা পিঠা: চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি পিঠা, যা কলাপাতায় ভাপানো হয়।
- পাটিসাপটা: ময়দার পাতলা রুটির মধ্যে নারকেল ও খোয়ার পুর দিয়ে তৈরি পিঠা।
চটপটি
চটপটি হল একটি মশলাদার ও টক ঝাল খাবার, যা সাধারণত মুড়ি, মটর, আলু, চাট মশলা, পেঁয়াজ, ধনেপাতা, কাঁচা মরিচ এবং লেবুর রস দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি বাংলাদেশের স্ট্রিট ফুড হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
ফুচকা
ফুচকা হল একটি জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড। ছোট ছোট গোল আকৃতির ফুচকার মধ্যে মশলাদার আলুর পুর ভরে টকজল দিয়ে পরিবেশন করা হয়। ফুচকা খেতে অত্যন্ত মজার এবং এটি বাংলাদেশে বিভিন্ন মেলায় ও রাস্তার ধারে বিক্রি হয়।
ঝালমুড়ি
ঝালমুড়ি হল মশলাদার মুড়ি, যা সাধারণত বিকেলের নাস্তায় খাওয়া হয়। মুড়ির সাথে পেঁয়াজ, ধনেপাতা, কাঁচা মরিচ, টমেটো, লেবুর রস এবং বিভিন্ন মশলা মিশিয়ে ঝালমুড়ি তৈরি করা হয়।
পরোটা
পরোটা হল এক প্রকারের তেলে ভাজা রুটি, যা ময়দা বা আটা দিয়ে তৈরি করা হয়। পরোটা সাধারণত নাস্তা হিসেবে খাওয়া হয় এবং এটি ডিম, সবজি, মাংস বা মিষ্টি সাথে পরিবেশন করা হয়।
শুটকি
শুটকি হল শুকনো মাছ, যা বিভিন্ন মশলা দিয়ে রান্না করা হয়। এটি বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং বিভিন্ন অঞ্চলে এটি ভিন্নভাবে প্রস্তুত করা হয়।
পায়েস
পায়েস হল এক প্রকারের মিষ্টান্ন, যা দুধ, চাল, চিনি, এবং কিসমিস দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি বিশেষ করে পূজা বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে তৈরি করা হয়।
রসগোল্লা
রসগোল্লা হল একটি মিষ্টান্ন, যা ছানা দিয়ে তৈরি। ছোট ছোট বল আকৃতির ছানা চিনির সিরায় ভিজিয়ে রসগোল্লা তৈরি করা হয়। এটি বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ করে দুর্গাপূজায় বেশি খাওয়া হয়। রসগোল্লার মিষ্টি এবং সসৃণ টেক্সচার সবাইকে মুগ্ধ করে।
বেগুন ভর্তা
বেগুন ভর্তা হল বেগুন পুড়িয়ে, মশলা মিশিয়ে তৈরি একটি পদ। এটি সরিষার তেল, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, এবং লবণ দিয়ে মাখানো হয়। ভর্তার স্বাদ পেতে খুবই মজাদার এবং ভাতের সাথে খেতে দারুণ লাগে।
পান্তা ভাত
পান্তা ভাত হল পানিতে ভেজানো ভাত, যা সাধারণত রাতের ভাতকে পরের দিন সকালে খাওয়া হয়। এটি সাধারণত ইলিশ ভাজা, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ এবং লবণের সঙ্গে খাওয়া হয়। বাংলা নববর্ষে পান্তা ইলিশ একটি বিশেষ খাবার হিসেবে পরিচিত।
নারিকেল নাড়ু
নারিকেল নাড়ু হল নারকেল ও চিনি বা গুড় দিয়ে তৈরি একটি মিষ্টান্ন। এটি সাধারণত বিভিন্ন উৎসবে তৈরি করা হয়।
বোরহানি
বোরহানি হল এক প্রকারের পানীয়, যা সাধারণত বিরিয়ানি বা পোলাও খাওয়ার পরে পরিবেশন করা হয়। দই, পানির সাথে মশলা মিশিয়ে বোরহানি তৈরি করা হয়। এটি হজমে সহায়ক এবং খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু।
হালিম
হালিম একটি খুবই পরিচিত ও সুস্বাদু বাঙালি খাদ্য। এটি সাধারণত গমের দানা, মসুর ডাল, মাংস (অথবা মাংস ছাড়াও), শাঁক, ঘি এবং বিভিন্ন মশলা দিয়ে তৈরি হয়। এটি মোটামুটি গাঢ় এবং ভারি একটি ডিশ, যা সম্পূর্ণ অসাধারণ স্বাদের জন্য পরিচিত।
দই
দই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার। বিশেষ করে বগুড়ার দই সারা দেশে বিখ্যাত। বগুড়া শহরকে দইয়ের রাজধানী বলা হয়, কারণ এখানকার দইয়ের স্বাদ এবং মান অতুলনীয়।
বগুড়ার দই প্রধানত মিষ্টি এবং টক দুটি ভিন্ন স্বাদে পাওয়া যায়। এই দই তৈরিতে ব্যবহৃত দুধ এবং বিশেষ প্রক্রিয়ার জন্য এটি বিশেষ স্বাদ পায়। বগুড়ার দইয়ের খ্যাতি এমন যে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ বিশেষ করে এই দই কিনতে আসেন। অনেকেই উপহার হিসেবে বা উৎসব অনুষ্ঠানে পরিবেশন করার জন্য বগুড়ার দই সংগ্রহ করেন।
গরুর মাংস
গরুর মাংস বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু খাবার। এটি প্রতিটি বাঙালির পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে এবং বিভিন্ন ধরণের রেসিপিতে ব্যবহৃত হয়।
বিখ্যাত গরুর মাংসের পদ
- ভুনা খিচুড়ি: ভুনা খিচুড়ি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে বা উৎসবের সময় এটি রান্না করা হয়। গরুর মাংস দিয়ে তৈরি ভুনা খিচুড়ির স্বাদ অসাধারণ।
- বিফ রেজালা: গরুর মাংসের একটি প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী পদ হলো বিফ রেজালা। এটি মূলত ইয়োগার্ট, কাজু এবং বিভিন্ন মশলা দিয়ে রান্না করা হয়। ঢাকার রেস্টুরেন্টগুলোতে এটি খুব জনপ্রিয়।
- কাবাব: গরুর মাংসের কাবাব, বিশেষ করে শিক কাবাব, দেশের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এবং রাস্তার খাবারের দোকানে পাওয়া যায়। এটি একটি জনপ্রিয় স্ন্যাকস এবং মূল খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হয়।
গরুর মাংস বাংলাদেশের বিভিন্ন উৎসব, যেমন ঈদ-উল-আযহা, বিবাহ এবং অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে থাকে। সাধারণ পরিবারের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায়ও এটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ভিন্ন ভিন্ন মশলা এবং রান্নার পদ্ধতির জন্য বাংলাদেশের গরুর মাংসের রান্নার স্বাদ অনন্য।
বাকরখানি
বাকরখানি একটি ঐতিহ্যবাহী এবং জনপ্রিয় মিষ্টি রুটি, যা বাংলাদেশের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। ঢাকার পুরানো অংশ, বিশেষ করে পুরান ঢাকা, এই মজাদার খাবারের জন্য বিখ্যাত।
বাকরখানির উৎপত্তি মুঘল আমলে, যখন এই অঞ্চলে মুঘল শাসকদের প্রভাব ছিল। কথিত আছে যে, এটি প্রথমে ঢাকায় একজন মুঘল সৈনিকের দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল, যিনি তার প্রেমিকা জন্য এই বিশেষ রুটি বানিয়েছিলেন। সময়ের সাথে সাথে, এটি ঢাকার একটি প্রিয় এবং জনপ্রিয় খাবারে পরিণত হয়।
বাকরখানি মূলত ময়দা, ঘি, চিনি এবং দুধ দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি একটি মিষ্টি এবং ক্রিস্পি রুটি, যা সাধারণত চায়ের সাথে খাওয়া হয়। এর মিষ্টি এবং মাখনের মতো স্বাদ অনেকের মন জয় করে নিয়েছে।
ফল
বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু ফল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ফলে সারা বছর বিভিন্ন ঋতুতে নানা রকম ফল পাওয়া যায়। দেশীয় ফলগুলির মধ্যে অনেকগুলিই বিশেষভাবে জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর।
জনপ্রিয় বাংলাদেশি ফল
- আম: আম বাংলাদেশের জাতীয় ফল এবং গ্রীষ্মের প্রধান আকর্ষণ। রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের আম বিশেষভাবে বিখ্যাত। বিভিন্ন প্রজাতির আম, যেমন ল্যাংড়া, ফজলি, হিমসাগর, আম্রপালি, ইত্যাদি, স্বাদে এবং গন্ধে অতুলনীয়।
- কাঁঠাল: কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফল। গ্রীষ্মকালে কাঁঠাল পাওয়া যায় এবং এটি মিষ্টি এবং পুষ্টিকর।
- লিচু: লিচু বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন ফল এবং এটি খুব মিষ্টি এবং রসালো। দিনাজপুর এবং ময়মনসিংহ অঞ্চলের লিচু বিখ্যাত।
- পেয়ারা: পেয়ারা সারা বছর পাওয়া যায় এবং এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর। বরিশালের পেয়ারা বিশেষ স্বাদের জন্য পরিচিত।
- কলা: কলা বাংলাদেশের সবচেয়ে সাধারণ এবং সহজলভ্য ফল। এটি সারা বছর পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন প্রজাতির কলা, যেমন চাঁপা কলা, সবরি কলা, কাঠালি কলা ইত্যাদি, জনপ্রিয়।
লাচ্ছি
লাচ্ছি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এবং জনপ্রিয় একটি পানীয়। এটি বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে অত্যন্ত জনপ্রিয়, কারণ এটি শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে এবং সতেজ করতে সাহায্য করে।
লাচ্ছি মূলত দই, পানি, চিনি এবং বিভিন্ন মশলা মিশিয়ে তৈরি করা হয়। বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের লাচ্ছি তৈরি হয়, যেমন:
- মিষ্টি লাচ্ছি: চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয়।
- টক লাচ্ছি: সাধারণত টক দই দিয়ে তৈরি করা হয়।
- ফল লাচ্ছি: বিভিন্ন ফলের রস মিশিয়ে তৈরি করা হয়, যেমন আমের লাচ্ছি, কলার লাচ্ছি ইত্যাদি।
ভর্তা
ভর্তা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এবং অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। এটি মূলত বিভিন্ন সবজি, মাছ, ডাল বা মাংসকে মশলা দিয়ে মাখিয়ে তৈরি করা হয়। ভর্তা সাধারণত ভাতের সাথে খাওয়া হয় এবং এটি খুবই সহজ ও সুস্বাদু খাবার।
জনপ্রিয় ভর্তা
- আলু ভর্তা: আলু ভর্তা সবচেয়ে জনপ্রিয় ভর্তা। সেদ্ধ আলু, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, সরিষার তেল এবং লবণ মিশিয়ে এটি তৈরি করা হয়।
- বেগুন ভর্তা: বেগুন ভর্তা সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। পোড়া বেগুন, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ এবং সরিষার তেল দিয়ে এটি তৈরি করা হয়।
- চিংড়ি ভর্তা: চিংড়ি ভর্তা খুবই জনপ্রিয়। চিংড়ি মাছকে সেদ্ধ করে বা ভেজে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, রসুন এবং সরিষার তেল দিয়ে মাখিয়ে এটি তৈরি করা হয়।
- ডাল ভর্তা: সেদ্ধ ডাল, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, সরিষার তেল এবং লবণ মিশিয়ে ডাল ভর্তা তৈরি করা হয়। এটি ভাতের সাথে খেতে খুবই সুস্বাদু।
বাংলাদেশের এই সব জনপ্রিয় খাবারগুলোর স্বাদ, প্রস্তুতির পদ্ধতি, এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব একে অন্যের থেকে আলাদা করে তোলে। এসব খাবার বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ, যা প্রতিটি বাঙালির খাদ্য তালিকায় একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
ফেসবুক: কুহুডাক